বেলগ্রেডের সীমায় বেওয়ারিশ আগন্তুক!

ইমদাদ হক

‘সারাদিনের প্রোগ্রামে আমরা কোথায় কোথায় যাবো?’
জিজ্ঞেস করি গাইডকে।
‘যাচ্ছি যখন, দেখতে পাবা। অস্থির হয়ো না।’
সৌজন্যহীন কাটখোট্টা উত্তর।

¯দ্রজান রিসটিচ ফ্রি ল্যান্সিং ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করেন। বিদেশী টিমের সঙ্গে তাকে পাঠানো হয়। সার্বিয়ার পর্যটন বিভাগ তাকে প্রায়ই ভাড়া করে। ভদ্রলোকের হাবভাব বেশি। চুপচাপ থাকেন, জিজ্ঞেস করলেও উত্তর শুধু হুঁ- হ্যাঁ। এই যদি তার আচরণ হয় – তার কাছ থেকে কি জানবো? অথচ তিনিই আবার বেসরকারি একটি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালকও!

আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলে বেলগ্রেডের সীমায়, সড়ক-উপসড়কে, অলিগলিতে। আমি গাড়ির সামনের সিটে। গাড়ি এগিয়ে চলে উত্তর দিকে। ন্যাম সম্মেলন উপলক্ষ্যে শহরের নতুন রূপ, সাজানোগুছানো। সড়কের মাঝের ডিভাইডারের উপর লম্বা লাইন জুড়ে বিভিন্ন দেশের পতাকা। বিভিন্ন রংয়ের ফেস্টুনে শোভিত পুরো এলাকা। মোবাইল ক্যামেরায় উঠতে থাকে ছবির পর ছবি। বস্তু থেকে ছুটে আসা আলো ঢুঁকে চোখের কর্ণিয়ায়। কয়েকটি প্রক্রিয়া শেষে যা মগজে স্থায়ী আসন গেড়ে রাখতে সাহায্য করে।

৩৬০ বর্গ কিলোমিটারের বেলগ্রেড সার্বিয়ার রাজধানী। দেশের সবচেয়ে বড় শহর। সাভা ও দানিয়ুব নদীর মোহনায় এটি। শহরটি দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপেরও বৃহত্তম নগরী। ইস্তাম্বুল, অ্যাথেন্স এবং বুখারেস্টের পর পূর্ব ইউরোপে আয়তনে বড় আসন ধরে রেখেছে বেলগ্রেড। তবে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার রাজধানী থাকার সময় এই বেলগ্রেডের আয়তন ছিল দুই লাখ ৫৫ হাজার ৯৯০ বর্গকিলোমিটার; যা বাংলাদেশের আয়তনেরও বেশি। সময়ের সঙ্গে ক্ষয়ে গেছে এর সীমাপরিসীমা।

১৯৮৬ সালে যুগোস্লাভিয়া নামে কোনো দেশ শেষবারের মতো বিশ^কাপ ফুটবলে অংশ নেয়। ১৯৯০ এর পর দেশটি ভেঙ্গে ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা আর স্লোভেনিয়া সৃষ্টি হয়। সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রো মিলে ফেডারেল রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়া নামে কিছুদিন টিকে থাকে। ২০০৬ সালে লাগে কফিনে শেষ পেরেক, মন্টেনিগ্রোও স্বাধীন হয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে যুগোস্লাভিয়া নামটি হারিয়ে যায়, পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরতরে বিলিন হয়ে যায় শব্দটি। শেষ রক্ষা হয়নি সার্বিয়ারও, কসোভো নামে একটি অংশও আয়ত্বের বাইরে চলে যায়।

চারপাশে তখনো বৃষ্টি পড়ছে। এই বৃষ্টি একটু খাটাস টাইপের। যাতে মায়ামহব্বত নাই, নেই রোমান্টিকতা। যার নাম ‘প্যাতপেতে’ বৃষ্টি। বাংলাদেশের বৃষ্টির সাথে পৃথিবীর আর সব দেশের বৃষ্টিতে ফারাক আছে। ঢাকা শহরের ঘিঞ্জি গলি, যানজটের রাস্তা, গ্রামের মেঠোপথ কিংবা নদীর বুকে যখন বৃষ্টি নামে, মুগ্ধতার আবেশে চোখ বুঁজে আসে। কচু পাতার উপর পানির গড়াগড়ির সৌন্দর্য চোখ ছাপিয়ে যায়। ইউরোপ, আমেরিকা, এমনকি সৌদি আরবের বৃষ্টিতেও তাকিয়ে থাকার মতো কোনো অনুষঙ্গ নেই।

‘প্যাতপেতে’ বৃষ্টি শব্দটি শোনা লন্ডনের বন্ধু সৌরভ বলছিলো, ‘লন্ডন এমন শহর, ঠান্ডা গরমের সাথে সারাবছর মেঘেদের কান্নাকাটি। এই মেঘ কালো, এই সাদা। রোদ্র্যজ্জল আবহাওয়ায় তোমাকে বৃষ্টির পরশে শীতল করে দিয়ে যাবে। আবার শীতের বিকালে হুটহাট ভিজিয়ে দিয়ে কাঁপনও তৈরি করবে।’
লন্ডন, রোমানিয়ার পরে এবার সার্বিয়ায় সেই বৃষ্টির শিকারে। ঠান্ডায় হাত পা কাঁপছিল থরথর করে। বছরে এই শহরে বৃষ্টি হয় ৭০০ মিলিমিটার। আর গড় তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।

পুরো শহর জুড়েই চার, ছয় বা আট লেনের সড়ক। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর সিগন্যালে মৃদু জ্যাম। রাস্তার ধারে লেনজুড়ে পার্কিং, যার জন্য একটা ফিও পরিশোধ করতে হয়।

‘পরিচ্ছন্ন শহর তোমাদের। যানজট নেই, রাস্তাঘাটে ভীড় নেই। নিয়ম মেনে গাড়ীও চলছে। গাড়ির চাপ সবসময় এমন কম থাকে? না কি নিয়ন্ত্রিত রাস্তা দিয়ে আমাদের নিয়ে যাচ্ছো?’

শব্দ করে হাসে ক্রিভো। এবার আমার গাড়িতে সে। দিনের শুরুতে পরিচয় হয়েছিল। মিষ্টি মেয়ে, এক হাতে অনেক কিছু সামলাচ্ছে। তাকে খেয়াল করি, খেয়াল আমার প্রতিও তার। সব কিছুতে আমার আগ্রহ দেখে খুশি ক্রিভো। কথা বলি, জানতে চাই, কত প্রশ্ন এই শহর, নগর, মানুষ সম্পর্কে। তার মতো করে বলার চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে হাতের ফোন থেকে খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় তথ্য।
‘বেলগ্রেড নগরীতে বাস করছেন ১৪ লাখ বাসিন্দা। সুষ্ঠুভাবে যেনো তারা চলাচল করতে পারে, সে জন্য চেষ্টা রয়েছে সরকারের। চাইলে তুমি বাসে উঠতে পারে, উঠে বসতে পারো ট্রামে। ট্যাক্সি, মেট্রোসার্ভিসও রয়েছে। এখানে একশ’রও বেশি বাস লাইন রয়েছে। একেক অঞ্চলের জন্য একেক রঙের বাস।’

আমরা প্রাইভেট গাড়িতে করে ঘুরছিলাম। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে উঠা হয়ে উঠেনি একবারো। চোখে পড়ে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ রংয়ের ট্রাম আর পাবলিক বাস। ছাদ খোলা ট্যুরিস্ট বাসের ধীরগতির চলাচলও চোখ এড়ায় না। বেলগ্রেডের সব গাড়ির যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক আছে। গাড়ির ড্রাইভার আইন মেনে চলেন। ঢাকার ড্রাইভাররা আইন ভেঙে চলেন, তাদের থাকে বেপরোয়া গতি। অন্যকে পেছনে ফেলে সামনে যাওয়ার জন্য লড়াই করেন। গাড়ির যন্ত্রপাতিও লক্করঝক্কর মার্কা।

ঢাকার কথা মনে করি। পরিকল্পিত শহরের মানদ- অনুযায়ী একটি শহরে সড়ক থাকার কথা ২৫ ভাগ। ঢাকায় রয়েছে মাত্র ৭ ভাগ। চার লাখের মতো গাড়ি ঢাকার রাস্তায় চলাচল করলে স্বাভাবিক গতি বজায় থাকে। কিন্তু গাড়ি আছে ১৭ লাখ ৩৩ হাজার। এই হিসাবটা করেছিল বিটিআরসি ২০২০ সালে। বাড়তি গাড়ির ঝামেলায় ঢাকায় দিনে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে ৫০ লাখ। বিশ^ব্যাংকের ২০১৯ সালের হিসাব বলছে, ঢাকার যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে বছরে ২৪ থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত।

আমাদের ভাগ্যের সূচক ভালো ও মন্দ রেখায় উঠানামা করে যুগে যুগে। বাস করার মতো গুণাবলী বিবেচনা করলে ঢাকা খারাপ শহরগুলোর একটি। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তালিকায় শেষ দিক থেকে চার নম্বর স্থানে ঢাকা। ১৪০টি শহরের র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৩৭ নম্বরে রয়েছে ঢাকা। শহরটিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনেক। বিদ্যুতের জন্য ডেসকো-ডিপিডিসি, গ্যাসের জন্য তিতাস, পানির জন্য ওয়াসা, টেলিফোনের জন্য বিটিসিএল, জন্মসনদের জন্য জন্ম-মৃত্যু নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর- এমন ২৮ ধরণের কাজের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের ৫৬টি সংস্থা জড়িত। তাহলে এই শহরের উন্নয়ন এত অল্প সময়ে একটা মাত্র সিটি করপোরেশন কিভাবে করবে?

বৃষ্টিতে ভেজা পথঘাট পেরিয়ে আমরা এগিয়ে যাই। বৃষ্টিতে ভেজা জবুথবু হলুদ গাছপালা। ঢাকার গাছপালা আকাশ থেকে পড়া পানি পেলে যেন সজীব হয়ে উঠে। বাঙালি রমণীর মনের মতো উৎফুল্ল হয়ে ওঠে পত্রপল্লব। কিন্তু ইউরোপের অন্য দেশের মতো এই সার্বিয়ার গাছপালাও খানিকটা নিরস, উচ্ছ্বাসহীন। আমাদের সামনে, বাঁয়ে, ডানে, পেছনে বেলগ্রেডের বাস, ট্রলিবাস, ট্রাম। এই নগরীতে ১৩০টি রুটে অনবরত ছুটে চলে এই যানগুলো। কোথাও দেখি মেট্রো পাতাল ভেদ করে গেছে, কোথাও উঠেছে পাতাল ফুঁড়ে। অন্যান্য শহরে যাতায়াতের জন্য রয়েছে দ্রুতগতিতে শোঁ করে চলা বুলেট ট্রেন।

বেলগ্রেডে তখন আষাঢ়ে বৃষ্টি; ‘কাউ অ্যান্ড ডগে’র চেয়েও বেশি। অলি-গলি, বাঁক- মোড় পেরিয়ে গাড়ি এসে থামলো একটা ভবনের সামনে। সাথে থাকা গাইড আর নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অত্যন্ত স্বচকিত। ত্বড়িত গতিতে গাড়ি থেকে নেমে ছাতা মেলে ধরলেন, গাড়ি থেকে অতিথি বের হবেন। অথচ তারা এই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে একাকার- সেদিকে খেয়াল নেই। উনারা সামনে এগিয়ে গেলেন। আর আমি তো ‘বেওয়ারিশ’ আগন্তুক। মিলানা ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকালেন, চোখের ইশারা করলেন আমায়, ‘কি হবে তোমার! কিছু করতে পারছি না। অপেক্ষা করো, না হলে ভেজো।’
আমার জন্য ওর ‘দরদ’ দেখেই ভালো লাগে। এমন নারীর ইশারায় আটলান্টিকে সাঁতরানো যায়, আর কোথাকার কি ছাই বৃষ্টি!
‘ঋতুকালের অমোঘ নিয়মে ঠান্ডা হাওয়ায় হায়,
শীতের আগেই গাছের পাতা সাজতে বসে যায়।
হঠাৎ আসা পুব আকাশের ঝরো হাওয়ার তোড়ে,
একটি দুইটি তিনটি করে রঙিন পাতা পড়ে।
ভরদুপুরের ঝিরঝির হাওয়ায় গাছের শাখা নড়ে,
চারটি পাঁচটি ছয়টি করে ওকের পাতা পড়ে।
নিঝুম রাতে দমকা হাওয়ায় গাছ মড়মড় করে,
সাতটি আটটি নয়টি করে ম্যাপল পাতা ঝরে।’

(পাতা ঝরার দুটি কবিতা: রানা টাইগেরিনা।)

গাছ থেকে পাতা পড়ে টুপ করে। টুপ করে পাতা পড়ার যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, সেটা এই পাতা পড়ার মধ্যে নেই। বৃষ্টিতে ভেজা হলুদ পাতা। কাজের চাপে ভারী শরীর নিয়ে কোনো চেয়ারে ঠুস করে বসে পড়ার মতো। কোনো উচ্ছ্বাস নাই, আনন্দের বারতা নাই। সব যেন ছকে বাঁধা রুটিনের আবশ্যিক একটা অংশ, যা অবশ্য পালনীয়! ইউরোপ-আমেরিকার গাছগুলোও যেনো নির্জীব। এসব অঞ্চলে শীতকালও রুক্ষ, কর্কট। পাতা হারিয়ে শুকনো কাঠ হয়ে যায় জলজ¦্যান্ত তাজা গাছ। পাতাগুলো ঝরতে থাকে ধীরে ধীরে। সবুজ পাতা হয়ে যায় লালচে, হলুদ, টুকটুকে লাল, খয়েরী, বাদামী, পীত রঙ, আকাশী, নীল আরও কত রঙের মিশ্রণ। ঢাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, নামী দামী লোকের বসার ঘরে বড় ফ্রেমে বাঁধাই করা এসব পাতার ছবি দেখেছি কত। ঝরে পড়া পাতার দেশে এখন দেখছি বাস্তবে। এগুলোর সৌন্দর্যও আছে, তবে প্রাণহীন মনে হয়। চিড়িয়াখানায় বন্দি সিংহের বাচ্চার মতো। ঢাকা শহরে খাঁচাওয়ালা ভ্যানে করে স্কুলে যাওয়া অসহায় বাচ্চাদের মতো। অথচ বন্দিত্বের, চাপিয়ে দেওয়া দায়িত্বের বেড়াজাল মুক্ত হলে জীবনটা কত সুন্দর হয়ে উঠে।

মানচিত্রে যেসব সড়ক প্রদক্ষিণ করলে শহরের অস্তিত্ব বোঝা যায়, আমাদের যাত্রাপথ সেই সড়কগুলোতে। রাস্তায় যানবাহনের ভীড় নেই। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন ট্রাফিক পুলিশ। কারো মাথায় ছাতা আছে, কেউ ভিজছেন বৃষ্টিতে। ট্রাফিকের সিগনালে দাঁড়িয়ে পড়ে আমাদের গাড়িবহর।

‘এক্সপ্লোর বেলগ্রেড’ দেখার অংশ হিসেবে রাস্তায় ঘোরাঘুরি। দানিউব আর সাভা নদী যেখানে মিলে গেছে, সেই জায়গাতেই গড়ে উঠেছে বেলগ্রেড। এর গোড়াপত্তন এখন থেকে তাও প্রায় ৭ হাজার বছর আগে। যদিও এর মধ্যে ২ হাজার বছরের মতো সময় গেছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, হাঙ্গামা নিয়ে। সেই অতীত কাল থেকেই নাম-যশের জন্য বিখ্যাত বেলগ্রেড শহর। বাণিজ্যিক কারবার, পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে সংযোগস্থল, সংস্কৃতির মূল আধার- এসব কারণে আগে থেকেই অনন্য। আর এখন দেশটির সার্বিয়ার মূল অর্থনৈতিক কর্মকা-ের পরিধি এই শহর ঘিরেই। অতীতের ভিঞ্চা আর বর্তমানের হিপহপ মিলে সংস্কৃতির নতুন অবয়ব তৈরি হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণাতেও নিজেদের অস্তিত্ব ভালোভাবেই জানান দিচ্ছে বেলগ্রেড।
প্রকৃতির নিয়ম আর প্রতিদিনের চাহিদা- পরিণত করেছে আজকের বেলগ্রেড কে। শহরের যেদিকে যাই, রূপ বৈচিত্র্যের ধারা যেনো একই। সময়ের প্রয়োজনে শহরের এই যে বেড়ে উঠা- তাও ভাগ হয়ে গেছে দু‘ভাগে। এক ভাগে পুরনো শহর, অন্যপাশে নতুন। ঢাকা শহরের পুরান ঢাকা আর গুলশান-বনানী’র মতো। আমরা ঘুরছি বেলগ্রেডের পুরাতন অংশ থেকে নতুন অংশে, নতুন থেকে পুরোনোতে।

সিগন্যাল ছাড়লে গাড়িবহর এগিয়ে চলে। চারপাশে কত ফাঁকা জায়গা। নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর উঁচুতলার ভবনের সারি। শপিং মল, আবাসিক ভবন, সরকারি- বেসরকারি সংস্থার দপ্তর। আবার ফাঁকা জায়গা। নিউইয়র্কের কথা মনে পড়ে, মনে করি ঢাকাকেও। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন আকাশ ছোঁয়া ভবনের শহর। ঢাকাও প্রতিযোগিতা করছে আকাশের ছোঁয়া পেতে। ঢাকা শহরে ফাঁকা জায়গা নেই, খাল বিল জলাশয় ভর্তি করে দেদারসে গড়ে তোলা হচ্ছে বৈধ-অবৈধ বহুতল, উঁচুভবন। প্রতিযোগিতা করে বানানো হচ্ছে উঁচুভবন। ঢাকায় ভূমিকম্পের মাত্রা যদি ভয়াবহ হয়, তবে কি হবে? হয়তো কিছুই হবে না। এত এত সব ভবন, হেলে ঠেলে সব একটা আরেকটার গায়ে লেগে থাকবে। আমরা মাঝখান দিয়ে বের হয়ে যাবো। আর যদি সব হুড়মুড় করে বসে পড়ে, তাহলে আমাদের কে বের করবে? সবার তো একসাথেই নাই হয়ে যাওয়ার কথা!

আমাদের গাড়ি বেলগ্রেডের পুরাতন অংশের কোথাও। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আবাসিক এলাকা। সব একই রংয়ের বাড়ি, সবুজাভ একধরণের রং। ক্রিভোকাপিচ জানালেন, ‘শহরের আয়তন, লোকসংখ্যার ঘনত্ব, এলাকার উপযোগীতাসহ এমন বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে আবাসন ব্যবস্থা। ভিন্ন ভিন্ন এলাকার ভিন্ন ভিন্ন কোড রয়েছে, যা মেনে সবাইকে বাড়ি বানাতে হবে। বাড়ি কততলা পর্যন্ত উঁচু হবে, ড্রেনেজ ব্যবস্থার ধরণ, বাড়ির বাইরের রং কি, ভেতরে কি রং থাকবে, সামনে বাগান থাকলে তার আয়তন কত? বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পদ্ধতি কি- এসব বিষয়গুলো মেনে টেনে বাড়ি করতে হয়। চাইলেও বাপু ১৪তলা ভবন করে দিবে তা এখানে হবে না।’

শুধু বেলগ্রেডই নয়, সব উন্নত দেশেই সুশৃঙ্খল আর নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেটেনেই বাড়িঘর করা হয়। বাংলাদেশে এমন কোনো বালাই নাই। ঢাকায় স্থপতিরা একধরনের নকশা তৈরি করে দেন, আর ভবন হয় অন্য রকম। ১৪ তলার ভবন ১৮ তলা হয়। তাই তো ঢাকায় বসবাসযোগ্য পরিবেশ নাগরিকদের জন্য জটিল হয়ে পড়ছে। সৃষ্টিকর্তাই জানেন,  এই নগরীর পরিবেশ আবার স্বাভাবিক হবে কবে?

 

 

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত