শুভ কামনা
-পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালেই গৌতম বুদ্ধের কথা মনে পড়ে সুরভীর।
-চাঁদের আলোর মাঝে এক ধরণের রহস্যময়তা, নেশা থাকে। নইলে সব কিছু উপেক্ষা করে এমন আলোয় কেমন করে ঘর ছেড়েছিলেন রাজপুত্র সিদ্ধার্থ?
সুরভীও এমনই এক পূর্নিমায় সব পিছনে ফেলে হাত ধরেছিল জীবনের।
এইজন্যই পূর্ণিমা এলেই জীবনের পিছনের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায় সুরভীর।
শৈশব, কৈশোর থেকে শুরু করে প্রতিটি দিন যেন সিনেমার মতো চলে আসে সামনে।
মায়ের বকুনি, বাবার আদর, অসুস্থতায় মা- বাবার উদ্বেগ এক এক করে হাজারো লক্ষ স্মৃতি এলো-মেলো করে দেয় সুরভীর মাথাটা।
সবকিছু ছাপিয়ে মায়ের মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে আজ।
অফিসের কাজে তিনদিনের জন্য কক্সবাজার গিয়েছে জীবন। সুরভী খোলা বারান্দায় বসেছে এককাপ চা হাতে। জীবনের ফোনের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে মোবাইলের দিকে।
মোবাইলটা রাতের স্তব্ধতা ভেঙ্গে বেজে উঠলো।
সুরভী সময় নষ্ট না করে সাথে সাথে ধরল। ওপাশ থেকে জীবনের কণ্ঠ।
-হ্যালো, সুরভী…
-বলো।
-কেমন আছো?
-ভালো।
– আমাকে ছাড়া ভালো আছো?
– বলতে হয় সে জন্যই বলা। খেয়েছো?
-এই তো, এইমাত্র খেলাম। এখানে আসার সময় তুমি যে আচার দিয়েছিলে সেটা দিয়েই খেলাম।
-সবটুকু খেয়েছো?
-একদম চেটেপুটে। অসাধারণ ছিল।
– তোমার মনে আছে জীবন, একদিন সারা পৃথিবীকে উপেক্ষা করে, মা -বাবার ভালোবাসাকে দু ‘পায়ে মাড়িয়ে তোমার হাতটা ধরে ছিলাম?
-তোমার কী হয়েছে সুরভী? আর মাত্র দুইদিন। তারপরই তো চলে আসছি।
-না। তুমি আর আসবে না।
-কী বলছো পাগলের মতো? কেন আসবো না?
-তুমি আর রোদেলা দু’জন মিলে কক্সবাজার গিয়েছো। আমি জানি।
-কে বলেছে? রাসেল হারামজাদা?
-না। আমি অনেকদিন ধরেই বুঝতে পেরেছিলাম।
-সুরভী শোনো….
-না। এবার তুমি আমার কথা শোন। মন দিয়ে শোন। ঐ আচারে গন্ধহীন একটা বিষ মেশানো ছিল।
যা অল্প সময়ের মধ্যে তোমাকে আর তোমার প্রেয়সীকে ওপারে পৌঁছে দেবে।এবার কক্সবাজার থেকে ফিরে আমাকে খাওয়াবার জন্য অনেক কষ্ট করে যে বিষটা তোমরা দুজন মিলে যোগাড় করেছিলে, সেটা।
-সু- র-ভী–
-শুভ কামনা, জীবন।