“স্যার কিছু লাগবে?”
স্কুলড্রেস পরা ছেলেটি লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ভর দুপুর। হাতেগোনা লোকজনের আনাগোনা আশেপাশে। পান চিবুতে চিবুতে মধ্যবয়স্ক পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা এক ভদ্রলোক বার বার পানের পিক ফেলছেন। বার বার দেয়ালের কাছে চলে যাচ্ছেন। সরু গলির দু’পাশে সারি সারি ঘর। কলা বেণী আর খোলা চুলে অল্প বয়স্ক মেয়েরা দাওয়ায় বসে আছে। দু’একজন মধ্য বয়স্ক নারী শরীরের সমস্ত আলস্য নিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছেন। ছেলেটি মাথা নিচু করে এগিয়ে যাচ্ছে সরু গলি দিয়ে। জালির টুপি পরা এক অল্প বয়স্ক ছেলে তাকে হাত নেড়ে ডাক দিলো। সে দেখেও না দেখার ভান করলো। আড়চোখে দেখছে আশপাশ। ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে সরু পথ ধরে।
কাছে এক ঘর থেকে একজন প্রৌড়া মহিলা হঠাৎ এসে তার হাত চেপে ধরলেন। বললেন, “তোমার নাম কি?” ছেলেটি হকচকিয়ে গেল। মহিলা বললেন, “আমার সাথে আসো! অনেক্ষণ যাবত তোমাকে দেখছি ঘুরাঘুরি করছো। এদিকে আসো!” ছেলেটি মহিলার পিছু নিলো। তার বুক ঢিবঢিব করছে।
তারা একটা ঘরে এসে বসলো। ঘরে বেশ কয়েকজন মেয়ে। মহিলা হাঁক ঝাড়লেন, “এই গোলাপিকে ডাক তো!” একজন কলা বেণী করা কিশোরী দ্রুত বেড়িয়ে গেলো গোলাপিকে ডাকতে। ছেলেটি মাথা নিচু করে বসে আছে। মহিলাটি তাকে দেখে হঠাৎ করেই হেসে গড়িয়ে পড়লেন। ঘরের অন্যান্য মেয়েরাও কেউ শব্দ করে আর কেউবা মুখ টিপে হাসতে শুরু করলো। ছেলেটি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তার মনে হল এক্ষুনি দৌড়ে পালিয়ে যাবে।
গোলাপি আসলেন। এসেই বললেন, “ডাকলে কেন মা? এতো ডাকাডাকি কেনো!” দ্রুত ছেলেটিকে একবার দেখে নিলো। গোলাপি তরুণী। তার চুল খোলা। নাকে নথ। ছেলেটি চকিতে তাকে একবার দেখলো। প্রৌড়া মহিলাটি হেসে বললেন, “একে নিয়ে যা!” আবার হেসে গড়িয়ে পড়লেন। ঘরের অন্যান্য মেয়েরাও আবার হাসতে লাগলো। ছেলেটি ভাবলো দৌড়ে পালিয়ে যাবে।
গোলাপি ছেলেটিকে পাশের ঘরে নিয়ে এলো। খাটে বসালো। ছেলেটি লজ্জায় চোখ নিচু করে আছে। তাকাতে পারছে না। গোলাপি ছেলেটির চিবুক তুলে বললো, “এদিকে তাকাও! ভালো করে দেখো আমাকে!” এই ভর দুপুরেও ঘরে বাতি জ্বলছে। দরজা জানালা বন্ধ। বাইরের কোলাহল এ’ঘরে পৌঁছে না। মেয়েটি বললো, “চলে গেছে, তাই না?” আশ্চর্য মুখে ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে অস্ফুটে বললো, “জী!” মেয়েটি মৃদু হেসে বললো, “কিছু বলে যায় নাই, তাই না?” ছেলেটি মাথা নিচু করলো, “জী!” কান্নায় তার চোখ ফেটে আসছে। মেয়েটি তার গালে হাত বুলিয়ে দিলো। উঠে গিয়ে বাতি নেভালো। তারপর মৃদু স্বরে ছেলেটিকে বললো, “শোনো, এই প্রথম আমি বাতি নেভালাম!”
২১.১১.‘১৪