অমানুষ

                                            

মানুষ বলে বউ পিটাতে নাকি সেই মজা! কই? আমি তো কখনও মজা পেলাম না, নাকি আমার কপালে সুখ নাই? শালার আমার বউটাও জিরজিরে, কাঠখোট্টা টাইপ, গায়ে মাংস বলতে কিছু নেই। শালার তাই পিটিয়ে কোন সুখই পাই না। মোটাসোটা স্বাস্থ্যবান না হলে কি আর হাতের সুখ হয়? এই সব ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতেই আমি তার পিঠ বরাবর একটা লাথি মারলাম। শালার আফসোস করে করেই জীবনটা গেল। মাকে পইপই করে বলেছিলাম, অমন দুর্বল মেয়েকে ঘরের বউ করে এনো না। মা বাপ তো যৌতুকের টাকা দেখেই দিন দুনিয়ার কথা ভুলে গেছে আর আমার ঘাড়ে জুটিয়ে দিয়েছে এই রোগা পটকা বউ। পর পর দুইটা কষে থাপ্পড় লাগালাম। নাহ! রাগটা কিছুতেই যাচ্ছে না আজকে। সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা উপার্জন করে আনি আর বাসায় এসে দেখি মেমসাহেব পায়ের উপর পা তুলে ঘুমাচ্ছে, ভাতটাও রাঁধে নি। 

 

“কতবার করে বলেছি, বাসায় ফিরে ভাত না পেলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়? রাঁধিস নি কেন বল?”- আমি গর্জে উঠলাম। 

 

“সারাদিন পানি ছিল না, বাড়িওলিকে কতবার করে বলেছি ঠিক করতে তাড়াতাড়ি, করে নি।“- মিনমিন করে জবাব এলো। 

 

“তো পানি কিনে এনে ভাত বসাতি, সেটা করলি না কেন? সারাদিন শুধু নাক ডাকিয়ে ঘুম? “- বলেই চুলের মুঠিটা ধরে ঘরের কোণে ধাক্কা মারলাম। রোগা শরীর, তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেল, কোণায় একটা টেবিল ছিল, ওটার উপরেই। কিছুক্ষণ ওইভাবেই পড়ে রইল। একটু পর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে যখন আমার দিকে ফিরল, দেখালাম কপালের কোণটা থেঁতলে যেয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে। এরপরও চোখে এক ফোঁটা পানি নেই। ভাঙ্গবে কিন্তু মচকাবে না টাইপ ভাবভঙ্গি।  কেমন পাথরের মত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। মন চাইছে পেট বরাবর একটা লাথি কষাই, তাহলে রাগটা কমবে। কিন্তু না, সেটা করা যাবে না। পেটে বাচ্চা এসেছে ৬ মাস, লাথি দিলে পরে একটা কেলেঙ্কারি হয়ে গেলে বিপদে পড়ব। 

 

আমি রাগটা চাপা দিয়ে শার্টটা গায়ে চড়িয়ে বেরিয়ে পরলাম বাড়ি থেকে। কিছু মুখে দিতে হবে আগে, পেটে আগুন জ্বলছে। খেতে খেতেই মনে পড়ল, বাসায় রান্না হয় নি। আমি খাওয়া শেষ করে সিগারেট ধরিয়ে একটা সুখটান দিলাম। কিছু নিয়ে যাবো নাকি বউটার জন্য? হটাত যেন আমার মন মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। মায়া? ধুর! আসলে পেটের চাহিদা শেষ হতেই শরীরের চাহিদা বেড়ে গেছে। আমার আবার ওইটার চাহিদা একটু বেশিই। খাবার না নিয়ে গেলে রাতে আবার কাছে ভিড়তে চাইবে না। সিগারেটটায় শেষ টান দিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। গরম ভাত, একটা সবজি আর মাছের ঝোল নিলাম বউটার জন্য। 

 

ঘরে ঢুকেই দেখি সে খাটের এক কোণায় মাথা নিচু করে বসে আছে। শব্দ হতেই আমার দিকে মুখ তুলে তাকাল। চোখ গুলো ভেজা ভেজা মনে হল। কাঁদছিল নাকি? নাহ! মার টা একটু বেশিই হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। আমি খাবারটা তার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে যতটা সম্ভব নরম গলায় বললাম,

 

“তাড়াতাড়ি খেয়ে বিছানায় আসো, আমি অপেক্ষা করছি।“- নরমভাবে বলার চেষ্টা করলেও গলা দিয়ে কেমন কর্কশ আওয়াজ বের হল।

 

“ডাক্তার আপা বলছিল, এই সময় বেশি কিছু না করতে।“- সে মিনমিন করে উত্তর দিল। 

 

“ কি বললি? চুপচাপ বিছানায় আয়, নাহলে কালই ঘরে তোর সতীন তুলে আনবো।’- আমি পশুর মত চিৎকার করে বললাম।

 

সে খাবারটা হাতে নিয়েছিল কিন্তু আমার কথা শুনে পাথরের মত মুখ করে বসে রইল। আমার মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল। তার চুলের মুঠিটা ধরে একটানে পরনের কাপড়টা খুলে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সে ব্যথায় চিৎকার করে  উঠে সরে যেতে চাইল। “চুপ।“- আমি তার মুখ চেপে ধরে রাগের বশে তলপেটে একটা লাথি বসালাম। সে পেট হাতে চেপে ধরে বিছানায় পড়ে গেল। আমি কোন ভ্রূক্ষেপ না করে নিজের কাজ করে যেতে লাগলাম। জানোয়ারের মত চেটে পুটে খেয়ে পরম তৃপ্তি নিয়ে আমি তাকে মুক্তি দিলাম। আর সে বিছানার এক কোণে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে রইল। আমি কাঁথাটা তার নগ্ন গায়ের উপর ছুঁড়ে দিয়ে বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে পরম তৃপ্তিতে টানতে লাগলাম। আহ! সুখ। শেষ টান দিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম। সে তখনও ওইভাবেই পড়ে আছে। থাক পড়ে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমের অতলে তলিয়ে গেলাম। 

 

শেষ রাতের দিকে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে আমার ঘুমটা পাতলা হয়ে আসলো। মনে হলো পাশের সব কিছু কাঁপছে। ভুমিকম্প হলো নাকি? আমার ঘুমটা পুরোপুরি উবে যায়।  নাহ! বউ আমাকে মৃদু স্বরে ডাকছে, ধাক্কাচ্ছে। 

 

“এই একটু উঠেন, উঠেন না।“- কাতর স্বরে সে ডাকছে।

 

“কি হল এত রাতে? কি সমস্যা তোর?”- আমি কিছুটা রাগী স্বরেই বললাম।

 

“আমার না ওইদিক দিয়ে অনেক রক্ত যাচ্ছে তখন থেকেই, কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না”- সে কেমন যেন ক্লান্ত স্বরে বলল। আমি তার দিকে তাকালাম। চেহারা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। পরক্ষণেই সে বিছানায় ঢলে পড়ল। দেখে আমি কিছুটা ভয় পেলাম। কেস খেয়ে গেলাম নাকি? তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বাইরে আসলাম রিকশা ডাকতে। ভোরের আলো পুরোপুরি ফুটে উঠতে শুরু করে নি। তারমানে প্রায় সারারাত ধরেই রক্তপাত হয়েছে তার কিন্তু আমাকে ডাকে নি। আমি রিকশা ঠিক করে তাকে পাঁজকোলে করে নিয়ে সদর হসপিটালে রওনা হলাম। সে অচেতন হয়েই আছে। ডাক্তার একনজর দেখেই তাকে ইমারজেন্সিতে পাঠিয়ে দিল। আমি বোকার মত সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর এসে বলল, 

 

“খারাপ খবর, আপনার স্ত্রীর গর্ভপাত হয়েছে। অনেক রক্তক্ষরণ ও হয়েছে, আপনি জলদি রক্তের ব্যবস্থা করুন নাহলে উনাকেও বাঁচানো যাবে না।“

 

শুনে আমি হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। কিছু বুঝতে না পেরে আমার মা কে ফোন দিলাম।

 

“ মা, ও পা পিছলে পড়ে যেয়ে ব্যথা পেয়েছে, গর্ভপাত হয়ে গেছে, এখন হাসপাতালে। কি করবো?“

 

“সত্যি করে বল, তুই কিছু করিস নি তো?”

 

আমি ইতস্তত করে বললাম, -“হু, করেছি”।

 

“কতবার করে বলেছি? রাগটা কমা। রোগা মেয়ে, গায়ে হাত তুলিস না বেশি। কিন্তু হয়েছিস তো পুরা বাপের মত। কি আর করবি এখন? ওর মা বাবা কে ফোন দিয়ে বাসায় চলে আয়। রোগা মেয়ে বিয়ে দিয়েছে, এখন ঠেলা সামলাক। তুই কিছু করেছিস এটা আবার বলতে যাস নে ।“

 

আমি বাধ্য ছেলের মত ওর মাকে ফোন দিয়ে রক্তের ব্যবস্থা করতে বলে বাসায় চলে এলাম। ভালো করে বললে বলতে হবে যেন পালিয়ে বাঁচলাম। বাসায় এসেও ভয় ভয় করতে লাগলো, যদি বুঝতে পারে আমি মেরে এই অবস্থা করেছি? আমি ফোনটা বন্ধ করে দিলাম।  ঐদিন রাতে ওর বাপ খবরটা দিল, যথা সময়ে রক্তের ব্যবস্থা হয় নি, মারা গেছে সে। শুনে আমার তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হয় নি। আসলেই কোন কাজের ছিলনা মেয়েটা।  

 

তারপর কেটে গেছে প্রায় মাস দুয়েক। তার বাপ মা ও এই ব্যাপারটা নিয়ে পরে তেমন কোন ঝামেলা করে নি আর। আমার বাপ মাও ইতোমধ্যে আবার মেয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছে আমার জন্য। তাদের দরকার যৌতুকের টাকা আর আমার দরকার তিনবেলা রান্না করে দেয়ার মত স্বাস্থ্যবান শয্যাসঙ্গী। 

 

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত