দাদু মারা গিয়েছেন! ফোন মারফৎ খবর পেয়েছিলাম। নিজের দাদু নন, আমার এবং বৈবাহিক সূত্রে দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ির বড়কর্তাকে আমরা সবাই দাদু বলেই ডাকতাম।
ওই জমিদার বাড়ির সঙ্গে আমার নিজের পরিবারের সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। তবে আমার শ্বশুর বাড়ির খুব কাছের আত্মীয়ের সঙ্গে দাদুর নাতির বিয়ে হওয়ায় যাতায়াত শুরু হয়েছিল। তখনই দুর্গাপুর বাড়ির বিভিন্ন লোকজনের কাছে, গল্পের সময় শুনেছিলাম, দূর্গাপুর জমিদার বাড়িতে ভুত আছে।
আসলে, দুর্গাপুরের কিছুদুরের মারনাই এলাকা জমিদার ছিলাম আমরা। সেই থেকেই রেষারেষি ছিল দুই পরিবারের মধ্যে। ঘটনাচক্রে আমাদের সঙ্গে দুর্গাপুর বাড়ি আবার নিজেদের জ্ঞাতির মধ্যেই পড়ে।
দাদুর মরদেহ দাহ করা হয়েছিল ত্রিবেণির গঙ্গার ধারের শ্মশানে। শ্রাদ্ধের আগে এক সন্ধ্যায় দুর্গাপুর বাড়িতে ফোন করে জানালাম, আমরা সস্ত্রীক হবিষ্যি নিয়ে আসছি। সেসময়ই আমার স্ত্রী ফোনে শুনে রেখেছিলেন, সন্ধ্যায় বাড়ির একতলার দুর্গাদালানের সামনে সন্ধ্যা কীর্তনের সময় থাকবেন।
শীতের সন্ধ্যাতে আমি সস্ত্রীক গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছি দুর্গাপুর বাড়িতে। পুরানো দিনের জমিদার বাড়ি যেমন হয়, এই বাড়িও তেমনই। একতলার করিডোর দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলাম এক মহিলাকে। মহিলার গায়ের রঙ যথেষ্ট কালো, কানে বড়বড় দুটো সোনার দুল। তাঁকে দেখে আমার স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় হচ্ছে কীর্তন!”
মহিলা আমাদের জানালেন, “এই তো এদিকে। এসো আমি জায়গাটা দেখিয়ে দিচ্ছি।”
মহিলাকে অনুসরন করে এগিয়ে যখন পরিচিতদের দেখলাম, তখন নিজেরাই নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আর ওই মহিলাকে আর খেয়াল করিনি। কীর্তন শেষে বাড়ির দোতালায় উঠে সবার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। সেখানে আমার ভায়রা ছিলেন। তিনি কলকাতার মানুষ। আমার ডেকে বললে, “দাদা, বড্ড টার্য়াড লাগছে! একটু হবে নাকি!”
আমি শীতের ঠান্ডা রাতে এই ডাক এড়াতে পারলাম না। ভায়রা আমাকে নিয়ে গেল এক ঘরে। সঙ্গে আমার স্ত্রীও ছিলেন। ভায়রা আলমারি থেকে হুইস্কির বোতল যখন বের করে আমাকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করছেন, তখন আমার স্ত্রীর চোখ পড়লো ঘরের দেওয়ালে টাঙ্গানো ফ্রেমে বাঁধানো এক মহিলার ছবির দিকে। আমার স্ত্রী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কার ছবি!”
ভায়রা একবার দেখে উত্তর দিলেন, “ওটা দাদুর আগের বৌ, আমাদের বড় দিদা।”
আমিও অবাক! এই মহিলাই তো কিছুক্ষন আগে নীচে আমাদের কীর্তনের জায়গা দেখিয়ে ছিলেন! ওই ঘটনার পরে আর কোনদিন দুর্গাপুর জমিদার বাড়িতে ওই মহিলাকে আমরা দেখিনি!!!
(সত্য ঘটনা)