কারও মাথায় ঢোকে না এমন মারাত্মক ভুল কেমন করে হলো। অথচ সহজ একটা প্রশ্ন। আর তিনবেলা টিচার রেখে পড়ানো হয়েছে। এখন তো দেশদ্রোহীর মামলায় জেলে যেতে হবে।
ছোট খালামণি প্রশ্নটা আবার হাতে নেয় এবং ছেলেটার কাছে গিয়ে জানতে চায়- দেশটা কি তোর বাপের? এ কথায় ছেলেটা হাউমাউ করে আরও জোড়ে কেঁদে ওঠে। ওর কান্নায় খালামণির হয়তো আরও বিরক্ত লাগে। সে ছেলেটার গালে জোড়ে এক চড় বসিয়ে দেয়। এবং এতে কাজ হয়। কান্নার আওয়াজ কমে আসে।
ছেলেটা কাঁদছে। আর এই ভেবে সবাই আশ্চর্য হচ্ছে যে, আজকাল এমন বোকা ছেলেও দুনিয়াতে আছে।
মা বিলাপ করছে। এখন যদি ওকে দেশ থেকে বের করে দেয়! ক্রশফায়ারে দেয় যদি! আমরা ওর মা-বাবা এই অপরাধে না জানি আমাদের কী হয়! মায়ের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ।
কিছু হবে না- ছেলেমানুষ, বুঝতে পারে নাই। মা-বাবাকে সান্তনা দিচ্ছে সবাই। মা কাঁদছে আর বলছে, তা-ই যেন হয় দোয়া করো।
এই বিপদের কথা শুণে মামা খালা চাচা ফুফু অনেকেই ছুঁটে এসেছে। বিপদের হাত-পা নাই, কখন আর কেমন করে যে আসে, এই বস্তু দেখাও যায় না।
অদ্ভুত দৃষ্টিতে সবাই ওর দিকে তাকাচ্ছে। প্রত্যেকের দৃষ্টিতে এক ধরনের ঘৃণার ছাপ। ছেলেটা এমন গাধা! দুধের বাচ্চাও তো জানে এ-দেশের মালিক রাজা প্রতাপাদিত্য।
বাবা কপালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে সোফায়। সে যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে রাতে র্যাবের একটি গাড়ি বাসার সামনে এসে থামছে, ডিবি পুলিশও হতে পারে। তারা দরজায় নক করছে, না খুললে দরজা ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
ঘটনা হল আশাদুজ্জামান ও বেগম কুলসুম দম্পতির বড় ছেলে রাশেদ বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। একটি প্রশ্ন এসেছে- সবুজে শ্যামলে ভরা এই দেশ কার? রাশেদ লিখে এসেছে জনগণের।