মেয়েটি তার মরদেহগুলো নিয়ে ঘাস হয়ে গেল

মেয়েটা মরে যাবার জন্য অপেক্ষা করেছিল। মেয়েটা মরে গেল। বেঁচে থাকা পৃথিবীতে কোনো শূন্য জায়গা তৈরি হলো না। হয় না অমন। মানুষের জলাশয় থেকে কেউ চলে গেলে আপনি এসে ভরে যায় জলের গহ্বর। দু-মুহূর্ত থমকাল কেউ কেউ, কেউ কেউ আরো কয়েক মুহূর্ত তাকে চিন্তায় বাঁচিয়ে রাখল। তারপর মেয়েটা সবখান থেকে মরে গেল। কীভাবে মরে গেল এ নিয়ে ভাবল হয়ত কেউ। কিন্তু মীমাংসা হলো না। কারণ সে তো একভাবে নয়, অনেকভাবে মরেছে। মানুষ কি আর একভাবে মরে নাকি! আর একবারই মরে নাকি! মানুষ মরে বহুভাবে। অপর মানুষদের হৃদয়ে হৃদয়ে মানুষের মৃত্যু হয়। সেভাবে দেখতে গেলে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ই একটি করে গোরস্থান।- বলল হয়ত কেউ। স্বগতোক্তির মতো। অন্য কেউ ভাবল, সত্যি তাই! তারপর তাদের ভেতরকার গোরস্থানে মরদেহগুলো খুঁড়ে বের করতে ব্যস্ত হলো। হয়ত দেখল, মেয়েটির কোনো মরদেহ পড়ে রইল কিনা তাদের ভেতরের গোরস্থানে। আর মরে যাওয়া মেয়েটা খুঁজতে আরম্ভ করল তার হারানো মরদেহগুলো। সবগুলো মরদেহকে নিয়ে ফিরতে হবে তো! যেহেতু একভাবে নয়, অনেকভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তাই অনেকরকম মরদেহ তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে বৈকি। কোথাও আবার ভুল করে রয়ে গেলে পৃথিবীর সঙ্গে সম্বন্ধ রয়ে যায় যদি! যদি ফিরে ফিরে আসে কে কোথায় তার নিজস্ব গোরস্থানে তাকে চাপা দিয়ে রেখেছে তারই খোঁজ নিতে! মৃত মেয়েটা খুঁজতে থাকে, ডাকতে থাকে। এক এক করে জমা হতে থাকে তার মরদেহ, স্তূপ হয়ে ওঠে। মেয়েটা এবারে চলে যাবে বলে ভাবে। কিন্ত না সে চলে যেতে পারে না। অনেক মরদেহ বিছিয়ে সে তখন ক্রমশ ঘাস হয়ে উঠছে। তার কপালে লেগে রয়েছে জ্বোনাকি। যে সমস্ত অপমান সে প্রাণপণ মুছতে চেয়েছিল, পারেনি- সেগুলো সব জ্বোনাকি হয়ে গেছে। চুলে লেগে আছে কুয়াশা। সে আড়াল চাইত প্রাণপণ, মানুষের থেকে, পৃথিবীর থেকে। কুয়াশা তাই তাকে আড়ালের কোল বানিয়ে দিয়েছে। তার পায়ের গোড়ালিতে থেতলানো কৃষ্ণচূড়া। পায়ের আঙুলে খলসে মাছের ভাঙা ঘর। হাতের তালুতে অজস্র রাত্রির অন্ধকার যাদেরকে সে চোখে মেখে নিত। আঙুলে বিষণ্ন বিহ্বলতা। নখের ভেতর বিচ্ছিরি সব শূন্যতা। আর বুকজুড়ে গজিয়ে উঠেছে নীলরঙা ফুল। যেখানে আগে হামাগুড়ি দিত ভয়। ভীষণরকম ভয়। ভয়ের আড়াল নিতে অনেকগুলো তাকে সে বুকের ভেতর পুরে রেখেছিল। সেই অনেকগুলো লুকোনো সে নীলরঙা ফুল হয়ে ফুটে আছে। আর তার সমস্ত শরীর তখন ঘাস, কুয়াশায় লুকনো ঘাস। সে মরে গেছে। তার সবগুলো মরদেহ কুড়িয়ে নিয়ে সে ঘাস হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত