জীবন যখন যেমন

#জীবন_যখন_যেমন

মেয়েটা যখন বললো মা তুমি কেনো এত ইমোশনাল? এটাই তো নিয়ম, আমি যেমন তোমায় ছেড়ে অন্য একটি সংসারে এসেছি,তেমনি তুমিও এসেছিলে। এটাই তো এই বিশ্ব সংসারের নিয়ম। মা স্থির হয়ে শোনে, সকলেই হয়ত বলবে হ্যাঁ ঠিক ঠিক এটাই ঠিক। মেনে নিতে হয় নিয়ম জেনেও মায়ের বুকের ভেতরটা উলট পালট লাগে। কারণটা হয়তো এইজন্য যে এই মায়ের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। ৯০ দশকের কিশোরী বেলায় বিয়ে, যার হয়ত স্বামী সংসার, পরিবার ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো ধারনা থাকার কথা নয়। সে মা হোলো সেই সন্তানটিকে দেখে সে নিজেই অবাক হয়েছিল। একটা জীবন্ত পুতুলের মত। সে না থোয় মাটিতে না থোয় মাথাতে। সংসার না জানলেও এই পুতুলটাকে জীবনের সাথে আত্মার সাথে বেধে নিয়েছিলো। সময় পরিক্রমায় আরেকজন ছেলে সন্তান আসে। কিন্তু মেয়েটাই যেন তার মায়াময় এক অধ্যায়। পুতুলটির হাসি কান্না আনন্দ খুশি সবই যেন নিজেরই প্রতিচ্ছবি।একটা সময় মা নিজেকেই এই মেয়ের মধ্যে আবিষ্কার করে। তার নিজের অপূর্ণ ইচ্ছে চাওয়া পাওয়াগুলি যেনো মেয়েটার মাঝেই পূর্ণতা পেতে দেখে। সময় গড়িয়ে মেয়েটা গ্রাজুয়েশন শেষ করলো। থিসিস করলো।এই সব সাফল্যের পেছনে মা ছিলো নিশ্চল ভাবে দাঁড়িয়ে, কারণ মা জানে একটা মেয়েকে সাফল্যের ওই পর্যায়ে নিতে আমাদের এই সমাজের বেশির ভাগ পরিবারগুলিতেই বাবাদের তেমন ভূমিকা থাকেনা। যদিও অর্থনৈতিক জোগানটা তারাই দেন।

সবাই বলতে থাকে, মেয়ে তো বড়ো হয়ে গেছে বিয়ে দিয়ে দাও। মা ভাবে কোথায় বড় হলো। এই সেদিনের কথা এখনো তো এই পুতুলটাকে খাইয়ে দিতে হয়, পাশে ঘুমাতে হয়। শুধু প্রাইভেট ভার্সিটি তে পড়েছে দেখে পড়া শেষ হলো। শখ করে একটা জব করা শুরু করলো।
তবু লোকের মুখ কি আর বন্ধ হয়, তাই শুরু হয় বিদায়ের পালা। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে মা বুঝতে পারে তার পুতুলের নিজস্ব সত্বা আছে সে মায়ের থেকে আলাদা হতে চায় এখন আর সব বিষয় মাকে বলে না। নিজের আনন্দ, নিজের খুশি নিজের মাঝেই রাখতে চায়। হয়ত এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ২৪ টা বছর যে মা নিজের দিকে তাকায়নি। মেয়েটা যখন অন্যের ঘরে তখন হঠাৎ তার খেয়াল হলো সেই ১৬ বছরের কিশোরী বউ, মাঝ খান দিয়ে নদীর স্রোতের মতন দীর্ঘ একটা সময় কিভাবে পেরিয়ে গেলো? সে সময়ের কোথায় দাড়িয়ে আছে এখন? নিজেকে কোথায় হারিয়ে ফেলেছিল?
হয়তো সবাই বলবে এটাই নিয়ম। কিন্তু সবাই কেনো বুঝেনা?? এই নিয়মটা মেনে নিতে এই মায়ের কতটা কষ্ট হয়েছে। এক এক সময় মনে হয়েছে বুকের একটা পাশের কলিজাটা কেউ ছিড়ে নিয়ে গেছে। সবার মাঝে থেকেও চরম একাকিত্ব গ্রাস করেছে।

সময় সব কিছু মেনে নিতে শিখিয়ে দেয়। মা এখন নিজেকে আয়নায় দেখে দেখে খুশি থাকে
নিজেকে সাজিয়ে আয়নার সাথে নিজেই প্রশ্ন করে। বলে,কোথায় ফেলে এলে সেই দিন,সেই সময়? আর কি খুঁজে পাবে?

 

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত