সকালবেলা নাস্তা শেষ করে চায়ের সঙ্গে আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরিয়েছেন কি না ধরিয়েছেন ওই মুহুর্তে সব্জিঅলার আগমন। এসেই হম্বিতম্বি, হৈচৈ শুরু। ভেবেছিলেন একটা জম্পেশ গল্প লিখবেন। আর হলো কই!
– নাহ্। তোম্রার জ্বালায় দেখছি লেখালেখিটাও ছাইড়া দিতে হইবো! খেদের সাথে বলেন গল্পকার রিয়াজ রহিম।
– বা রে, রাগ করার কথা আমার, রাগ দেখান আপ্নে। মাথার ঝাঁকা নীচে নামিয়ে রাখে সব্জিঅলা মফিজুদ্দি।
– আচ্ছা, কওতো কী অভিযোগ তোমার? শরীরটা পুরনো নড়বড়ে চেয়ারটাতে ছেড়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করেন গল্পকার।
– কেন ভাই, আপনি জগতে এত কিছু থাকতে আমারে নিয়া গপ্পো বানাইলেন ক্যান?
– তোমারে নিয়া? নাতো। অবাক হন রিয়াজ রহিম।
– আরে, ওই যে আপনি লেখলেন, মফিজুদ্দি সবজি বেচে…
– অহহো, গল্পটাত তো মফিজুল নাম…মফিজুদ্দি কই!
– আরে মফিজুলই যে মফিজুদ্দি তা কেডায় না বুঝবো! আইচ্ছা, আপ্নে ক্যাম্নে পারলেন, কইনছেন দেহি?
– কেন কী হইছে? তাতে কী হইছে?
– কী হয় নাই, ওইডাই কন। খেপে যায় মফিজুদ্দি। আরে, আপ্নে ক্যাম্নে লেখলেন আমার রুজি-রোজগার নাই, ভাতের অভাবে নীরবে কান্দি, এইসব।
– আহা মফিজুদ্দি, কথা বুঝার চেষ্টা করো।
– আবার লেখছেন, সবজি বেচার ফাঁকে আমি জুনির মার দিকে আড়ে আড়ে চাইয়া দেহি..!
– এইডা হইলো গিয়া তোমার করুণ গল্প। গরীব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা…
– আরে রাখেন মিয়া, গরীব মানুষ! আপ্নে গরীব মানুষ পাইলেন কই?
– তুমি গরীব না? তোমার চলতে ফিরতে কষ্ট হয় না? তুমিও তো সবজি…
– হ, আমি যে গরীব আপ্নেরে কেডা কইছে? আপ্নের কাছে গেছি কোনোদিন দুই-চাইর আনা সাইয্যের লাগি?
– আচ্ছা, আমি যে গপ্পো লেখলাম, তা তুমি জানলা ক্যাম্নে? তুমি কি লেখাপড়া জানো?
– আরে আপ্নে ইস্পিডবোডো না ইন্টারনেডো কই জানি লেখছেন! ভাতিজা কইলো।
– হাহাহাহা, ওইটা স্পীডবোট না। ফেইসবুক। আর শুধু ফেইসবুক না পেপার পত্রিকায়ও তো আমার লেখা ছাপে।
– আর মাইত্তেন না মিয়া, আমার পেস্টিজ পাংচার কইরা আবার হাসেন, শরম নাই…সবচেয়ে বড় ক্ষতিডা কী করছেন জানেন আপ্নে?
– না। কী?
– বড় ক্ষতিডা হইলো– জুনির মা কইছে আমি জানি আর ওইদিকে না যাই…।
….
– কী ব্যাপার রহিম মিয়া। তুমি নাকি বড় সাহিত্যিক হইয়া গেছো? দেশ উদ্ধার করতেছো?
আবার শুরু।
– করছো তো মিয়া বিএ পাশ। মফস্বল কলেজে। ডাক্তারীর কী বুঝো? ডাক্তাররে কসাই কইয়া গপ্পো বানাও!
ডাক্তারের পিছন পিছন উকিল।
তারও অভিযোগ- হ, রহিম মিয়া আম্রারেও বিদ্রুপ কইরা গল্প লেখছে। আমরা নাকি মক্কেলরে বেক্কেল বানাই!
আসে উপজেলা ভারবাহী কর্মকর্তা
আসে চোর
আসে ডাকাত
আসে পুলিশ
আসে মজুতদার
আসে ইমানদার
সবার অভিযোগ এক। অনুভূতিতে আঘাত!
…..
ভীরু মানুষ রিয়াজ রহিম। অতএব সিদ্ধান্ত নেন– এখন থেকে ফুল, পাখি নিয়ে লিখবেন, লিখবেন এলিয়েন নিয়ে। মানুষ নিয়ে না।
সকাল বেলা দরজায় খটখট। এগিয়ে যান তিনি। দেখেন দরজায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে। হাতে ‘দিনের আলো’। মনে পড়ে একটা গল্প লিখে পাঠিয়েছিলেন দিন কয়েক আগে।
– কী আমাদের খুব দুর্বল পেয়েছেন। না?
– মানে? ঠিক বুঝলাম না।
– বলি, এলিয়েনদের শত্রু মনে করেন কেন? এলিয়েনরা খারাপ। ওরা পৃথিবী ধ্বংস করে ফেলবে…কী আজগুবি লেখা…! দেখেন, আমরা কিন্তু আপনাদের প্রতিবেশী। সূর্যের পর সবচেয়ে কাছের সোলার সিস্টেম। আলফা সেন্টরাই। অতএব বুঝলেন…?
ভাবতে থাকেন রিয়াজ রহিম– তিনি কি লেখালেখি ছেড়ে দেবেন?