“নাম কি তোর?”
“রানা।”
“বয়স কত?”
“সতারো।”
“পড়াশোনা করোস?”
“ক্লাস সেবেন পর্যন্ত করসি। এহন ইস্কুলে যাই না।”
“বাড়িতে কে কে আছে?”
“মা আর রুবেল ভাইজান।”
“তোর একটাই ভাই?”
“হ।”
“তোর ভাই যে একটা আকাম করছে, জানোস?”
“জ্বে না।”
“জানোস না? মিছা কথা কস? শিউলিরে চিনোস?”
“হ, চিনি। আমজাদ চাচার মাইয়া।”
“শিউলি স্কুলে যায়?”
“হ, ক্লাস ফাইবে পড়ে।”
“শিউলিরে শেষ দেখছোস কবে?”
“মঙ্গলবার বিকালে আমগোর লগে মেলায় গেছিলো, তহন।”
“আমগোর লগে? কার কার লগে?”
“ভাইজান আর আমার লগে।”
“এরপরে মেলা থেইকা তোর ভাই শিউলিরে নিয়া খালের পারের জংলায় গেছিলো- তুই দেখছোস?”
“আমি…”
“কি হইলো? দেখোস নাই?”
“আমি… আমি দেখি নাই।”
“তোর ভাই মেলা থেইকা বাইর হয়া খাল পারের জংলার দিকে যায় নাই?”
“ভাইজান বাড়িত গেসিলো।”
“বাড়িত গেসিলো? তাইলে তোর ভাইয়ের চাদ্দর কেম্নে জংলায় গেলো? আর চাদ্দরে শিউলির রক্ত লাগলো কেম্নে?”
“ভাইজান বাড়িত গেসিলো।”
“আইচ্ছা? আর শিউলি কই গেসিলো? তোর ভাইজানের লগে বাড়িত?”
“না, শিউলি খাল পারের দিকে গেসিলো।”
“একলা একলা মেলা থেইকা খাল পারের দিকে গেসিলো?”
“না, একলা না। আমার লগে।”
“তোর লগে?”
“হ, মেলা থেইকা বাইর হয়া ভাইজান কইলো শিউলিরে ওর বাড়িতে দিয়া আয়, আমি বাড়িত যাইগা। আমার শীত করতেসিলো তাই ভাইজান তার চাদ্দর আমারে দিসিলো।”
“তারপর?”
“তারপর আমি শিউলিরে নিয়া খালপারের জংলায় যাই। অইখানে ওরে একটু ধরতে চাইছিলাম, তহন শিউলি পারাপারি করা শুরু করে। তহন আমি ধাক্কা দিলে হের মাথা ইটার উপ্রে পইড়া ফাইট্টা যায়। আমি চাদ্দর দিয়া রক্ত আটকাইবার চাইসিলাম।”
“পরে?”
“পরে দেহি যে হে নড়ে চড়ে না, আমি তহন ডরায়া দৌড়ায় বাড়িত চইলা আসি।”
“আর চাদ্দরটা কি করসিলি?”
“বাড়িত আইসা চকির তলে লুকায়া রাখি।”
“চকির তলে? হারামজাদা তরে কয়বার শিখাইতে হইবো? চাদ্দর জংলায় একটা ঝোপে লুকায়া থুইয়া আইছোস, চকির তলে না। পুলিশ যখন জিগাইবো তখন যদি এইরকম ভুল করোস তাইলে জেলে যাওনের আগে আমি তোরে জিন্দা মাটিত পুইতা যামু। একটা খুনের যেই শাস্তি, দুইটা খুন করলেও হেই শাস্তি-ই।”
ভয়ার্ত চোখে বড়ো ভাইয়ের ক্রুদ্ধ চেহারার দিকে তাকিয়ে মিন মিন করে রানা বলে, “না ভুল হইবো না ভাইজান।”
“আচ্ছা আবার প্রথম থেইকা আয়। নাম কি তোর?”