ভোর। ১৪টি শালিক। ২টি বিড়াল ছানা। জন্মের ৪ দিন বয়স থেকেই বিড়াল দুটির সখ্য। প্রতিদিন একই সাথে খাবার খায়। তাদের সকাল হয় শালিকের ডাকে। ১৪টি শালিকের ডাকে। জন্মের ৪র্থ দিন থেকেই এই সম্পর্ক। মালিকের খাবার খেয়ে একটু আড্ডা দিয়ে যখন শুতে যায় তখন গভীর রাত। তাই সকালে কোনো দিন যদি শালিক গান না গায় তো তারাও ঘুম থেকে ওঠে না।
৪ মাসে প্রতিদিন এই রুটিনে বিড়াল ছানা দুটি অভ্যস্ত। বিপত্তি ঘটল এখানেই। গত ৩ দিন বিড়াল দুটির ঘুম ভাঙছে না। মালিক যখন তার রুম পরিষ্কার শুরু করে ঠিক তখন ঝাড়ুর ঝা ঝা শব্দে ঘুম ভাঙে। বিরক্ত হয় মালিক আর ওরাও। ৩ দিন শেষে মাদি বিড়াল বের হয় শালিকদের খোঁজ নিতে।
দুঃখের বিষয় একসাথে আবার সুখেরও। শালিকদের কয়েকজন আহত। ভীষণ আহত। সবাই সরকারি চিকিৎসালয়ে ভর্তি। একজন মৃত্যুর শয্যায়। মাদী বিড়ালের উৎসুক মন শালিক পরিবারের এই অবস্থার কারণ জানলো লোক মুখে। কারণ শালিকদের কারো সাথে কথা বলার ঝো নেই।
বিড়াল ছানা লোক মুখে শোনা কথাটি বলল প্রিয় সখিটিকে। শোন না এই আমরা যেখানে গরমে আরাম করতে ছায়ায় বসি, সেখানে বড় কৃষ্ণচুড়া গাছের পাশে আরেকটা কৃষ্ণচুড়া। মাটির উর্বরতা পেয়ে বেড়েও উঠেছে গাছটি।
শালিক সর্দারের মেঝো ছেলে সম্প্রতি বিয়ে করেছে রাজনৈতিক শালিকের মেয়ে।
১৫টি শালিকের এই বিশাল পরিবারটি চলছিল যৌথভাবে। বিপত্তি ঘটাল মেঝো শালিকের বউ। তার নাকি নতুন কৃষ্ণচুড়া গাছটি লাগবে। সে বড় লোকের মেয়ে! তাই তার এই গাছ বাড়িটি চাই চাই। মেঝো শালিক প্রথম সায় দেয়নি। পরে রাজনৈতিক পিতার মেয়ের চোখ রাঙানো ও শ্বশুরের ভয়ে বাবার কাছে গাছটির দাবি তোলে। শালিক সরদার শুনে অবাক! তোমার ১২ ভাই বোন কে কোথায় থাকবে তা না ভেবেই তুমি আর তোমার বউ দুজনেই একটা বিশাল বাড়ি চাচ্ছ?
এই নিয়ে তর্ক। এক পর্যায়ে হাতাহাতি। পরে রাজনৈতিক বাবার মেয়ে তার বাবার ক্ষমতাধর গু-াদের দিয়ে শালিক পরিবারের জায়গা দিল হাসপাতালে। নতুন কৃষ্ণচুড়া তারাতো নিলই, নিল মূল কৃষ্ণচুড়া বাড়িটিও। তাই বৃদ্ধ শালিক সরদার ১৩ জনের বিশাল পরিবার নিয়ে জন্মস্থান ছেড়ে এখন হাসপাতালে, পরে বস্তিবাসী।
বিড়াল ছানা দুটি কাঁদছে। শোন আমরা না, বিয়ে করে বাচ্চা নিব না। তাই হল বিড়াল ছানা দুটির। সখের বাচ্ছা আর এই জীবনে নেওয়া হল না।
বিঃ দ্রঃ বিড়াল অসামাজিক প্রাণী।