মুনা বেরিয়ে পড়ল।আজ তার আর নিজেকে মুনা মনে হচ্ছে না।আজ সে অন্য,অন্য একজন।আজ তার পা দুটো সেই সেকেলে না যেন রাজবংশীয় কোন তেজী ঘোড়ার মত চলছেই,চলছে।
মুনার দুটি মেয়ে ঘুমে।কত আর বয়স হবে ছোটটির বছর দেড়েকও হয় নাই।বড়টার তিন।বড় সুন্দর কথা শিখছে মেয়েটি।
অথচ আজ এভাবে সে ওদের ঘুমে রেখে বেরিয়ে যাবে কে জানত।মুনা এখন শহরে যাচ্ছে।।স্বপ্নের শহর,ঢাকা শহর।না ঢাকায় সে আগেও বেশ ক’বার গেছে।খালার বাসায় মায়ের সাথে থেকেছেও অনেকদিন।কিন্তু আজ তার স্বপ্নের মানুষ সেখানে অপেক্ষা করছে তার জন্য।
মুনার স্বামী ব্যবসায়ী।সবজি ব্যবসায়ী।ঢাকায় ট্রাকে করে মাল পাঠায়।কিন্তু অবস্থা ইদানীং বড়ই বেগতিক।পরপর দুটি চালানের এক্সিডেন্ট।বাবার হার্টের রিং লাগানো। মোটামুটি হাত পাতার মতো অবস্থা।ধারদেনাও আছে বেশ।জমি ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে নয়লক্ষ চৌদ্দ হাজার টাকা দিয়ে শেয়ার হয়েছে।তিন বছর পর এর দ্বিগুণ লাভবান হওয়ার কথা।
কিন্তু এখন বেঁচে থাকাই হচ্ছে কষ্টকর।উচ্চবিত্ত হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে ক্রমশ মধ্যবিত্তের নিচে চলে যাচ্ছে।মধ্যবিত্ত মানেই এরকম পরিস্থিতি হবেই!মুনার স্বামী তবুও হাসিখুশি। কিন্তু মুনা না।সে স্বাচ্ছন্দ্যে বিয়ের পর সাড়ে তিনবছর চলে গেছে হঠাৎ মোড় ঘুরায় সে প্রচন্ড রকমের ত্যাক্ত।কঠিক কঠিন কথাও শুনিয়েছে স্বামীকে।বিদ্যুৎ বিল,গ্যাস বিল,ডিশ বিল,বুয়ার বেতন,বাবার ঔষধ, মেয়েদের এটা ওটা তবুও কোন চেতন্য নেই।নাহ!মুনা আর পারে না।
মুনা কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।সবুজের কাছে চলে যাবে।সবুজকে বিয়ে করবে।সবুজ তার বাল্যবন্ধু।ভালো চাকরি করছে।মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হত।সবকিছু খোলে বলেছে মুনা।সবুজ রিপ্লাই দিয়েছিল,’আমি এ পর্যন্ত ছয়টি প্রেম করেছি কিন্তু তোমার মত কাউকে ভালোবাসতে পারিনি,এখনও তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি’।
সে স্বপ্ন বাস্তব হতে যাচ্ছে।আর কিছু বাস্তব দৃশ্য মুনার চোখে ভেসে উঠে।এতক্ষণে ছোট মেয়েটাকে সামলাতে হয়তো শ্বশুর -শ্বাশুড়ি হাঁপিয়ে উঠেছেন।ও হয়তো খুব কাঁদছে।তার স্বামী খবর পেয়ে কি ফিরেছে।সে কি ভাবছে?নাকি এখনো চৈতন্য নাই।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।তা প্রতিদিনই আসে।আজকের সন্ধ্যা একটু ভিন্ন রকমভাবে আসছে।
মুনা বাস থামিয়ে নেমে পড়ল।বাড়ি ফেরার বাস খোঁজছে।
রাত সাড়ে আটটা। মুনা ঘরে ফিরেছে।ঘরে বেশ ঝটলা।চাচা,চাচী আত্মীয়,অনাত্মীয়.. নিশ্চয়ই বড় গালিগালাজ করা হচ্ছিল এখন।এখন সবাই চুপ।বাড়িতে ভুতের বাড়ির মত কিছু মুখ দেখা যাচ্ছে।শ্বাশুড়ির কোল থেকে মরার মত পড়ে থাকা মেয়েটাকে কোলে নিল।সাথে সাথে চোখ খোলে মাকে দেখে মেয়ের হাসি।
মুনা মিথ্যা বলল।আমার খালার বাসায় গিয়েছিলাম। কিছু ধার দেনা করার জন্য।খালা সিলেটে গেছেন সকালেই।টাকার ধারের জন্য জানিয়ে যাওয়া ঠিক অভদ্রতা মনে হয় মুনা কাছে।
কারো কোন কথা নেই।যাকে কিছুক্ষণ পূর্বে বেশ্যার সাথে তুলনা দেয়া হচ্ছিল, সে মুনার সাথে এ মুনার মিল নেই।তাই এরা অবাক।
মুনার স্বামী ঘরে ঢোকে,’কই যে গেছিলা,মেঘকে (ছোট মেয়ে) সাথে নিলেই তো হতো?দেখতো কাঁদতে কাঁদতে কেমন মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
মুনা চুপ।বড্ড চুপ।আজ তার চুপ থাকা বড়ই প্রয়োজন। আজ আসমানে বড্ড মেঘ ছিল।আজ তার কোলেও মেঘ আছে।মেঘ জমেছে আজ ভেতরে,বাহিরে।মুনা একসময় মেঘ দেখলেই বৃষ্টিতে ভেঁজার প্রস্তুতি নিত।সেখান থেকেই মেয়েটার এমন নাম।আজ তার বৃষ্টিতে ভিঁজতে ইচ্ছে করছে।