মশলাদার মিয়া বেশ দূরে বসে বিড়িখোরিয়ার সঙ্গে ধোঁয়াস্নাত হতে হতে মরীচিকা বিবিকে প্রত্যক্ষ করে। আর এই-সেই ভেবে ভেবে গঞ্জিকাপ্রবণ বন্ধুটিকে উদ্দেশ্য করে হাওয়ায় কথা ভাসিয়ে উচ্চারণ করে ওঠে…
– এই যে লোকের অতীতে ফিরতে ইচ্ছে করে, এই যে মানুষের বর্তমানকে অগ্রাহ্য-অবহেলা করার প্রবণতা, এই যে কারও কারও ভবিষ্যৎ বলে ভাবনায় কিছুই সোজাসাপ্টা নেই- এর ভেতর দিয়ে সে একটা দুষ্টচক্রের ভেতরে আবর্তিত হতে থাকে। চক্রটা তারই নিজস্ব চিন্তাগত। একটা চক্রব্যূহ। চক্রটা যদি ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়, তবে সে ব্যক্তির তাতে কোনো ভূমিকা নেই; যদি বস্তুকেন্দ্রিক হয়, তাতেও ওটার বিশেষ ভূমিকা নেই। কিন্তু মরে আদতে চক্রবর্তী আর চক্র-তীরবর্তী গোটা কয়েক প্রাণ। এই যে আমাদের আবেগ-বিবেকপ্রবণ মানুষের নিজেদের ওপর নিজেদের অসীম ক্ষমতা বলে কিছু নাই, নিয়ন্ত্রণ নাই; লাটাই-ঘুড়ি-সুতা সবই অন্যের হাতে সঁপাই, এই আমরা বড্ড বোকারে!
– হুঁ! ওই ইয়েটা মানে কীরে? ওই চক্র না কী জানি বললি।
বিড়ির ভেতর গাঁজার পুরটা সাজাতে সাজাতে বিড়িখোরিয়া আওলা কথাটি প্রশ্ন আকারে ছেড়ে দেয়। আসলে সে শোনে নাই বালডাও।
পিঠাপিঠি করে বসা মশলাদার মিয়া বন্ধুর কথায় ঠোঁটের উঠে থাকা পাতলা অথচ জেদি চামড়া থুতুতে ভিজিয়ে দাঁতের কামড়ে কামড়ে টেনে রক্তারক্তি অবস্থা করে মরীচিকা বিবিকে নেশাতুর নজরে মুখস্থ করতে থাকে। এক্কেরে টপ টু বটম!
মরীচিকা বিবি ওদিকে খটোমটো বালুপূর্ণ ভূমির মাঝে জলের মায়া ছড়াতে ব্যস্ত। সে কি কিছুই লক্ষে রাখে না? লক্ষ্যে রাখে না? সে জানে অথচ আমরা জানি না- কখন তার নিশানাবন্দি মরুভূমির মরুচারী পথিকপ্রাণ সে মায়াজালে চোখ ধাঁধায়…