টিভি

১.
আমাদের সামনের ফ্ল্যাটে বিশাল স্ক্রিনের একটা টিভি চলে। ৫০ ইঞ্চি হবে হয়তো। টিভিটা প্রায় সব সময়ই চলে। মানে কখনো বন্ধ দেখিনা। কখনো কার্টুন, কখনো স্পোর্টস আবার কখনো মুভি বা টিভি সিরিয়াল চলে। আমি বারান্দায় বসলে আরাম করে টিভি দেখা যায়। রাত দুইটায় বারান্দায় গেলেও দেখা যায় টিভি চলছে।
যুথী বলে তোমাকে প্রায়ই বারান্দায় বসে থাকতে দেখি। কী কর?
কী আর করবো টিভি দেখি।
টিভি! নিজের বাসার টিভি রেখে তুমি বারান্দায় বসে অন্যের টিভি দেখ? ফাজলামো কর?
না তো। দেখতে ভালো লাগে বলে দেখি। আসলে টিভিতে তো আজকাল দেখার মতো কিছু নেই। ভালোও লাগে না। কিন্তু অন্যের বাসার টিভি দেখার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ আছে। হোক না সেই টিভিতে স্টার জলসা অথবা কোনো পচে যাওয়া সিরিয়াল। তবুও ভালো লাগে। যেন আরেকজনের জানালার ফাঁকগলে দেখা টিভিই একটা জনপ্রিয় নাটক।
যুথী বিরক্ত হয়। তোমার এই বস্তাপচা ডায়লগ রেখে দয়া করে টবের গাছগুলোতে পানি দাও। গাছগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
আমি গাছগুলোতে পানি দেই। সামনের ফ্ল্যাটে যথারীতি টিভি চলছে। এখন হিন্দি সিনেমার গান চলছে বেত্তমিজ দিল মানে না মানে না…।
২.
ফাইজা এবং ফারহানের দুইজনেরই আজ অফিস নেই। বুদ্ধপূর্ণিমার ছুটি। আজ রাতে নাকি ব্লাড মুন দেখা যাবে।
ফাইজা! টিভিটা বন্ধ করে দাওতো। কেউ তো দেখছে না। শুধু শুধু টিভিটা যে তোমরা কেন ছেড়ে রাখো? ফারহান চিৎকার করে উঠে।
আমি দেখছি তো। রান্নাঘর থেকে ফাইজা উত্তর করে।
তুমি দেখছ মানে! তুমি তো রান্নাঘরে।
হ্যাঁ আমি গান শুনছি।
গান তো মোবাইলেও শোনা যায়। শুধু শুধু টিভি ছেড়ে রাখার মানে কি? ফারহান বিরক্ত হয়।
আমার টিভি ছেড়ে রাখতে ভালো লাগে।
সে তো বুঝলাম। কিন্তু অনর্থক এই ভালো লাগা। কেউ দেখছে না টিভি চলছে। কোনো মানে হয়? সেদিনও দেখলাম রাত দুইটায় তুমি সোফায় ঘুমাচ্ছ আর এদিকে টিভি খোলা।
ফারহান! আমার ভালো লাগে। বললাম তো। তোমার ইচ্ছে হলে তুমিও ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে টিভি দেখতে পার। ফাইজা বিরক্ত হয়।
ফারহান ফাইজার এই পাগলামীর কিছু মানে খুঁজে পায় না। সে ট্রাইপডে ক্যামেরা বসানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ফাইজা সামনের ফ্ল্যাটের বারান্দায় কী যেন দেখে আর গুনগুন করে উঠে “বেত্তমিজ দিল বেত্তমিজ দিল মানে না মানে না…।”

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত