লাকু রাশমনের ফালতু গল্পের সিরিজ থেকে…
ভেলুয়া সুন্দরীর আখড়ায়
[প্রাক-কথন: ঘটনাগুলোর কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। কিন্তু বেজায় তাদের দাপট। ধান ভানতে যেমন শিবের গীত গাওয়া এই কথাগুলোও ঠিক তেমনি। গুরুত্ব নেই কিন্তু দায় আছে। মানুষটা খেয়ে পড়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কিন্তু অদ্ভুত মাথার ব্যামোতে ধরলো। কোনো ডাক্তার কবিরাজে কাজ হয় না। ভিমরি খাওয়া রোগ। এ বড় শঙ্কার কথা। এ রোগ কী ছোঁয়াচে! কী জানি বাপু। আমাদের না হলেই বাঁচি। তাই দূরে দূরে থাকি।
তবে শোনা যায়, সে রোগের বাই চাপে শনিগ্রহের ফেরে। শনিগ্রহ থেকে সরাসরি রোগের আকর তার মস্তিকে ভর করে আর পঁই পঁই করে এমন লেখা বের হয় যে, তাকে ধোলাই না দিলে রাতের ঘুম হারাম হবার যোগাড়। তাই পাড়ার মাতব্বররা তাকে ভেলুয়া সুন্দরীর আখড়ায় ভর্তি করে দিলেন। এরপর যা কাÐ ঘটলো! চেনা পৃথিবী গেল উল্টে। ভেলুয়া সুন্দরীর নাম ছড়িয়ে গেল সবখানে, সবখানে, সবখানে…]
ফালতু গল্প- ০২। বেচারাম!!!
চায়ের কাপে চুমুক শেষ করে সামনে তাকাতে ভদ্রলোক মুখের উপর শাড়ির আঁচল মেলে ধরার মতো করে খবরের কাগজটা সরিয়ে আলপটকা একটা মন্তব্য করলেন- অধিকাংশ মানুষের মন একটা বদ্ধ জলাশয়ের মতো। নিজের স্বার্থের বাইরে তারা ভাবতে পারে না। শিল্প হলো একটা আধলা ইট যা এই জলাশয়ের মধ্যে পড়লে কিঞ্চিৎ আলোড়নের সৃষ্টি হয়। শিল্প এটুকুই করতে পারে। হঠাৎ এরকম কথাতে আমি ভ্রæ কুঁচকে তাকাই। তিনি আবার খবরের কাগজে মুখ ঢাকেন। খানিকটা সময় শেষে ছোট্ট একটু কাশি দিয়ে বলি- আপনি কী আমাকে কিছু বললেন? এবার তিনি কাগজটা ভাঁজ করে আমার পাশে রাখা ক্যামেরাটা ইঙ্গিত করেন। সে দিকে তাকিয়ে বলি- ওহ্ এবার বুঝেছি। আসলে আমি হলাম গিয়ে সখের ফটোগ্রাফার। ছুটির দিনে এই একটু আধটু প্র্যাকটিস করি। আপনি কী শিল্পী? তিনি একটু ভাবেন তারপর গলা পরিষ্কার করে বলেন- ছিলাম। আমি খানিকটা হাসি। আমি বলি- শিল্পী কী আর পেশা যে অবসর নেয়া যায়? এটাতো লাইফ লং ব্যাপার। আমি একজন ব্যাংকার। দুই বছর চার মাস পর রিটায়ার করবো তারপর ফটোগ্রাফিটাতেই মনোনিবেশ করবো। আর কোনো রিটায়ারমেন্ট নেই। ছবি তুলবো আর একটা পর একটা একজিবিশিন করবো। সমাজের সব অন্ধকার দিকগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরবো। শিল্পীর কাজই তো তাই, আপনি কী বলেন? ভদ্রলোক মনে হলো একটু ব্যঙ্গের হাসি হাসলেন। আমি দমে যাবার পাত্র নই। বাইরে ট্রেন চলে আসাতে তিনি তার ব্যাগটা নিয়ে কিছু না বলে ওয়েটিং রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি তো হাঁ। একি পাগল নাকী? হঠাৎ তিনি আবার ঘরে এসে বলেন- শিল্পী হওয়া অতো সোজা নাকী? আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি চলে গেলেন। আমি মাথা চুলকে কথাটা ভাবতে থাকি। হঠাৎ চোখ চলে যায় লোকটা যেখানে বসে ছিলেন সেই চেয়ারটাতে যেখানে একটি পত্রিকা অবহেলায় পড়ে আছে। উঠে গিয়ে পেপারটা নিয়ে পড়তে বসি। তিনি যে পাতাটা পড়ছিলেন সেটাতে চোখ পড়তে খানিকটা দমে গেলাম। সেখানে ভদ্রলোকের একটা ছবি ছাপা হয়েছে আর তার ক্যাপশন ‘বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীর জাতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান।’