মান্নান নানা, আল-আমিন মামার শ্বশুর সেইদিন একটা গল্প শোনাইলেন; মাঝেমধ্যেই তিনি নিজের দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার নানান গল্প শোনান। সেইদিন কথার এক পর্যায়ে একটা গল্প বললেন। গল্পটা খুব অদ্ভূত ছিল। ১৯৮২ সালে তিনি একবার ব্যবসার কাজে দিনাজপুর জেলার বিরামপুরে গেলে সেখানে মাহতাব নামে একজন লোকের দেখা পান, যে তার জীবনের ষাট বছর পার করে আসছে কিন্তু সেদিন পর্যন্ত কখনো নিজের চেহারা আয়নায় দেখে নাই। এটা নিয়ে সে ভাবিতও ছিল না। জানতও না তার চেহারা কেমন। ষাট বছর পর একদিন তাকে নিজের চেহারা দেখতে হয়। সেটাও ছিল অপ্রত্যাশিত। এটা না ঘটলে ব্যাপারটা কেমন হইতো চিন্তা করেন, একজন লোক মারা গেছে অথচ সারা জীবনে সে তার চেহারা কেমন ছিল জানত না। একবার তার মালিকের ছোট ছেলেকে নিয়ে সে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াইছিল, সেটা সে করছিল মালিকের আদেশে। ছবি তোলার পর যখন ছবিগুলো বের করে আনা হয় এবং সবাইকে তাদের ছবিগুলো খুঁজে নিতে বলা হয়; তখন সেই লোককেও বলা হইছিল সে যেন তার ছবি খুঁজে নেয়। এটা পরীক্ষা করার জন্য ছিল না। কেউ জানতও না তখন পর্যন্ত সেই তার চেহারা আয়নায় দেখে নাই। সমস্ত ছবি খুঁজে সে নিজের ছবিটা বের করতে পারে নাই। সবার ছবি নেয়া হয়ে গেলে সে তার ছবির ব্যাপারে জানতে চায় কোনটা তার ছবি; আর সত্যি তার কোন ছবি আছে কি না। তখন সবাই অবাক হয়ে যায় ভেবে সে তার ছবি হাতের কাছে রেখেও কেন জানতে চাইছে তার ছবি কোনটা। সবাই ভাবে লোকটা ফাইজলামি করতেছে। অথচ লোকটা মিথ্যুক ছিল না কিংবা পাগল; কোনঅর্থেই; বলা যেতে পারে একটু বোকাটে টাইপের। অনেক চেষ্টার পরও যখন তাকে এটা বিশ্বাস করাতে পারে না যে এটাই সে; তখন তাকে বলা হয়, স্মরণ করো সেই দিনের কথা, যখন তোমার ছবি তোলা হইছিল আর তুমি বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়া ছিলা এইখানে, এই আখের পাতায় ছাওয়া ঘরের পাশে। তখন সে স্মরণ করতে পারে। এবং স্মরণ করার পর ভেবে অবাক হয় এই সেই লোক, যে দেখতে তার মতো।