- তাজুলের কথা শুনে রুবেলের দিকে একটা চোরা দৃষ্টি দিয়েই চোখ সরিয়ে নিয়ে মিলন বলে, ‘তোরও এমন হইতেছে। আমি তো ভাবতেছি আমারই খালি ফিলিংস উঠতেছে না। তখন থেকে আমি চিন্তা করতেছি, ফিলিংস উঠতে এত সময় লাগতেছে কেন আমার?’
তাজুল বলে, ‘খানকি মাগীর মতো কথা কইস না। আমি তো দেখতেছি তখন থেকে তুই ঝিম মেরে আছিস। ডাইলের বদলে পানি খাইলেও তো তোর ফিলিংস হয়ে যায়।’
তরিক বলে, ‘ঠিক করে ক তো রুবেল। একটা নিজে মাইরা দিয়া পানি মিশায়া দুই ফাইল বানায়ে আনছিস নাকি?’
তিনজনের কারো কথা রুবেলের কানে যায় না। সে একটা গোল্ড লিফ সিগারেট বের করে আয়েশ করে টানতে থাকে।
রুবেলকে অনেকক্ষণ ধরে নিরখ করে তাজুল। তার নেশা হয়েছে কি না বোঝার চেষ্টা করে। তার মনে হয়, তরিকের কথাই ঠিক। রুবেল মাদারচোদ দুইটা ডাইলের একটা বড় বাজারেই মেরে দিছে। বাকী একটায় পানি মিশায়ে দুইটা ফাইল বানায়ে আনছে।
তাজুল খেপে যায়, ‘মুখে কি ধোন দিয়া রাখছিস, বাইনচোদ?’
রুবেল কিছু বলে না দেখে পাশ থেকে মিলন তর্জনী দিয়ে তাকে খোঁচা মারলে সে মিলনের ওপর খেপে গিয়ে বলে, ‘সর, মাদারচোদ!’
আবার চারজনই চুপ হয়ে যায়।
একসময় পকেট থেকে দুইটা পুরিয়া বের করে যত্ন করে টেবিলের ওপর রাখে রুবেল। চারটা স্টার সিগারেট থেকে তামাক বের করে উইড আর তামাক যত্ন করে মেশায়। তরিক যোগ দেয় তার সাথে। দুইজন মিলে চারটা স্টিক বানাতে থাকে।
আধঘণ্টা ধরে মিলন আর তরিকের কুটির শিল্প দেখতে দেখতে তাজুল বলে, ‘কী ভাবছিলাম, আর হইলো কী?’
একটা স্টিক তাজুলের দিকে বাড়িয়ে দেয় মিলন। ঠান্ডা যুদ্ধের মতো নিরব পরিস্থিতি ঘরের মধ্যে। কেউ কোনো কথা বলে না। স্টিকগুলো শেষ করার পর চারজনই মেস থেকে বের হয়ে পড়ে।
কলেজ রোডে নামতেই তাদের মন একটু খারাপ হয়। খাবারের দোকান থেকে ভেসে আসা পুরি, পিঁয়াজু, সিঙ্গারা, চিকেন ফ্রাইয়ের গন্ধ নাই আজ। চায়ের দোকানে কাপ-পিরিচ-চামচের ঠোকাঠুকি নাই। ছেলেমেয়েদের সরগরম বাকবাকুম নাই। রিকশার টুটাং, মেয়েদের হাসি, বডিস্প্রের গন্ধ- কিছুই নাই।
সন্ধ্যা নামার আগেই সব অন্ধকার হয়ে গেছে। যারা বিকাল পর্যন্ত ‘দেখি না কী হয়’ ভেবে অপেক্ষা করছিল তারাও কলেজ বন্ধ ঘোষণার পর মেসগুলো ফাঁকা করে চলে গেছে। ইট-পাটকেল আর লাঠিসোঁটা ছড়ানো ফাঁকা কলেজ রোডে হাঁটতে হাঁটতে তাজুল, রুবেল, মিলন আর তরিকের হঠাৎ করে মনে হয়- এই ফাঁকা কলেজ রোডেই কেমন জানি মাস্তি মাস্তি ভাব নেমে আসছে। ওরাই এখানকার রাজা। ওদের সবার যে একসাথে আপনাআপনি এই কথা মনে হয় তা না। জোর করে এই ভাবটা ওরা মনে আনে।
তাজুল বলে, ‘একটা মাস্তি মাস্তি ভাব আসছে না?’
রুবেল একটু উদাস হয়ে ছিল। বিরক্ত হয়ে সে বলে, ‘এর মধ্যে তুই মাস্তি কই পাইলি?’
বলেই সে ভুলটা বুঝতে পারে। তারও মনে হয় আসলেই একটা মাস্তি ভাব আসছে।
মিলন সাথে সাথে বলে, ‘এইরকম ফাঁকা কলেজ রোড তো জীবনেও দেখি নাই। চারদিকে তাকায়া দেখ, আমরা ছাড়া আর কেউ নাই। রাজা রাজা ফিলিংস হইতেছে।’
তরিক বলে, ‘আমরা আসলে সেনাপতি। আসল দাও মারবে নিউটন ভাই। কলেজ রোডের দোকানপাট এখন নিউটন ভাইয়ের কন্ট্রোলে। তুলবে চাঁদা, খাইবে সুখে।’
তরিকের কথার পিঠে কেউ কথা বসায় না।
রাস্তার ল্যাম্পপোস্টগুলো এখনো জ্বলেনি দেখে মিলন বলে, ‘ল্যাম্পপোস্টগুলা জ্বালায়নি কেন শালারা? এইটা কার দায়িত্ব?’
কেউ উত্তর না দিলে ওরা হাঁটতে থাকে।
হাঁটতে হাঁটতে কোচিং সেন্টারের গলি পার হয়ে হরিপুর বাজারের মাথায় একটা ফাঁকা চায়ের দোকান খোলা দেখতে পায় তারা।
দোকানদার বলে, কাস্টমার নাই বলে আজকে চুলাই জ্বালায়নি সে।
মিলন বলে, ‘বাল ফালাইতে দেড় মাইল হাইটা তোমার কাছে আইলাম? ইতং বিতং বাদ দিয়া চুলা জ্বালাও।’
দোকানদার চুলা জ্বালায়, পানি ভরে এনে কেটলি চাপায়। তাদের চারজনকে চার গ্লাস পানি দেয়। চারটা ড্রাই কেকও দেয়।
ওরা আর কোনো কথা কয় না। চুপচাপ চায়ের অপেক্ষা করতে থাকে।
বেশি করে দুধ-চিনি দিয়া চার কাপ চা এগিয়ে দেয় দোকানদার।
সেটা শেষ করে আরও চার কাপের অর্ডার দেয় তারা।
তাজুল একটা সিগারেট ধরিয়ে মুখ খোলে।
‘উইডেও তো কোনো ফিলিংসই আসলো না। ভাবছিলাম কী, আর হইলো কী? সারাদিন মারামারি কইরা এখন পর্যন্ত যদি কোনো ফিলিংস না আসে, কেমনটা লাগে!’
মিলন বলে, ‘মাগী লাগাইতে হবে। মাগী না লাগাইলে ফিলিংস আসবে না।’
মিলনের ফর্সা খোঁচা খোঁচা দাড়িঅলা মুখের দিকে তাকিয়ে তাজুল ও রুবেলের চোখ চকচক করে ওঠে। এই কথাটা তাদের মাথায় এতক্ষণ খেলেনি কেন ভেবে দুজনেই আফসোস করে।
দোকানদার দ্বিতীয় দফা চা দিয়ে গেলে তরিক বলে, ‘মাগী লাগানোর ডিসিশন কি ফাইনাল? নাকি বড় বাজারের দিকে যাবি?’
‘বড় বাজারে কী?’ তাজুল জিজ্ঞেস করে।
‘আরেক ফাইল করে ডাইল মারলে মনে হয় ফিলিংসটা ভালমতো আসতো।’
রুবেল বলে, ‘শালা ভয় পাইছে। ডরপোক। তুই যে রূপার লগে ঘুরিস। লাগানোর ধান্দা নিয়াই তো ঘুরিস নাকি? মাগী না লাগাইলে রূপারে লাগাবি কেমনে? ফুটাই তো খুঁজে পাবি না।’
তরিক বলে, ‘তুই আমার বাল বুঝিস। খানকিচোদা ছেলে। রূপার লগে আমি প্রেম করি।’
‘রূপারে লাগাইছিস?’
‘সেইটা তোর জানার দরকার কী? আমি মাগী লাগাবো না, কথা ফাইনাল।’
মিলন বলে, ‘ওরে জোর করার দরকার কী? ও না লাগাইলে তো ভাল। আমাদের ভাগে বেশি পড়বে।’
তাজুল দোকানদারের দিকে বিল এগিয়ে দিলে সে খুব অবাক হয়ে যায়।
বলে, ‘মামা লাগবে না, পরে দিয়েন।’
তাজুল বলে, ‘রাখো। পরে আরেকদিন খাওয়ায়ে দিও।’
মাগী লাগানোর আইডিয়া মাথায় আসতেই তাজুলের মন ভাল হয়ে গেছে। পকেটে টাকাও ভাল আছে। সন্ধ্যার আগেই নিউটন ভাইয়ের সাথে দেখা করে এসেছে চারজন মিলে। ফূর্তি করার জন্য নিউটন ভাই তাজুলের পকেটে দুই হাজার টাকা গুঁজে দিয়েছে।
রুবেল আর মিলনও পা চালিয়ে হাঁটছে। মাগী লাগানোর চিন্তায় তাদের মধ্যেও একটা ডাইভ কাজ করে। তারা তড়িঘড়ি হরিপুর বাজার থেকে কোচিং সেন্টারের গলি হয়ে শুনশান কলেজ রোডে চলে আসে।
শহীদ ওসমান রোডের মেস পাড়ায় আসতে আসতে রুবেল বলে, ‘দেখছিস কাহিনী। রাত নয়টা বাজে, একটা কাকপক্ষীও দেখলাম না।’
তরিক বলে, ‘কাকপক্ষী কইস কেন ক একটা মালও দেখলাম না।’
চুপচাপ হাঁটতে হাঁটতে তরিক আবার বলে, ‘মাগী লাগানোর ধান্দা বাদ দিয়ে বরং চল সিডি এনে দেখি।’
মাগী লাগানোর আইডিয়াটা কোনোভাবেই তার পছন্দ হইতেছে না।
‘এই চুৎমারানির খালি হাত মারার ধান্দা। আরে মাদারচোদ, ফিলিংস হইতেছে রাজাবাদশার মতো। রাজা কোনোদিন হাত মারে? জীবনেও শুনছিস কোনো রাজার হাত মারার কথা? আমরা এইখানকার রাজা না?’
রুবেলের ঝাড়ি খেয়ে তরিক একদম চুপ খেয়ে যায়।
মিলন তরিকের পক্ষ নিয়ে বলে, ‘তরিকের তো শুভ উদ্বোধন হয় নাই। ও হয়তো ভাল জিনিশ দিয়ে শুভ উদ্বোধন করার ইচ্ছা করে রাখছে। ওরে বাদ দে।’
রুবেল বলে, ‘শুভ উদ্বোধন হয় নাই বলেই তো আরও বেশি দরকার ওর। আজকেই ওর শুভ উদ্বোধন হয়ে যাক। কী কইস তোরা।’
মিলন বলে, ‘বাদ দে তো। মাগী লাগায়ে শুভ উদ্বোধন যদি ও না করতে চায়, তাইলে ওরে বাদ দে না। খালি খালি আমাদের মাস্তির বারোটা বাজাইস না।’
ওসমানের মোড়, কলেজ রোড, কলেজ আর হরিপুর বাজার এই এলাকায় টো টো করে ঘুরে বেড়ায় এই চারজনের গ্যাং। সারাদিন কোনো না কোনো চায়ের দোকানে বসে গুলতানি মারে। সন্ধ্যায় কলেজ রোডের ফুচকা-চটপটির দোকানে ছোঁক ছোঁক করে। আশপাশের মেস থেকে মেয়েরা ভীড় করে ফুচকা চটপটি খেতে এলে ওরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের বুক-পাছা দেখে।
গতকাল সন্ধ্যায় ওসমানের মোড় থেকে কলেজ রোডের দিকে যাচ্ছিল চার বন্ধু।
হঠাৎ তাজুলই বলে, ‘দাঁড়া তোরা।’
সে রাস্তা পার হয়ে একটা রিকশার কাছে যায়। ব্যাপারটা মিলনও খেয়াল করেছিল। একটা ছেলে একটা মেয়ের রিকশার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তাজুলকে দেখতেই ছেলেটা সরে দাঁড়ায়, রিকশাঅলাকে বলে, ‘মামা যান।’
কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।
তাজুল বলে, ‘মামা দাঁড়াও।’
ততক্ষণে মিলন, রুবেল ও তরিক রিকশা ঘিরে ধরেছে। রিকশা আটকানো ছেলেটা ওদের ঘেরের মধ্যে পড়ে গেছে।
তরিক বলে, ‘আপা কী হইছে?’
‘কিছু না।’
‘কিছু না কইলেই হবে? আমরা তো দেখলাম, ওই ছেলে আপনার রিকশা আটকায়ে দাঁড়ায়ে ছিল।’
‘এই তুই কী জন্য রিকশা আটকাইছিলি?’ মিলন ছেলেটাকে ধমকে জিজ্ঞেস করে।
তাদের তৎপরতায় মেয়েটা ভয় পেয়ে গেছে। ছেলেটাও ভয় পেয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পারে, মেয়ে স্থানীয় থানা পাড়ায় বাড়ি আর ছেলে বগুড়ার মেসে থাকে। সম্ভবত ছেলেটা মেয়েটাকে প্রেম নিবেদন করতেই রিকশা দাঁড় করিয়েছিল।
মিলন বলে, ‘বগুড়া থেকে আইসা আমাদের চোখের সামনে লোকাল মেয়েদের লগে প্রেম চোদাইতেছো? আমরা কি বাল ফেলতে বইসা আছি খানকির পোলা? ওপেন রাস্তায় মেয়েদের গায়ে হাত দিবা আর আমরা খাড়ায়ে দেখবো?’
ছেলেটা বলে, ‘কোথায় গায়ে হাত দিলাম।’
‘কোথায় হাত দিলাম মানে কী? ওই খানকির পোলা, কোথায় হাত দিলি সেইটা তোরে কইতে হবে?’ বলেই রুবেল একটা চড় মারে ছেলেটার গালে।
তরিক রিকশাঅলাকে বলে এগিয়ে যেতে। মেয়েকে নিয়ে রিকশা চলে গেলে ওরা চারজন মিলে আরও কয়েকটা চড়থাপড় মেরে ছেড়ে দেয় ছেলেটাকে।
মোকাব্বিরের চায়ের দোকানের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে তাজুল জিগায়, ‘মেয়েটারে চিনস নাকি তরিক। খুব আপা আপা করতেছিলি দেখলাম।’
আমাদের আগের ব্যাচ মনে হয়, ‘ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টে দেখি মাঝে মাঝে।’
রুবেল বলে, ‘কইছিলাম না তরিক কলেজের সব সুন্দরীদেরকেই চেনে। শালা একটা জিনিশ।’
মিলন বলে, ‘মেয়েটা কিন্তু ডাঁসা ছিল রে।’
মোকাব্বিরের দোকানে চা খেতে খেতেই ওরা দেখে, বগুড়া গ্রুপের তিনটা ছেলে হন্তদন্ত হয়ে কলেজের দিকে যাচ্ছে। ওদের মধ্যে চড় খাওয়া ছেলেটাও আছে। কলেজের আবাসিক হোস্টেলে বাইরের ছেলেরাই মূলত থাকে। তারা যে পোলাপান জোগাড় করতে আবাসিক হোস্টেলের দিকে যাচ্ছে সেটা বুঝতে তাদের আর বাকী থাকে না।
তাজুল বলে, ‘নিউটন ভাইয়ের কাছে চল।’ তিনজন রিকশা নিয়ে ডাউকির মোড়ে যেতেই দেখে কমিশনার নিউটন ভাই হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। খবর পেয়ে গেছে তারা পৌঁছাবার আগেই।
নিউটন ভাই বলে, ‘আমি শুনছি। বহিরাগতরা কলেজে মাস্তানি করবে, লোকাল মেয়েদের ডিস্টার্ব করবে এইটা তো মানা যায় না। বগুড়া গ্রুপের পোলাগুলা বেশি বাড়ছে। তাজুল, তোরা কী চাস? আজকেই কলেজে ঢুকবি নাকি কাল সকালে?’
তাজুল বলে, ‘আপনি যা বলেন ভাই।’
‘আজ রাতে ককটেল অর্ডার দে। চাপাতি-রামদা ধার দে। আধলা ইটা, পাথর জোগাড় কর। কাল সকালে কলেজে ঢুকিস। আমার পোলাপান সাথে থাকবে।’
বগুড়া গ্রুপের ছেলেগুলো একজোট হয়ে রাতেই কলেজে রোডে তাদের খুঁজতে আসে। এমনকি তরিকের মেসেও যায় তারা।
কলেজ রোড, ওসমানের মোড়, শহীদ ওসমান সড়ক, হরিপুর বাজারে শোডাউন করে তারা বুঝতে পারে তাজুলরা শহরের দিকে গা ঢাকা দিয়েছে। তখন তারা যে যার হোস্টেল-মেসে ফিরে যায়।
পরদিন সকাল দশটায় যখন তাজুলরা ককটেল চার্জ করতে করতে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশজন ছেলে নিয়ে কলেজে ঢোকে তখন সবাই বুঝতে পারে, আজকে বড় কিছু ঘটবে। কলেজে ঢুকে তারা বগুড়া গ্রুপের ছেলেদের খুঁজতে থাকে।
চিৎকার করে করে বলতে থাকে, ‘লোকাল মেয়েদের ডিস্টার্ব করবা তোমরা বাইরে থেকে এসে, আর আমরা আঙ্গুল চুষবো?’
বগুড়া গ্রুপের যে দুচারজনকে পায় তাদের পেটাতে থাকে। আবাসিকে খবর যায়। কিন্তু হোস্টেল থেকে বহিরাগত গ্রুপ বের হওয়ার আগেই তাজুলরা হোস্টেলের গেটে ককটেল চার্জ করতে থাকে।
মিলন সবাইকে সাবধান করে বলে, ‘তোরা সেফে থাকিস। ওদের কাছে কাঁটা আছে।’
লোকাল গ্রুপের ছেলেদের মাথায় এটা ছিল না। আবাসিকে যে কাঁটা রাইফেল আছে এটা সবাই জানে। ফলে তারা পিছিয়ে গিয়ে গাছপালা আর বিল্ডিংয়ের আড়াল থেকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে।
ককটেলের শব্দেই কলেজ অর্ধেক ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। আবাসিক থেকে কাঁটা রাইফেলের শব্দ আসা শুরু করলে পুরো কলেজ ফাঁকা হয়ে যায়।
আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে পড়তে আসা ছেলেমেয়েদের মধ্যে মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বগুড়া গ্রুপের দাপট আছে, সেটা তারা জানে। আশপাশের দোকানপাট থেকে বগুড়া গ্রুপ চাঁদা তোলে সেটাও সবার জানা। কিন্তু লোকালরা যেমনে বগুড়া গ্রুপের ঘাঁটি আবাসিকে গিয়ে সরাসরি হামলা করেছে তা দেখে সবাই ব্যাগ গোছানো শুরু করে। কেননা কলেজের ইতিহাসে এ ঘটনা কখনো ঘটেনি।
দুপুর বারোটার দিকে নিউটন ভাইয়ের লোক হোন্ডায় উড়ে এসে খবর দেয়, হরিপুর বাজারের দিকে সরে পড়তে হবে। পুলিশের দুইটা গাড়ি কলেজে ঢুকতেছে। বাজারে তাদের নতুন করে ককটেল আর পাথর সাপ্লাই দেওয়া হবে।
তাজুলরা কলা ও মানাবিক পার হয়ে ল্যাবরেটরির পেছন দিয়ে হরিপুর বাজারে পৌঁছানোর পর আবাসিক থেকে বগুড়া গ্রুপের ছেলেরা বের হয়ে সোজা কলেজ রোডের দিকে রওনা দেয়। কারণ তারা জানে কলেজ রোড নিয়ন্ত্রণে থাকলে আর কিছু লাগবে না।
পুলিশ অস্ত্রশস্ত্র হাতে বগুড়া গ্রুপের ছেলেদের মহড়া দেখেও না দেখার ভান করে সোজা প্রিন্সিপালের অফিসের কাছে অবস্থান নিল। বগুড়া গ্রুপের ছেলেরা জানে, তাদের পেছনে প্রশাসনের আশির্বাদ আছে। তাই পুলিশ আসা মানে তাদের মুভমেন্ট সেফ। কলেজে আর নিউটন গ্রুপ ঢুকতে পারবে না। কলেজ রোড দখলে রাখতে পারলে আর কিছু লাগবে না।
হরিপুর বাজারে পৌঁছে নিজের দলটাকে পরখ করে তাজুল। কেউ আহত হয়নি। সবাই একসাথে আছে।
ডাউকির মোড় থেকে ককটেল আর পাথর আসার পর তাজুল ভাবলো তারা এখন কোনদিক দিয়া বের হওয়া যায়।
কলেজে ঢুকলে পুলিশ আটক করবে আর কলেজ রোডে গেলে বগুড়া গ্রুপ হামলা করবে। হরিপুর বাজারের পেছনের গ্রাম দিয়ে বেরিয়ে শহরে যেতে পারলেই তারা সেফ।
তাজুল সরে পড়ার চিন্তা করতে থাকলে মিলনই ককটেলগুলোর দিকে তাকিয়ে বুদ্ধিটা দেয়। ‘একটা রিস্ক নিবি নাকি?’
এই সাহস এ যাবত কেউ করে নাই। ক্যাম্পাসে পুলিশ এলে বরাবরের মতো বগুড়া গ্রুপ কলেজ রোডে এসে পড়ে। আশপাশের মেসে ছড়ানো-ছেটানো পোলাপান তাদের ভালই আছে। ফলে, কলেজ রোডে অবস্থান নিতে পারলে তাদের আর কাবু করা যায় না। ওসমানের মোড় পেরিয়ে ওয়েদারের মোড়ে কলেজ রোডের মাঝামাঝি থাকলে যে কোনো দিকেই মুভ করতে পারে।
তরিক বলে, ‘সময় কিন্তু কম। কলেজ থেকে পুলিশ আসার আগেই কাজ সারতে হবে।’
হরিপুর বাজার থেকে দুইটার পর তাজুলদের গ্রুপটা যখন কোচিং সেন্টারের গলি হয়ে নিঃশব্দে কলেজ রোডে নামে তখন ফাঁকা কলেজ রোডে তাদের কেউ দেখতে পায় না। তারাও কাউকে দেখতে পায় না। হাঁটার গতি বাড়িয়ে তারা যখন ওসমানের মোড় পার হয় তখন পুরো গ্রুপটা উত্তেজনায় টগবগ করে। একসময় সবাই দৌড়াতে থাকে। বগুড়া গ্রুপের ছেলেরা বিজয়ের আনন্দে রসনাবিলাসে বসে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছে তখন।
তাজুলরা একেবারে কাছে চলে যায় তাদের। কাছে গিয়ে ককটেল চার্জ করতে থাকে। এই আক্রমণ হতে পারে, এটা বগুড়া গ্রুপের ছেলেদের মাথায় ছিল না। অপ্রস্তত অবস্থায় ভাতের থালা রেখে পালাতে থাকে কয়েকজন।
তিনজন ধরা পড়ে নিউটন গ্রুপের হাতে। রুবেল একটা চাপাতি নিয়ে কোপ দিতে এগিয়ে গেলে তরিক বলে, ‘কোপ দিস না। পায়ে বাড়ি মেরে পা ভেঙে দে সব কয়টার।’
হোটেলের রান্নার জায়গায় রাখা বাঁশ এনে ধরা পড়া সব কয়টা ছেলেকে পেটাতে থাকে তারা।
কেউ একজন চিৎকার দিয়ে ওঠে, একটাও যেন কলেজের দিকে না যায়।
সম্মিলিতভাবেভাবে বগুড়া গ্রুপের ছেলেদের তাড়িয়ে শহরের দিকে নিয়ে যায় তাজুলরা। ডাউকির মোড় পর্যন্ত গিয়ে থেমে যায় তাজুলরা।
হঠাৎ করে খেপে যায় রুবেল, ‘ছাড়লি কেন শালাদের। শহরে একত্রিত হয়ে আবার অ্যাটাক করবে।’
নিউটন ভাই ডাউকির মোড়ের মামনি হোটেলে ডেকে নেয় তাদের। বলে, ‘শহর নিয়া তোরা চিন্তা করিস না। আমার পোলাপান বাকীটা দেখতেছে। খাওয়া করে রেস্ট নে। সন্ধ্যায় দেখা করিস।’
খাওয়া-দাওয়া করে তরিকের মেসে এসে ঘুম দেয় ওরা।
একমাত্র তরিকই মেসে থাকে। বাকী সবার বাড়ি শহরে। তরিকের বাড়ি শহরে হলেও সে যে কেন মেসে থাকে এটা কারো মাথায় ধরে না। তবে সে মেসে থাকে বলে ওরাকল মেসে তাদের একটা আখড়া হয়েছে। কলেজের কাছে এই মেস তাদের ঘরবাড়ির মতো হয়ে গেছে।
একটা ভাতঘুম দিয়ে উঠে তারা জানতে পারে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রহরায় বহিরাগত ছাত্ররা মেস ও হোস্টেল ছেড়ে চলে গেছে।
তরিক বলে, ‘আমার রুমে কিন্তু আমি মাগী লাগাইতে দেবো না।’
মিলন বলে, ‘শালা এতক্ষণে ঝেড়ে কাশছে। এইজন্য তুই ডাইল খাইতে যাইতে চাইছিলি? ব্লু ফিল্ম দেখার প্রস্তাব দিতেছিলি। ওই খানকির পোলা, মাগী কি মানুষ না?’
রুবেল আস্তে করে বলে, ‘মাগীদের তুই মানুষ মনে করিস না? মাগী লাগাইতে দিবি না তো ভাল মেয়ে এনে দে।’
তাজুল এসব কথায় কান দেয় না। ওসমানের মোড় পেরিয়ে ওরাকলের কাছে এসে তাজুল বলে, ‘কে যাবে?’
ডাইল আনতে গিয়ে মিলন আসলে একটা ফাইল একা মেরে দিয়েছে কি না এই সন্দেহটা রুবেলের যায়নি। তাই সে বলে, ‘তাজুল তুই নিজে যা। টিপেটুপে ভাল দেখে আনিস।’
তাজুল স্টেশনের দিকে রওয়ানা দেয় সাড়ে আটটায়। স্টেশনের পাশে রেলওয়ের পরিত্যক্ত মালগাড়িগুলোই মাগীদের আখড়া। স্পটে লাগালে পার শট ৫০ টাকা। বাইরে আনলে অগ্রিম ১০০ টাকা।
দুইজনের কথা বলে দুইশ টাকায় একটা মাগী ভাড়া করে আনার পর তিনজন মিলে লাগানোর প্ল্যান তাদের।
কলেজ রোডে তাজুল-মিলনের ওপর কথা বলার লোক নাই। লাগিয়ে টাকা না দিলেও কিছু করার নাই কোনো খানকিমাগীর।
তাজুল যাওয়ার সময় রুবেল পইপই করে বলে দিয়েছে, ‘দেখে আনবি। ফিগার যেন ভাল হয়।’
মিলন বলে, ‘চিমসা লাগা বাতিল মাল আনিস না। তিনজনের লোড নিতে পারবে না। একটু নাদুস দেখে আনিস।’
শহীদ ওসমান সড়ক থেকে স্টেশন যাওয়া-আসা মাত্র ২০ মিনিটের ব্যাপার। কিন্তু এগারোটা পেরিয়ে গেলেও তাজুলের দেখা নাই দেখে চিন্তায় পড়ে যায় রুবেল ও মিলন।
মাগী লাগানোর চিন্তায় বিভোর হয়ে দুইজন অনেকক্ষণ চুপচাপ ঝিম মেরে ছিল।
তরিকের মেসে আকাম-কুকাম ওরা মেলা করেছে। কিন্তু মাগী ভাড়া করে আনার ঘটনা এর আগে ঘটে নাই। ফলে, চুপচাপ থেকে বিষয়টা ফিল চেষ্টা করছিল দুইজন।
তাজুলের অপেক্ষা করতে করতে অস্থির হয়ে মিলন শেষ পর্যন্ত বলে, ‘বালটা তো এখনও আইলো না।’
তরিক বলে, ‘তোদের আমি আগেই কইছিলাম। তাজুল একটা হাড়ে হারামজাদা। দেখ গিয়া, পঞ্চাশ টাকা দিয়া শাহী হোটেলে এক শট বিরানী মাইরা ছন্দা সিনেমা হলে নাইট শোতে ঢুকে গেছে। নতুন নায়িকা পপির কুলি লাগছে নাকি ছন্দায়।’
রুবেল বলে, ‘কথাটা কিন্তু খারাপ বলে নাই তরিক। তাজুলের বিশ্বাস নাই। আমাদের একজনের ওই বাটপারের সাথে যাওয়া উচিত ছিল।’
মিলন বলে, ‘গেলি না কেন খানকিচোদা। এমন রাগ লাগতেছে। আমরা এইখানে ধোন ধার দিয়া বইসা আছি আর মাদারচোদের কোনো খবর নাই।’
মিলন আর রুবেল অস্থির হয়ে সিগারেট টানতে থাকে।
রুবেল বলে, ‘মিলন, তুই আগায়ে দেখবি নাকি একটু?’
‘এখন আগায়ে লাভ কী? আসলে এর মধ্যে এসে যাইতো। আসে নাই মানে ভাগছে। এখন চল, ধোন ধইরা বইসা থাকি। তখন তরিকের কথা শুনে ব্লুফিল্ম দেখলে হাতটা অন্তত মারা যাইতো।’
হতাশ হয়ে পকেট থেকে একটা পুরিয়া বের করে স্টার সিগারেটের ভেতর ভরতে শুরু করে মিলন।
পুরিয়াটা লাক ফেবার করে যায়। স্টিক তৈরি হওয়ার আগেই দুইটা রিকশার টুংটা শোনা যায়। কাছে আসতেই একটা রিকশা থেকে তাজুল নামে। আরেকটা রিকশা থেকে এক মহিলা তড়িঘড়ি ওরাকলে ঢুকে পড়ে।
তাজুল এগিয়ে এসে বলে, ‘ওয়েট করতে করতে তোদের মাল কি পইড়া গেছে, নাকি আছে এখনও?’
মিলন বলে, ‘আমার তো ভাবছি তুই মাদারচোদ টাকা নিয়া ভাগছিস।’
‘তোরা এইটা ভাবতে পারলি? তাজুল কি একা কোনোদিন মাস্তি করে। স্টেশনে গিয়া শুনি মাগীরা দাঁড়ায় দশটার পর। স্টেশনের বাইরে আবার কোনো খানকি আসতে চায় না। অনেক কষ্ট করে আপা-টাপা ডাইকা এরে রাজি করাইছি। কয়, তিনশ টাকা দিতে হবে। ঝুল মাইরা নিয়া আসছি।’
তাজুল মেয়েটাকে তরিকের রুম দেখিয়ে দেয়।
মিলন বলে, ‘আমি বলে রাখছি। আমি আগে যাবো।’
রুবেল বলে, ‘না, আমি আগে।’
তাজুল বলে, ‘তোরা আগে গেলে আমি বাল ছিঁড়বো? তোদের মাল ফেলা ভোদা মারার জন্য এত কষ্ট করে মাগী আনলাম আমি?’
‘কেন, তুই কনডম আনিস নাই?’
‘আরে শাউয়া, স্টেশন থেকে কনডম নিলে কারো বুঝতে বাকী থাকবে যে আমি মাগী লাগাইতে গেছি? তোরা এইখানে বসে বসে কার ধোন চুষলি এতক্ষণ? এক প্যাকেট কনডমও কিনতে পারলি না, খানকিচোদারা।’
‘এইখানে কোনো দোকান খোলা আছে?’ রুবেল আস্তে করে বলে।
তাজুলের গরমে সবাই বুঝলো সেই আগে যাবে।
তাজুল ঢোকার আগে তরিককে বলে, ‘তুই দেখবি নাকি তরিক? কেমনে কী করে সেইটা অন্তত দেখে রাখ। কাজে লাগবে। তুই দেখতে চাইলে দরজা ফাঁক কইরা রাখি?’
তরিক বলে, ‘আমার লাগবে না।’
তাজুল রুমে ঢুকে যায়। ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।
রুবেল বলে, এই হারামজাদার সবকিছুতেই বেশি বেশি। মাগীই লাগাতে এনে দরজা লাগানোর কোনো দরকার আছে? দরজাটা লাগাইতে গেলি কেন খানকির পোলা?’
তরিক, রুবেল আর মিলন অধীর অপেক্ষায় বসে থাকে বারান্দায়।
তাজুল বের হলে রুবেলকে ধাক্কা মেরে একদিকে ঠেলে দিয়ে মিলন ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
তাজুল সোজা চলে যায় কলপাড়ে। গিয়ে কিছুক্ষণ কুলি করে। হাতমুখ ধোয়। তরিককে ডেকে বলে, কলটা একটু চাপ তো।
তরিক কল চাপতে থাকে। তাজুল পানি মুখে দিয়ে শুধু কুলি করতে থাকে। কুলি করা বন্ধ করে না।
ওইদিকে বন্ধ দরজার বাইরে বসে রুবেল মিলনকে গালিগালাজ করতে থাকে।
মিলন বের হলে রুবেল যেই রুমে ঢুকতে যাবে অমনি মেয়েটা বলে ওঠে, ‘দুইজনের কথা বলে আনছে। তিনজন কেন?’
মিলন বলে, ‘ও হঠাৎ আইসা পড়ছে। একটু দেখেন কী করা যায়।’
‘টাকা কিন্তু তিনজনের দেওয়া লাগবে।’
অস্থির হয়ে রুবেল বলে, ‘ঠিক আছে। তিনজনের টাকাই দেওয়া হবে।’
রুবেল ঢুকে যায়।
মিলনও কলপাড়ে এসে মুখ ধুয়ে কুলি করতে করতে তাজুলের দিকে চেয়ে বলে, ‘এইটা কী করছিস তাজুল। এইটা কী করছিস তুই।’
তাজুল বলে, ‘আমি তো বুঝি নাই। একবার ভাবলাম তোরে মানা করি। কিন্তু তুই এমন হুড়াহুড়ি লাগাইলি। বলার চান্স দিলি না।’
তরিক ওদের দুজনের কথা কিছু বোঝে না।
ওদের দিকে তাকিয়ে শুধু বলে, ‘তোদের কী হইছে?’
তাজুল ও মিলন দুইজনেই একসাথে বলে, ‘কিছু না, কল চাপ। তুই কল চাপ।’
এর মধ্যে রুবেলও বের হয়ে কলপাড়ে এসে কুলি করতে থাকে সমানে।
বলে, ‘তাজুল, এইটা কি করছিস তুই?’
তাজুল বলে, ‘দোস্ত বুঝি নাই আমি। মাফ করে দে। ভালয় ভালয় মেয়েটারে বিদায় কর আগে।’
মেয়েটা ঘর থেকে বের হয়ে কয়, ‘তিনজনের টাকা দেওয়া লাগবে।’
তাজুল দুইশ টাকা নিয়ে বলে, ‘টাকা আর নাই।’
মেয়েটা ঝামটা দিয়ে ওঠে।
‘খানকির পোলারা কী কস। দুইজনের কথা বলে তিনজন লাগাইলি। এখন দুই জনের টাকা দিস হারামজাদারা।’
তাজুল ফর্মে আসে।
বলে, ‘খানকিমাগী কথা বাড়াইস না। বেশি কথা কইলে টেংরি ভাইঙ্গা রাইখা দেবো। স্টেশনে আর যাওয়া লাগবে না। এখনই ভাগ। না হলে খবর আছে।’
মেয়েটা বিপদ অনুমান করে গালি দিতে দিতে হাঁটা দেয়।
মেয়েটা মেসের বাইরে যেতেই তাজুল বমি করা শুরু করে দেয়। তাজুলের দেখাদেখি রুবেল ও মিলনও বমি করা শুরু করে।
তরিক অবাক হয়ে কয়, ‘তোদের হইলো কী বলতো। কী হইলো তোদের। এত বমি করিস কেন?’
তরিকের কথার উত্তরে ওরা কিছু বলে না।
তাজুল কয়, ‘আমি গোসল করবো।’
বালতি, সাবান, গামছা এনে একে একে তাজুল, রুবেল, মিলন গোসল করে। পরনের প্যান্টশার্ট ধুয়ে বারান্দায় শুকাতে দেয়।
তরিক বলে, ‘তাজুল, ঠিক করে বলতো কী হইছে। তোদের নিয়া আমার চিন্তা হইতেছে।’
তাজুল বলে, ‘এইটা বলার মতো না রে, দোস্ত। খুব খারাপ একটা ঘটনা ঘটে গেছে।’
তিনজনের গোসল হয়ে গেলে ওরা চারজন মিলে ওসমানের মোড়ে যায়। সেখানে দোকানপাট বন্ধ দেখে সোজা ডাউকির মোড়ের দিকে হাঁটা দেয়। একটার পর একটা পান খায় তাজুল, মিলন আর রুবেল। কোনো কথা বলে না।
হঠাৎ করে আবার বমি করতে শুরু করে তাজুল। তার দেখাদেখি মিলন আর রুবেলও বমি করতে শুরু করে।
তরিক অস্থির হয়ে ওঠে।
‘তোরা মেডিকেলে যাবি? ডাক্তার দেখাবি?’ তরিক বলে।
তরিকের দিকে তাকিয়ে ওদের এবার মায়া হয়।
দোকান থেকে পানি নিয়ে হাতমুখ ধোয় তিনজন।
রুবেল তাজুললকে বলে, ‘দোস্ত তুই দেইখা আনবি না? এইটা কোনো কাম করছিস?’
তাজুল বলে, ‘আমি কি বুক চুষে আনবো নাকি? আমি না হয় ভুল করে বুকে মুখ দিছি। তোরা মুখ দিতে গেলি কেন?’
কথাটা মনে পড়তেই আবারও বমি করতে থাকে তাজুল। বমি করতে করতে চোখ লাল হয়ে যায় বাকী দুজনেরও।
তরিকের উদ্দেশে মিলন বলে, ‘তোর কথা শুনলে আর এইটা হইতো না।’
তরিক তখনও বুঝে উঠতে পারে না ঘটনাটা।
তাজুল নিরুপায় হয়ে বলে, ‘মেয়েটার মনে হয় ছোট বাচ্চা আছে। বুকে দুধ। আমরা তিনজনই বুকে মুখ দিয়া ফেলছি।’
নীরবতা নেমে আসে ওদের চারজনের মধ্যে।
মেসে ফিরে বিছানার চাদর-বালিশ নিয়ে কলপাড়ে বালতিতে চোবায় তরিক।
একসময় ঘরের চারদিকে তাকায়। চিৎকার দিয়ে ওঠে- ‘আরে রিপনের হাত ঘড়িটা কই? পরশু না ওর কাছ থেকে চেয়ে আনলাম পরীক্ষার কথা বইলা। ওই মাগী ঘড়ি নিয়া ভাগলো নাকি?’
মিলন বলে, ‘তোর তো তাও অল্পের ওপর দিয়া গেল, দোস্ত।’
রিপনের হাতঘড়ি
‘কোনখান থেকে কী শাউয়ার ডাইল আনছিস, বাল। কোনো ফিলিংসই পাইলাম না।’