তবুও তার প্রতীক্ষায় থাকা

 

হ্যালো ব্রাদার, কেমন আছেন? আপনার উপকারটা আমার মনে থাকবে। কেউ আগ বাড়িয়ে এভাবে হেল্প করে, এমন অভিজ্ঞতা অন্তত আমার হয়নি। এই নিন আপনার লোনের টাকা। আদতে মেট্রোরেল স্টেশনে দেখা হতেই শায়লা রহমান আমাকে দেখে বেমক্কাভাবে বাড়িয়ে দিলেন একটা খাম। যেন এটা না দেওয়া পর্যন্ত কাটিয়েছেন নির্ঘুম রাত।
বুঝতে পেরেও ইচ্ছেকৃতভাবে বললাম, আমার লোনের টাকা!
আপনি তো দেখি ভুল মেরে বসে আছেন। সেদিন টিকিটের জন্য আমাকে যে টাকাটা দিলেন।
আরে ধুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এই কয়টা টাকা আবার ফেরৎ দিতে হয় নাকি?
আপনি আমাকে টাকাটা দিয়েছিলেন লোন হিসেবে। যত অ্যামাউন্টই হোক না, লোনের টাকা পরিশোধ করা আমার দায়িত্ব। এই লোন আমি বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারবো না। ব্যক্তিগত ও পেশাগত, দুই ক্ষেত্রেই আমি এই নীতি মেনে চলতে চেষ্টা করি।
ঠিক আছে, লোন যখন একসময় কাটাকাটি হয়ে যাবে। এ নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই।
কীভাবে কাটাকাটি হবে?
আরেক দিন আমার যখন প্রয়োজন পড়বে, তখন না হয় নিয়ে নেব। আপাতত আপনার কাছে না হয় গচ্ছিত থাক। তাতে মুনাফাও তো মিলতে পারে।
না না, এটা কোনো কথা হতে পারে না। আমি তা মেনে নিতে পারছি না। তাছাড়া লোন পরিশোধের সেই দিন কবে আসবে, তার তো কোনো ঠিকঠিকানা নেই। প্লিজ, আমাকে এ মুহূর্তে লোনের দায় থেকে অব্যাহতি দিন।
দেখুন ম্যাডাম, এত অস্থির হওয়ার কিছু নেই। একদিন নিশ্চয়ই লোন শোধের মওকা পেয়ে যাবেন।
আশপাশে লোকজনের কৌতূহল দেখে নিরূপায় হয়ে খামটি ব্যাগে রাখতে রাখতে শায়লা বলেন, আপনি কিন্তু কায়দা করে আমাকে ঋণী করে রাখছেন। এটা আমার স্বভাববিরুদ্ধ। তা মোটেও ঠিক হচ্ছে না ব্রাদার। তা ছাড়া দেনাপাওনা থাকলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।
আরে, এমনটা কেন মনে করছেন? এ ধরনের ছোটখাট লোন বরং পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে। আর চলার পথে এই ধরনের লেনদেন সদ্ভাব গড়ে তোলে।
তাই নাকি? এই তত্ত্বকথা কথা জীবনে এই প্রথম শুনলাম। এ রকম সৌহার্দ্য ও সদ্ভাব আপনার কত জনের সঙ্গে আছে?
দেখুন, সম্পর্ক তো আর চাইলেই গড়ে উঠে না। সেটা তো বলেকয়েও হয় না। হঠাৎ করে হয়ে যায়। একটা গান আছে না, ‘যদি থাকে নসিবে, আপনি আপনি আসিবে’।
আপনি দেখি, কথায় খুব কুশলী। কায়দা করে আসল কথা এড়িয়ে যেতে পারেন। আপনি যেমন গানের কথা বললেন, আমারও তেমন গানের একটা লাইন মনে পড়ছে, ‘আমি জলে নামবো জল ছড়াব তবু জল তো ছোঁব না’। আপনার মনোভাব অনেকটা এমনই।
হেসে দিয়ে বললাম, তাই বুঝি? এত অল্প সময়ে আপনি আমাকে বুঝে ফেললেন? এজন্য আপনার অবশ্যই বাহবা পাওয়া উচিত। মানুষের মন নিয়ে নিয়ে নিশ্চয়ই আপনার কারবার?
একটু অপ্রতিভ হয়ে শায়লা বলেন, আপনি আমার কথায় মাইন্ড করলেন নাকি? আসলে এভাবে হয়তো আমার বলা উচিত হয়নি।
মাইন্ড করার কিছু নেই। আমি বুঝতে চাইছিলাম, আপনি থট রিডিং জানেন কিনা? মানুষকে পড়ে ফেলতে পারলে তো আপনার সঙ্গে হিসাব করে কথা বলতে হবে। সেটা আমার জন্য খুবই পীড়াদায়ক। আমি এত হিসাব-নিকাশ করে চলতে পারি না।
ধুত, কীসব ভাট বকছেন? আমিও তো মনের মধ্যে যা আসে, হুটহাট বলে ফেলি৷ যদিও সব পরিসরে নয়। এ কারণে অনেকেই আমাকে ভুল বোঝেন। থট রিডিং কোথা থেকে জানবো? এটা জানা কি এত সোজা?

শায়লাকে বললাম, ঠিক আছে চলেন, মেট্রোরেল কথা বলার আর সময় দেবে না। তাতে উঠার অপেক্ষায় থাকার সময় এতক্ষণ তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। যদিও আমরা দুজন পল্লবীতে থাকি। তবে আমি উত্তরে। শায়লা দক্ষিণে। প্রায়শই দুজনের মেট্রোরেলে উঠার সময় দেখা হয়ে যায়। তবে কখনো কথা হয়নি। মুখ চেনার মধ্যে পরিচয় সীমাবদ্ধ। সেদিন মেট্রোরেলে প্রবেশ করার মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করার আগে তাকে দেখে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিল। সম্ভবত কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। তাছাড়া তার তো কার্ড পাঞ্চ করে ভিতরে যাওয়ার কথা। তা না করে বাইরে কেন দাঁড়িয়ে থাকবেন? হিসাব মিলাতে পারছিলাম না। আমি তার খানিকটা পেছনেই ছিলাম।
এগিয়ে গিয়ে বললাম, এনি প্রবলেম ম্যাডাম?
আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ম্লান হাসি দিয়ে বললেন, না না ইটস ওকে।
ওকে যে নেই, সেটা তার মুখাবয়বে ফুটে ওঠে। আমি তাকে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বললাম, আমরা তো কাছাকাছি এলাকায় থাকি। প্রায়শই তো আমাদের দেখা হয়। কখনো কথাবার্তা হয়নি ঠিকই। কিন্তু আমরা তো একটু হলেও পরস্পরকে চিনি৷ আজকে হয়তো আপনার সমস্যা হয়েছে। কালকে আমারও হতে পারে। প্লিজ, কিছু না মনে করলে আমাকে সমস্যার কথা বলতে পারেন।
বলা ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন। অনেক ভেবেচিন্তে বিব্রত হওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, দেখেন, কি এক বিব্রত অবস্থা। কার্ড পাঞ্চ করতে গিয়ে বুঝতে পারি, ওয়ালেটটা আনতে ভুলে গেছি। তারমধ্যে এমআরটি কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, নগদ টাকা রাখা থাকে। এখন বাসায় গিয়ে আনতে গেলে বেশ দেরি হয়ে যাবে। আজকে অফিসে খুবই জরুরি কাজ। আমার একটা প্রেজেনটেশন আছে। ঠিক সময় অফিসে না পৌঁছালে বড় ধরনের একটা বিপদে পড়ে যাব। তাই কী করবো, বুঝতে পারছি না।
আমাদের দুজনের গন্তব্যই অভিন্ন। সমস্যাটা অনুধাবন করে খুব দ্রুত মতিঝিলে যাওয়ার একটা টিকিট নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে বললাম, চলেন যাই।
সে একটুখানি কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে আমার সঙ্গে সিঁড়ি বেয়ে ওঠেন। সে সময় তার নাম-পরিচয় জানতে পারি। তিনি বেসরকারি একটি ব্যাংকে জব করেন। মতিঝিলে ব্যাংকের সদর দফতরে বসেন। মেট্রোরেল এলে যথারীতি তিনি লেডিস আর আমি তার পাশের কম্পার্টমেন্টে উঠে পড়ি।
গন্তব্যে পৌঁছে মেট্রোরেল থেকে নামার পর পরই তার সঙ্গে ইচ্ছে করেই দেখা করি। স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় ভাঁজ করা একটা টিস্যু পেপার তার হাতে দিলে তিনি বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে যেভাবে তাকান, তাতে বুঝতে পারি, টিস্যুটা কেন দিলাম জানতে চাইছেন। সেটা বুঝতে পেরে বললাম, আজ বাসায় ফিরবেন না?
মানে কী? এর সঙ্গে টিস্যু পেপারের কী সম্পর্ক?
বললাম, ফেরার সময় টিকিট কিনতে হবে না?
ততক্ষণে টিস্যুর ভাঁজ খুলে কিছু টাকা দেখতে পেয়েছেন। হেসে দিয়ে শায়লা তা ফেরৎ দেওয়ার সময় রসিকতা করে বলেন, আপনার ধারণা, আমাদের ব্যাংকে টাকার অভাব?
হাসতে হাসতে বললাম, ব্যাংকে হয়তো টাকার কমতি নেই। কিন্তু এত কম টাকা ব্যাংকে নিশ্চয়ই লেনদেন করা মানানসই নয়।
সেটা নিয়ে আপনাকে উদ্বিগ্ন হতে হবে না। এটা ম্যানেজ করা কি বড় সমস্যা? এই বলে অনেকটা জোর করে টাকা ফেরৎ দিতে চাইলে বললাম, আরে, এখন রাখেন তো। এত ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। পরে না হয় পরিশোধ করে দিয়েন।
এরপর তাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে হাত নাড়িয়ে বিদায় নেই।

শায়লা যে খুব স্মার্ট, বুদ্ধিমতী ও ফ্যাশন সচেতন, সেটা তো তাকে দেখলে বুঝতে পারা যায়। তাকে কখনো কখনো বলিউড অভিনেত্রী হুমা কুরেশি মনে করে ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক একদিন তার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট চমকে দেওয়ার মতো। সে যে সুন্দরী তা নিয়ে দ্বিধা থাকার কথা নয়। সাইড ব্যাংস লং হেয়ারস্টাইলের কারণে তার সৌন্দর্য আরো বেশি খোলতাই হয়েছে। চোখে প্রাদার দামি সানগ্লাস। মাঝে মাঝেই তা বদলে যায়। অবশ্য নিজেকে বদলে ফেলার সযত্ম একটা প্রয়াস তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। বয়স একদমই বোঝা যায় না। চল্লিশের এদিক-সেদিক হতে পারে। সে যখন হেঁটে যায়, তখন এক ধরনের আভিজাত্য ফুটে ওঠে। তার কাছ থেকে ভেসে আসে বিদেশি পারফিউমের মন কেমন করা সুঘ্রাণ। আশেপাশের সবাই তার দিকে চেয়ে থাকে মুগ্ধতা নিয়ে।
শায়লার সঙ্গে শুধু অফিসে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝেই দেখা হয়। প্রতিদিনই যাতে দেখা হয়, ইদানিং আমার সে ধরনের একটা প্রয়াস থাকে। তাকে দেখলে মনটা একদম ফ্রেশ হয়ে যায়। দেখা হলে যে সব দিন কথা হয়, তা নয়। আমরা ট্রেনে উঠার পর পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। নামার পর কিছুটা সুযোগ থাকলেও সব সময় যেচে যেচে তো কথা বলা যায় না। সেটা শোভনীয় মনে হয় না। মাঝে মাঝে টুকরো টুকরো আলাপনে জানতে পারি, ব্যাংকে তিনি ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। হাজব্যান্ড একটি এনজিওর বড় কর্তা। প্রায়শই বিদেশে থাকতে হয়। ছেলে বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে আর মেয়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। আগে নিজেদের গাড়িতে অফিসে যাতায়াত করতেন। তাতে সময় বেশি লাগে বলে মেট্রোরেলের সওয়ার হয়েছেন। এরফলে অফিস যেন অনেকটাই তার নাগালের মধ্যে চলে এসেছে।

অনেক দিন হয়ে গেলেও শায়লার সঙ্গে যোগাযোগটা আগের মতোই। কখনো দেখা হয়। কখনো দেখা হয় না। কথাও হয় অল্পস্বল্প। তার সফিস্টিকেশন, তার কর্পোরেট মেজাজ, তার দায়িত্বশীল পদবী দুজনের মধ্যে গড়ে দেয় এক রকম ব্যারিকেড। আমার মধ্যেও কাজ করে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স। আমি যথেষ্ট আনস্মার্টও। যে কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নিজ থেকে এগিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া হয় না। মামুলি একটা ঘটনায় তার সঙ্গে পরিচয় হলেও সেটা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যেতে থাকে। তার জীবনে এ রকম ঘটনার কোনো গুরুত্ব থাকার কথা নয়। নিশ্চয়ই তার জন্য কিছু করতে কত জনেরই তো মুখিয়ে থাকার কথা। তাকে নিয়ে আমার ভাবার কারণ তার সৌন্দর্য, তার সৌরভ, তার ব্যক্তিত্ব আমাকে আকৃষ্ট করে। আমার জীবনে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এমন নারীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তাই তার প্রতি আমার এক ধরনের মুগ্ধতা তৈরি হয়। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ব্যাপারে নিজের হীনমন্যতা বোধ কাটিয়ে উঠতে পারি না। এজন্য তার নিকটতর হওয়া হয় না।
আজ কী কারণে যেন পল্লবী থেকে মেট্রোরেলে উঠার সময় দেখি, কম্পার্টমেন্টে লোকজনের তেমন উপস্থিতি নেই। সিট খালি পেয়ে বসে পড়ি। অবাক করে দিয়ে পরক্ষণেই আমার পাশে এসে বসেন শায়লা। এটা আমার কাছে অষ্টমাশ্চর্য মনে হতে থাকে।
আমার চাহনি দেখে শায়লা হাসতে হাসতে বলেন, এখানে বসে অন্যায় করলাম না তো?
আমি বিহ্বল হয়ে বললাম, তা কেন? তা কেন? আসলে আপনার মতো মানুষ এখানে বসবেন, সেটা ভাবতেই পারি না।
আমি কি অন্য গ্রহের মানুষ? আর এমন তো নয়, আপনাকে আমি চিনি না। আপনার সঙ্গে অনেক দিন কথা হয় না। ভাবলাম, আজ যখন সুযোগ এসেছে, সেটা কেন ছাড়ি। তাই আসন খালি দেখে আপনার পাশে এসে বসলাম। গল্পগুজব করা যাবে। আপনি তো আমাকে এড়িয়ে এড়িয়ে চলেন। কারণটা কি জানতে পারি?
আমি এড়িয়ে চলি না তো। তবে আপনি একজন দায়িত্বশীল কর্পোরেট লেডি, তাই বিরক্ত করতে চাই না। সে কারণে একটু সমীহ করে চলা আর-কি।
তাই বুঝি? প্রথম দিনের আলাপনে তো আপনাকে বন্ধুর মতো লেগেছে। তখন তো খুব আগ্রহের সঙ্গে কথা বলেছেন।
সে সময় তো আপনার পদ-পদবী জানতাম না। না জেনেই অনেক উল্টোসিধা কথা বলেছি।
তার মানে আপনি ব্যক্তির চেয়ে তার পদ-পদবীকে বেশি গুরুত্ব দেন।
আসলে সবাই তো একরকম নয়। কে কী মনে করেন, সেজন্য দূরত্ব বজায় রাখি৷
আমাকে কি আপনার দাম্ভিক মনে হয়?
সেটা মনে হয়নি। তবে আপনিও তো আর এগিয়ে আসেননি। সে কারণে আপনাকে দূর থেকেই অবলোকন করেছি।
কথায় কথায় কখন যেন গন্তব্যে পৌঁছে যাই। নামতে নামতে শায়লা আমার মোবাইল ফোন নাম্বার নিলেন।

এরপর দেখা হলে টুকটাক কথাবার্তা হতে থাকে। বাড়তে থাকে পরিচয়। একদিন দুপুরের দিকে ফোন করে জানতে চাইলেন, আপনি কি ব্যস্ত? না হলে চলুন আমরা দুপুরে কোথাও লাঞ্চ করি। যত কাজই থাকুক, এমন প্রস্তাব তো জীবনে বার বার আসে না। সম্মতি দিতেই আমরা বাইতুল মোকাররম সংলগ্ন বার্ডস আই রুফ টপ রেস্তোরাঁয় যাই। এই রেস্তোরাঁ থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভিউ চমৎকারভাবে দেখা যায়। সেদিন অন্তরঙ্গ পরিবেশ অনেক কথা হয়। লাঞ্চ শেষ হলে শায়লাই বিল মিটিয়ে দেন। আমাকে কোনো সুযোগই দেননি।
এরপর বেশ কিছু দিন শায়লার সঙ্গে দেখা হয়নি। না হওয়ার কারণ, মেট্রোরেলে তাকে যেতে দেখিনি। মনে মনে ভাবলাম, তিনি কি অসুস্থ নাকি ছুটিতে আছেন? নিজ থেকে তাকে কখনো ফোন করিনি। করা ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ভুগতে থাকি। শেষ পর্যন্ত নিজের কৌতূহল দমন করতে না পেরে ফোন করি। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। হয় ফোন বন্ধ নতুবা তা আর ব্যবহৃত হয় না। কয়েক দিন পর দুরু দুরু বক্ষে তার অফিসে খোঁজ নিতে গেলে জানানো হয়, ম্যাডাম তো চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কেন দিয়েছেন সেটা জানতে চাওয়া তো ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না। বুকের মধ্যে একরাশ প্রশ্ন নিয়ে ফিরে আসি। যথারীতি আগের মতোই মেট্রোরেলেই যাতায়াত করি। যাওয়ার সময় শায়লা রহমানকে দেখার একটা তাড়না থাকতো। আগেভাগেই পৌঁছে যেতাম স্টেশনে। এখন সেই তাড়না না থাকলেও একটা প্রত্যাশা তো আছেই, কোনো একদিন তার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত