তিন.
শরীরটা প্রচণ্ড ক্লান্ত।ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে না।ঘুমও হচ্ছে না। ছুটিও শেষের দিকে।দুদিন পর অফিস করতে হবে।উহ!! জীবন যেন যন্ত্রণা।মাথায় নানা চিন্তা।কী হবে সামনের দিনগুলো-ভেবে শশীর মাথা হ্যাং হয়ে গেছে।ডাক্তারের সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে কথা হয়েছে।মায়ের শরীর একটু ভালো।রাত দশটা।এমন সময় ফোন আসলো।বড় খালা ফোন দিয়েছেন।
বড় খালার ফোন আসলেই শশীর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।অথচ মন খারাপের সময়গুলোতে বারান্দায় গিয়ে আকাশ দেখা এখন আর হয় না শশীর।সামনে ঘোর অমানিশা।মা চলে গেলে কী হবে, কীভাবে চলবে, কেমনে বাঁচবে-হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে।
আবারও ফোন বাজছে।বড় খালার ফোন।
-কিরে ডাক্তার কি বলল?
-জি খালা, আগের চেয়ে একটু ভালো।
-তুই রাতে কিছু খেয়েছস? শচীন আজ রাতে ডিউটি করছে।এজন্য হাসপাতালে পাঠাতে পারলাম না।
-সমস্যা নেই।তুমি চিন্তা করো না।আমি হোটেলে খেয়েছি।
-শোন, কাল বাসায় আসতে পারবি?
বিষণ্ন শশী, কিন্তু সে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।কিছুই ভেবে পাচ্ছে না, কী বলবে।তারপর অনেকক্ষণ নীরব থাকার পর বলল,
-খালা কীভাবে আসব ?
-মন খারাপ করিস না।তর মা সুস্থ হলে শচীনকে নিয়ে আসব।এখন থেকেই মাথায় রাখ শচীনের বিষয়টা।দ্বিমত করিস না, কেমন।ভালো থাক।
ফোন কেটে গেছে।চোখ দিযে পানি পরছে।এই দুঃসময়ে খালার এই আচরণ মোটেও শশীর ভালো লাগেনি।আজ থেকে সাত বছর আগে যখন বাবা মারা যায়, তখন থেকেই বড় খালা শশীকে নিয়ে পরিকল্পনা করে শচীনের সঙ্গে বিয়ে দিতে।
কিন্তু বিয়ে নিয়ে আর পাঁচ দশটা মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে না শশী।ওর চোখে এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।সে জানে না কী হবে সামনে। বাবা প্রয়াত হওয়ার পর মাকে নিয়ে কত সংগ্রাম, যুদ্ধ করে চলছে দিনগুলো।গত দুই তিন বছরে মায়ের অসুস্থতা, নিজের চাকরি-কতকিছু।
শশী কেবিনে মায়ের পাশে শুয়ে পড়লো। রাত বাড়ছে।ঘুম আসছে না।নানা টেনশন। মোবাইলটা হাতে নিয়ে সাবরিনাকে হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করলো। পাঁচ মিনিট হয়ে গেলো। সাবরিনার কোনো রিপ্লাই নেই। মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে।শশী মোবাইল অফ করে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
চলবে..