কঙ্কণা উপাখ্যান

কঙ্কনা উপাখ্যান

সেই অনেক দিন, অনেক কাল, বহু বহু বছর আগের এক শ্রাবণ রাত্রির কথা। ঝিলিক ঝিলিক জ্যোৎস্না ঝরছিল সেই রাতে। অনুপম আলো আর জোনাক জ্বলা আঁধারে পথ চলতে চলতে প্রাচীন এক বটবৃক্ষ তলে দাঁড়িয়েছিলাম। ঘর ছেড়ে ঘরহীন হয়েছিলাম, আকাশ আর মাটি ছিল সহচর।

কী আনন্দময় নিশী কাব্য। চারদিকে তাকিয়ে যখন দেখেছিলাম, পৃথিবী ছিল জনমানবহীন। রাত দেখছিল আমাদের রোমাঞ্চিত হৃদয়ে। মিটি মিটি চোখ তুলে তাকিয়েছিল লুব্ধক কালকুট, বিপাশা, ললিতা, চন্দ্রাবলী আরও কতজন, আরও কত তারা। বিনম্র হাওয়ায় দুলছিল অশ্বত্থ পল্লব।

আজ তোমাকে খুব করে পুরনো নামে ডাকতে ইচ্ছা করছে। পুরনো সেই তুমি। প্রথম তোমাকে কী নামে ডেকেছিলাম মনে আছে? কঙ্কনা। কী কারুকার্য তোমার রূপ ছিল! আমি প্রাচীন চর্যাকার আর বৈষ্ণব পদাবলীর গীতিকারদের লেখা ঘেঁটে ঘেঁটে তোমার রূপ মিলিয়েছিলাম।

তুমি তন্বী, তপ্তকাঞ্চনবণা কিন্তু চকিত হরিণীর ন্যায় চঞ্চলনয়না ছিলে। নিবিড় কালো চোখ দুটি শান্ত অপ্রলভ, সর্বাঙ্গের উচ্ছলিত যৌবন যেন চোখ দুটিতে এসে স্থির নিস্তরঙ্গ হয়ে যেত। তোমার অন্তঃসলিলা যৌবন যেন ফল্গুধারায় বয়ে চলত।

এই কথা কী সুধায়েছিলাম তোমাকে সেই রাতে?
‘এস এস বধু এস, আধ আঁচরে বস,
আজি নয়ন ভরিয়া তোমা দেখি।
আমার অনেক দিবসে, মনের মানসে
তোমা ধেনে মিলাইল বিধি।’

সেই শ্রাবণ রাত্রি গেছে। তারপর কত রাত্রি চলে গেছে।
যে গেছে—তার সবই গেছে, কুল গেছে—মান গেছে,
রূপ গেছে, লাবণ্য গেছে। কত নতুন পুরাতন হলো। কত নামে কতজনকে ডাকলাম। কিন্তু ঘুরে ফিরে কঙ্কনাই যে শ্রেয়া হয়ে থাকল। সকল রাত্রির আঁধারে দূরবর্তী একটি নক্ষত্র হয়ে আজও সে জ্বলে আছে।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত