তেতুলিয়া থেকে ঠিক পুব দিকে নবাবপুর তিন কিলো পাকা রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে পানি। রাস্তার ডান পাশে কিলো দুুই দূরে বিশাল এক হিজল বন। বাম পাশে দেড় কিলো দূরে হিজলডাঙা গ্রাম। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হেটে চলছে তেতুলিয়া থেকে নবাবপুরের দিকে।
ছেলেটির হাতে একটা মোবাইল। মেয়েটির হাতেও। দুইজন নিরবে হাঁটছে। কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। চুপ। একেবারে নির্জন। রাস্তায় মানুষ বলতে তারা দুইজন।
তেতুলিয়া আর নবাবপুরের মাঝামাঝি স্থানে একটা উঁচু সুইচ গেইট। রাস্তা থেকে সুইচ গেইটের উচ্চতা অস্বাভাবিক ধরনের। কথিত আছে এই ব্রীজ তৈরির সময় একটি মানুষ বলি দিতে হয়েছিলো। এছাড়া নাকি ব্রীজ করা অসম্ভব ছিলো।
ছেলেটি বা মেয়েটি কারো একথা জানার কথা না। তারা এই এলাকার নয়, আজই প্রথম এখানে এসেছে। তাদের সাথে স্থানীয় কারো কোনো কথাও হয়নি।
তারা চলছে একে অন্যের সাথে নিরবতা রক্ষা করে। রাস্তার দুইপাশের পানি পিচ ছুঁইছুঁই। রাস্তার পাশের মাটি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। এমন জায়গা ওরা দুইজন আগে কখনো দেখেনি।
ঠিক দুপুরের সময় তারা সুইচ গেইটে এসে পৌঁছেছে। তখন ওদের মাথার উপর দিয়ে হিজলডাঙা থেকে উড়ে আসা একটা দাঁড়কাক হিজলবনের দিকে উড়ে গেলো। ছেলেটি গ্রামের দিকে মুখ করে রেলিঙে উঠে বসলো। আর মেয়েটি হিজলবনের দিকে।
মেয়েটি বলল একটা ছেলে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে। ছেলেটি বলল একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে প্রেম করে। তখন একটা মোবাইল পানিতে ডুবে গেলো। আর একটা মোবাইল নিচে পরে অকেজো হয়ে পড়লো।
মেয়েটি দূরে হিজলবনের দিকে একটা নৌকা দেখতে পাচ্ছে। হিজলডাঙা থেকে একটা ডাক আসে ছেলেটির কানে। নামো না হয় মৃত্যু অনিবার্য। ছেলেটি মেয়েটির দিকে তাকায় আর বলে একটা ছেলে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে। একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে প্রেম করে। তখন একটা মোবাইল পানিতে ডুবে যায় আর একটা মোবাইল অকেজো হয়ে পড়ে।
পরদিন সকালে নবাবপুরের কাছাকাছি দুইটা লাশ পাওয়া যায়। লাশগুলোর কোনো পরিচয় জানা যায়নি। বেওয়ারিশ লাশগুলো ঢেউয়ে ঢেউয়ে এপাড়া ওপাড়া করে হাওড় ঘুরে বেড়ায়। কেউ তাদের পরিচয় জানে না।