মায়া

ভাদ্র মাসের তেইশ তারিখ আজ । আকাশে যেরকম শুভ্র মেঘ ভেসে থাকার কথা, উড়ে বেড়ানোর কথা এদিক সেদিক সেরকম কিছুই হচ্ছেনা। দুপুর থেকে আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা। মানুষ শোকের দিনে যেরকম কালো পাঞ্জাবি আর শাড়ি পরে ঠিক সেরকম। দুপুর থেকে বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে তার নিজের ছন্দে। থামার কোনো নাম নেই। এরকম সময় কোনো কাজে মন বসে না। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, আফতাব খন্দকারের অফিস ছুটি হয়। অফিস থেকে কেউ বের হতে পারেনা। এরকম বৃষ্টিতে ছাতাও কাজ করেনা। ছাতা নিয়ে বের হলেও শরীর ভিজে একাকার হয়ে যায়। সে জন্য অফিস ছুটি হওয়ার পরও কেউ বের হয়না। সবাই গোল হয়ে বসে গল্প জমায়। একের পর এক চা আসে। অফিসের নিচে চা-সিঙ্গারার দোকান। সেখান থেকে বিশ-পঁচিশ মিনিট পরপর চা আর সিঙ্গারা চলে আসে। চা-সিঙ্গারা আসলে সবাই দুই-তিন মিনিটের জন্য নিরব হয়ে খাওয়া দাওয়ায় মনোযোগ দেয়। আফতাব খন্দকারের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে একটু দূরে বসে বৃষ্টি দেখছে আর কলিগরা কী নিয়ে গল্প করছে সেটা শোনার চেষ্টা করে। সব কথা কানে আসে না। একটা সময় আফতাব খন্দকার নিজের নাম শুনতে পায়। তারপর সমস্ত মনোযোগ সে সেদিকে দেয়।

‘আহারে মানুষটার কত কষ্ট!’ অফিসের সবচেয়ে সুন্দরী কলিগের কণ্ঠ হতে ভেসে আসে এই কথা। এই মানুষটাকে একদম সহ্য করতে পারে না আফতাব খন্দকার। সবসময় এসে করুণা করে। তার কণ্ঠে যতটুকু করুণা থাকে তার থেকে বেশি অপমান করার প্রবণতা টের পায় সে ।

‘সবই আল্লার ইচ্ছা।’ কথা শেষ করেই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে তরুণ কলিগটি। আফতাব খন্দকারের এই কলিগটির কোনো ধর্মেই আস্থা নেই। তবুও কেন সে আল্লার ইচ্ছার কথা বলল সে কথা বুঝতে পারে না আফতাব খন্দকার। এই ছেলেটিকে খুব ঈর্ষা করে সে। অত্যন্ত সুদর্শন। যেমন দেখতে সুন্দর তেমন সুন্দর কথাও বলতে পারে। আসর জমাতে তার সাথে পেরে উঠবে এমন মানুষ হয়তো খুব কমই আছে এই শহরে।

‘তার মেয়েটাকেও এমন হতে হবে! আহারে।’ আরেকজন এই মন্তব্যটি করল বেশ জোরেই।

একটা সময় এই কথাগুলো আফতাব খন্দকারকে খুব কষ্ট দিত। আজকাল কিছুই মনে হয়। দু-একজন কলিগ আফতাব খন্দকারের দিকে তাকিয়ে উঁচু গলায় সমবেদনা জানানোর চেষ্টা করে। সে এসব রসিকতা কানে না নিয়ে বৃষ্টির মাঝে বেরিয়ে পড়ে। কলিগরা পেছন থেকে দু-একবার যেতে মানা করলেও সেগুলো কানে তোলে না সে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সে হাঁটে। রাস্তার হলুদ আলোগুলো জ¦লছে। রাস্তার ভেজা কালো পিচেও জ¦লছে সে আলো।
আজ আফতাব খন্দকারের মন খারাপ হওয়ার কথা। অনেক কান্না করার কথা। কিন্তু সে শরতের শুভ্র মেঘের মতো আনন্দে উড়ে বেড়ায় এদিক সেদিক। অফিস ছুটির কিছুক্ষণ আগে যখন ঘন কালো মেঘ করে আসল তখন সে জানতে পারে মায়া মরে গেছে। অফিসে কথাটি কাউকে জানায় না। অনেক আনন্দের খবর আছে যা অন্যকে না জানিয়ে নিজের মতো করে উপভোগ করাতেই অনেক আনন্দ হয়। মায়ার মারা যাওয়ার খবরটি তেমন।

মায়ার জন্মও হয়েছিল এরকম একটা সন্ধ্যায়। গুমোট সন্ধ্যায়। আফতাব খন্দকার বাইরে দাঁড়িয়ে চিন্তার সাগরে সাঁতার কাটছিল। বারবার সিগারেট টানছে চিন্তায়। তার ছেলে হবে না মেয়ে হবে এ চিন্তা নেই তার। তার চিন্তা সন্তান যেন তার মতো না হয়। এই ছোট এক জীবনে অনেক কষ্টে বড় হয়েছে সে। ছোটবেলা কেটেছে অনেক কষ্টে। জন্মের সময় ডান পা তুলনামূলক ছোট নিয়ে জন্মায়। ঠিকমতো হাঁটতে পারেনা। পশ্চিমে যেতে চাইলে সরে সরে উত্তরে চলে যায়। পরিবার থেকে না হলেও বন্ধুদের কাছে অনেক অপমানের স্বীকার হতে হয় তাকে ছোটবেলায়। কেউ তার পা নিয়ে কথা বললে যারপরনাই রেগে যেত আফতাব খন্দকার। রেগে গেলে কি হবে, সে তো আর বন্ধুদের পিছু করে তাদের শাস্তি দিতে পারেনা। যার ফলে সে মনে মনে ফুলে ফেঁপে থাকত। কারো সাথে মিশত না। একা একা থাকতে বেশি ভালোবাসত। তার এই একা থাকার পিছনে আরো একটি বড় কারণ আছে। আফতাব খন্দকার যখন কথা বলা শিখল তখন তার পরিবার আবিষ্কার করল তার মুখ থেকে প্রচুর থুতু বের হয়। ছোটবেলায় অনর্গল কথা বলত সে। কিন্তু বড় হয়ে যখন বন্ধুদের অপমানের স্বীকার হতে থাকলো নিয়মিত, নিজেও বুঝতে শিখলো যে এটা তার সামনে থাকা মানুষের জন্য কতটা বিব্রতকর। তারপর থেকে সে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। প্রয়োজনীয় দুএকটা কথা তাও আবার মুখের মধ্যে হাত দিয়ে। সেজন্য সে কখনো চায়নি তার সন্তান তার মতো হোক আন্যের অপমান আর বঞ্চনা নিয়ে বড় হোক।

বড় চাচি মুখ ভার করে জানায় তার মেয়ে হয়েছে। আফতাব খন্দকারের মনে খটকা লাগে। সে তো কখনো ছেলের আব্দার করেনি তাহলে চাচি এমন গোমরা মুখ করে মেয়ে হওয়ার খবর দিলেন কেন। কোনো একটা সমস্যা হয়েছে ধরে নিয়েই সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল মাটিতে। খুব খারাপ খবর শোনার জন্য বারবার নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করেও হেরে যাচ্ছে সে। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। এতদিন সে এই কথা শুনে এসেছে। কিন্তু আজ তার মনে হচ্ছে তার পায়ের নিচেও মাটি নেই। কানের ভিতর মনে হয় কোনো বোলতা ঢুকে গেছে। সমান তালে ভোঁভোঁ করে যাচ্ছে। আফতাব খন্দকার পরে জানতে পারে মেয়ে তাঁর মতোই হয়েছে। তার বাম পা অনেক ছোট। বাবার উল্টো। সে বিশ্বাস করতে পারেনা। দৌড়ে যায় ঘরে। মেয়ের মুখ না থেকে পা দেখে সে। তারপর আর মুখের দিকে না তাকিয়েই সে ঘর থেকে বের হয়ে আসে।
সবাই বুঝতে পারে মেয়েটিকে এক পায়ে হাঁটতে হবে। কিন্তু চোখে ছিল তার এক পৃথিবীর মায়া। তার চোখে তাকালেই পড়ে ফেলা যেত শব্দহীন শত কবিতা। তা দেখে আফতাব খন্দকারের মা নাম রাখেন মায়া। মায়া যতই বড় হতে থাকে পরিবারের সবাই মায়ার ভক্ত হয়ে ওঠে। কী সুন্দর পাখির মতো কণ্ঠ! বাড়ির বাচ্চা বুড়ো সকলেই মায়ার আশেপাশে থাকে কখন মায়া ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে কথা বলবে। এদিকে আফতাব খন্দকার এসব মোটেও সহ্য করতে পারে না। লোাকে যখন জানতে চায় তার মেয়ে এমন হলো কেনো তখন তার মনে হয় ছুটে গিয়ে মায়ার গলা টিপে তাকে মেরে ফেলতে। আর পৃথিবীকে চিৎকার কর বলতে ইচ্ছে করে ‘আমার কোনো মেয়ে নেই।’ মেয়েটিকে সে কোনোদিন স্পর্শও করেননি। তার জন্য পরিবার ও সমাজ থেকে অনেক কথা শুনেও সে তাঁর মত হতে এক চুলও সড়ে দাঁড়ায়নি। মায়ার প্রতি কেন তার এত অভিমান তা সে নিজেও ভালো করে জানে না।

বৃষ্টিভেজা পথ দিয়ে উদ্দেশ্যহীন হেঁটে যায় আফতাব খন্দকার। পুরো শরীর ভিজে গেছে। বিভিন্ন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো অবাক চোখে তাকায় তার দিকে। তার কিছুই মনে হয় না। মনের ভিতর আনন্দ, অনেক আনন্দ। খুব আনন্দ পেলে তার উড়তে ইচ্ছে করে। শূন্যে হাত মেলে দেয় সে। কণ্ঠে “পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে”। আফতাব খন্দকারের পছন্দের গান এটি। বৃষ্টি এলেই গানখানি কণ্ঠে মেখে নেয় সে। বাড়ির সবাই হয়তো কাঁদছে। জোরে জোরে কাঁদছে হয়তো। আর অপেক্ষা করছে তার ঘরে ফেরার। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নেয় সে আজ রাতে আর ঘরে ফিরবে না। আফতাব খন্দকার আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হেসে ওঠে। বৃষ্টির জন্য আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো তাকায় । সেও তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আজ আর তার ভয় করে না অন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। অন্য দিন ভয় করতো।

আফতাব খন্দকারের এই ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে যে, তার জন্য বাসায় সবাই অপেক্ষা করবে। একসময় ফিরতে না দেখে তারা মায়াকে কবর দিয়ে দিয়ে দিবে। আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে! বাড়িতে গিয়ে আর মায়াকে দেখতে হবে না।

আফতাব খন্দকারের খুব ঘুম পাচ্ছে। অনেকদিন শান্তিতে ঘুমায়নি। আজ অনেক ভালো ঘুম হবে। মাথাটা অনেক হালকা লাগে তার। ঝরতে ঝরতে ক্লান্ত হয়ে বৃষ্টি থেমে যায়। পথে মানুষের চলাচল বেড়ে যায়। বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নেয়া মানুষ বাড়িতে ফেরার জন্য ভেজা পথে পা বাড়ায়। তার মনে হয় সবাই অনেক কষ্টে আছে। কিন্তু সে একাই সুখি মানুষ। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে আসে সে। এদিকে তাকে কেউ চিনে না। রাস্তার পাশের দোকান থেকে সে একটা সিগারেট ধরায়। এমন আনন্দ উদযাপন করতে বৃষ্টিভেজা এই পথে সিগারেটের জুড়ি নেই। সিগারেট ধরাতেই আফতাব খন্দকারের মনে পড়ে গেল কিছুদিন আগের শীতের কথা।

তখন রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনা আফতাব খন্দকার। মায়ার বয়স আট ছুঁয়েছে দুদিন হলো। ঘুমাতে গেলেই মাথার মধ্যে অনেক চিন্তা আসে। আর কিছুদিন পর মায়াকে বিয়ে দিতে হবে। কে বিয়ে করবে? পুরুষ মানুষ হয়েও তাঁকে যে কষ্ট করতে হয়েছে আর মায়াতো ..। তাছাড়া মেয়েকে অন্যের ঘাড়ে তুলে দিতে যে পরিমাণ অর্থের দরকার তার কিছুই নেই তার পকেটে। চিন্তা করতে পারে না সে। মাথা ঝিম ধরে আসে। সিগারেট শেষ একের পর এক। আগে মায়ার মা সিগারেট খেতে দিতো না ঘরের মধ্যে। কিন্তু সাত বছর ধরে সে আলাদা ঘরে ঘুমায়। সেদিনও সে এক আকাশ চিন্তা করে ঘুমাতে যায় ভোর রাতে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়েছে কেবল অমনি ঘরে ঢোকে মায়া। সে মায়ার সাথে কথা না বললেও একজন মেয়ে হয়ে যা করা দরকার মায়া তার সবই করে। ঘরে ঢুকে তার মাথায় হাত বোলাতে থাকে মায়া। এত মমতা সহ্য হয় না তার। যে হাতে সিগারেট ছিল সে হাত দিয়ে মায়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মেঝেতে। তার হাতের সিগারেট দিয়ে পুড়ে যায় মায়ার হাতের কিছুটা। মায়া কাঁদেনা। সে বুঝতে শিখেছে কেন তার বাবা তাকে আদর করে না। সে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে দশ মিনিট। আফতাব খন্দকারও পাগলের মতো শূন্য চোখ নিয়ে বসে থাকে সেখানে। তার খুব করে মনে হয়েছিল তখন যে সে পাগল হয়ে গেছে তা না হলে নিজের মেয়ের সাথে কেউ এমন করে। সে রাতে আর ঘুমাতে পারে না সে। তার বারবার করে মনে হয় যে তার মাথা এমন পাগল থাকা অবস্থায় মায়াকে মেরে ফেলতে হবে। তা না করলে মায়ার প্রতি মায়া জন্মাতে পারে। তার আবেগহীন পরিকল্পনা মায়ার জীবনের পর্দা নামাতে এগুতে থাকে।

ধীরে ধীরে অবশেষে আফতাব খন্দকারের সেই দীর্ঘ প্রতিক্ষিত মৃত্যু ছুঁয়ে দিয়ে যায় মায়াকে। এ দিনের অপেক্ষায় অনেক দিন ছিলো সে। দীর্ঘ প্রতিক্ষীত প্রাপ্তিগুলোর আনন্দ হয় অনেক। এ কয়েকদিন অবশ্য সে মায়ার সাথে একেবারে মিশে গিয়েছিলো। সে অবাক হয়ে খেয়াল করে মায়ার সাথে যে সে মায়াকে স্নেহ করে , মেয়ের মতো আদর করে তাকে কিন্তু তাতে কেউ আনন্দিত হয়না বরং একটু বাঁকা চোখে তাকায়। তার সাথে এমনভাবে কথা বলে যেন সে একটা পাগল। আফতাব খন্দকারেরও তাই মনে হয় যে সে একটা পাগল।

একদিন মায়া সকালে একটা খাতা হাতে নিয়ে এসে আফতাব খন্দকারের ঘুম ভাঙ্গায় । ‘বাবা, বাবা দেখ আমি ছড়া লিখেছি।‘ বলেই মায়া তার লেখা কবিতা পড়া শুরু করে,

বাবা আমার বাবা
অনেক ভালো মানুষ তিনি
বাবা আমার বাবা
আমায় আদর করেন যিনি।

মেয়ের লেখা এ কবিতা আফতাব খন্দকারের মনে কতটুকু আনন্দ দিতে পারে সেটা না বোঝা গেলেও তার ঘুমের ব্যাঘাতে যে সে বিরক্ত তা ঠিকই বোঝা যায়। তার থেকে বড় বিষয় হলো কবিতা নামক এমন ঠুণকো বিষয়ে আনন্দিত হওয়ার মতো মানুষ অন্তত সে নয়।

তখন আর মায়ার মুখ দেখলে আফতাব খন্দকারের রাগ হয়না বরং মায়া হত। পৈশাচিক মায়া। আহারে কিছুদিন পর মরে যাবে মেয়েটা! এ কথা ভাবার পর খুব আনন্দ হয় মনে। আফতাব খন্দকার নিজের সাথে তর্ক করে। আসলেই কী সে মায়াকে ভালোবাসেনা ? সে মায়াকে ভালোবাসেনা একথা তো বলা যায়না। কারণ মায়ার প্রতি তার এ ঘৃণা ভালোবাসা থেকেই। নিখাঁদ ভালোবাসা থেকে। সে চায়না তার মেয়েও সারাজীবন মানুষের ঘৃণা নিয়ে বাঁচুক। মানুষের হাসি তামাসার খোরাক হয়ে বাঁচুক। সে জানে মানুষের ঘৃণা নিয়ে বাঁচা কত কঠিন। এর চেয়ে বরং মরে যাওয়াই অনেক ভালো। তাইতো সে মায়াকে এ অভিশাপের জীবন থেকে মুক্তি দিতে চায়।

আফতাব খন্দকার যখন বাসার কাছাকাছি চলে এল তখন ভোরের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আবার বৃষ্টি পড়ে দু এক ফোঁটা করে। এদিকে আফতাব খন্দকারের কোনো খোঁজ না পেয়ে পাড়ার লোকজন মিলে মায়াকে কবর দিয়ে  দেয় রাতে। আর কয়েকজন মিলে বেরিয়ে পড়েছে আফতাব খন্দকারকে খোঁজার জন্য। এদিকে সে বাড়ির কাছেই আসতেই তার খুব করে ইচ্ছে করল মায়ার কবরটা দেখে আসতে।

আফতাব খন্দকার যখন মায়ার কবরের কাছে পৌছায় তখন মুশুলধারে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। আবার ভিজে যায়সে। মায়ার কবরের সামনে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল আফতাব খন্দকার। তার চোখে পানি আছে কিনা বোঝা যায়না। একটু পরেই সে স্পষ্ট শুনতে পায় কোথায় হতে যেন কে বলে উঠল,

বাবা আমার বাবা
অনেক ভালো মানুষ তিনি।

আফতাব খন্দকার চোখ মেলে তাকায়। না, কোথাও কেউ নেই। সে বাড়ির পথে পা বাড়ায়। হঠাৎ তার মনে মায়া তার সাথে সাথে হাঁটছে। সে মৃদু কণ্ঠে বলে, ‘তুই ফিরে এসেছিস মা, ভালো করেছিস। বাড়ি ফিরে যাবি ?’ ঠান্ডায় তার গলা থেকে অস্পষ্ট কিছু শব্দ বের হয় শুধু ।

কেউ কোনো উত্তর দেয়না আফতাব খন্দকারের কথার । চারপাশে শুধু বৃষ্টি পড়ার শব্দ।

আফতাব খন্দকার পিছনে ফিরে তাকায়। কেউ নেই। ছোট একটা কবর শুধু। সেখানে মায়া শুয়ে আছে একা। কবরের উপরে বৃষ্টি ঝরেই যাচ্ছে।

 

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত