আমি অনেক গল্প শুনতে চেয়েছিলাম (শেষ পর্ব)

১০.
পাহাড় ঘুরে ফিরছিলাম।নাইট জার্নি।আকাশে হালকা মেঘ।তারার আলোও আছে।পাশে বসা যাত্রী বললেন, ‌দেখেছেন আমরা কোথায় যাচ্ছি! ফেসবুকে দেখেন খবরটা-‘বিয়ে বাড়িতে আনন্দ করায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা’।আমি বললাম
-‘হুম।এই ধরনের ঘটনা ইদানীং প্রায়ই শোনা শোনা যায়।’
-‘হা হা হা’।
-‘দিন দিন যা অবস্থা হচ্ছে!’
-‌ইদানীং খবরের হেডলাইন পড়লেই আতঙ্ক লাগে।দেখেন এই যে হেডলাইন-‌‌‘জেলখানায় বন্দী বাবা ও ভাইকে দেখতে যাওয়ার পথে ধর্ষণের শিকার’।
-‘আসলেই দুঃখজনক।’

বাস যাচ্ছে।ওই যাত্রীর সঙ্গে আলাপে আলাপে নানান বিষয়ে কথা হলো। উনি জার্নিতে ঘুমানোর আগে একটা গল্প বললেন।তখন মধ্যরাত। রাস্তার দুই পাশে গাছ-গাছালি।কথনো উচু, কখনো নিচু রাস্তা।শাঁ শাঁ করে বাস যাচ্ছে।আমি গল্প শুনেই যাচ্ছি।চলুন গল্পটি আবারও শুনি।

তখন আমি গ্রামে থাকতাম।সন্ধ্যার পরই ধানখেতের ভেতর সরু রাস্তায় হাঁটতাম।একদিন হাঁটতে হাঁটতে রাত হয়ে গেলো।গ্রামে রাত মানে সুনসান নিরবতা।চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার।লোকজন খুবই কম থাকে।বুকের ভেতর ভয়, আতঙ্ক।হঠাৎ একটি ছায়া আমার পিছু পিছু হাঁটছে।
হ্যাঁ, ছায়া-ই হাঁটছে।
-এই ছায়া, তুই কে?
-সত্যিই তুই ছায়া না অন্য কিছু?
-কথা বল?

ছায়া হাঁটছে।কথা বলে না।শব্দ নেই।আমি জোরে হাঁটা শুরু করলাম। হঠাৎ একটি পাখির ডাক শোনা গেলো।

পেছনে তাকালাম। না, ছায়া নেই।মাথায় নানা চিন্তা।সঙ্গে ভয়, আতঙ্ক।হঠাৎ ছায়া আমার পেছনে হাঁটলো, এখন দেখি নাই।হাঁটতে হাঁটতে সামনে একটা বাড়িতে ঢুকে গেলাম।

সুনসান নিরবতা।বাড়িতে মনে হয় কেউ নাই।বাড়ির আঙ্গিনায় অন্ধকার।বাড়ির পেছনে বড় বাঁশঝাড়।অনেক বাঁশ।লম্বা লম্বা বাঁশ। হালকা বাতাসে বাঁশের ঝাড় শব্দ শোনা যাচ্ছে।
-বাড়িতে কেউ আছেন?
-কে… রে…
-চাচী আমি।
-তো কিছু দরকার
-হ চাচী, একটু পানি খাব।

গ্লাস নিয়ে এসে বলল, কল থেকে নিয়ে খাও।তো তোমার কি হইছে? হাপাচ্ছ কেন?
-না, চাচী।ওই রাস্তা দিয়ে আসতেছিলাম।হঠাৎ দেখি একটা ছায়া আমার পেছনে হাঁটছে।পরে আবার দেখি নাই।
-হা হা হা।হু হু করে হেসে দিলেন চাচী।আরে পোলাপান, গ্রামেগঞ্জে একলা রাতে হাঁটলে এরকম হয়ই।আসলে এটা কিছু না।
-না চাচী, ভুত,পেত্নী আছে তাে।একবার আমার এক কাজিনকে ভুত ধরেছিল।ওই ভুতটা মনে হয় ছায়া হয়ে আমাকে ধরতে আসছে!
-আরে ধুর পাগল।যাও বাড়ি যাও।ভয়ের কিছু নাই।পাকঘর থেকে একটা শোলা নিয়ে ওটাতে আগুন ধরায়ে যাও।সমস্যা নাই।

রাত তখন দশটা বাজে।আমার অবস্থা চূড়ান্ত রকমের খারাপ।দাঁতে দাঁত চেপে শোলায় আগুন ধরিয়ে আবারও হাঁটতে লাগলাম।ছোটবেলায় অনেক ভুতের গল্প শুনেছিলাম।ছায়া কী ভুত না আবছায়া-মাথায় নানা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।

আমি হাঁটছি।শোলার আগুন নিভে গেলো।সামনে টর্চ লাইটের আলো জ্বালিয়ে কে যেন আসছে।কাছে আসতেই বললাম
-ওই আতা কাকা, দাঁড়াও।আমারে একটু আগায়া দাও তো।ভয় ভয় লাগছে।
-চল।টর্চ লাইট আছে।সমস্যা নাই।আজ অন্ধকার একটু বেশি।

পড়ুন

আমি অনেক গল্প শুনতে চেয়েছিলাম ((৩))

আমি অনেক গল্প শুনতে চেয়েছিলাম (২)

আমি অনেক গল্প শুনতে চেয়েছিলাম (১) 

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত