আমি অনেক গল্প শুনতে চেয়েছিলাম (৩)

৯.
চারপাশে পাহাড়।মাঝখানে নদী আর সবুজ প্রকৃতি।আকাশে মেঘেরা উড়াউড়ি করছে।প্রকৃতির এই মায়ার আবহে নিজেকে হঠাৎ হারিয়ে ফেলতে ফেলতে ঠিক বিকেলে পাহাড়ের চূড়ায় উঠলাম।যখন হেঁটে হেঁটে উঠছিলাম তখন মাঝে মাঝেই পথ ঢেকে যাচ্ছিলো বৃষ্টি, মেঘ আর কুয়াশায়।

পাহাড়, মেঘ, প্রকৃতি দেখতে দেখতে হঠাৎ সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলো।ডরোথির গল্পের কথা।

ডরোথি সেদিন বলেছিলো সামির কথা।সেদিন সবশেষ কথা হয়েছিলো সামির সঙ্গে।বারবার যােগাযোগ করাও অনেক কঠিন।দুজনের মাঝে ভৌগোলিক ব্যবধান দশ হাজার মাইলেরও বেশি।কিন্তু শুধু ভৌগোলিক ব্যবধানই নয়, রয়েছে আরও একটি বাধা।দুজনের ভাষা দুইরকম।ওর ভাষা বুঝা যায় না।ওর সঙ্গে কথা হতো গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে।

প্রায় আট বছর আগে জেরুজালেমে ঘুরতে গিয়েছিলো ডরোথি। সেখানেই সামির সঙ্গে দেখা হয়।আলাপ হয়।প্রথম দেখাতে যদিও প্রেমে পড়েনি ডরোথি, কিন্তু বন্ধুত্ব হয়েছিল দুজনের।ডরোথি দেশে ফেরার পরও চলতে থাকে আলাপ।ডরোথি ইংরেজি জানতেন না, সামিও বুঝতেন না ডরােথির ভাষা।কাজেই গুগলের অনুবাদ ছাড়া গতি ছিল না।কিন্তু তাতে কাছাকাছি আসা আটকে থাকেনি।বন্ধুত্ব গড়ায় ভালোবাসায়।এক সময় দুজন দুই দেশের ভাষাও শিখতে থাকে।কিন্তু করোনা মহামারির পর থেকে আর কােনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।বিদেশি গণমাধ্যমে একবার খবর দেখেছিলো ওখানে নাকি করোনাভাইরাস খুব একটা ছিলাে না।তবুও যদি ওর হয়ে থাকে কিংবা করোনায় কিছু কি হলো – কোন কিছুরই হদিস মেলাতে পারছে না ডরোথি।এখন পর্যন্ত প্রায় দুইশ মেইল করেছে।কিন্তু কোনও উত্তর নাই।মেসেঞ্জার তো অলয়েজ ওপেন করে রাখা।কিন্তু কোনও খোঁজ নেই।

ডরোথির এই গল্প শোনার পর মাঝে মাঝেই মাথায় ঘুরপাক খায়।সন্ধ্যা শেষে রাত বাড়ছে।পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম।কোনো কোলাহল নেই।সুনসান নীরবতা।পাহাড় যেন শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ রাস্তার পাশে তাকিয়ে দেখি, মেঘের কোলে অনিন্দ্য সুন্দর এক বাড়ি।আমি ওই বাড়ির দিকে যাচ্ছি।এ সময় ডরোথির ফোন।আমি কিছুক্ষণ হাঁটার পর ওই বাড়িতে ঢুকে গেলাম।

চলবে..

আমি অনেক গল্প শুনতে চেয়েছিলাম (২)

আমি অনেক গল্প শুনতে চেয়েছিলাম (১) 

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত