দুই
প্রবীরের গল্পটি আপাতত ওখানেই শেষ করছি।চলুন আরও কিছু নতুন গল্প শুনি।
৮.
আজ এটাই প্রথম ট্রেন।ড্রিম লোকাল।মায়াপুর স্টেশনে সারাদিনে চারটা ট্রেন আপ-ডাউন করে।ভোরের প্রথম আলোটি ট্রেনের জানালা দিয়ে চোখে এসে পড়লো।শরীর ঝিমঝিম ভাব।বুঝে উঠতে পারছে না।ঘুমচোখে ট্রেনের কামড়া থেকে নামার পর মনে হলো এখানে কেন ?
এদিক-ওদিক তাকায়।লোকজন ট্রেন থেকে নেমে ছুটছে যে যার গন্তব্যে।কিন্তু পাপড়ি কোনকিছু ঠাহর করতে পারছে না- কী করবে সে।
সামনে আগায়।মিনিট দুয়েক হাঁটার পর দেখতে পেলো একজন হকার ভ্যানগাড়িতে ছারপোকার ওষুধ বিক্রি করছে।সে সময় কোনো ক্রেতা না থাকায় ওই হকারের কাছে যায় পাপড়ি।গিয়ে একটু পানি খেতে চায়।
-কি রে কেড়া তুই?
-ভাই দেন একটু পানি, গলাড়া শুকায়া গেছে-বলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।হকারের সাউন্ড বক্সে বাজছে তখন-‘ছারপোকা, জাগায় কামড়ায়, জাগায় মরে../মাইরা ফালান, মাইরা ফালান..’।
হকার পানির বোতল আগায়া দিলো।বোতলটি খুব একটা পরিষ্কার নয়।পানিও মনে হলো কোনও ড্রেন থেকে আনা।কিন্তু এসব বুঝার মতো পরিস্থিতি নেই পাপড়ির।দুই ডোক পানি খেলো।এমন সময় হকার জিজ্ঞেস করলাে
-কী সমস্যা তর?
ফােঁপাতে ফোঁপাতে পাপড়ি বলে
-আমি বোনকে খুঁজতে গেছি শ্যামপাড়ায়।হঠাৎ ওরা আমাকে সবাই ঘিরে ফেললো।কোনও কিছু বুঝার আগেই চোখ বেঁধে ফেললো। আমি থমকে যাই।ওরা মুখ চেপে ধরলো।
-এরপর?
-তারপর কি হলো কিছুই জানি না।এখন এই জায়গায়।
-তর বোনের কি হয়েছিলো? কেন খুঁজতে গেছিস? তর বাবা-মা কেউ আছে?
কোনও কথা আসছে না পাপড়ির।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।এরই মধ্যে এক বয়ষ্ক মহিলা এলো ছারপোকার ওষুধ কিনতে। পাপড়ি পানির বোতলটা হাতে নিয়ে আবারও পানি খেতে লাগলো।
রোদ উঠছে। পাঁচ মিনিট পর ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে গেলাে। ট্রেন থেকে নামা যাত্রীরাও চলে গেছে। ফাঁকা স্টেশন। ওই মহিলা দুই প্যাকেট ছারপোকার ওষুধ কিনে চলে গেলো।
শরীরটা একটু স্বাভাবিক এখন।মাথায় হাত দিয়ে হকারের পাশে বসে আছে পাপড়ি।মাথায় রাজ্যের চিন্তা।আকাশে কয়েকটা কাক উড়ে যাচ্ছে।এরই মধ্যে ট্রেনের হুইসেল বাজছে।আরেকটি ট্রেন আসছে। হকার শার্টের পকেট থেকে সিগারেট বের করে আগুন ধরিয়ে টানতে লাগলো। সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে।পাপড়ি ওখান থেকে উঠে সামনে হাঁটা শুরু করলো।
চলবে..