আমি অনেক গল্প শুনতে চেয়েছিলাম (১)

এক

আমি অনেক গল্প খুঁজি। হ্যাঁ, অনেক গল্প।এই ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে খুঁজে বেড়াই গল্প।গল্প আমার হৃদয় আন্দোলিত করে।মনকে সজীব করে।দুঃখ, যাতনা, ব্যথা, যন্ত্রণা, হতাশা-সব দুমড়ে মুচড়ে পানির মতো গলে যায় গল্প শুনলে।

এই তো গতকাল বাসে যাচ্ছিলাম।বাসে বসে অনেক যাত্রীর গল্প শুনছিলাম।শুধু বাসে নয়, দিনের চব্বিশ ঘণ্টাই গল্প শুনি।হাটে, ঘাটে, মাঠে, শপিংয়ে, অফিসে, স্টার সিনেপ্লেক্সে, বন্ধুদের আড্ডায়, প্রেমিকার কাছে, পত্র-পত্রিকায়, টেলিভিশনে-হ্যাঁ, সবখানে, সবার কাছে গল্প শুনি।

অতি সম্প্রতি কয়েকটি গল্প পথে যেতে যেতে শুনছিলাম।

১.

-ভাই, আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, আপনার বাসা কই?
-কেন? ঢাকায়।
-না, মানে আপনাকে পেছন থেকে আমার এক ভাইয়ের মতো দেখতে মনে হলো। জানতে চাইলে কী মনে করেন এজন্য বলতে চাইছিলাম না।
-হা হা হা, এই তো জানলেন।
-ধন্যবাদ।
-আপনার নাম?
-সাবের।
-ভালো থাকুন।

২.
-হ্যালো, কথা শোনা যাচ্ছে? তুমি বাড়ি যাওয়ার পর আর ঠিকমতো ফোন-ই দিচ্ছ না। ঠিকমতো কথা বলছ না। তোমার যদি কথা বলতে ইচ্ছে না করে, তাহলে বলে দাও।শুধু শুধু এভাবে থাকার মানে হয় না।করোনাকাল শেষ হয়ে যাচ্ছে।

৩.
-তোমারে বারবার বলছি কারো সাথে জড়াবা না।যদি কখনো শুনি তোমারে সাইজ করে ফেলবো।বাস থেকে নেমে সোজা বাসায় গিয়ে ঘুমাবা।ঈন্দ্রানী বলল,সেদিন তুমি সন্ধ্যার সঙ্গে কফি খাচ্ছিলে। আর যেন কখনো না দেখি।

৪.
-না, আমি আজ আসতে পারব না।অফিসের কাজের ঝামেলায় আছি।
কেন? আসব? কোনো সমস্যা? ধুর আসতে পারব না।
শুধু শুধু কথা বাড়াচ্ছ।
তুই একটা ডিস্টার্ব।

৫.
-তোমাকে যা বলার আমি বলে দিছি।সিদ্ধান্ত তোমার।বিয়ে করলে করবা।না করলেও সমস্যা নেই।অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হতে চাও নো প্রোবলেম।এখন আর সেই দিন নেই যে তুমি চলে গেলে আমি মরে যাব।বন্ধু হিসেবে থাকবে।বউ ঠিক-ই মিলে যাবে।হঠাৎ ফোনটা বন্ধ হয়ে গেলো।

উহ!মাঝে মধ্যে মনে হয়, এই মিথ্যার জগতটা বাস্তবে আমাদের আরও একা করে দিচ্ছে।

৬.
‘আমার স্বামী কই? তারে আপনারা আইনা দেন।সে আমারে ফোন করে না কেন? দুই মাইয়া লই এখন কই যামু? কে আঙ্গোরে দেখবে? কোনাইতুন খানা আইবো।’

কয়েকদিন আগে চরে গেছিলাম বাদাম কিনতে।পথে নুরানীর মায়ের লগে দেখা হইতেই হাউ মাউ কেঁদে উঠলো।বাম হাতটা ধরে এই বেদনার কথা বললো নুরানীর মা নাসরিন।

৭.
পূর্ণিমার রাত।এই রাতেও আজ চোখে ঘুম আসছে না। প্রচণ্ড গরম। রাতে তিনবার বিদ্যুৎ চলে গেছে।জানালায় চোখ রাখতেই হঠাৎ একটা আলো চোখে পড়ল।মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ। মাঝে মাঝে মনে হয় আছি কেন বেঁচে? হঠাৎ শিউলির ফোন।
-হ্যালো, হ্যালো, প্রবীর আছ?
-কি ব্যাপার, এত রাতে কল দিলা?
-হ। মেজাজ খারাপ। এজন্য ফোন দিলাম।
-ধুর! কবিতা শোনাবা?
-রাত তিনটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট।মুড নাই।
বাইরে ঝড় শুরু হয়েছে। আবার বিদ্যুৎ চলে গেলো।ফোনেরও নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো।

ধীরে ধীরে মেজাজটা স্থির হতে লাগল।বিছানায় শুয়ে আবারও জানালায় তাকাল প্রবীর।হুট করে এক মেয়ে জানালায় হাত ঢুকিয়ে দিতেই চুড়ির শব্দ শোনা গেল। বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠতেই প্রবীর মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।

চলবে..

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত