ট্রাভেল ব্যাগ
প্রতিদিন স্যার গটগট করে ঢোকেন , আবার গটগট করে বের হয়ে যান। এমন নয় যে তিনি প্রতিদিন একই টাইমে ঢোকেন আর একই টাইমে বের হন। তবে প্রতিদিন একবার ঢোকেন। উনিতো অফিসের দারোয়ান ও পিয়ন ও নয় যে তাকে একদম ঘড়ির কাটা দেখে দেখে নয়টায় ঢুকতে হবে। উনি হচ্ছেন অফিসের বড় সাহেব উনি ওনার সময়মতো অফিসে ঢুকবেন। যাক ছোট মানুষের এসব বড় চিন্তা করে কোন লাভ নাই। ওর কাজ হচ্ছে স্যর যখন ঢুকবেন তখন ঠকাস করে এক সালাম ঠোকা, স্যর যখন বের হবেন তখন আরেক সালাম।
প্রতিদিন সালাম ঠুকে আরশাদ কপাল হাত ঠেকিয়ে বড় স্যার অদৃশ্য হওয়া পযর্ন্ত দাঁড়িয়ে থাকে। স্যর হাতে একটা ব্রিফকেসের মতো একটা ব্যাগ থাকে। ব্যাগটার ভেতর মনে হয় কাগজ পত্র। টাকা পয়সাও থাকতে পারে বলে মনে হয় আরশাদের। ব্যাগটা আরশাদের ভারী ভালো লাগে। আরশাদের বিরাট সাইজের একটা ব্যগ আছে, যা সে বঙ্গ মাকেট থেকে কিনেছিল। সেই ব্যাগ টা দিয়ে বাসা টাসা পাল্টাতে ভারী সুবিধা,যত যা আছে সব একবারে ঢুকিয়ে চেনটা টেনে দিলেই হলো।
কিন্তু গোল বাধে এই যে প্রতি মাসে বাড়ী যাওয়ার সময় একটা পলিথিনের পোটলা করে লুঙ্গি গামছা নিতে হয়। বৌ ছেলে মেয়ের জন্য এক আধখান জিনিস কিনলে সেটা ওই পলিথিনের ভেতর সেধাতে হয়। আর ওগুলো হা করে রাস্তার দিকে চেয়ে রয়। আরশাদের মনে হয় রাস্তার লোকেরা ওর জিনিসপত্রর দেখে মুখ টিপে হাসে।বাড়ি ঢুকতে ঢুকতেই সবাই বুঝে ফেলে আরশাদ আলী তার বৌ ছেলের জন্য কি আনল শহর থেকে!
স্যর ঐ ব্যাগের মত একটা ট্রাভেল ব্যাগ হলে ওর সবকূল রক্ষা হত। অমন একটা ব্যাগ দোকানে সে দেখেছে। দামটা বড্ড বেশী।
প্রতিদিন স্যরের ব্যাগটা সে দুইবার মনোযোগের সাথে দেখে। দেখতে দেখতে ব্যগের ডানে বায়ে কী আছে সব ওর মুখস্ত হয়ে গ্যাছে।
সত্যিই সত্যিই ব্যাগটা যে একদিন ওর হবে এটা ওর কল্পনাতেই ছিলোনা।
কয়েকদিন পর স্যর গেলেন বিদেশে। বিদেশে কি এক বিদেশি কোম্পানির সাথে ব্যবসা। আসার পর একযোগে সবাইকে অথাৎ এই অফিসের তেইশজন কম্রিির সবাইকে ডাকলেন। সবার তো বুকের ভেতর ধুকপুক ।স্যর এক সপ্তাহ ছিলেননা সবাই বেশ ঢিলেঢালা মুডে ছিল। কিন্তু সে রকম কিছু হলো না। উপরন্তু স্যর সবাইকে কিছু কিছু উপহার দিলেন। সবচেয়ে আজব বিষয় আরশাদকে দিল সেই ব্যগটা যেই ব্যগটার দিকে এতদিন সে লোভাতুর জুলু জূলু চোখে চেয়ে থাকতো।
স্যর কিভাবে আরশাদের মনের কথা জানতে পেরেছে কে জানে!
ব্যাগটা পুরোনো হলেও মোটেও পুরোনোর মতো মনে হয়না। একটা চেইন ও নষ্ট হয়নি। রংটাও চকচকে।
প্রতিবারের মতো মাসের প্রথম সপ্তাহ এসে যায় আরশাদ বৌ ছেলে মেয়ের জন্য টুকটাক বেশ বাজার করে, কিছু শৌখিন জিনিসপত্র কেনে বৌয়ের জন্য।
তার পর ব্যগের ভেতর সব ঢুকিয়ে মনে হয়। এত সুন্দর অফিসারিয় ব্যাগের সাথে দারয়ান মা্রকা জামা কাপড় মোটেই মানাচ্ছেনা। তাই সে তার সবচেয়ে সুন্দর শাটটিই পরে রওয়ানা দেয়। অফিস সেরে কেনাকাটা করে বাস কাউন্টারে আসতে সন্ধ্যা ছুই ছুই। রোববার দিন ছুটি তাই বাস কাউন্টারে বেশ ভীড়। ওর মনে হয়, এমন সুন্দর ব্যাগ নিয়ে গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি বাসে ওঠা যাবেনা। অবশ্য ভাড়ার কথাটাও মাথায় রেখে সে একটা সেমি লোকাল বাসে উঠে পড়ে।
বাস ওঠার আগে থেকে সুন্দর ব্যগটা আর তার মালিককে লক্ষ করছিল মানিক আর রতন। ওদের কাছে তথ্য আছে ক্যাসিনো হামলার ভয়ে লোকজন ছদ্মবেশে এদিক সেদিক কোটি কোটি টাকা পয়সা , সোনা দানা নিয়ে পালাচ্ছে। কোনো এক পথে ইন্ডিয়া যাওয়ার ধান্দা। কয়দিন আগে ওদের বেড়িবাঁধ মাঠে এরকমই এক ব্যাগ পাওয়া গেছিলো। ব্যাগের ভেতরের সব টাকা কুচি কুচি করে কাটা, পরে পুলিশ এসে ব্যাগটা নিয়ে যায়।
আর এই লোকটা ব্যাগ ভর্তি টাকা না হয়ে যায়ইনা। কারণ লোকটার চেহারা,গায়ের জামা কাপড় , হাতের ব্যাগ সবকিছু দেখলে বোঝা যায় লোকটা বেশ টাকা ওয়ালা মানুষ।
তাছাড়া লোকটা ব্যগটা সবসময় বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। টাকা পয়সা সোনাদানাই লোকে এভাবে জড়িয়ে রাখে।
মানিক রতন ও আরশাদের ঠিক পিছনের সীটে বসে যায়। মানিক রতন মনে মনে হাসতে থাকে সারা জীবন তারা ছোট খাট দাও মেরেছে আজ একটা বড় দান মারবে।
আরশাদ আলীর মনে ভারী আনন্দ। বৌ এ সব জিনিস দেখে কত না খুশি হবে। তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার ভেবে ওর ভালো লাগছে ওকে দেখে অনেকে সমীহের চোখে তাকাচ্ছে সে বুঝে ফেলেছে। তাছাড়া ওর চেহারা সুরত খারাপ নয়, এই সুরতের বরাতে সে দারোয়ানের চাকরিটা পেয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতেই সে ব্যাগটা আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে।মুখে মুচকি হাসি থাকে।
বাসের যাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়েছে । আরশাদ ব্যাগটা জড়িয়ে ধরে আছে ওর ঘুম আসছেনা।
অনেকক্ষণ পর বাসটা ক্ষানিক যাত্রা বিরতির জন্য থামে। আরশাদ ও প্রাকৃতিক কাজকম্র সসেরে নেওয়ার জন্য নামে। ব্যাগটা সীটের ওপর রেখে নামতে পারত, সঙ্গে নিয়েই নামে । মানিক আর রতন আর দেরী করেনা তারাও নামে। এবং আরশাদ তার কর্ম সারবার জন্য একটু নিরজন জায়গা বেছে নেয়।
যেন মানিক রতন এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ব্যাগ ভতি টাকা।
বড় লোক হবে, ওরা অনেক বড় লোক।
আরশাদ কাজটা সেরে উঠে দা
দাঁড়ায়। কি যেন একটা ওর চোখে এসে লাগে । চোখ ঝাঁঝা করে ওঠে। ও দুহাত দিয়ে চোখ কচলাতে থাকে। আর মানিক ও রতন ব্যাগটা নিয়ে প্রানপণ দৌড়াতে থাকে বড়লোক হওয়ার আশায়।