বন্দরনগরী চট্রগ্রামে
বাবা সরকারি চাকুরী করার সুবাদে কিশোরী সময় কেটেছে চট্রগ্রামে , আমার এস এস সি আগ্রাবাদ সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয় ,তাই আগ্রাবাদ ঘিরে আছে আমার হাজার স্মৃতি । কিন্তু আমি হোটেল বুকিং করেছিলাম স্টেশনের বেশ কাছেই – ভাড়া নেবার কথা সি এন জিতে মাত্র ১০০ টাকা , কিন্তু শেষ রাতে ট্রেন থেকে নামার পরপর দরকষাকষির অবস্থা আর নেই, দু’খানা সি এন জি ৩০০ টাকায় নিয়ে জুবলি রোডের হোটেল টাওয়ার ইনে চলে গেলাম । টাওয়ার ইন প্রস্তুত ছিল আমাদের গ্রহণ করবার জন্য , ওদের জেনারেল ম্যানেজার বারি ভাইকে আগ থেকেই বলে রেখেছিলাম ভোরে এসে পৌঁছাবো । তাই পরিপাটি দু’টো রুম তাৎক্ষনিক পেয়ে গেলাম , সুপার ডুপ্লেক্স রুমে বাচ্চাদেসহ খালামনিকে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি আর আমার স্বামী নিলাম কাপল বেড রুম।কিন্তু ৮০৫ নম্বর রুমে গিয়ে পা রেখে বুঝলাম এই গরমে এসি তেমন সাপোর্ট দিচ্ছে না । ক্লান্ত শরীর টেনে নতুন রুমে শিফট করবো সেই অবস্থা তখন আমাদের নেই ,তাই চৈত্র মাসের ভ্যাপসা গরমে ঘুমিয়ে পড়লাম ।
শহর ঘুরে দেখবার জন্যে একটি গাড়ি ভাড়া করে রেখেছিলাম ; ড্রাইভার জুয়েল ভাই ঠিকি ১০ টায় হাজির হয়ে গেলেন হোটেলের সামনে ,কিন্তু আমরা কেও তখনো বেড়ানোর জন্য তৈরি হইনি । যাওয়ার ইচ্ছে ফয়জলেক ,কাপ্তাই , বাটালি হীল ; রিভার সাইড দিয়ে গাড়ি সাই সাই করে হাঁকিয়ে যাচ্ছে সেই দৃশ্য আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না । আমি চাচ্ছিলাম , কিশোর বয়সের সমস্ত অনুভূতিগুলো যেভাবেই হোক বাচ্চাদের দিয়ে যাব । আমি যথারীতি তাড়া দিলাম ,আমি তাড়া না দিলে কেও নড়বে না শুধু আমার খালামনি ছাড়া । আমার খালাকে নিয়ে কোন ঝামেলা নেই , সেই ছোট বেলা থেকে তার সময় জ্ঞান দূর্দান্ত , কোন কাজে না নেই এবং দেরীও নেই । সব না গিয়ে ঘিরে ধরলো আমার ছেলে মেয়েকে , তারা কোথাও যাবে না , হোটেলের ইন্টারনেট পাসওয়ার্ড ছাড়া তাদের আর কিছুই দরকার নেই । বহু জোরাজোরির পর দুই ভাই বোন কাপড় বদলে তৈরি হয়ে গাড়িতে উঠলো ।
সামনের সিটে কন্যা কোলে পিতা আর পেছনের সিটে ঠাসাঠাসি করে আমি ,পুত্র ,বোন আর খালা । ফয়জ লেক পৌঁছতে সময় লাগলো মাত্র আধঘন্টা , এর মধ্যে আমরা নাস্তা সেড়ে নিয়েছি কুটুম বাড়িতে –পরোটা আর ডাল ভুনা । এই ফাঁকে জানিয়ে দেই , বেলা ১১ টায় নাস্তা খেতে গিয়েছি বলেই কীনা ওদের একজন ওয়েটার আমাদের বলে দিয়েছিল- পরোটা নেই , এখন শুধু সিঙ্গারা হবে । বুঝুন ,সারা রাত জার্নি করে সকালে সিঙ্গারা , আমিতো ম্যানেজারকে গিয়ে বললাম ; তিনিও খুব অবাক হলেন –‘ পরোটা থাকবে না কেন ? আপনারা বসেন । কয়টা পরোটা খাবেন শুধু সেটা বলেন ।‘
-‘ আমাদের দুইটা করে ১০ খানা পরোটা দিলেই হবে আর আমার মেয়ে খাবে সিঙ্গারা ।‘
ক্ষুধার্ত বলেই হয়তো গোগ্রাশে সেই পরোটা গিলে ফেলেছিলাম , সাথে দুধ মালাই চা । লম্বা জার্নিতে আমি আবার লাল চা / কফি এড়িয়ে চলি । মালাই দেওয়া অসাধারণ চা গলায় নামানোর পর পুরো চট্রগ্রাম শহর আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল ।
পাহাড় ঘেরা ফয়জলেকে
চিরচেনা ফয়জলেকের চেহারা এখন আর আগের মতো নেই , কনকর্ড গ্রুপ ওখানে লাকজারিয়াস রিসোর্ট করেছে , একসাইটিং রাইড করেছে , লেকে বোটিং এর ব্যবস্থা করেছে , এ এক জমকালো ব্যাপার স্যাপার । টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি জন প্রতি দিতে হচ্ছে ৪০০টাকা । যদিও উপরে বোর্ডে ৩০০ টাকা উল্লেখ করা আছে , হতে পারে ১৭ ই মার্চ উপলক্ষ্যে এটা নতুন অফার ; যাই হোক ,নাচতে নেমে কী আর ঘোমটা দেওয়া যায় ! চার জনের টিকিট কেটে ওদের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে আমারা জামাই বৌ বাইরে বসে বসে ঠান্ডা পানি খেতে লাগলাম । খুব বেশি সময় হয়নি ,ঘন্টা খানেক পর দেখলাম পুত্র কন্যারা হাতে পেপসি পান করতে করতে বেড়িয়ে আসছে ,মানে তারা সব রাইডে ওঠেনি ।
চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্র থেকে ৮ কিমি. দূরে খুলশি এলাকায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম হ্রদ ফয়জলেক ।এটি ১৯২৪সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কতৃপক্ষ- এর তত্ত্বাবধানে খনন করা হয় এবং সেসময় পাহারতলী লেক হিসেবে পরিচিত ছিল। রেলওয়ে কতৃপক্ষ চট্টগ্রাম শহরের ব্যাপক এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য এই জলাধার দুটি খনন করেছিলো। বিশেষ করে নিকটবর্তী রেলওয়ে কলোনিতে পানি সরবরাহ করা ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। পরবর্তীতে ইংরেজ রেলপ্রকৌশলী ফয়-এর(Foy) নামে নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এটির মালিকানা বাংলাদেশ রেলওয়ে । বেশ বড় মাপের (৩৩৬ একর জমির উপর) এই লেকটি পাহাড়ের এক শীর্ষ থেকে আরেক শীর্ষের মধ্যবর্তী একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় আড়াআড়ি ভাবে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সৃষ্ট। আড়াআড়ি ভাবে নির্মিত বাঁধটি চট্টগ্রাম শহরের উত্তর দিকের পাহাড় শ্রেণীর থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহের দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে এই লেকটিকে সৃষ্টি করেছে। ভুতাত্ত্বিকভাবে এইসব পাহাড় শ্রেণী দুপিটিলা স্তর সমষ্টির শিলা দ্বারা গঠিত।
রাইডে চড়ার চাইতে আমার কন্যার শপিং এ ঝোঁক বেশী ,লেকের বাইরে যতো রকম খেলনা আছ সেটাই তার কিনতে হবে , এগুলো যে ঢাকাতেও পাওয়া যায় সেটা ভাব্বার বিষয় তার নয় ।সে খুঁজে খুঁজে খেলনা নিতে লাগলো আর আমার মহা মায়াবী খালামনি তাকে সংগ দিয়েই যাচ্ছেন । ইতিমধ্যে সুর্য মাথার ওপরে ,কড়া রোদে প্রাণ যায় যায় করছে । কিন্তু অন্যদিকে জিলাপী পাহাড় আমাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে । হুম ,বাটালী হিলকে বলা হয় জিলাপি পাহাড় । চট্টগ্রাম শহরের প্রাণ কেন্দ্রের লালখান বাজার এলাকার ইস্পাহানী মোড়ের উত্তরে ফাহিম মিউজিকের পাশ ঘেঁষে এবং ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির পিছন দিয়ে পিচ ঢালা পথ বেয়ে উপরে দিকে উঠে গেছে বাটালি হিলের রাস্তা।
চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে টাইগার পাসের বাটালী হিল । এটি চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে বড় পাহাড়। উচ্চতা ২৮০ ফুট। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পর অনুভূতিটা হয় চমৎকার। এই চূড়া থেকে সমগ্র চট্টগ্রাম দেখে নিতে পারবেন এক ঝলকে। বাটালী পাহাড়ের চূড়ার আরেকটি নাম আছে- ‘শতায়ু অঙ্গন’। এই অঙ্গনে রোজ আরোহণ করা মানুষেরা শত বছর আয়ু লাভ করবেন সন্দেহ নেই। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বাটালী পাহাড়ের চূড়াতেই বিমান বিধ্বংসী কামান স্থাপন করা হয়েছিল।
এবার হয়ে গেল আমাদের প্রাকৃতিক রাইড , পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে পাহাড়ের চুড়ায় পৌঁছালাম ,তারপর শুরু হলো সেলফি আর ছবি তোলার মিনি প্রতিযোগিতা ,পুরনো গাছে হেলান দিয়ে ,বুনো ফুল খোঁপায় গুঁজে , সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ,বেদিতে শুয়ে , রেলিঙ্গে বসে , নানান ভাবে ছবি তুলতে লাগলাম । আমাদের আনন্দ দেখে স্বয়ং ড্রাইভার ভাই নেমে এলেন , তিনিও ছবি তুলে দিলেন ,মা
ঝে মাঝে মনে হচ্ছিল পুরো শহরটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকি ,কোথাও আর যেতে না হয় । ছোট্ট বেলার দেখা সেই পাহাড় আজো ঠিক তেমন আছে ,মাঝে কেটে গেছে কতোগুলো যুগ ,বদলে গেছে সময় , বদলে গেছি আমরা ।।
জাহাজের শহর পতেঙ্গা
শহরের সমস্ত পর্যটক যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কর্ণফুলী নদী ঘেষে সুর্যাস্ত দেখবে বলে । আবার সেই কৈশোর স্মৃতি জাকিয়ে বসছে আমাকে ,নব্বই দশকে এমন চমৎকার পাকা রাস্তা ছিল না পতেঙ্গা যাবার পথে , দু’ধার ছিল সম্পূর্ণ ফাঁকা । তরমুজের ক্ষেত ছিল দিগন্ত জুরে আর ছিল সারি সারি ঝাউবন । এখন সেই রাস্তা অনেক আধুনিক হয়ে গেছে ,পাথর দিয়ে সাজানো হয়েছে নদীর পাড় । বাহারি বিপনিতে চোখ আটকে যাচ্ছে , ঝাউগাছ হারিয়ে যাচ্ছে । কৃত্রিমতা পেয়ে বসেছে পুরো সৈকত জুড়ে , সমুদ্রে যতো দূর চোখ যায় কেবল জাহাজ আর জাহাজ ভাসছে ।
চট্রগ্রাম শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকত । কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোংগোপসাগরে, ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণীঝড়ের কথা আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না ,আমাদের হোস্টেল কলোণী’র চার তলা অব্দি ঢেউ উঠে তান্ডব চালিয়েছিল ২৯শে এপ্রিল সারারাত । সেই সমুদ্র আজ ভীষন শান্ত , যেন পর্যটকদের উল্লাশেই স্থির হয়ে আছে ।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাটি বি এন এস ঈসা খান পতেঙ্গার সন্নিকটে অবস্থিত । এখন নিরাপত্তা যথেষ্ট জোরদার করা হয়েছে ,আমরাতো রাত আটটা অব্দি নির্বিঘ্নে কাকড়া খেলাম । আকর্ষণীয় অর্নামেন্টসে সাজানো দোকান , আলোক স্বজ্জা চারপাশে , আমার মেয়ে আর বোনের জন্য দূর্দান্ত শপিং মল এখানে । সমুদ্রে ঘুড়ে বেড়াবার জন্য স্পীড বোট , সী বাইক রয়েছে , রয়েছে ঘোড়া । এখন যতোক্ষন ইচ্ছে সমুদ্র পাড়ে বসে মৃদু বাতাস উপভোগ করা যায় ।
সন্ধ্যা পেরিয়ে ফিরে যাচ্ছিলাম শহরে , হঠাৎ চোখ আটকে গেল চট্রগ্রাম বোট ক্লাবে । ঢাকা বোট ক্লাবের নাম শুনেছি বহু আগে ,তবে এটার সাথে চট্রগ্রাম বোট ক্লাবের কোন সম্পর্ক নেই । নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বলে চট্টগ্রাম বোট ক্লাব রিসোর্ট এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুব ভালো। এই রিসোর্টের অন্য নাম ব্রিসা মেরিনা সিবিসি রিসোর্ট। এটি চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের চার তারকা রিসোর্ট, যার মূল প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বোট ক্লাব। শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে এই ক্লাবের আছে একটি পর্যটন জাহাজও। বোট ক্লাবে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের আবাসন ব্যবস্থা , যেখানে দেশী বিদেশী পর্যটক, সীম্যান/শীপস ক্রু ইত্যাদি অনেকেই এখানে নিরাপদে অবস্থান করেন। বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর তত্তাবধানে এই বোট ক্লাবটি পরিচালিত হয় বলে এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই উন্নতমানের।
এখানে রয়েছে একটি অডিটোরিয়াম, যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের সুব্যবস্হা রয়েছে। সামনে আছে অনেক বড় গাড়ী পার্কিং ব্যবস্থা , একসাথে কয়েক’শ গাড়ী পার্কিং সুবিধা। পাশে আছে একটি রেষ্টুরেন্ট এবং উন্নতমানের খাবার ব্যবস্থা ।
রাত হয়ে গেছে বিধায় সে রাতে আর ঢুকিনি ক্লাবে ,পরিচয় দিতে হবে ; অফিসারদের অতো রাতে আর বিরক্ত করতে চাইনি । রাস্তার ওপর প্রান্তে এয়ারফোর্সের রেস্টুরেন্টে বসে দু’ কাপ কফি পান করে ফিরে এলাম ।
মেয়েবেলার হারিয়ে যাওয়া চট্রগ্রাম শহর আর কোন দিন ফিরে পাবো না জানি ; তবু নতুন ঝকঝকে চট্রগ্রাম শহর সত্যি আমাকে মুগ্ধ করেছে যদিও এখন ট্রাফিক জট লেগেই থাকে প্রায়ই , তবু আরো একটু পরিকল্পনা মাফিক এগুলে বর্ষা কী শীত সব সময়ি চট্রগ্রাম পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম শহর হিসেবে গন্য হবে ।
রাতে ভাত খেতে যাব ; শরীর যেন আর টানছিল না । কুটুম বাড়ির ‘র খাবার ভীষন ভালো লাগলেও সে রাতে আর অতোদূর হেঁটে যেতে পারলাম না ; বাজারের ভেতর একটা অখ্যাত রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিলাম ; সেখানে মুরগির সাথে আবার ডিম সিদ্ধ পরিবেশন করা হলো । রুমে ফিরে দেখি এসি দূর্দান্ত ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে ,তাই আর দেরী না করে দিলাম লম্বা ঘুম ।পরদিন সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে গেলাম ,সুইমিং পুলে সাঁতার কাটবার জন্য বাচ্চারা তখন অস্থির ।ভাব এমন , না জানি কতোই তারা সাঁতার কাটতে পারে ! শুধু পা ডুবিয়ে দু’ তিন খানা ছবি নেওয়া , সাঁতার বলতে তাদের দৌঁড় এটাই ।
যাই হোক ,অনেক দাপাদাপি করে বুফে ব্রেক ফাস্টে ঢুকে গেলাম ।এতো এলাহী কান্ড , নানা পদের খাবার দিয়ে সাজানো ; কেও পরোটা নিচ্ছে , কেও লুচি আবার কেও ফ্রাইড রাইস। আমারতো সব সময়ি ভালো লাগে জুস খেতে । অন্যান্য নামী দাবী হোটেলের মতো শরবতের নামে পানি খাইয়ে দিল না হোটেল টাওয়ার ইন , সত্যি সত্যি পেপের জুস দিল ; আমি ভীষণ তৃপ্তি পেলাম । আর বেশি সময় হোটেলে দেরী করা যাবে না ,অনেক দূর পথ আজ ; গন্তব্য মিরসরাই , ভাটিয়ারী এবং চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।
পরদিন বেশ দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম ,দূরে যাবার প্ল্যান নেই ; ভেবেছিলাম সীতাকুন্ড দেখে ফিরবো ; কিন্তু বিকেলের বাসে টিকিট কেটে এসেছি ,পরদিন অফিস ধরতেই হবে । তাই বাচ্চাদের নিয়ে ওয়ার সিমেট্রি চলে গেলাম । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সমাধিস্থল ওয়ার সিমেট্রি এখন চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন স্পট । এটি চট্রগ্রামের মেহদীবাগ গোল পাহাড় এলাকায় অবস্থিত। বিশ্বযুদ্ধে ইন্দো-বার্মা রণাঙ্গনে আজাদ হিন্দু ফৌজের আক্রমণে মিত্রবাহিনীর যেসব সৈনিক প্রাণ হারান তাদের সমাহিত করা হয় চট্টগ্রামের বাদশা মিয়া রোডের প্রাকৃতিক এ পরিবেশে। ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেওয়া এই ওয়ার সিমেট্রিকে দেওয়া হয়েছে নান্দনিক রূপ। অসাধারণ সাজানো গোছানো পরিবেশে শীতল একটি অনুভূতি কাজ করে এখানে । পাহাড়ের ভাঁজে অপরূপ সাজে দাঁড়িয়ে থাকা এ সমাধিস্থল দেখতে ভিড় করেন অনেক ভ্রমণপিপাসু।
ওয়ার সিমেট্রি
পরদিন বেশ দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম , দূরে যাবার প্ল্যান নেই ; ভেবেছিলাম সীতাকুন্ড দেখে ফিরবো ; কিন্তু বিকেলের বাসে টিকিট কেটে এসেছি ,পরদিন অফিস ধরতেই হবে । তাই বাচ্চাদের নিয়ে ওয়ার সিমেট্রি চলে গেলাম । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সমাধিস্থল ওয়ার সিমেট্রি এখন চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন স্পট । এটি চট্রগ্রামের মেহদীবাগ গোল পাহাড় এলাকায় অবস্থিত। বিশ্বযুদ্ধে ইন্দো-বার্মা রণাঙ্গনে আজাদ হিন্দু ফৌজের আক্রমণে মিত্রবাহিনীর যেসব সৈনিক প্রাণ হারান তাদের সমাহিত করা হয় চট্টগ্রামের বাদশা মিয়া রোডের প্রাকৃতিক এ পরিবেশে। ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেওয়া এই ওয়ার সিমেট্রিকে দেওয়া হয়েছে নান্দনিক রূপ। অসাধারণ সাজানো গোছানো পরিবেশে শীতল একটি অনুভূতি কাজ করে এখানে । পাহাড়ের ভাঁজে অপরূপ সাজে দাঁড়িয়ে থাকা এ সমাধিস্থল দেখতে ভিড় করেন অনেক ভ্রমণপিপাসু।
বাড়ি ফেরার পালা
চট্রগ্রাম হচ্ছে কারো কাছে মেজবান আর শুটকি খাওয়ার জায়গা , কারো কাছে সমুদ্রের বিশাল আকর্ষণ , কারোবা পাহাড়ি সবুজ বনানী ; এর সব কিছু মিলিয়ে চট্রগ্রাম বাংলাদেশের এমন একটি জেলা যেখানে গেলে সমুদ্র পথে বাণিজ্য এবং বেড়ানো দু’টোই পাশাপাশি সম্ভব । চট্রগ্রাম জেলা ঘুরে দেখতে হলে আপনাকে বেশ কয়েক দিন হাতে নিয়ে যেতে হবে ,আর ট্রেন ছাড়াও আকাশ পথে সহজে এখানে যাওয়া সম্ভব । তবে মধ্যবিত্তদের জন্য বাস একটি দূর্দান্ত সার্ভিস ,সারাদিন রাত চব্বিশ ঘন্টা নানান কোম্পানীর বাস এই পথে আসা যাওয়া করছে । গ্রীন লাইন পরিবহন , হানিফ এন্টারপ্রাইজ , সৌদিয়া কোচ সার্ভিস , দেশ ট্রাভেলস , টিআর ট্রাভেলস এবং লন্ডন এক্সপ্রেস – এদের সার্ভিসে আমি প্রায়ই যাতায়াত করেছি ।
চট্রগ্রাম শহরে বেশ কিছু ভালো রেঁস্তোরা আছে । তবে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কুটুম বাড়ি , জামান হোটেল – জি ই সি মোড়, রয়েল হাট – হোটেল র্যাডিসনের বিপরীতে, সাদিয়াস কিচেন – জি ই সি মোড়, আরো অনেক আছে , তবে খরচ বেশি পড়বে।
চট্রগ্রাম বাণিজ্যিক শহর ; তাই মানসম্মত হোটেলের অভাব নেই এখানে । আমি কিছু হোটেল সম্পর্কে বলতে পারি ; যেহেতু ঢাকা থেকে বাস গুলো দামপাড়া কাউন্টার , জিইসি এলাকায় থামে তাই ওই এরিয়ার ভালো নিরাপদ কিছু হোটেলের ঠিকানা দিচ্ছি । হোটেল পার্ক (আবাসিক) ৫/৬ জাকির হোসেন রোড, দামপাড়া । জি.ই.সি, দামপাড়া, গ্রীন লাইন কাউন্টারের উপরে অবস্থিত, যেখানে বাস এসে থামে। হোটেল অবকাশ (আবাসিক) , জিইসি মোড় ,নিরিবিলি রেস্টুরেন্টের উপরে। হোটেল লর্ডস ইন , সি এন্ড বি জিইসি মোড় । হোটেল সিলমুন , ওয়াশা মোড় ,দামপাড়া । গোধুলী গেস্ট ইনন, ৫/৬জাকির হোসেন রোড চট্রগ্রাম দামপাড়া । এছাড়া আগ্রাবাদ হোটেলে অনেক ভালো মানের হোটেল আছে যা গুগল করলেই পাওয়া যাবে । ইউটিউবে প্রিভিউ দেখে সেগুলো বুক করতে পারবেন সহজে ।
আমি যেহেতু এবার পরিবার নিয়ে হোটেল টাওয়ার ইন-এ ছিলাম ,তাই এ সম্পর্কে বলতে পারি – এই হোটেল বেশ পরিচ্ছন্ন , চাওয়া মাত্র রুম সার্ভিস এসে হাজির হয় আর খাবারের স্বাদ ভালো এবং ভিন্নতা আছে রেসিপিতে । বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে গেলে এইসবই খুব দরকার হয় ।