ক’দিন ধইরি ঘরে খাওন নাই বাবা’ প্র
থমেই আম্বিয়া বেগমের সুরে হাহাকার, ‘ চাচা তোমার সিলেট শহরে রিশকা চালায়। আগে কোন দুঃখ আছিলো না। পেট ভরি দুই বিলা খাইবার পাইতাম। ছালুন না পাইলিও দুঃখ আছিলো না। লবন দিয়া ঠুসে খাইলিও পেট ভরি যাইতো। এহন আর ভরে নারে বাপ। নিজিতো পেডে পাথর বান্ধি পরি থাকতি পারি। কিন্তু চাইর পাঁচটা ছেইলে মাইয়ার মুখে তো কুন্তা তুলি দেওন লাগে। ছোড মানুষের কি সেই বুঝ অইছে! সারাডা দিন কান্দনের উপর থাকে। কানতি গেলেও তো শক্তি লাগি। সেই শক্তিডাও এহন আর নাই। মাটিতে পরি থাহে চিত হয়া। ’
রিকশা চালায়া চাচা দিনে কতো রুজি করে?
রুজি করার লাইগি তো শক্তি লাগে। শক্তি না পাইলি রিশকা টানবি কি কইরি। আগে দিনে মালিকের ট্যাহা দিয়াও দুই তিনশো থাকতো। এহন তার থাকি বেশি পায়। তাও পেটে খাওন জুটে না। বাজারে আগুন লাগছি। এককেজি চাইলের দাম ষাইট ট্যাহা সত্তুর ট্যাহা। তেলের দাম দুইশো ট্যাহা তিনশো ট্যাহা। সবজির বাজারে তো যাতিই পারে না। সব ডাকাতি করার লাগি বইসি থাহে। তোমার চাচার দিনি দুই কেজি চাইলের ভাত লাগে। তারপর ছেইলে মিয়ে। সব মিলে দিনে চাইল লাগে তিন চাইর কেজি। এহন এই চাইল কিনতি গেলি ট্যাহা লাগে না? মানুষটা দিনে আর কতই বা রুজি করে? তাইর মাইঝে গুদের উপ্রে বিষ ফোঁড়ার লাহান ছোড পোলাডার আবার অসুখ। ডাক্তারের ধারে লয়ে যাইতি পারতিছি না। তোমার চাচাই কইছে আইজ ডাক্তারের কাছি নি যাইবো। নিয়া গেলি ট্যাহা লাগে মেলা। ডাক্তার বাবুরাও ডাকাত অই গিছে। চাইশো পাশশো ট্যাহার নিছে দিতি চাইলে নেয় না। ঔষধপাতি আরো চাইর পাশশো। তাইলে কউ এতো ট্যাহা এহন কই পামু? তোমার চাচার শইলডাও আইজকাল ভালা যাইতিছে না। কয়দিন আগে হপ্তাখানেক বিছনায় পইরি আছিলো। তহন তো রিশকা চালাতি পারে নাই। তহন ধার দেনা করি কয়দিন কষ্ট মষ্ট কইরি চইলছি। এহন দেনাদার ট্যাহা চাইতাছে। কি যে চিন্তাই আছি বলি বুঝান যাইতো না।
অতঃপর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাইলাম না। আর সান্ত্বনা দিয়ে হবে কি! ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় আর পূর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। তারপরও আমরা জান্নাতে আছি। জান্নাতুল ফেরদৌসে। আসলেই কি!!