আশরাফুল মাখলুকাত

আমি যে এলাকায় থাকি সেখানকার চেয়ারম্যানের মেয়ের বিয়েতে এলাকার সবাইকে দাওয়াত দেয়া হলেও আমাকে দেয়া হয়নি। এতে অবশ্য আমি খুব একটা মন খারাপও করিনি। সবার পিছুপিছু চুপিসারে আমিও হাজির হয়েছিলাম বিয়েবাড়িতে। তবে বাড়িতে ঢোকার আগেই গেটের মুখ থেকে আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় কয়েকটা ছেলে। কষ্টে চোখে জল এসেছিলো সেদিন। চিৎকার করে বলতে চেয়েছিলাম “আমারও তো ক্ষুধা লাগে”, কিন্তু কিছুই বলিনি। পাছে ভাগ্যে রোজ যা জোটে সেটুকুও যদি হারাই! তাড়িয়ে দিলেও আমি গেট থেকে একটু দূরে গিয়ে ঠাঁয় বসে থাকি। যদি কারো মায়া হয়, আমায় ডেকে কিছু খাবার দেয় এই আশায়। তিন-চার ঘন্টা অপেক্ষার পর শেষমেশ আমার কপালে খাবার জোটে। লোকজন পেটপুরে খাওয়ার পর উচ্ছিষ্ট যা ছিলো তাই। আমি তাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম। দীর্ঘদিন অনাহারে থেকে তিলেতিলে মরে যাওয়ার চেয়ে অন্তত উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকাও ভালো। আমি কখনো খাবার নিয়ে অভিযোগ করিনি আর ভবিষ্যতে করবও না। পাছে যা জোটে সেটুকুও যদি হারাই!

উচ্ছিষ্ট হলেও চেয়ারম্যান বাড়িতে সেদিন যা খেয়েছিলাম তা ছিলো আমার সংক্ষিপ্ত জীবনে খাওয়া সেরা খাবার। অনেক খাবার নষ্ট হয়েছিলো সেদিন। টানা দুদিন বসে আয়েশ করে তার পুরোটুকু সাবাড় করি আমি।

 

এরপর আবার চিরাচরিত জীবন। উদ্দেশ্যহীন ভাবে রাস্তায় ঘুরাঘুরি, এর ওর লাথি খাওয়া আর কখনো কপাল ভালো হলে কিছু দানাপানি পেটে পড়া। মাঝেমাঝে ভাবি, আমার জীবনটাই কেন এরকমই হতে হলো? আশেপাশে যে মানুষগুলো হেটে বেড়াচ্ছে ওরা কী এমন পূণ্য করেছিলো পূর্বজন্মে? আমিও কেন ওদের মত হলাম না! কেন আমারও একটা সুন্দর পরিপাটি জীবন নেই? আমারও তো একটা স্থায়ী সংসার সাজাতে ইচ্ছে করে, একটু খেয়ে-পরে বাঁচতে ইচ্ছে করে। বেশিক্ষণ ভাবার উপায় অবশ্য পাই না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বেশিক্ষণ ভাবতে গেলেই পেটের উপর কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীর পায়ের লাথি পড়ে। ওপাড়ার বাবলু ছেলেটা যতদিন ছিলো ততদিন অবশ্য কেউ সে সাহস করেনি। বাবলু বেশ আদর করত আমাকে। রাস্তায় দেখলেই পাউরুটি কিনে দিত। পকেটের অবস্থা ভালো থাকলে মাঝেমধ্যে অবশ্য বিরিয়ানিও খাওয়াতো। আমিও সারাদিন ওর পিছুপিছু ঘুরতাম। না, সবসময়ই যে খাওয়ার লোভে ঘুরতাম তা নয়। স্বার্থপর পৃথিবীতে একটু স্বার্থহীন ভালোবাসার লোভেই ওর পিছু নিতাম।

 

বাবলু খুন হয় আরো দু মাস আগে। খুন হওয়ার রাতে আমিও ওর সাথেই ছিলাম। রাত দশটা এগারোটার দিকে দুটো ছেলে এসে ওর পথ আগলে দাঁড়ায়। তার ঠিক পরপরই কোনো কিছু না বলেই একটা ছেলে ধারালো এক ছুড়ি দিয়ে কেটে দেয় ওর গলা। আমি খুব চিৎকার করেছিলাম সেদিন। সবাইকে ডেকেছিলাম ওকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু কেউ আমার ডাকে সাড়া দেয়নি। এলাকাবাসী বোধহয় বাবলুর মৃত্যুতে খুশিই হয়েছিলো। তাদের চোখে বাবলু ছিলো এক ভয়ংকর সন্ত্রাসী, কিন্তু আমার কাছে ওই ছেলেটাই ছিলো স্বর্গের ফেরেশতা।

সকালে পুলিশ এসে যখন ওর লাশটা নিয়ে যায় তখনও ওর পাশে বসে কাঁদছিলাম আমি। পুলিশকে বলেছিলাম, “দেখুন কী নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে বাবলুকে। আমি ওর খুনীদের শনাক্ত করতে সাহায্য করবো। আমি ওর খুনের বিচার চাই।” কিন্তু পুলিশ আমার কথা কানে না তুলে বরং লাঠির আঘাতে তাড়িয়ে দেয়।! “ভাগ শালা, দূরে গিয়া মর!” তামাটে চেহারার এক পুলিশ গালি দেয় আমাকে। সেদিন আমি প্রতিবাদ করতে পারিনি। বা করলেও কেউ আমাকে পাত্তা দেয়নি।

 

বাবলুর মৃত্যুর পর উদ্দেশ্যহীনভাবে এখানে ওখানে ঘুরতাম। মাঝেমধ্যে হয়তো কিছু খাবার জুটতো। এরমধ্যে একদিন বিন্তী মেয়েটার সাথে দেখা হয়। খুব লক্ষ্মী একটা মেয়ে ছিলো সে। আমি যেই এলাকায় থাকতাম সেখানে নতুন এসেছিলো, একটা স্কুলের শিক্ষক হিসেবে। রোজ স্কুলে যাওয়ার সময় আর স্কুল থেকে ফেরার পথে আমাকে খাবার কিনে খাওয়াতো সে। কখনো বাসা থেকেও খাবার নিয়ে আসতো আমার জন্য। আশেপাশের লোকজন বিদ্রুপ নিয়ে তাকাতো, কেউ কেউ মাঝেমধ্যে বাজে মন্তব্যও করত। কিন্তু বিন্তী সেসব কিছুই কানে তুলত না। আমিও রোজ তাকে এগিয়ে দিতাম স্কুল অবধি, আবার স্কুল থেকে বাসা অবধি। এভাবেই যেতে পারতো দিনগুলো, কিন্তু কেন জানিনা ভাগ্য আমার ভালো মোটেও সহ্য করতে পারে না। হঠাৎই একদিন বিন্তীর ট্রান্সফার হয়ে যায় অন্য স্কুলে। সেই সাথে ট্রান্সফার হয় আমার ভাগ্যেরও। এতে অবশ্য দোকানে বসে তীর্যক মন্তব্য করা লোকগুলো বেশ খুশিই হয়েছিলো।

 

শুক্রবার সবাই যখন মসজিদে যেত, আমি তখন বাইরে বসে থাকতাম। মসজিদের ভেতরে আমার প্রবেশ নিষেধ ছিলো। বাইরে বসেও ইমাম সাহেবের প্রতিটি কথা গভীর মনোযোগের সাথে শুনতাম। “মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত, অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব” এই কথাটা বহুবার শুনেছি তাঁর মুখে। সত্যিই কী মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব? যে তার নিজ প্রজাতির একজনকে নির্দ্বিধায় খুন করে ফেলতে পারে তাকে আর যাই হোক সেরা বলা যায় না। আমি বলারই বা কে! আমার কথায় কান দিতে যাবে কে!

ইমাম সাহেবকে বেশ ভালো মানুষ মনে হত। কী সুন্দর নীতিকথা বলতেন সবাইকে। ভালোবাসার বাণী ছড়িয়ে দিতেন সবার মাঝে। সাম্যের কথা বলতেন, দয়ার কথা বলতেন। খুব আগ্রহ নিয়ে সেসব শুনতাম। কিন্তু আমার সে সৌভাগ্যও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি! একদিন নামাজ শেষে আমাকে মসজিদের সামনে বসে থাকতে দেখে একটা বড় ইটের টুকরা ছুড়ে মারেন তিনি। আমার মাথায় লেগেছিলো সেই টুকরাটা, চামড়া উঠে গিয়েছিলো। রক্ত বের হচ্ছিলো দরদর করে। খুব ব্যথা পেয়েছিলাম সেদিন। যতটা না শরীরে তার চেয়েও বেশি ব্যথা পেয়েছিলাম হৃদয়ে।

 

এরপর মনের দুঃখে সে এলাকা ত্যাগ করি আমি। পাশের এলাকায় ঘাটি গাড়ি। সেখানকার আসমত আলী সাহেবের খুব নামডাক শুনেছি। অনেক বিত্তবান আর দয়ালু মানুষ তিনি। তিনি নিশ্চয়ই আমাকে আশ্রয় দিবেন। আশ্রয় না দিলেও তাঁর বাড়ির উচ্ছিষ্ট খেয়েও অন্তত বাঁচতে পারবো।

তিনি আমাকে নিরাশ করেননি। বিশাল বাড়িটার একপ্রান্তে আমার জায়গা হয়। তিনবেলা না হলেও প্রায়শই দুবেলা পেটপুরে খেতে পাই আমি। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁর বাড়ি পাহারা দেয়ার কাজে নিয়োজিত হই। দিনগুলো বেশ ভালোই যাচ্ছিলো।

 

কিন্তু জন্মই যার আজন্ম পাপ তার কপালে সুখ সইবে কিভাবে! আমার কপালেও সুখ সইলো না। এক রাতে মুখোশ পরে কয়েকজন চোর এলো আসমত আলী সাহেবের বাড়িতে। ওদের দেখেই তেড়ে গিয়েছিলাম আমি।ল্ল চিৎকার দেয়ার জন্য মুখ খুলতে যাবো এর আগেই মুখোশধারীদের একজন সজোরে আঘাত করে আমার মাথায়। জ্ঞান হারাই আমি।

সকালে যখন হুশ আসে ততক্ষণে আসমত সাহেবের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। আমাকে জেগে উঠতে দেখেই তেড়ে আসেন আমার দিকে। “নবাবের বাচ্চার ঘুম ভাঙছে দেখি। খাওয়াইয়া দাওয়াইয়া আমি নবাব পালি। আমার বাড়ি চুরি হয় আর সে নাক ডাইকা ঘুমায়।” বলে কষে একটা লাথি মারেন আমার তলপেট বরাবর। ব্যথায় কোঁকাতে কোঁকাতে আমি বলার চেষ্টা করি কী হয়েছিলো গতরাতে। কিন্তু ঘরঘর আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বের হয় না আমার গলা থেকে। বেইমান, নিমকহারাম এসব খ্যাত হয়ে সে এলাকাও ছাড়তে হয় আমার।

 

একে তো মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা তার উপর কারো থেকে খাবার না পাওয়ায় বেশ দূর্বল হয়ে যাই আমি। হাসপাতাল তো আমার জন্য নয়। চিকিৎসা করে যে সুস্থ হবো সে আশা করেও কোনো লাভ নেই। তবে এভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই যে মারা যাবো তা স্পষ্ট বুঝতে পারি।

শেষমেশ বেঁচে থাকার তাগিদে সিদ্ধান্ত নেই এমন কিছু করার যা কখনো করিনি। হ্যাঁ, চুরি করার সিদ্ধান্ত নেই। চারিদিকে কত মানুষ কত বড় বড় চুরি করছে আর পেটের দায়ে আমি একটু খাবার চুরি করতে পারবো না? নিজের চুরিকে বৈধ করতে নিজেকেই বুঝ দেই আমি।

 

অবশেষে একটা চায়ের দোকান থেকে কোনোমতে একটা পাউরুটি চুরিতে সক্ষম হই আমি। কিন্তু দোকানি কিছুতেই পাউরুটি হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না। তিনিও আমার পিছু নেন পাউরুটি ছিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে। আর পাউরুটি বাঁচাতে আমিও প্রাণপণ দৌড়াতে থাকি অলিগলি ভেদ করে। শেষমেশ একটা গলির ভেতর ঢুকে পাউরুটিটাকে দোকানির হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হই আমি। চারদিকে ভালোমতো নজর দিয়ে যখন পাউরুটির প্যাকেটটা ছিঁড়তে যাবো তখনই চোখে পড়ে দুই-তিন বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার দিকে ঠিক নয়, আমার কাছে থাকা পাউরুটির দিকে। ওর শুকনো মুখটা দেখে বুঝতে পারি অনেকদিন ধরেই তেমন কিছুই খেতে পায়নি। পাশে একটা রোগা মহিলা শুয়ে আছে, বেঁচে আছে না মারা গেছে তাও বোঝা যাচ্ছে না। খুব সম্ভবত বাচ্চাটির মা। তাঁর শরীর দেখে এটুকু অন্তত বুঝতে পারি যে তাঁর পক্ষে এই বাচ্চার খাবার জোগাড় করা সম্ভব নয়। নিজের ক্ষুধার কথা বেমালুম ভুলে যাই। পাউরুটিটা মেয়েটার হাতের কাছে ফেলে রেখে গলির সরু মুখটা ধরে বের হয়ে যাই। চুরি করে সেই খাবার অবশেষে বিলিয়ে দিলাম এক অনাহারীকে, এতে কী আমার পাপ হলো নাকি পুণ্য? নাকি পাপ-পুণ্যে কাটাকাটি গিয়ে বাকি রইলো শূন্য!

 

এসব ভাবতে ভাবতে গলি দিয়ে হাটছি ঠিক তখনই আমার মাথায় সজোরে আঘাত করে কেউ একজন। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় আমার মাথা থেকে। কোনোমতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি সেই দোকানি, তার হাতে বড় একটা কাঠের টুকরা। শুকনো টুকরাটার গা চুইয়ে রক্ত পড়ছে, আমার রক্ত। আবারও আঘাত করে সে। ঠিক আগের জায়গা বরাবর। আঘাতের তীব্রতায় পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়। ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করি আমি।

 

কেন জানিনা, এতবড় আঘাতের পরও সাথে সাথেই মারা না গিয়ে কোনোমতে বেঁচে যাই আমি। আমার ক্লান্ত দেহটার চারপাশ দিয়ে হেটে যাওয়া মানুষের কন্ঠ শুনতে পাই। জানিনা সেসব সত্য, নাকি মৃত্যুর পূর্বে স্রেফ ঘোর। শুনতে পাই চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির গেটে দাঁড়ানো আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া সেই ছেলেটির কথা, “হালারে মাইরা ভালোই হইছে। সারাদিন খালি খাই খাই করতো। কোনদিন না জানি মানুষ খাওয়া শুরু কইরা দিতো!” শুনতে পাই টহল পুলিশের গলা, “এই বালডারে আবার এইখানে ফালাইয়া রাখছে কেডা। বাঁইচা থাকতেও জ্বালাইছে, মইরাও কী একটু শান্তিতে থাকতে দিবো না!” শুনতে পাই আসমত আলী সাহেবের কন্ঠ, “ঠিকই আছে, নিমকহারামের পরিণতি এইরকমই হওয়া উচিৎ।” খুব কষ্ট হয় মনের ভেতর। কেউ কখনো আমায় একটু বুঝতে চেষ্টা করেনি। অবশেষে ইমাম সাহেবের কন্ঠটাও শুনতে পাই আমি, “কুত্তার শরীর হইলো নাপাক। ওর লগে মানুষের ছোঁয়া লাগলে মানুষের শরীরও নাপাক হইয়া যাবে। ভালোই হইছে এই নাপাক কুত্তাডারে মাইরা। সারাক্ষণ গিয়া মসজিদের সামনে বইসা থাকতো।” এরপর সবাই হয়তো গিয়ে জড়ো হয় সেই চায়ের দোকানে। এক নেড়ি কুত্তার মৃত্যুতে আনন্দ উল্লাস করে চিনি বেশি দিয়ে এক কাপ চা অর্ডার দেয় সকলেই! এক বেহায়া কুকুরকে হত্যার জন্য সবাই হয়ত সাহসী দোকানিকে বাহবা দেয়। কুকুর হত্যার বৈধতা পেয়ে দোকানিও হয়ত আরেক কাপ চা তুলে দেয় ইমাম সাহেবের হাতে।

 

হ্যাঁ, আমি ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ নই। আমি এক ‘নাপাক’ কুকুর। আমি নিজের স্বজাতিকে হত্যা করি না, তবুও আমি খারাপ। স্বজাতির কাউকে অনাহারে রেখে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দেই না তবুও আমি খারাপ। আমি খারাপ কারণ মানুষের মত নিষ্ঠুর নই, তাদের মত হিংস্র নই। আমি খারাপ কারণ আমি ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ নই। তবে মৃত্যুর আগে এই ভেবে খুশি হই যে আর যাই হোক আমি অন্তত তথাকথিত ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ নই।

 

গল্প: আশরাফুল মাখলুকাত

বিনিয়ামীন পিয়াস

 

(‘নোটবুকের পাতায় পাতায়’ যৌথ সংকলনে প্রকাশিত)

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত