আমরা চার বন্ধু কিংবা চার বিজনেস পার্টনার একসাথে তাকিয়ে দেখলাম ঘটনাটা। দশ তলার উপর থেকে চেহারা স্পষ্ট বোঝা না গেলেও দৃশ্য এবং ঘটনা স্পষ্ট দেখা গেলো। চেহারা যে একদম বোঝা যায় না তা নয়, তবে তার জন্যে পূর্ব পরিচিত হওয়া বা গভীর মনোযোগ লাগবে।
লেকের পাশে বেঞ্চটাতে এক যুগল তরুন তরুণী বসে ছিলো তা আমরা অনেকক্ষণ ধরেই দেখেছিলাম। হাতে হাত ধরে বসে ছিলো দুজন। ওতটুকুই – এর বেশি কিছু না। একটা রিকশা এগিয়ে আসছিলো পাশের রাস্তা দিয়ে । আমি চশমাটা পরিষ্কার করে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে নিলাম । রিকশাটা থামলো, রিকশা থেকে শাড়ি পড়া এক নারী হেঁটে এগিয়ে গেলো অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকা সেই যুগলের দিকে হনহন করে। তাকে দেখেই তরুনটি উঠে দাঁড়ালো, মাথা নিচু করে আছে সে। আমার পাশে থাকা বন্ধু হিমেল বললো, আই দেখ দেখ দেখ। সবগুলো চোখ সেদিকে দৃষ্টিপাত করতে করতে এই দশতলার উপর বসেই ‘ঠাস’ আওয়াজটা শুনলাম । তরুনটির গালে পড়েছে চড়টা । মেরেছে রিকশা থেকে নেমে আসা নারী।
হিমেল বললো, দেখছোস নিশ্চিত এক গার্ল ফ্রেন্ডের কাছে আরেক গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ধরা খাইছে …
আমি চোখের উপরের অংশ কুঁচকিয়ে তাকালাম। ভাবলাম এইটাইতো মানুষের স্বভাব – চার শুনলেই প্রথম মাথায় আসে দুই প্লাস দুই চার । কিন্ত চার তো তিন প্লাস একও হতে পারে, দশ মাইনাস ছয় ও হতে পারে বা নানা কম্বিনেশনের যোগ, বিয়োগের ফল হতেই পারে।
সেই কারণেই জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা হিমেলেতো বললোই এক গার্ল ফ্রেন্ডের কাছে আরেক গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ধরা খেয়েছে। তোদের দুজনের কাছে কি মনে হয়?
বাকী দু বন্ধুর একজন বললো সেও তাই মনে করে। অন্যজন বললো, গার্লফ্রেন্ড না ওয়াইফের কাছে ধরা খেয়েছে মনে হয় ।
আমি বললাম, যা! সবাই দুই আর দুই ই কেবল চার ভাবতে চাস কেনো? ওরাতো ভাইবোনও হতে পারে … বোনের কাছে ধরা খেয়েছে …
দেখ দেখ ছেলেটা কিন্তু চড় খেয়েও মাথা নিচু করে আছে , মিনমিন করে কিছু বলছে। মনে হচ্ছে না সে নারীটি তার কাছে সম্মানীত কেউ? …
…আমি আর অবশ্য পারলাম না মুখের অবস্থা বেশিক্ষণ স্টিফ করে রাখতে। একটু হেস বললাম, ভালো করে দেখতো ঐ নারীটিকে তোদের চেনা চেনা লাগে কি না?
সবাই চোখ ছোট করে ভালো করে চিনতে চেষ্টা করলো, এবং চিনতে পারলো।
আমরা চার বন্ধু একটা কনস্ট্রাকশন বিজনেস করি। আজ আমাদের এই বড় প্রোজেক্টের দশতলার উপর এগারো তলার ছাদ ঢালাই হচ্ছে । সে কারণেই আমরা সবাই এখানে এসেছিলাম । আমি আসার একটু পরেই লেকের দিকে তাকিয়ে ছেলেটাকে চিনে ফেলি। সে আমার ছোট শ্যালক। গত কয়েকদিন ধরে সে বাড়ী যায় না। সে চার পাঁচ দিন আগে একটা বিশাল অপকর্ম করেছে। তার বাবা-মা মানে আমার শ্বশুর শাশুড়ি কয়েকদিন পরেই অষ্ট্রেলিয়া তাদের বড় ছেলের কাছে বেড়াতে যাবেন। আমার স্ত্রী তার ছোট ভাইকে অফিসে ডেকেছিলো কারণ অফিস থেকে কেনা দুই হাজার অষ্ট্রেলিয়ান ডলার বাব-মাকে দেয়ার জন্যে। আমার শ্যালক মহাশয় সেই ডলার নিয়ে কোন এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে গুলশানে কোন এক হিডেন জুয়ার আসরে ক্রিকেটের বেটিং করতে গিয়েছিলেন । পুরো টাকা খুইয়ে বোনকে শুধু একটা এসএমএস করে বলেছিলো -‘আপা, টাক ছিনতাই হয়ে গেছে, টাকা যোগার করে তারপর বাসায় আসবো । সরি!’
আমার স্ত্রী অবশ্য শ্যালকের দু একজন বন্ধুকে ফোন দিয়েই তার জুয়া সংগ জেনে ফেলছিলো।
আর আমি আজ সকালে তাকে লেকের পাশে গার্লফ্রেন্ড সহ বসে থাকেত দেখেই স্ত্রীকে ফোন করে জানাই এবং তারপর এই ঘটনা।
আমার তিন পার্টনারই এখন আমার স্ত্রীকে চিনতে পেরেছে।
তারা আমার কাছ থেকে পুরো ঘটনাও জেনেছে। আমি বললাম, সব সময় কেবল দুই এ দুই এ চার হয় নারে। চার আরও নানা ভাবেই হতে পারে!
তারপর স্ত্রীকে কল দিয়ে বললাম – হারামজাদাটাকে আর ওর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে চলে আস পেছনে যে দশতলা আন্ডারকনস্ট্রাকশন বিল্ডিংটা দেখছো ওর নিচে। আমি নামছি, শালা জুয়াড়ী হইছে না!