হাট

বসন্তের দাগভরা মিশমিশে কালো মুখের সামনে মাছি তাড়ানোর মতো করে বামহাতটা একবার ঝামটা দেয় গোলজার। আর বামদিকে সামান্য ঝুঁকে লাল টোকখাতাটা নিয়ে মলাটের উপর জমা হওয়া পাটের আঁশগুলা জোরে ফুঁ দিয়ে ডানহাতে খাতার উপর একটা থাবড়া মেরে খাতাটা বামউরুর নিচে রেখে উরুর অনেকখানি উপর পর্যন্ত লুঙ্গি তুলে বামহাত দিয়ে খ্যাঁস খ্যাঁস করে চামড়া ছিলে ফেলার মতো করে দাদ চুলকাতে চুলকাতে ডানহাত দিয়ে বহুদিন ধরে পানচর্চিত তরমুজের বিচির মতো দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে প্রবলবেগে খিলাল চালায় সে। একটু পরপর খিলালটা মুখের সামনে এনে দেখে, খিলালের ডগা থেকে চর্বিত পানের কালো দলা জিব দিয়ে ছুক করে টেনে নিয়ে মুখ একবার ডানদিকে একবার বামদিকে ফিরিয়ে থুক থুক করে ছুঁড়ে ফেলতে থাকে।

গোলজারের চাটাইয়ের সামনে জড়ো হওয়া দুই-পাঁচ ধরা (১ ধরা = ৫ সের) করে পাট হাতে বা ঘাড়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে তার মুখের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা লোকগুলোর দিকে আর একবারও তাকায় নাÑ যেন সেখানে কেউ দাঁড়িয়ে নাই। চর্বিত পানের শেষ দলাটা জোরে থুক করে ফেলতে ফেলতে সে বোঝে, কায়দা যা করার তা করা হয়ে গেছে।

শালারা যাবি কনে? আর কুনু চাটাই আইজ তালগাছির হাটে পড়েনাই। পাট তুগারে এই গুলজারের কাছেই বেচা লাগবি। আমাগরে হাজিসাবের আত বিরাট লম্বা, তারির ডাইনআত এই গুলজার। সে যে হাটে যায়, সে হাটে আর কুনু ব্যাপারির ব্যাটার সাদ্য নাই যে চাটাই ফেলায়। ‘দ্যাশশো টাহা মোণ কইছি, বেচিস ব্যাচ, না বেচিস তে আঁটা দে’ শেষবার এই বাক্যটা বলার পরই মুখের সামনে মাছি তাড়ানোর মতো করে হাত ঝামটা দেয় গোলজার।

পরের দৃশ্যগুলো সে চোখ বন্ধ করেই অনায়াসে দেখতে পায়। শালার চাষা-ফড়্যার সুমুন্দির বাচ্চারা ইট্টু তাহা থাকটি আমার মুহের দিক, তাপার, এহান থে সইরে যাবি, খানিক ফাঁকে যায়া নিজিগরে বিতর ঝগড়া করবি আর বিড়ি ফুঁকপি, তারপর, ঘুন্টাহানিক বাদে আস্যা ঐ দেশশো টাহায়ই পাট বেচপি আর বেচা টাহা কয়ডা আমার সামনেই ছয়বার সাতবার কইর‌্যা গুণবি, জিনি কোম দিছি, সুমুন্দির বাচ্চা!

বামউরুর উপর বিশাল দাদ চুলকাতে চুলকাতে চুলকানির আরাম আর চোখজুড়ানো দৃশ্যগুলো একইসাথে উপভোগ করতে থাকে সে।

‘বেচপ না পাট, চল!’ তীব্র ঝাঁঝের গলাটা গোলজারের আধবোজা চোখে দাদ চুলকানোর নেশা হঠাৎ ছুটিয়ে দিলে তাকাব না তাকাব না করেও একবার মুখ তুলে পাটওলাদের দিকে তাকায় সে। তার মুখস্তের বাইরের সংলাপ এইটা। গোলজার দেখে, দাঁতে দাঁত চেপে রাখা তরুণ রাগী মুখটা এতক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও, গোলজারের তাকানো দেখে ইচ্ছা করেই তার দিকে পেছন ফিরে আগের চেয়েও তীব্র গলায় আবার ‘চল!’ বলে হাঁটা দেয়। তার পেছন পেছন অন্যরাও হাঁটা দেয়, তবে পিছের লোকগুলা যাবার আগে একবার গোলজারের দিকে তাকিয়ে তার ভাব বোঝার চেষ্টা করে যায়।

হাতে আর ঘাড়ের উপর রাখা দুই-পাঁচ ধরা পাট মণখানিক পাটের ভার নিয়ে তাদের উপর চেপে বসতে থাকে আর তারা সেই ভার বয়ে ধীরে ধীরে বিরাট তালগাছ-জোড়ার নিচে এসে ঘাড় থেকে পাট নামায়, ভারমুক্ত হয়। তালগাছির হাটে আজ মেলা পাট। সলঙ্গা থেকে আসা একটা দল পাট নিয়ে গোলজারের চাটাইয়ের দিকে আগায় দেখে উদ্বেগ বোধ করে বয়স্ক চাঁদের বাপ। কেউ একবার বেচা শুরু করলেই সর্বনাশ। স্রোতের মতো সব দৌড়াবে। দর যাই পাওয়া যাক, ব্যাপারির চালান শেষ হবার আগেই পাট বেচতে না পারলে পাট সাথে নিয়েই বাড়ি ফিরতে হবে। আড়চোখে দাঁতে দাঁত চেপে রাখা মকরমের দিকে তাকাতে গিয়ে চাঁদের বাপ ভীষণ অবাক হয়ে দেখে, মকরমের দিকে তাকাতে তার সাহস হচ্ছে না। এই মকরম সেই মকরম নয়, যে মকরম একসময় নেংটা হয়েই তার সাথে হাটে আসার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে আসত আর চাঁদের বাপ হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ত; আর যে মকরম তার চাঁদের চেয়েও ছোট, সেই মকরমের ভেতর হঠাৎ করেই আজকে এক ধরনের নেতৃত্ব চলে এসেছে, আর তা তাদের মেনে নিতেই হচ্ছে। কেউ আগে থেকে শিখিয়ে দেয়নাই, নিজেরা কোনো বোঝাপড়াও করে নেয়নাই, কিন্তু সবাই বিনাবাক্যে মকরমকে আজ নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছে। চাঁদের বাপ তাই অবাক হয়। চাঁদের বাপের সামনে সচরাচর বিড়ি নিবিয়ে ফেললেও আজ মকরম চাঁদের বাপের অতি কাছে থেকেও বিড়ি ধরিয়ে একদৃষ্টে তার আনা ষোল ধরা পাটের দিকে তাকিয়ে থাকে। চাঁদের বাপ খুব বোঝে যে এখন এই সময়ে পাটের দিকে তাকিয়ে থাকলেও পাট দেখে না মকরম, হয়ত আরও গভীরে কিছু দেখে, কী যেন ভাবে। চাঁদের বাপ কেমন অস্বস্তি বোধ করে। গামছা দিয়ে মুখ মুছে একবার গলা খাকারি দিয়ে গামছাটা মাথায় পেঁচাতে পেঁচাতে কয়েকবার দ্বিধা করে চাঁদের বাপ বলে, ‘তুমার রাগটা ইট্টু বেশিই, মকরম, গুলজারেক তুমি চেনো না, তুমাক যদি ও নাজিআল না করিছে তে সেহোন আমাক কয়োনে …।’

‘তাই বল্যা দ্যাশশো টাহা মোণ পাট বেচপ্যার কচ্চেন আপনে?’, চোয়াল শক্ত করেই জবাব দেয় মকরম, ‘এতো কষ্টের পাট! তার কুনু দাম নাই? আপনে কী কচ্চেন?’

‘পাটের দাম লিয়্যা কুনু কতা নাই, কপাল খারাপ, তাই চাটাই পড়িছে আইজ একখান। তুমি যেতোই রাগো, পাট আইজ ও ঠিক দ্যাশশো টাহায়ই কিনে উটপি, কয়া থুলেম, দেহোনে। গেল আটে তিনখ্যান চাটাই পড়িছিলো, পাট গেছে দুইশো বিশ-তিরিশ, মুজামের বাপরা …’

‘কপাল লয় চাচা’, চাঁদের বাপের কথা শেষ হবার আগেই ছেড়ে দেয়া ¯িপ্রংয়ের মতো দাঁড়িয়ে পড়ে মকরম আর দুইহাতে মাজার গামছা আরো টাইট করে বাঁধতে বাঁধতে বলে, ‘ওই গুলজার শালাই কুনু ষড়যন্ত করিছে। পাট আইজ শালাক কিনবের দেবো না আমি।’

কিছুই না ভেবে ষড়যন্ত্রের কথাটা বলে ফেললেও চিন্তাটা মকরম, চাঁদের বাপসহ আরও অনেকের মাথায় ধীরে ধীরে জায়গা করে নিতে থাকে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের রূপটা তাদের চোখের সামনে ধরা দিতে দিতেও শেষপর্যন্ত কেন যেন মূর্ত হয়ে ওঠে না। কী যেন টের পেতে পেতেও তারা শেষপর্যন্ত বুঝে উঠতে পারে না। শাহজাদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান দরাজ হাজীর পাট কেনা ব্যাপারী এই গোলজার। আর কেউ ভালো করে জানুক না জানুক, প্রবীণ চাঁদের বাপ দেখছে আজ কয়েকবছর, হাজীর ব্যাপারী যে হাটে যায় পাট কিনতে, সে হাটের পথ আর কোনো ব্যাপারী মাড়ায় না। কেউ এসে পড়লেও নিরবে অন্য হাটের পথ ধরে। কিন্তু, চাঁদের বাপ ভাবে, এতে দরাজ হাজীর দোষটা কোথায়? কেউ হাজীর সাথে পাল্লা দিতে চায় না, তা হাজী তো আর কাউকে নিষেধ করেনি। হাজীর কি সুন্দর চেহারা, সালাম ছাড়া কথাই বলে না। এই চাঁদের বাপকে সে চেনে না কিন্তু এক শালিসে বয়স্ক চাঁদের বাপকে দেখে হাজীইতো আগে সালাম দিল, তার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসতে বলল, তা চাঁদের বাপ অবশ্য বসেনি। চাঁদের বাপ কিন্তু ষড়যন্ত্রের সাথে হাজীর কোন সংস্রব খুঁজে পায় না। আর গোলজার? সে আজ চব্বিশ বছর হাজীর পাট কেনে। দরাজ হাজী তখন ছিল দরাজ ব্যাপারী, নিজেই আসত তালগাছির হাটে পাট কিনতে আর তখনও তার হাসি খুব সুন্দর ছিল। তবে দাড়ি তখনও এতো সুন্দর মখমলের মতো হয়ে ওঠেনাই। গোলজার তখন ব্যাপারীর পেছনে বসে খাতা লিখত আর রাগে গুজ গুজ করত।

আর এখন পাট কিনতে আসে গোলজার। আজ যে সে তালগাছির হাটে একলা এসেছে, চাঁদের বাপ ভাবে, এটা তাদের জন্য খারাপ, এখন গোলজারের সুবিধা, আজ দাম ঠিক করবে সে। কিন্তু এই যে গোলজার আসে, চাঁদের বাপ আরও ভাবে, সে কি আর কোনো ব্যাপারীকে নিষেধ করে এসেছে? তাহলে মকরম যে বলল, গুলজার কুনু ষড়যন্ত করিছে, তা মকরমের কথাই কি আর ফেলতে পারে চাঁদের বাপ। তার চাঁদের চেয়ে বয়সে কম করেও আট বছরের ছোট হবে মকরম। চাঁদের বাপ আশ্চর্য হয়ে যায়, তার মাথায় আর কিছু আসে না।

মকরম কোনোদিকে হাঁটা দেবার উপক্রম করতেই ওর সাথে আসা অল্পবয়সী নেকবার জিজ্ঞেস করে, ‘কনে যাইস, মকরম বাই?’ ‘আসতিছি’ বলেই হনহন করে চলে যায় মকরম। চাঁদের বাপ দেখে ওর চলে যাওয়া, মকরমের প্রচণ্ড রাগী মুখটা ভেসে থাকে তার সামনে। কিন্তু রেগে কি করবে মকরম? ভাবে চাঁদের বাপ।

কোথা থেকে মরকম আবার ফিরে এলে তাকে খুব অস্থির দেখায়। চাঁদের বাপ তাকে কী একটা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও তার ছটফটানি দেখে আস্তে করে গিলে ফেলে কথাটা আর মকরমের অস্থিরতা দেখতে থাকে, ওকে পড়ার চেষ্টা করে, বোঝার চেষ্টা করে। চাঁদের বাপ আরও দেখে নেকবার কিছুই না বুঝে মকরমের দিকে বিড়ি আর ম্যাচ এগিয়ে দিলে মকরম তীব্র দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে, কী যেন খোঁজে নেকবারের মুখে। আর নেকবারের ভেতরে বোধহয় কী যেন নড়ে ওঠে, নেকবার বড় ঝাঁকি খায়, চাঁদের বাপের কাছে এরকমই মনে হয়। নেকবার বিড়ি আর ম্যাচ ফিরিয়ে নেবে কিনা বুঝতে পারে না আর হঠাৎ খুব ব্যাকুল হয়ে অস্বাভাবিক উচ্চস্বরে বলে ওঠে, ‘খাবি ন্যা’। মকরম কিছুই বলে না, শরীরেও হ্যাঁ বা না বোধক কোনো প্রতীতী ফুটিয়ে তোলে না, কেবল নিরাসক্ত নির্বাক দৃষ্টিতে দেখে যেতে থাকে নেকবারকে, চাঁদের বাপকে, লালভাইকে, মবারক আর সেকান্দরকে, দবীর মোল্লাকে, সবগুলো চোখের উপর মকরম পরিভ্রমণ করে। চাঁদের বাপের একবার মনে হয় মকরম হয়ত চোখগুলোতে ভরসা খোঁজে আর তা পায় না বলে গোলজারের চেয়ে এদের উপরই রেগে ওঠে। চাঁদের বাপের কাছে মনে হয় মকরমের চোখে একটা প্রচণ্ড রাগ পাকিয়ে ওঠে, কিভাবে মনে হয় তা সে বলতে পারবে না, কারণ কারো চোখে কিভাবে রাগ পাকিয়ে ওঠে তা সে কখনও দেখেনাই। কিন্তু মকরমের চোখ দেখে তার তাই মনে হয়। দেখে মকরম ক্রমেই আরও অস্থির হয়ে পড়ছে।

গোলজার এতটা আশঙ্কা করেনাই। মকরম না কিজিন শালা ওই কমিনির বাচ্চা ম্যালাক্ষণ থে ঘুরঘুর করতিছে আর তাবুত চাষাগরে কানে কানে কিজিন ফুসমন্তর দিতিছে, আর সেই ফুসমন্তরেই শালা চাষার দল খেপিছে, শালারা বলে আইজ পাট বেচপিলয়। আরে লটির বাচ্চারা! যা! পাট বেবাক বাইত লিয়ে যা! মণকে আট-দশ টাহা ভ্যান ভাড়া দিয়ে বাইত লিয়ে যা, আবার সামনের হাটে আরো আট-দশ টাহা মণ ভ্যান ভাড়া দিয়ে লিয়ে আসিসকেনে। মণকে বিশ টাহা বেশি দিয়ে কোন সুমুন্দির বাচ্চা তোগরে পাট কেনে তাই আমি দেখপনে।

দাদ চুলকানোর আয়েশটুকুর মায়া ত্যাগ করে গোলজার চট করে উঠে পড়ে। লম্বা ফিতাওয়ালা নগদ টাকার তফিল কোমরে বাঁধতে বাঁধতে আড়চোখে একবার তালগাছতলা আরেকবার মসজিদের উত্তরে পাকুড়তলায় আলাদা আলাদা করে জড়ো হওয়া পাটওয়ালা চাষাগুলোর দিকে তাকায়। তার উঠে পড়া দেখে কয়েকজন চাষা যে নড়েচড়ে বসে, এর-ওর দিকে দৃষ্টি বিনিময় করে, অস্থির হয়, একবার নিজেদের পাটের দিকে আর একবার পড়ে যেতে থাকা বেলার দিকে তাকায়, মাথার গামছা খুলে খামাখাই ঘাম মুছতে থাকেÑ এতসবকিছুর কোনটাই গোলজারের নজর এড়ায় না, বরং এই একমুহূর্তে সে তারচেয়েও অনেক বেশি কিছু দেখে ফেলে, বুঝে ফেলে। আর সে খুশী হয়। তার অঙ্কমতো এবার তার বগলাকে দরকার। চোখের পলকে বগলা দুইপাঁচশো মণ পাট বেচে বা কিনে ফেলে। শালাকে কিছু কমিশনের লোভ দেখালেই হবে।

আরদোশ বাজিকরের সার্কাস খেলার ভিড়ে পাওয়া যায় বগলাকে। আরদোশ আজ আবার তার ছেলের পেটে ছুরি চালিয়েছে। চাদর দিয়ে ঢাকা ছেলে দাপাদাপি করছে। ওর চারপাশে ধূলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রক্তের রঙ শালা আরদোশ আজ ভালো বানাতে পারেনাই, কিরম জিনি কমলা কমলা হইছে। তবে মন্ত্রমুগ্ধ গাঁইয়া লোকগুলোর চোখে সে ত্র“টিটুকু ধরা পড়ছে না। উত্তেজিত বাজিকর ভিড়ের মৃত বাপমাকে কবরে শেয়ালে খাওয়া থেকে শুরু করে জীবিত পোয়াতি বউয়ের গলা দিয়ে রক্ত ওঠার অভিশাপ দিয়ে তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য টাকা তুলছে। ‘শালার লোকগুলাও বুদাই। এইসব রোঙ দেহেই টাহা দিতিছে। আর দেহো, বগলা সুমুন্দির বাচ্চাও টাহা বাইর করতিছে।’ গোলজার তার লোমহীন হাতের থাবা বাড়িয়ে বগলার জামার নাগাল পায় কোনোমতে, আর তাই ধরেই ভিড়ের মাঝখান থেকে তাকে হিড়হিড় করে টেনে বের করে নিয়ে আসে। বগলা ঘটনার আকস্মিকতায় বেশখানিকটা হকচকিয়ে গেলেও রক্তমাখা ছুরিকাহত ছেলেটার চেয়ে বেশি রক্ত গোলজারের চোখে জমা হতে দেখে প্রায় দুই সেকেণ্ড পর চিৎকার দিয়ে ওঠে আর তারপর সে গোলজারকে চিনতে পারে।

গোলজারের কথা শুনতে শুনতে বগলার ঘোর কেটে যেতে থাকেÑ হাটে আইজ এতো পাট আর সে বোলে সব থুয়ে সার্কাস দেহে। ‘আমি একটা বানচোত’, ভাবে বগলা, ‘না, আমি একটা বুদাই’। আসলে গোলজার একা চাটাই পেতেছিল দেখে সে সকালবেলাই বুঝে গিয়েছিল আজ আর তার আয়ের কোনো আশা নাই। দর নিয়ে সে আজ আর দালালী করবে কিভাবে, চাটাই একটা মানে আজ দর ঠিক করবে ব্যাপারী। অন্যদিন সে পাটওয়ালাদের থেকে যেমন মণকে একটাকা খায়, তেমনি ব্যাপারীদের থেকেও এক বা দুইটাকা খায়। ব্যাপারীদের সে পাট কিনে দেয় আর পাটওয়ালাদের পাট বেচে দেয়। এ তার ন্যায্য কামাই। তাই সে আজ আরদোশ বাজিকরের খেলা দেখতে গেছে। তবে এবার বগলা কাজে নেমে পড়ে।

বগলা জানে গোলজার বড় খেলোয়াড়, কিন্তু সেরের উপরও সোয়া সের আছে। বগলা চারপাশে একবার চোখ বুলিয়েই তালগাছি বাজারের সর্বশেষ আবহাওয়া পড়ে ফেলে। গোলজারকে একটুও টের পেতে না দিয়ে সে গোলজারকেও পড়ে ফেলে। গোলজার যখন তাকে বলে যে সে দরকার হলি মণকে পোঁচিশ টাহা পর্যন্ত বাড়া দিবি, তখনই কিন্তু বগলা গোলজারকে আর তার জেদকে পড়তে পারে। বগলা জানে গোলজারের সদ্যঘোষিত এই পঁচিশ টাকার মধ্যে নিজের অংশটা খুব সুক্ষ্মভাবে গোলজারের কাছ থেকে আর পাটঅলাদের কাছ থেকে গোপন করতে হবে। বগলাও খেলোয়ার পাকা কোম না। আর এই সবকিছুর বাইরে তার নির্ধাতি কমিশন তো আছেই, বিড়ি ধরাতে ধরাতে ভাবে বগলা, বেলা আর বেশি বাকি নাই।

বিরাট বিরাট দুইটা তালগাছের জন্যিই মনে অয় এই বাজারের নাম তালগাছি, কিন্তু তালগাছ দুইটার বয়স কতো তা বগলার বাপও বলতে পারবে না। তবে বগলা ভীষণ অবাক হয়ে ভাবে, এই অসময়ে জায়গার নামকরণ নিয়ে ভাবতে যায় কেন সে? যাই হোক, সেই তালতলায় পাট নিয়ে জড়ো হওয়া মকরমদের দল পার হয়ে, আরদোশ বাজিকরের সার্কাস খেলা পার হয়ে একেবারে পশ্চিমপাশে গতবছর দরাজ হাজীর বদান্যতায় সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া ছাপড়া মসজিদের উত্তরপাশ লাগোয়া পাকুড় গাছের তলায় চলে আসে বগলা। এখানেই আজ সবচেয়ে বেশি পাট জড়ো হয়েছে আর এই পাটগুলার চেহারাও একেবারের খোলতাই, সোনার মতো ঝকঝকে তোষা পাট। মকরমদের পাট সূতি, কিছু বোল্ডারও আছে। সোনাতলা আর পাটগাড়ীর গেরস্তদের চেনে বগলা। সব প্রস্তুতি নিয়ে অর্ধেক খাওয়া বিড়িটা পায়ের নিচে ফেলে পিষে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে সোনাতলার আনছার ভাই তার দিকেই তাকিয়ে। বগলা দেখে আনছার ভাইয়ের চোখে একটা সামান্য আশার আলো জ্বলে ওঠে তাকে দেখে। বগলা গিয়ে বসে আনছার ভাইয়ের বিছিয়ে রাখা তোষা পাটের নরম জমিনে।

‘পাট বেচপ্যালয়, আনছার বাই? বেলা তো নাব্যা গেল,’ গামছাটা খুলে ঘাড় মুছতে মুছতে বলে বগলা, ‘শালার গরমও পড়িছে আইজ।’

‘পাট তো ব্যাচপো,’ গরমের কথাটাকে পাত্তাই দেয় না অভিজ্ঞ আনছার, বিরক্তিও গোপন করে না সে, ‘কিন্তু শালার কপালডা দেহো, চাটাই পড়িছে একখান। আর এমন দাম কচ্চে যে মনে কয় শালার পাটে আগুন লাগা দেই। নিজির খাটনির কতা বাদই দেই, পাট জম্মাতি যে খরচ পড়িছে, হে খরচও তো ওটে না!’

‘তে এহন করবের চাও কী? যতি বাড়িত ফির‌্যা লিবের চাও, তালি কলেম বুল অবিনি। সুনাতলা তক ব্যান বাড়া পড়বিনি তুমার মোণকে আট টাহা, তা কতডি পাট আনিচ্যাও?’

‘এই মোণ পুনারো।’

‘তালি আট দশকে আশি আর পাঁচ আষ্টা চল্লিশ, একশও বিশ টাহা গেছে তুমার পাট আনতি, আবার লিতি আরও একশও বিশ, ফেরদিন হাটে আনতি আরও একশও বিশ। হেদিন যতি বাজার আরও কোমে? তালি কি করব্যানে?’

‘তুমি কী করবের কচ্চ্যাও? এই দামে পাট ব্যাচপের কচ্চ্যাও নাকি?’

‘আনছার বাই হোনো,’ বগলা না তাকিয়েও বুঝতে পারে তাদের চারপাশে একজন দুইজন করে জড়ো হচ্ছে পাটঅলারা, তারা মুখে একটা নিস্পৃহ ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু কান খাড়া করে আছে বগলা কী প্রস্তাব দেয় তা শোনার জন্য, বগলা তৃপ্তি পায়, মুখে আরও গাম্ভীর্য বাড়ায় সে, গলা খানিকটা নামায় যেন কোনো ষড়যন্ত্র করছে, আবার বেশি নামায় না, যাতে অন্যরাও তার প্রস্তাব শুনতে পারে, ‘গুলজার বাই আমার চিনা লোক, হে পাট কিনবেরই আইচে। তুমি বেচপের চাও তে কও, আমি কয়া দেহি মণকে দশ টাহা বাড়ান যায় নাহি।’

‘তুমি কী কও বগলা!’ আনছারের রাগ বাড়ে, ‘দশ টাহা বাড়ালি আর কী, সেই তো একই কতাই অ’লো। না বগলা, আমি এসব দামে পাট ব্যাচপো না।’ মুখ শক্ত করে ঝাড়া জবাব দেয় আনছার। অন্যদের মুখেও হতাশা গোপন থাকে না। বগলা বুঝতে পারে না সে ভুল করল কি না।

‘আরো কিছু বাড়াবের পারে গুলজার, দেহো চিন্ত্যা কর‌্যা। অ’লি আমাক ডাক দিয়ো।’ বলে আর দেরি করে না বগলা। ‘নাহ্, শালার বেশি কোম কয়া ফালাইচি,’ ভাবে বগলা। পুনারো কি বিশ কলিও মনে অয় রাজি অলোনি শালারা। কিন্তু বিশ টাহা কলি আবার আনছার শালা পঁচিশ পর্যন্ত না পারলিউ বাইশ সাড়ে বাইশ তক ঠেলে আনলোনি। তালি আমার আর কী থাহে? পাকুড় গাছ তলা থেকে উঠে জোড়া তালগাছের দিকে যেতে গিয়েও কী মনে করে মুখ ঘুরায় সে। থাইক, একবারে বেশি মানষিক ঘাঁটানের কাম নাই। একজন একজন কইরেই সারি। একজন বেচা দরলিই সব শালা লৌড় পাইরে আসপিনি।

‘ওই শালা চিমস্যা বগলুর বাচ্চা তুমাক কী কয়, আনছার বাই?’ চেনা চেনা গলাটা শুনে আনছার মুখ তুললে দেখতে পায় গামছা কাঁধে রেখে বিড়ি বের করে, আনছারের দিকেও একটা বাড়িয়ে দেয়, মকরমের চোখমুখ শক্ত।

‘কী আর কবি? দশ টাহা বেশি দিবের চায়। যাওয়ার সুমায় কয়া গেলো আরো দশ টাহা বলে বাড়াবি,’ বিড়িটা মকরমের হাত থেকে নিয়ে নিজের লুঙ্গির ট্যাঁক থেকে ম্যাচ বের করে আনছার, মকরম বয়সে তার ছোট হলেও মকরমের বিড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে তারটাও ধরায়। আর মকরম দুইহাতে আগুন আড়াল করে বিড়ি ধরায়, একটান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলে, ‘পাট আইজ বেইচো না। আমরা কেউই বেচপো লয়।’

‘এসব দামে আমিউ কি বেচপ্যার চাই? কিন্তুক পাট ফেরত লেওয়া যে জুলুম অয়া যায়!’ আনছার মনে মনে ভাবে বগলা আর কত বাড়াতে চায়। সত্তুর পোঁচাত্তুর অলিও অন্তত খরচটা ওটে। আনছার আরও ভাবে কত বাড়াতে চায় তা মকরমকে সে বলবে? না কি একা উঠে গিয়ে বগলার সাথে আলাদা আলাপ করবে। বগলাকে একটাকা ধরে দিলেই হবে। কিন্তু আর সবাইকে ফেলে একা কথা বলতে আনছারের মন সায় দেয় না।

‘হোনো আনছার বাই,’ আনছারের কাছে বসতে গিয়ে হঠাৎ পাট আর বিড়ির আগুন সম্পর্কে সচেতন হয় মকরম, চকিতে একটু সরে বসে, আনছারও পাট থেকে আগুন নিয়ে দূরে সরে বসে, ‘সুনাতলার মুরুব্বী তুমি, পাটগাড়ীর লোকও তুমাক মানে, আইজ গুলজারের কাচে পাট বেচপের নিসোদ করো সগলেক, সামনের হাটেউ যতি গুলজারই আসে এহানে, তে পাট আমরা আমাইকুলার হাটে লেবো, মেলা ব্যাপারী আসে অহানে।’

‘তুমি পাট কয়মোণ আনিচ্যাও?’ হঠাৎ করেই জানতে চায় আনছার।

‘তা, মোণদুয়েক অবিনি, ক্যা?’ কিছুটা দমে যায় মকরম, সে বুঝতে পারে আনছার এই কথা কেন জানতে চায়।

‘আমাড্ডা দইর‌্যা সুনাতলারই পাট আইচে আশি মোণ। তাবাদে পাটগাড়ীর আছে আরো মোণ ষাইটেক। এতো পাটের দায়ির্ত্ব তো আমি লিবের পারবোন না! এতো পাট লিয়ে ফট করে কিছু কওয়া যায় না, অতো সুজা তো লয়!’

মকরমের অস্থির লাগে। তার পরাজয় টের পেতে থাকে সে। একটু আগেও সবাই যখন বলছিল যে পাট তারা বেচবে না, এত কম দামে পাট বেচা যায় না, তখন সে যে জিদ বা শক্তি বোধ করছিল তার শরীরের ভেতর থেকে, সেই শক্তি ক্ষয়ে যেতে থাকে। ওই শালা বগলার বাচ্চাই সব মাটি করিছে, শালাক আইজ …! কাঁধের গামছা হাতে নিয়ে সে উঠে দাঁড়ায় আর একইসাথে সে বাতাসে গামছাটা ফট করে ঝাঁকি দেয়, শব্দটা মিলিয়ে যাওয়ার আগেই তার কাঁধের উপর কার থাবা পড়ে, সেইসাথে কানের ভেতরে অস্থির কণ্ঠে চিৎকার, ঘাড় ফেরানোর আগেই গলা চিনতে পারে মকরম, গলাটা নেকবারের, ‘আর ঠেকান গেলো না রে মকরম! উই দেখ!’

ঘাড়ের উপর কার হাত পড়ল দেখার জন্য ঘুরতে থাকা মকরমের ঘাড় আর নেকবার পর্যন্ত ঘোরার প্রয়োজন বোধ করে না, বরং দিক পরিবর্তন করে নেকবারের বাড়িয়ে দেয়া তর্জনীর দিক পর্যন্ত এসে সোজা তাকালে মকরম দেখতে পায় পাটগাড়ীর কয়েকজন বগলার সামনে পাট জড়ো করছে আর বগলা ব্যস্ত হয়ে উচ্চস্বরে পাটের ধরা গুণে যাচ্ছে, ‘এই-ই নাবে না-ব, নাবে না-ব, দুই-ট দু-উ, দুই-ট দু-উ …।’

মকরমের ভেতরে কোথায় একটা বাঁধ ভেঙে পড়ে, সে নিজে নয়, ভেতর থেকে কেউ তাকে হঠাৎ চালিয়ে নেয়ার দায়িত্ব নেয়, দুই হাত মুঠি করে দুর্মর ক্রোধে একটা টর্পেডোর মতো করে সে ‘উরে শালা কমিনির বা-চ্চা-আ-আ’ বলে চিৎকার করতে করতে ছুটে যায় বগলাকে লক্ষ করে। আনছার, নেকবার, আর দূরে তালগাছের নিচে বসে থাকা চাঁদের বাপ আর এমনকি আরদোশ বাজিকরও চোখ ফেরায় মকরমের চিৎকার লক্ষ করে কিন্তু তাদের চোখ মকরমের গতি অনুসরণ করতে সম্ভবত ব্যর্থ হয়, কারণ তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখতে পায় মকরম বগলাকে নিয়ে আছড়ে পড়ে পাটের স্তুপের মধ্যে। আর তারা দু’জনে পড়ে যাবার আগে সবাই দেখতে পায় কী এক যাদুমন্ত্রে আরদোশ বাজীকরের ছেলের সকল রক্ত বগলার নাক দিয়ে কিংবা মুখ দিয়ে বলকে বলকে বের হতে থাকে। বগলা কী সব বলে আত্মরক্ষার জন্য চিৎকার করতে থাকে কিন্তু সোনালী তোষা পাটের মিহিন স্তুপের ভেতর সে চিৎকার ভোঁতা হয়ে যায়।

একটু দূরে চাটাইয়ের উপর বসে দাদের চুলকানির আরাম উপভোগ করতে থাকা গোলজার সড়াৎ করে দাঁড়িয়ে যায়। খানিক আগে বগলাসহ হাটের কিছু অকর্মা লোক যেভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আরদোশের খেলা দেখছিল সেও ততটাই অনড় হয়ে যায়, তবে তার চমক ভাঙতে দেরি হয় না। মুহূর্তের ভগ্নাংশে সে ঘুরে দাঁড়ায় তার পেছনের চায়ের আর পান বিড়ির দোকান আর তার পাশে ঝালমুড়ি আর খাজা-গজার দোকানগুলোর দিকে ফিরে একই সাথে সেও চিৎকার করে, ‘দিনি-দুফুরে একজন মাইনসেক মারে ফেলাচ্চে আর তুমরা বাল ফেলাচ্চেও বসে বসে? ধরো শালাক!’।

আর তখন লোকগুলোর চমক ভাঙে। আরদোশ বাজিকরের সার্কাস খেলাও ভেঙে যায়, তামাশা দেখতে লাফিয়ে ওঠে তার রক্তমাখা মরে যেতে বসা ছেলেটাও। হুড়মুড় করে ছুটে আসে সব। সহস্র্রজন মিলে মকরমকে টেনে তোলে বগলার উপর থেকে, ‘কী অন্যায়, কও তো দেহি!’

হাঁচোড় পাঁচোড় করে মকরম। গালির তুবড়ি ছোটে তার মুখ দিয়ে, রাগলে মানুষ বুঝি অসুরের শক্তি পায়, সহস্রজনও পেরে ওঠে না একা মকরমের সাথে। তাদের অনেককেই মেরে বসে মকরম। তারা এবার খেপে যায়, খেপে না উঠলে ঠিক শক্তি আসে না। এবার তারা মকরমকে মারতে শুরু করে।

ওদিক থেকে নেকবার, চাঁদের বাপ আর আনছার ছুটে এসে মকরমকে বাঁচাতে পারার আগেই হাটুরেরা এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি-লাথিতে শুইয়ে ফেলে মকরমকে। মকরম ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে এলেও তাকে ছাড়তে চায় না তারা, মারতেই থাকে।

‘একজনেক বাঁচাবের যায়া আরেকজনের জান কবচ করব্যা নাহি তুমরা! ছাড়ো! ছাড়ো দেহি!’ ধাক্কা ধাক্কি করে অনেকক্ষণ পর চাঁদের বাপ, আনছার আর নেকবার মকরমকে উদ্ধার করতে পারে। ধরাধরি করে তাকে মসজিদের চাপকলের দিকে নিয়ে যায়। পাগলের মতো কল চাপে নেকবার, নলকূপের শীতল জলে সে বুঝি তালগাছির হাট আজ ভাসিয়ে দিতে চায়, আঁজলা ভরে ভরে সেই পানি এনে এনে মকরমকে পুরো ভিজিয়ে দেয় আনছার আর চাঁদের বাপ তার মাথার কাছে বসে গামছা দিয়ে চেপে চেপে ক্ষত বন্ধ করতে থাকে।

এক সময় মকরম উঠে বসে, তবু কেউ তাকে কোনো কথা জিজ্ঞেস করে না, কোনো কৈফিয়ত চায় না, কেবল যার যার কাজ করে যেতে থাকে। মকরম চোখ তুলে তাকালে দেখতে পায় গা থেকে মুখ থেকে সব রক্ত মুছে ফেলেছে আরদোশ বাজিকরের ছেলেটা আর বাজিকর ধূলা থেকে দর্শকদের ফেলা টাকাগুলো তুলে নিয়ে ব্যাগে ভরছে। রোজগার তাদের নেহাত কম হয়নাই। বেলা থাকতেই সদাইপাতি কিনে বাড়ি ফিরতে হবে তাদের। বাড়িতে হয়ত তাদের রোজগারের অপেক্ষায় রয়েছে বউ-বাচ্চারা।

তালগাছির হাট থেকে চাঁদের বাপ, নেকবার, আনছার, লালভাই, সেকান্দার, দবির মোল্লা, মবারক, আরদোশ বাজিকর, গোলজার এমনকি বগলা একেকজন একেকদিকে ফেরে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে কে জানে কেন সবাই একটু আগে ছেড়ে আসা স্মৃতির মতো তালগাছির হাটের দিকে একবার তাকায়। হয়ত সবাই একসাথে নয়, একেকজন একেক সময় তাকায়। তবে যখনই তাকাক, তারা সকলেই দেখতে পায়, সেখানে কেবল নামা সন্ধ্যার অন্ধকার সামান্য সরিয়ে দিয়ে আগুন জ্বলে উঠেছে। কিংবা সকলেই হয়ত দেখতে পায় না, কেউ কেউ দেখে।

তবে যারা দেখে, তারা কেউ কিছু বুঝে বা না বুঝে ঘাড় ফিরিয়ে নেবার আগেই সেই সামান্য আগুন নিভেও যায়। দুই মণ সূতি পাটে আর কতক্ষণ আগুন জ্বলে!

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত