মাথার নিচ থেকে বালিশটা আবার ওল্টালেন মাহফুজা। নরম তুলতুলে আরামের বালিশ। বেশিদিন হয়নি পাড়ার তালিম গদি ঘর থেকে ১ নম্বর শিমুল তুলা নিজে বেছে বালিশ বানাতে দিয়েছিলেন মাহফুজা। কি যে দিনকাল পড়লো, কারো উপর বিশ্বাস নেই, নিজের চোখে দেখা জিনিসও ভুল হতে পারে, দিনেদুপুরে কেউ ঠক খেতে পারে, চোখের সুরমা মুহূর্তেই কেউ উধাও করে নিতে পারে-এক ভয়াবহ সময়ে আমরা সবাই বাস করছি। তালিম শেখকে দোষ দিয়ে কি লাভ, তিনি তো নিজে দেখে শুনে তুলা তুলে দিয়ে এসেছেন। ভেজাল যদি পড়ে কিছু হয়েও থাকে কিছু করার নেই। বালিশ নিয়ে তো আর যুদ্ধ করা যায় না।
অনেক মানুষের অনেক রকম শখ আহ্লাদ থাকে। মাহফুজা খানমের তেমন কিছু কখনোই ছিল না। ছোট বেলায় বালিশ ছাড়া অনেক রাত ঘুমিয়েছেন বলেই কি না তার বালিশের প্রতি আলাদা একটা দুর্বলতা। ঘুমানোর জন্য তার নরম পাখির পালকের মতো হালকা, তুলতুলে বালিশ চাই। বালিশ নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আবারো বালিশ ওল্টালেন তিনি। এ নিয়ে ১৭ বার হলো। তবুও ঘুম আসছে না। কি যে হয়েছে, চোখ বন্ধ করলেই একটা মানুষ তেড়ে আসছে তার দিকে। ভয়ে মাহফুজা চোখ বন্ধ করতে পারছেন না।
দোচালা একটি ঘরে মাহফুজার কারখানা। জনা তিরিশেক নারী এখানে জামা ও শাড়িতে ফুল তুলেন। মাঝে মাঝে বিছানার চাদর, বালিশের ওয়াড়, সোফার কুশন, নকশীকাঁথার অর্ডার আসে। তবে তার পরিমান সামান্যই। ঢাকা থেকে মিজান ভাই অর্ডার পাঠান। কাজের যত অর্ডার আসে সব আসলে নকল করার অর্ডার। ইন্ডিয়া থেকে হালফ্যাশনের কোনো কামিজ, লং কামিজ, গাউন, ফ্রক নিয়ে এসে তাকে বলা হয় হুবহু সেই ডিজাইন জামায় তুলে দিতে। কত যে জামা এলো। পাখি, কিরণমালা, গোপী আরো কত কত যে নাম সেই সব জামার, সবগুলো মনেও থাকে না। সপ্তাহে অন্তত শপাঁচেক জামা সাপ্লাই দিতেই হয়। প্রতিটি জামায় ডিজাইন করা বাবদ তিনি পান ৩০০টাকা। আর কারিগরদের দেন ২০০। বাড়ির বাইরের এই কারখানাই একমাত্র নয়। মাহফুজার আরো তিনটি কারখানা আছে। একটি নিয়ামতপুর, একটি বাঘাছড়া আর আরেকটি কামারপখরে। সব মিলে আরো প্রায় দেড়শো নারী তার কারখানায় কাজ করেন। সেই সব কারখানা থেকে আরো চার পাঁচ হাজার কাজ প্রতি সপ্তাহে ডেলিভারি দিতে হয়। একাই সব কাজ সামলান, তাই সামান্য অবসর নেই তার।
দোচালা কারখানার সামনে এসে দাঁড়ান মাহফুজা। কারখানার পিছন দেয়াল ঘেষে যে আম গাছটি উঠে গেছে আকাশের সীমানায় সেখানে মুকুল ধরেছে। হলদে রঙের ফুটি ফুটি মুকুলে পুরো গাছ হলুদ হয়ে গেছে। দেখে মনে হয় চুল রঙ করার মতো করে আম গাছটি নিজেকে রং করেছে। কারখানা ঘরের পশ্চিম দিকটায় মাহফুজা সব্জির বাগান করেছেন। নিজেই এই বাগান দেখাশোনা করেন। ছোট বেলা থেকে কৃষি কাজের সাথে ওঠবস। তাই কৃষি তিনি ভালোই জানেন। এই শীতে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, সিম, বরবটি, টমেটো, গাজর, শিমলা মরিচ, দেশি মরিচ, ধনেপাতা লাগিয়েছিলেন। ফলনও হয়েছে বেশ। এবার আর বাজারে যেতে হয়নি। নিজে খেয়েও পড়শিদের খেতে দিয়েছিলেন। করলা, ধুন্দল আর চিচিঙ্গার গাছ মাচায় উঠেছে। দুয়েকটি ফলও এসেছে। একটি করলা বেশ বড় হয়েছে তা দেখে মাহফুজা একটু আশ্চর্যই হলেন। গাছে দুয়েকটি ছোট ছোট করলা আছে বটে কিন্তু এই করলাটির বড় হওয়ার পেছনের কারণটি কী হতে পারে ভেবে পাচ্ছেনা তিনি। চিন্তায় ছেদ পড়লো মিজান ভাইয়ের ডাকে।
– ভাবছি, সবজির বিজনেস শুরু করবো।
মাহফুজা বিস্ময় চোখে হালকা হাসি মুখে রেখেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মিজান ভাই। মিজান ভাইয়ের পরনে সবুজ পাঞ্জাবী, বুকে হালকা সোনালী সুতার কাজ। বোতামগুলোও সোনালী। সোনার হবে হয় তো। মিজান ভাইয়ের টাকার অভাব নেই, ঢাকায় তার বিরাট ব্যবসা। ঢোলা সাদা পাজামার সাথে পড়েছেন গেরুয়া রঙ্গের চপ্পল। দেশী কোনো ব্র্যান্ড মনে হচ্ছে না। দুহাত ভর্তি আঙটি। কোনোটি হিরা, কোনোটি চুনি আর কোনোটি পান্নার। মিজান ভাইয়ের অগাধ বিশ্বাস এই আঙটিগুলোর পাথরের প্রতি। কব্জিতে ঘড়ি দেখে মিজান ভাই বলেন-
– মিনিট দশেক হলো এসেছি, দেখি আপনার হুশ নাই, গাছগুলার দিকে তাকিয়ে কি যে ভাবছেন, বুঝতে পারছি না। ভাবলাম, দেখি না, আপনি টের পান কি না।
– ধৈর্যচ্যুতি ঘটলো বুঝি।
– না, ধৈর্য আমার মেলা। আপনার গাছগুলো দেখে মনে হলো সত্যিই তো সবজির বিজনেস করলে খারাপ হবে না। তাই..
মাহফুজা কারখানার ভিতরে ঢুকে চেয়ারে গিয়ে বসেন। পেছন পেছন মিজান ভাইও ঢোকেন। মিজান ভাইয়ের জন্য স্পেশাল চেয়ারটিতে গিয়ে মিজান ভাই বসেন। কর্মরত কারিগররা এক পলক দেখে নিয়ে যে যার কাজে আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
– মিজান ভাই, কৃষিকাজ আমার প্রাণের কাজ। জন্ম কৃষক পরিবারে। ছোট বেলা থেকেই মা বাবার সঙ্গে মাঠে গিয়েছি। ধান, গম, ডাল, ভূট্টা, আলু, সব্জি, শাখ সব কিছুরই চাষ করেছি। তাই সুযোগ পেলেই টুকটাক চাষাবাদ করি।
– আমি কিন্তু সিরিয়াস, আপা। আপনি যদি দায়িত্ব নেন, তাহলে এই ব্যবসাও আপনার সাথে করতে পারি।
– প্রস্তাব মন্দ না, ভেবে দেখি।
– অত ভাবলে ব্যবসা হয় না ম্যাডাম।
মাহফুজা কোনো উত্তর দেয় না। কি এক চিন্তায় ডুবে যায়। ডুবতে ডুবতে একে একে ভেসে উঠতে থাকে তাঁর অতীত জীবন। স্মৃতির গুদাম ঘর থেকে হুরমুর করে বেরিয়ে আসতে থাকে কত কথা, কত ছবি, কত স্বপ্ন।
অনেক অনেক দিন আগের কথা। কতদিন হবে? বছর বিশেক তো হবেই। সেদিন সারা দিন বৃষ্টি হয়েছিল। তার আগে থেকেই কয়েকদিন ধরে থেমে থেকে বৃষ্টি। বৃষ্টির জলে ঘর বাড়ি সব তলিয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টির মধ্যেই কাজি ডেকে বিয়ে পড়ানো হলো মাহফুজার। বয়েস আর কত হবে ১৪-১৫। বাবা মারা গিয়েছিল য²ায়। মাও মর মর করছে। ধর তকতা মার পেরেকের মতোই পাত্র পাওয়া মাত্রই মালাবদল। বাসর রাতেও প্রচন্ড বৃষ্টি। ভোর হয় হয় এমন সময় বৃষ্টি থামে। স্বামী আজিজার তখন মাহফুজার লিকলিকে কিশোর হাত ধরে ঘরের বাইরে টেনে নিয়ে আসে। আজিজারের হাত মাহফুজার হাত স্পর্শ করতেই বুকের ভিতরটা ঢিব ঢিব করতে থাকে। যেন মুখ দিয়ে এই হৃদপিন্ডটা বেরিয়ে এলো বলে। বর্ষার মেঘ কেটে আকাশে টকটকে ঢাউস আকৃতির একটা চাঁদ। চাঁদের আলো পানিতে পড়ে চিক চিক করছে চারপাশ। আলতো বাতাসে ঢেউয়ে ঢেউয়ে জ্যোসনা ভেসে যাচ্ছে কোন অকুলে কে জানে। মাহফুজার হাত ভর্তি কাচের চুরি। আজিজার যখন টান দিয়েছে মট মট করে কয়েকটা ভেঙ্গে গেছে। টের পেয়ে আজিজার বলে-
– চুড়ির জন্য ভাবিস না বউ, তোরে আমি লালদীঘির মেলা থেকে চুড়ি কিনে দেবো।
মাহফুজা ভাবে, এই লোকটা কেন তাকে চুড়ি কিনে দেবে। সে কে হয়। তার বাবা নাই, ভাই নাই। এই প্রথম একজন দেহাতি পুরুষ সে দেখছে। যে কিনা তাকে আবার চুড়ি কিনে দিতে চায়।
– বউ গো, জানি না, তোরে আমি সুখী করতে পারবো কি না। কিন্তু জেনে রাখিস এই আজিজার তোর জন্য সব কিছু করতে পারে। মরতেও পারে, মারতেও পারে।
জ্যোসনার আলোয় আজিজার মাহফুজার হাত ধরে, নিজের হাতের মুঠোয় ছোট ছোট হাত দুটো নিয়ে খেলতে খেলতে বলে-
– বউরে তোর হাতের চুড়িতে কি যাদু আছে রে, রিনিঝিনি চুড়ির সুরে কিসের জানি নেশা, তুই কোনোদিন খালি হাতে থাকবি না, কথা দে, তোর হাতে যেন সব সময় এই রকম করেই চুড়ি থাকে।
বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতে ফুটফুটে রাজকন্যা আসে আজিজার-মাহফুজা দম্পতির ঘরে। দুজনে খুশি। কিন্তু খুশি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আবাদের জন্য দাদনদারের কাছ থেকে কর্জ করে টাকা এনে আজিজার ঘরে ফসল তুলতে পারে না। বন্যায় ফসল ডুবে পচে যায়। আজিজারের কাছে দাদনদারের তাগাদা আসে। কী করবে, বুঝে উঠতে পারে না আজিজার। একদিন রাতে, ঘরে আজিজার নেই। দাদনদার লোকজন নিয়ে আজিজারকে খোঁজে। আজিজারকে না পেয়ে মাহফুজাকে টেনে নিয়ে যেতে চায়। মাহফুজা সর্বশক্তি দিয়ে, হাতে পায়ে ধরে নিস্তার চায়। কিন্তু কে দেবে নিস্তার। আজিজার হাজির হয়। এক কথায় দু কথায় শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি। এক পর্যায়ে আজিজার ঘরের দাওয়ায় ঝুলিয়ে থাকা রামদা দিয়ে কোপ দেয় দাদনদারের গর্দানে। দাদনদার লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। রক্তে ভেসে যায় বাড়ির উঠান। রক্তের মধ্যেই রাতের অন্ধকারের আবছা আবছা মাহফুজার ভাঙ্গা চুড়ি দেখতে পায় আজিজার। মাথা আরো গরম হয়ে যায়। সে দাদনদারকে কোপাতেই থাকে।
আজিজারকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলেও জেল ফাঁসি কিছুই হয় না তার। জজ সাহেব রায় দেন, এই পাগলকে পাগলাগারদে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হোক। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আজিজার পাবনায় আস্তানা গেড়ে আছে। সেখানে তাকে সবাই চুড়ি পাগল বলে ডাকে। আজিজারের হাত ভর্তি চুড়ি। তবে সেসব কাচের না, কোনো টা প্লাস্টিকের, কোনোটা লোহার আবার কোনোটা তামার। যেখানেই সে চুড়ির মতো কিছু পায় সেটাই হাতে পরে নেয়।
মাহফুজা আর মাহফুজার চুড়ির প্রতি আজিজারের ভালোবাসা অদ্ভূত, উদ্ভট রকমের। যে দিন মেয়ে জন্মালো সেদিন আজিজার হাট থেকে ছোট ছোট অনেকগুলো রঙিন চুড়ি কিনে এনেছিলো, মেয়েকে পরাবে বলে। এত ছোট শিশুর হাতে চুড়ি বিপদজনক হতে পারে এই ভেবে মাহফুজা কোনো রকম বলে কয়ে থামিয়েছিল।
আজ দুই যুগ হবে, মাহফুজা একাই সংসার টেনে চলেছেন। শূণ্য থেকে শুরু করে আজ তিনি স্বাবলম্বী, সচ্ছল। একা ছোট একটি বাচ্চা নিয়ে একটি বাচ্চা মেয়ের পক্ষে টিকে থাকাই আশ্চর্যের। কম ঘাত প্রতিঘাত আসেনি। লোলুপ পুরুষ কতবার দরজায় কড়া নেড়েছে, ভূত সেজে ভয় দেখিয়েছে, পথে শাড়ির আঁচল ধরে টেনেছে, লোভ দেখিয়েছে, জোরজবরদস্তি করতেও পিছপা হয়নি। কিন্তু মাহফুজার ভেতরের অফুরন্ত শক্তি, অটল মনোবল আর সন্তানের প্রতি অগাধ ভালোবাসা তাকে সকল প্রতিকূলতা জয় করতে সহায়তা করেছে। স্বামী পাগল, বন্দী। ঘুটঘুটে অন্ধকার ভবিষ্যতে কোনো আলোর রেখা নেই। তবু দমে যায়নি মাহফুজা। একটু একটু করে সে নিজেকে গড়েছে, নিজের সাথে সাথে সন্তানের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করেছে। কিন্তু আজিজারের ভালোবাসার যে অভাব, তৃষ্ণা তা অতৃপ্তই থেকে গেছে। দাদনদার যে উন্মত্ততায় তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল সেই ভয়, আর্তনাদ, আতঙ্ক মাহফুজাকে আজো তটস্ত করে রেখেছে, তার ঘুম হয় না, চোখ বন্ধ করলেই তেড়ে আসে সেই লোকটি।
হঠাৎ চুড়ির রুনুঝুনু শব্দে সম্বিত ফিরে পায় মাহফুজা। দেখে মিজান ভাই তার সামনে একগোছা চুড়ি মেলে ধরেছেন। লাল টকটকে চুড়ি। একটু একটু দোলাচ্ছেন বলেই চুড়ির সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ছে ঘর জুুড়ে।
– আপনার মেয়ের জন্য এনেছি। জয়পুর থেকে।
– জয়দেবপুরে এত সুন্দর চুড়ি পাওয়া যায়?
– জয়দেবপুর না, ইন্ডিয়ার জয়পুর, রাজামহারাজাদের দেশ, জয়পুর।
– বাহ্! কি সুন্দর। জবা খুব খুশি হবে।
– সেই জন্যই তো এনেছি। জবা কোথায়?
– ও তো ভার্সিটিতে। পরীক্ষা চলছে। সামনের সপ্তাহেই চলে আসবে।
– ভালোই করেছেন আপনি, কিন্তু আমার কপালটাই খারাপ, টাকার অভাব নাই আমার কিন্তু মেয়েকে পড়াতে পারলাম না, সবার চাপে কলেজ শেষ করার আগেই বিয়ে দিতে হলো।
– কেমন আছে মিতু?
– আর থাকা। যে বেটার সাথে বিয়ে দিয়েছি, বেটা কিছুই করে না, দুদিন পর পর মিতু আসে, টাকা নিয়ে যায়, টাকা না দিলে মারধোর করে, কি সব নেশাটেশা করে, ওর মা বাবাও কিছু বলে না। তারাও বসে থাকে আমার টাকার জন্য।
– আপনি এই সব মেনে নিচ্ছেন?
– না মেনে উপায় কি, মেয়ের সংসার বাঁচাতে মানতেই হচ্ছে, খুব অসহায় আমি আপা।
– আমার নাড়িনক্ষত্র আপনি জানেন। আমি যে অবস্থায় ছিলাম আপনি সে অবস্থায় নেই। তারপরও আমি হার মানিনি।
– কিন্তু আমি কী করতে পারি।
– মেয়েকে ফিরিয়ে আনেন। পড়ালেখা করান। তাকে তার মতো করে জীবন গড়তে দেন। দেখবেন সব দুঃখ, দুর্দশা হাওয়া হয়ে গেছে।
– সাহস দিচ্ছেন।
– সাহসের কিছু না, মিজান ভাই, আমার সন্তানের ভালোর জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। আপনি কেন পারবেন না।
– কিন্তু সমাজ কী বলবে?
– সমাজের মুখে থুতু মারেন। সমাজ আপনার মেয়েকে বাঁচাবে না, যে যতই বাঁচতে চাইবে, আরো বেশি করে টেনে ধরবে। এই সমাজ মেয়েদের ভালো চায় না, আসলে কারোরই ভালো চায় না। সমাজ শুধু সমাজ হয়ে খবরদারি করতে চায়।
মিজান ভাই ফোন করেছিল। বলেছে, মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। কলেজে ভর্তি করে দিয়েছেন। এই সংবাদটি মাহফুজাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। একেই বুঝি বলে আনন্দ সংবাদ। আজ রাতে মাহফুজার ভালো ঘুম হয়েছে। বালিশ ওল্টানোর কথা মনেই আসেনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে মাহফুজা সুন্দর করে সাজেন, হাত ভর্তি চুড়ি পড়েন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে দেখতে ঘোরের ভেতর চলে যান।
সকালে মৃদু আলোয়, এলোমেলো বিছানায় একটি কিশোরী হাত ভর্তি চুড়ি পড়ে আছে আলগোছে ঘুমাচ্ছে, আর পাশে আধশোয়া হয়ে সেই চুড়ি নিয়ে খেলছে আজিজার।