আমজনতা

আমজনতা-১

সার্কাস সার্কাস!!

মাইকের ঘোষণা শুনে কান খাড়া করে এলাকাবাসী। কি হলো, হয় পানি থাকবেনা নয়তো কারেন্ট?

আবারও ভাঙা কন্ঠস্বরের কেউ একজন মাইকে ঘোষণা দেয়।

সার্কাস, সার্কাস!!

আধুনিক সার্কাস!! তারপর আবার বলে, বিশেষ আকর্ষণ!! সুবেশা, সুরুপা নায়ক-নায়িকারা উপস্থিত হয়ে দেখাবেন মজার মজার সার্কাস!!এরপর বলে, বাচ্চাদের জন্য মজার মজার খেলা! খেলা!

লোকটি কন্ঠস্বর ভাঙ্গা হলেও ঘোষণার ভঙ্গিতে এলাকাবাসী পুলক বোধ করে। বহূদিন পর বিনে পয়সায় এমন একটা বিনোদনের সুযোগ অন্তত পাওয়া গেল।

 

অবশেষে সার্কাসের সেই নির্দিষ্ট দিনে পিলপিল করে সবাই আসল। মাঠে টানানো সামিয়ানা ভেতর লোকে লোকারণ্য। সামিয়ানার বাইরেও উপচে পড়া ভীড়। শীতের এই বিকেলে এমন বিনোদনের সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায়।

সবাই সুবেশা সুরুপা নায়িকাদের এক নজর দেখার জন্য সবাই এসেছে। কেউ কেউ বাচ্চা কাচ্চা পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছে। কেউ এসেছে তার প্রেমিকার হাতের মুঠি ধরে খানিক বিনোদনের আশায়। কেউ কাউকে জায়গা দিতে চায়না, সবাই সুবিধাজনক একটা চেয়ারে বসে সার্কাস দেখবে।

শীত কালে এই তীব্র শীতেও আগত দর্শনার্থীদের গরম লাগতে শুরু করেছে।

অবশেষে প্রতিক্ষিত সেই আয়োজন শুরু হলো। সুরুপা নায়িকা মঞ্চে উঠলেন। নাহ ঘোষণার লোকটি তাদের ঠকায়নি, কথার সাথে কাজের মিল আছে। মঞ্চের লাল নীল আলোয় তার আসল চেহারা বোঝা যাচ্ছিলনা মনে হচ্ছে আকাশ থেকে নেমে আসছে কোন পরী। কি অপূর্ব। সকলের চোখ এখন নায়িকার উপর নিবিষ্ট।

হঠাৎ অদ্ভুত একটা শব্দ! কেউ ভাবছে সার্কাসেরই অংশ।

কিন্তু অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হয় ঠিক আগের মতো কে কার আগে যাবে সেই প্রচেষ্ঠা।

হড়োহুড়ি দৌড়াদৌড়ি।

এরপর পর পর কয়েকটা এম্বুলেনস আসে, ফায়ার সার্ভিস আসে, আরো কতকি!

সার্কাসের এ দুর্ঘটনার কথা মন্ত্রী মহোদয় শুনেছেন। ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য একান্ত সচিবকে ডাকলেন। একান্ত সচিবকে জিজ্ঞাসা করলেন, কয়জন মানুষ মারা গেছে?

একান্ত সচিব বলল, স্যার তেমন কোন মানুষ মারা যায়নি শুধু কয়েকজন আমজনতা।

মন্ত্রী কিছু বললেন না শুধু মাথা নীচু করে শুনলেন।

 

আমজনতা-২

সকাল থেকেই শুরু হয়েছে পুলিশের অভিযান। জমি উদ্ধার অভিযান গরিবের বাজার নামে খ্যাত এই খোলা জায়গায় আর বাজার বসবেনা । বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্য যেমন উত্তপ্ত হচ্ছে পরিস্থিতিও তেমন তাঁতিয়ে উঠছে।

 

গরীবের বাজার বলে পরিচিত এই খোলা জায়গায় সকাল ভোর থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত আর বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয়।

ভ্যানের ওপর মাছ, মুরগী, তরিতরকারি, লাউ, কুমড়ো, জামা কাপড় আরও কত কি নিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে বসে ভ্যান দোকানদাররা। খদ্দেরের কোন অভাব নেই ।নামকরা বাজারের চেয়ে খানিক কম মূল্যে বলে আশেপাশের বাড়ীওয়ালা, ভাড়াটে আর অফিসগামীরা নিয়মিত ঢুঁ মারে এই বাজারে। আর সেলাই দিদিমনি আর বাসা বাড়ির খালাদের জন্য এটা একটা স্পেশাল অফার মার্কেট।

কয়েকজন দোকানদার পুলিশের সাথে তর্কাতর্কির চেষ্টা করে, কেন হবে এমন! এ উচ্ছেদের প্রতিবাদের চেষ্টা করে তারা। তাদের সাথে মিলিত হয় কয়েকজন নিয়মিত খদ্দেরও।

কিন্তু কোন লাভ হয় না। কেউ কেউ পুলিশকে টাকা পয়সাও দিতে চায়।

পুলিশ এখন টাকা খায় না। অবশ্য পুলিশ কখোনোই টাকা খেত না, টাকা কি খাওয়া য়ায়! পুলিশ এখন তার দায়িত্বে অটল।

তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে পুলিশ বলে, এটা একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী শিল্পপতির জায়গা। এখানে একটা বিরা…..ট মার্কেট হবে!! এই মার্কেটে আসবে বাহারী সব মানুষ। কোন আমজনতার স্থান এখানে হবে না। এখানে থাকবেনা কোন আমজনতার বাজার। তারপর অটল পুলিশ নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব সম্পন্ন করে।

অবশেষে আমজনতাগণ অন্য একটা বাজারের সন্ধানে বের হয়।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত