কেয়ামতের আলামত

শেখ সিগারেটের পা-ছায় জোরসে একটা টান মেরে ধোঁয়াটা আকাশের দিকে ছাড়তে ছাড়তে রিকশাওয়ালা মোখলেস বলল, “বুঝলেন ভাই, কেয়ামত আইসা পড়ছে!”

এই কথা শোনার পর চায়ের দোকানে বসে থাকা বাকি বিজ্ঞ ব্যক্তিদের তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। কেয়ামত যে সন্নিকটে এই ব্যাপারে বাঙালির কোনো সংশয় নেই, তবে কোন প্রসঙ্গে কেয়ামতের রেফারেন্স আসল সেটা জানার জন্যই যেন কেউ কেউ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মোখলেসের দিকে তাকালো।

“মাইয়া মানুষের কারবারডা দেখছেন? ল্যাংডা হইয়া রাস্তা ঘাটে হাইট্টা বেড়ায়। এমুন এমুন জামাকাপুর পরে যে জিনিসপাতি সবই দেহন যায়। অস্তাগফিরুল্লা, অস্তাগফিরুল্লা!” বলেই সিগারেটের ফিল্টারটা হাত থেকে ছুড়ে ফেলল মোখলেস।

এবারে বাকিরা নড়েচড়ে বসল। টং দোকানে সারাদিন বসে থাকা ব্যক্তিদের অন্যতম প্রিয় আলোচনার বিষয় নারী, হোক সেটা প্রধানমন্ত্রী, কিংবা গৃহিণী, তরুণী কিংবা কিশোরী। বোরকাওয়ালী হোক বা স্বল্পবসনা, কল্পনায় তাদের বিবস্ত্র দেহের রস চুষতে চুষতে কীভাবে তারা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে যাবে এই বিষয়ক আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে।

“আজকে এক মা-গী আইলো আমার রিকশায়। পরছে একটা বোরকা। বিশ্বাস করবেন না ভাই, বোরকার তল দিয়া তরমুজ দুইডা এক্কেরে চাইয়া রইছে।” বলা শেষ করেই একদলা থুথু ফেলল মোখলেস।

সামনে বসে থাকা বাকি শ্রোতাদের কেউ কেউ ‘তরমুজ’ দেখার সুযোগ না পেয়ে খানিকটা কষ্ট পেল।

“হ হ, ঠিক কইছেন ভাই। এই মা-গীগো লইজ্ঞাই দেশের এই দুরবস্থা। এই যে দেশে এত বইন্যা চলতাছে, এগুলা কিছু না। সব খোদার গজব।” পাশ থেকে মহা উৎসাহে যোগ করল হোসেন আলী।

এই ব্যক্তির পরিচয় যদি আমরা খুঁজতে যাই তবে জানতে পারব ইনি একজন গাঁজাখোর এবং গাঁজা সাপ্লায়ার। বছরের পাঁচমাস তিনি লাল দালানের অন্দরমহলে থাকেন। বাকি সময় থাকেন “খোদার আরশে”র কাছাকাছি। তবে তিনি এমনিতে খুবই পরহেজগার মানুষ। বছরে দুই ঈদে এবং শুক্রবারে তাকে মসজিদে দেখা যায়। এছাড়াও প্রতিবার গাঁজা খাওয়ার আগে তিনি “বিসমিল্লাহ” বলতে ভুল করেন না!

“আরে এইগুলা আর কী, যেমনে পা-ছা ঢুলাইয়া রাস্তায় হাডে স্কুল কলেজের মাইয়াগুলা, অগো পা-ছার ঢলানির চোডেই তো ভূমিকম্প হয়!” জর্দা দেওয়া পানের পিক ফেলতে ফেলতে বলল আবুল মিয়া৷ দিনের বেলায় যিনি ছাগী ব্যবসায়ী, রাতের বেলায় অবশ্য “মা-গী” ব্যবসায়ী।

আবুল মিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই দোকানের সামনে দিয়ে স্কুল ড্রেস পরা এক মেয়ে আর তার মা হেটে গেল। তিন জোড়া চোখ একদৃষ্টিতে তাদের গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইল। দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতেই হোসেন আলী নিজের লুঙ্গি সামলে বলল, “দেখছেন নি অবস্থাডা! মা আর মাইয়া দুইডারই একই অবস্থা। এইগুলা পইরা কেউ বাইরে বাইর হয়? এরপর যদি কোনো পোলাপান মাথা ঠিক রাখতে না পাইরা কিছু কয় তাইলেই দোষ হইবো পোলাগো! শালার দ্যাশ, ভালো মাইনসেরই খালি দোষ হয়!”

বাকিরাও নিজ নিজ লুঙ্গি সামলে হোসেন আলীর সাথে একমত হলো।

এবারে তাদের পাশে বসে থাকা শার্ট ইন করা এক ভদ্রলোক মুখ খুললেন। “বুঝলেন, কালকে গেছিলাম এক সরকারি অফিসে, একটা কাজের জন্য। মেয়রের রেফারেন্স নিয়াই গেছিলাম। তো যাইয়া দেহি, অফিসার হইলো এক মহিলা। যাক, মহিলা হইলে তো আমার কোনো সমস্যা নাই৷ ট্যাকা দিয়া কাম করমু, ট্যাকা কোন ফুডায় গেলো হেইডা দিয়া আমার কী আসে যায়।” এটুকু বলে একটা অশ্লীল ভঙ্গি করলেন তিনি।

“তো, মহিলারে যাইয়া বুঝাইয়া টুঝাইয়া কাজের কথা কইলাম, ওমা, মা-গী কয় কী! ঘুষ দিয়া নাকি কোনো কাজ হইব না! এত রিকোয়েস্ট করলাম, তাও মা-গীর পা-ছা ঠাণ্ডা হয় না। নীতি কথা মারাইলো আমার লগে। আরে মা-গী, তুই কেমনে এই পজিশনে আইছস এডি কি আমরা জানি না? বড় স্যারেরডা চুষতে চুষতেই তো এদ্দুর আইছস, এহন আবার মারাও নীতিকথা! খা–নকি কোনহানকার!” ভদ্রলোক “ভদ্রভাবে”ই শেষ করলেন।

কাজটা না হওয়ার বেদনা যেন বাকিদেরও ছুঁয়ে গেল। তারাও একবাক্যে স্বীকার করে নিল যে সরকারি অফিসের ওই নারী কর্মকর্তা আসলেও খা–নকি।

 

কাছেই এক মসজিদে আসরের আজান শুরু হলো।

এদিকে টং দোকানে বেপর্দা মা-গীরা কেন জাহান্নামে যাবে এবং কীভাবে তাদের কারণে দেশে দুর্যোগ হয়ে থাকে সেই বিষয়ক গবেষণা চলতে থাকল। আবুল-মোখলেস চলে গেল, নতুন আবুল-মোখলেস আসল। হোসেন আলী আজানের শব্দ শুনে বুঝতে পারল তার গাঁজা টানার ওয়াক্ত হয়ে গেছে, সে বিসমিল্লাহ বলে পুরিয়ায় টান মারল।

আবুল মিয়া ছাগীর মাংসের দোকানে চলে গেল। দোকান বন্ধ করার সময় হয়েছে। সন্ধ্যে হলেই “মা-গীর মাংসে” র ব্যবসা শুরু করতে হবে। আল্লাহ দিলে এখন তার ইনকাম বেশ ভালোই। ভার্সিটি পড়ুয়া নতুন কিছু ‘মাল’ সে কালেক্ট করেছে।

মোখলেস মিয়া তার রিকশায় বসে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হা-হুতাশ করতে থাকল। তার বউটা যদি এমন হইতো! নিজের অক্ষমতাকে ঢাকতেই যেন সে বিড়বিড় করে বলল, “সবগুলা জাহান্নামী!”

 

 

বিনিয়ামীন পিয়াস

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত