অতৈন্দ্রিলা আর আব্দুল খালেকের মধ্যে প্রেম হয়েছিলো একবার। কিভাবে হয়েছিলো তা বলতে পারবো না, কিন্তু হয়েছিলো। দুজনের মধ্যে এত সুন্দর মানবিক একটি সম্পর্কে তৈরি হয়েছিলো যে, একে শুধু প্রেমের মধ্যে আটকে ফেলাটা ঠিক হবে না। অতৈন্দ্রিলা সুন্দরী, উচ্চ শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত, বুদ্ধিমতী স্মার্ট মেয়ে। বহু এলিজেবল ব্যাচেলর তার প্রনয়াকাঙ্খী। তবুও সবাইকে ফেলে সে ভালোবাসলো আবদুল খালেককে, যার শিক্ষাগত যোগ্যতা, বাসার ঠিকানা, পরিচয় তেমন কিছুই সে জানে না। আসলে কাউকে ভালোবাসতে হলে এসব জানা খুব জরুরি কি? জানার মধ্যে সে শুধু জানে, আব্দুল খালেক দেখতে খুব সাদাসিদে হলে কী হবে, আসলে এই মেকি দুনিয়ায় এক ধুলো পড়া রত্ন। সেপিও সেক্সুয়াল বলেই হয়তো অতৈন্দ্রিলা আব্দুল খালেককে মন দিলো সমাজের সব প্রথাকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে। আব্দুল খালেকের আর্থিক অবস্থাও বেশ নাজুক। অতৈন্দ্রিলা অনেক বার তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে চেয়েছে। কিন্তু আব্দুল খালেক কখনোই গ্রহণ করে নি। আর্থিকভাবে যতই অস্বচ্ছল থাকুক, রেস্টুতে খেতে গেলে অতৈন্দ্রিলাকে কখনোই বিল দেবার সুযোগ দেয় নি আব্দুল খালেক। অতৈন্দ্রিলা টেরই পায় না, কখন বিল দেয়া হয়ে গেছে। অনেক দিন তক্কে তক্কে থেকেছে অতৈন্দ্রিলা, নিজে বিল দেবার জন্য, কিন্তু না, আব্দুল খালেকই বিলটা পে করে দিতো।
অথচ আজকালকার ছেলেরা রেস্টুতে দু কাপ কফির বিল দিয়েও খ্যান খ্যান করে, জিএফ তার মানিব্যাগ খালি করে দিচ্ছে। তারপর দু দিন পরে ব্রেকাপ হলে তো কথাই নেই, কাঁদতে কাঁদতে ফেবুতে স্ট্যাটাস দেয়। না, জিএফের জন্য না, সেই দুই কাপ কফির বিল পানিতে গেলো বলে! এইসব ছেলেপেলেদের দেখাদেখি মেয়েরাও আজকাল পাই পাই করে ক্যালকুলেটরে হিসাব দেখায় তার বিএফ /স্বামী্র বিল সে নিজে দিয়েছে। আর যদি বিএফ/স্বামীকে কখনো দামী কোন ডিভাইস উপহার দেয়, তবে চৌদ্দ বার ফেবুতে সেই প্রসঙ্গে ইনিয়ে বিনিয়ে শো অফ স্ট্যাটাস দেবে যে, মেয়ে হয়ে এমন উপহার দেবার ক্ষমতা রাখে সে!
কিন্তু অতৈন্দ্রিলা আর আব্দুল খালেকের সরল সম্পর্কে এত হিসেব নেই। অতৈন্দ্রিলা জানে খালেকের নিশ্চয়ই মানিব্যাগে টান পড়ে। এসব ভেবে তার কষ্টও হয়। কিন্তু তার জন্য খরচ করতে খালেকের যে আনন্দ হয়, সেটুকুকেও সে সম্মান জানাতে চায় । তাকে যে খালেক রাণীর মতো সম্মান জানায়, প্রতিটি পদক্ষেপে! তাই অতৈন্দ্রিলাও তাকে রাজার সম্মান দিয়ে রাখতে চায়।
আসলে ভালোবাসা তো শুধু রেস্টুতে বিল পে কিংবা শেয়ার করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দামী দামী উপহার কিংবা কথায় কথায় শুধু ‘’আই লাভ ইউ’’ বলার মধ্যেও নয়। প্রচণ্ড গরমের দিনে কেউ হয়ত আপনাকে এক গ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে খাওয়ালো, কিংবা রাতে মশারি টাংগিয়ে দিলো কিংবা আপনাকে কেউ বললো, ‘’সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরে এসো’’ , কেউ আপনাকে সময় করে ওষুধ খাবার কথা মনে করিয়ে দিলো, এগুলো-ও ভালোবাসা। অতৈন্দ্রিলা ও আব্দুল খালেকের মতো সহজ সম্পর্কের চর্চা আজকাল নর নারীদের মধ্যে দেখা যায় না। সব কিছু কেমন জটিল!