গতকাল প্রথম যখন আপনাকে কাঠগড়ায় দেখলাম তখন আপনার মুখ মলিন ছিলো, বিষন্ন ছিলো কিন্তু বিচার কার্য যতই এগিয়ে গেলো আমি খেয়াল করলাম আপনার মুখে হাসি বাড়তে লাগলো আর সময়ের সাথে ধীরে ধীরে তা বাড়তেই থাকলো। আর এখন যখন প্রমাণ পর্ব প্রায় শেষ এবং আমি রায় ঘোষনা করার দিকে যাব তখনও আপনি মুখে স্পষ্ট হাসি ধরে রেখেছেন। আপনি যে ঐ পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরি করেছেন স্বাক্ষী এবং সকল প্রমাণ এতক্ষণে তা নিশ্চিত করেছে-সেটা বোঝার মত বয়সে আপনি পৌঁছেছেন। এত টাকার চুরি মোটামুটি সাব্যস্ত হবার পরও আপনার চেহারায় কোন ভয় ভীতি বা অনুশোচনার ভাব নেই বরং আপনি আরও বেশি করে হাসছেন । শাস্তি ঘোষনার আগে এর উত্তর আমার জানার প্রয়োজন ।
বিচারকের কথা শোনার পর চল্লিশোর্ব্ধ আসামী খবির মিয়া হাসির রেখা আরেকটু দীর্ঘায়িত করে বললেন – হুজুর, এই দুইদিনে কাঠগড়ায় দাঁড়াইয়া প্রমাণিত হইছি যে আমি কোন মানুষই নই বরং একটা কেবল দোষের ভাগাড়- এখন আবার হাসির কারণ ব্যাখ্যা করবার যাইয়া আপনাগোর মূল্যবান সময় চুরির দায়ে নতুন আরেক দোষে দোষী না হইয়া যায় ?
বিপক্ষের উকিল একটু রেগে গিয়ে উঠে বললেল- মাই লর্ড আসামী আদালতের সাথে মশকরা করছে । তাহাকে …
বিচারক হাতের ইশারায় উকিলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন – লেট হিম ফিনিশ ফার্স্ট।
… হুজুর কি আর কমু , অনেকদিন আগে এই অফিসে চাকুরী করার আগে আমি একটা ক্লিনিকে বয়ের কাজ করতাম । একবার একজন মহিলা রোগি ভর্তি হইছিলো যার ছিলো ক্যান্সার। সে বাঁচবেনা না মরবো তার কোন ঠিক নাই, কেমো দিতে দিতে চুল সব পইড়া গেলো গা, কিন্তু হেয় আফা প্রতিদিন ল্যাপটপে সিনেমা দেখতো, রাজ্যের বই পড়তো আর আমাগো লগে নানা মজার মজার কথা কইতো, তার হাসি কখনও কমতো না। হেয় আমারে কইছিলো – খবির কাল বাচবা না মরবা সে তুমিও জানো না, আমিও জানি না। কিন্তু বাস্তবতা হইলো তোমার এই যে কাজ করতাছো এইটা করতেই হবে আর আমার এখন এই ক্যানসারের সাথে ফাইট করতে থাকতে হবে – এখন এই কাজটা দুঃখ দুঃখ মনেও করা যেতে পারে আবার হাসতে হাসতেও। আমার মনে হয় যেটা করতেই হবে এবং এড়ানোর কোন উপায় নাই সেইটা হাসতে করাই তো ভালো।
বিপক্ষের উকিল আবার উঠে বলতে লাগলো- চুরিটাএ কি হাসতে হাসতে করছিলেন মিস্টার খবির?
খবির মিয়া একটু দীর্ঘশ্বাসের সাথে হাসে , বলে হুজুর আমি চুরি করি নাই । আমি এইটাও বুঝি আমার কাছে কোন প্রমাণ নাই তাই আমারে শাস্তি পাইতেই হবে … যা পাইতেই হবে তা হাসতে পাওয়াই ভালো।
বিচারক জিগ্গেস করলেন – ঐ ক্যান্সার পেশেন্ট কি বেচে গিয়েছিলেন ?
খবির মিয়া বলে – ভালোর দিকে যাইতাছিলেন কিন্তু তার আগে আমি ঐ চাকুরী ছাইড়া দিছিলাম এই অফিসের চাকুরীটার জন্যে।
বিচারক বললেন – খবির মিয়া আমার দিকে ভালো করে তাকান দেখেন তো চিনতে পারেন কিনা?
খবির মিয়া বিচারককে চিনতে পারেন । এই তো সেই ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলাটিই । মাথায় এখন লম্বা চুল — একটু সাদা হয়ে গেছে কিন্তু চেনা যায় … দিনের পর দিন দেখেছে হাসপাতালে -এইতো সেই মুখ।
বিচারক বললেন – খবির মিয়া আমি আপনাকে হাসাপাতালে বেডে শুয়ে আমার হাসবেন্ডের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা আনতে পাঠিয়েছিলাম । আপনি সেই টাকা ঠিকই এনে আমাকে দিয়েছিলেন । আমার কথা মত কাউন্টারেও জমা করিয়ে দিয়েছিলেন । সেই আপনি এত বছর পরে এসে পঞ্চাশ হাজার টাকার লোভ সামলাতে পারেন নি এটা আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি চাই আপনি পুরো ঘটনা আগাগোড়া একবার আদালতে বলুন, নির্ভয়ে বলুন, আপনার বক্তব্যের কোন রকম সত্যতার ছায়া পাওয়া গেলে আমি সরকারী উকিল এবং ইনভেস্টিগেশন অফিসারকে পুনঃ তদন্ত ও স্বাক্ষীদের ক্রস চেক করার আদেশ দেবো …
বিপক্ষের উকিল দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন …
বিচারক বললেন – আপনি বসুন , বিচার কার্য এখনও শেষ হয়নি ।