জানালার ওপাশে উদ্দাম সেক্সের দৃশ্য দেখার জন্য যখন রাত জাগছি আমি, তখনো দুর্ঘটনাটা ঘটে নাই। সম্ভবত তখনো তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আয়োজন করছিল ধূপ আর হাশিসের। মদ্যতায় ডুবে যেতে যেতে গাঁজা সাজিয়ে রাখছিল আর আমি এপাশের বারান্দা থেকে খেয়াল রাখছিলাম।
তারা তখন আলোময় ঘরের কূপিতে আগুন জ্বালিয়ে নিয়েছিল। ভাঁজ করছিল রাঙ পেপারগুলো। সাদা ধোঁয়া উঠছিল আর ভিসিডি চলছিল পাশেই। তারই সাথে কয়েকটি মেয়ের খিলখিল অট্টহাসি আমার কানে এলো। তাকিয়ে দেখলাম, তাদের ঘামহীন বিনুনি কপাল থেকে আলগা চুলগুলো এসির বাতাসে হালকা কাঁপছে। সামান্যই দেখতে পেলাম, তবুও বুঝতে পারলাম, এসির সামনা সামনি বসেছে তারা।
সামনের টেবিলে সাজানো ফলের ঝুড়ি থেকে মেয়েরা আঙ্গুর তুলে নিয়ে লাস্যময়ি হাসিতে সোফায় হেলান দিয়ে বসে থাকা যুবকদের মুখে ছুড়ে দিল এক একটি আঙ্গুর। তাদের গাল কামড়ে খাওয়ার ভান করে হেসে উঠল ছেলেরা। আমি ওদের হাসির শব্দ-তাল-লয় চিহ্নিত করে উপস্থিত সব মেয়ের সংখ্যা নির্ধারণ করতে সচেষ্ট হলাম। তিনজন!
হ্যা, শণাক্ত করতে পারলাম, তিনজন অল্পবয়সী মেয়ের পৃথক হাসি-ই আমার কানে আসছিল।
যতটা পারা যায় আমি একটু অন্ধকার জায়গা বেঁছে নিয়েছিলাম। একটু উঁচুতে এবং একটু আড়ালে, পাশের বিল্ডিং থেকে যাতে নিখুঁত দেখা যায় এবং অন্য কেউই আমাকে দেখতে না পায়- আমার বারান্দার কোণ থেকে শুকানো কাপড়ের আড়ালে আমি প্রায় চোখকান খাড়া রেখে ওদের জানালায় চোখ রাখছিলাম। অন্ধকার এবং রাতের নিস্তবদ্ধতা আমার দৃষ্টিশক্তি প্রখর করেছিল বলে দেখছিলাম, তারা নগ্ন হচ্ছিল একে একে।
কিন্তু পর্দা দুলছিল। এসির পাশাপাশি সম্ভবত ফ্যানও চলছিল তাদের। ফ্যানের বাতাসে পর্দা উড়ে গিয়ে জানালার দৃশ্যমাণ ফাঁক ফোকর আড়াল করছিল বলে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না মাঝে মাঝে। এতে অতিরিক্ত উৎগ্রিব হচ্ছিলাম আমি। তিল পরিমাণ দৃশ্য বাদ গেলেই আমার ইন্দ্রিয় কল্পনা, ধারণা ও যুক্তিতে বুঝে নিচ্ছিলাম ঠিক না দেখতে পাওয়া সময়টাতে তারা কি করছিল। আমার ইচ্ছা, প্রবণতা লোলুপ করছিল আমাকে, ফলে আমি কাল্পনিক ধারাবাহিকতায় ঘটনাগুলো মিল করে করে সাজিয়ে নিচ্ছিলাম তারা যা করছিল তার থেকেও বেশি পরিমাণ নগ্নতায়। আর পর্দা সরে যেতেই অধিক আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আরো নগ্ন হয়ে আরো অধিক মাতোয়ারা হয়েছে তারা। কোনোকিছুই গোপন রাখার প্রয়োজন মনে করছে না। বলা যায়, নগ্নতায় অভ্যস্থ হয়ে ওঠা এই অবস্থাটা তাদের অবৈধতাকে বৈধ করে দিয়েছিল। তারা প্রকাশ্যে নগ্ন হয়ে বেড়াতে লাগল। অবৈধ কাজগুলো প্রকাশ্যে করতে লাগল। এমনকি অবৈধতার পক্ষে যুক্তিও দিতে লাগল যে মাঝে মধ্যে সামান্য অবৈধতা আসলে প্রকৃত অবৈধতা নয়।
তারা এসব বলাবলি করছিল আর অট্টহাসি দিচ্ছিল থেকে থেকে।
আমি বুঝতে পারছিলাম, স্বাভাবিকতার কাতারে চলে আসা তাদের এইসব জঘন্যতা কীভাবে যেন আমার ভেতর আশ্রয় প্রশ্রয় নিচ্ছে। আমার প্রখর দৃষ্টি, অনুধাবন, বিবেক, ধারণা কল্পনা আমাকে আবাক করে দিচ্ছিল, এসব দেখে দেখে, গোপনে রেখে, নিরবতায়, সহ্যক্ষমতায় মেরুদণ্ডের সাথে মিশে মিশে আমার অস্তিত্ব যেন আমার সাথে এক প্রকার সমঝোতা করে ফেলেছে যে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই রকম সামান্য অবৈধতাই উত্তম।
ফলে আমার লক্ষ্য উদ্দেশ্য আমার লোলুপ কামনা বাসনায় একীভূত হয়ে একমুখী একটা উন্নয়ন ধারা তৈরি করেছে। আমি একটা সমৃদ্ধ উন্নয়ন সিঁড়ি দেখতে থাকি, যেখান দিয়ে অবৈধতার প্রতিটি ধাপ ক্রমশ অতিক্রম করে আমি ঐসব ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারি যাতে সামান্য ইশারা মাত্র সব রকম সুযোগ সুবিধা আমার হাতের নাগালে হাজির হতে পারে।
হয়তো এই কারণে আমি আরো অধিক কিছু দেখতে চাচ্ছিলাম। নগ্নতা দেখতে দেখতে আরো ধিরে ধিরে নগ্নতায় ডুবে যাচ্ছিলাম। তাদের নগ্নতা তাদের কী পরিমাণ নগ্ন ও শিহরিত করেছিল জানি না, আমাকে তারও বেশি শিহরিত করছিল, আমাকে নগ্ন করছিল। আর আমি তাদের নগ্নতার সাথে হারিয়ে যাচ্ছিলাম, তলিয়ে যাচ্ছিলাম। অবৈধতায় আমিও নিজেকে তাদের সাথে শরিক করেছিলাম ক্রমাগত।
এরপরেই তাদের কী পদক্ষেপ তা দেখার জন্য উদগ্রিব না হয়ে আমার ইন্দ্রিয়গুলো তাদের কৌশলগুলো শিখে প্রয়োগের জন্য উত্তেজিত হচ্ছিল। আর চাচ্ছিলাম আমার না পাওয়াকে অবৈধতায় পূর্ণ করে ফেলার প্রবনতায় আমি সুযোগ মতো যতটুকু পারি কাজে লাগাব। হঠাৎআমি আমার প্যান্টের চেন খুলে ফেললাম। বাম হাতটা ঢুকিয়ে দিলাম প্যান্টের ভেতর। আমার পুরুষদণ্ডকে শক্ত ধরে মোচড়ে ছেঁচড়ে আমি গলদঘর্ম হব, সব খেলা সাঙ্গ করে ঘুমাব আর ঠিক অন্যান্য দিনের মত আগামীকালও আমার বন্ধুদেরকে বলব, ‘জাহান্নামে যা! আমি এই মতনই নিমগ্নতায় ডুবে যাচ্ছিলাম ধিরে ধিরে।
বলতে বাঁধা নেই, আমার প্রচণ্ড রকম ঘৃণা, প্রতিবাদ ক্ষমতা, প্রকাশ্যে ও বোধসত্তার অভ্যন্তর থেকে যা ছিল নিষিদ্ধ সব অতিক্রম করে আমি দুই রকম চরিত্রে হাজির হতে থাকলাম। আমি বাড়তি ইনকাম আদায় করতে থাকলাম, অবৈধ পথে, জুলুম আর লুট করে আর তাদের মতোই সুন্দরীদের পিছে খরচ করতে লাগলাম দেধারছে। ব্যাপারটা দারুণ যে শুধুমাত্র কৌশল জানলে সব আপনা থেকে আসে। আমি বহুরূপী হয়ে উঠলাম। দয়াশীল এবং নিষ্ঠুর বা দ্রুত কাজ করে দেয়ার হাতিয়ার হয়ে আমি দিনে দিনে মহান ব্যক্তিতে পরিণত হতে থাকলাম। আমার অবৈধতা আমাকে সিঁড়ি ধরে টেনে টেনে ক্রমশ উপরের দিকে নিয়ে যেতে লাগল।
দিন এভাবেই যাচ্ছিল আমার। বলা যায়, রাত এভাবেই যাচ্ছিল ক্ষয়ে যেতে যেতে। কিন্তু আজ রাতেই ঘটল সেই ঘটনাটা। যা আমাকে আতঙ্কিত করল।
বরাবরের মতোই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আমি। অপরূপ এক মেয়ে এসেছে আজ। এই মেয়েটির সন্ধান আমিই দিয়েছিলাম তাদের। বলা যায়, তাদের এক প্রকার সাপ্লাইয়ার হয়ে উঠেছিলাম আমি। মেয়েটি রাজি হচ্ছিল না। তাই তারা মেয়েটাকে হাতপা মোড়া করে বেঁধে ফেলেছিল। তাদের রুমে যাওয়ার পারমিশন বা অধিকার ছিল না আমার। তাই আমি পাশের বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানালার সামান্য ফাঁক দিয়ে দেখতে লাগলাম। মেয়েটিকে অর্ধনগ্ন করে সোফায় বসে থাকা তাদের একজনের উপরে তুলে দেয়া হচ্ছিল। এরপরেই আচমকা আমার চোখ ছানাবড়া হল।
খুন! এরপরই একটা খুন হয়! মেয়েটি কেঁপে কেঁপে মারা যায়।
আমি ভয়ে কাঁপি। নিজেকে আড়াল করে গোপনে দেখি, নিস্তব্ধ।
এরপর থেকেই আর ঘুমাতে পারি না। চোখ মুদলে সেই দৃশ্য দেখি আমি। মেয়েটির আর্তচিৎকার আমাকে আতঙ্কিত করে। কিন্তু কথাটা কাউকে বলি না। বউকেও না। বরং পরদিন জানালাটা শক্ত করে সিলগালা করি, যেন কেউ আমাকে সন্ধেহ না করে।
এই সিলগালা দেয়ার অর্থ হল, আমি কিছুই দেখি নাই। কিছুই জানি না। আমি সৎ ও মহৎ আমার সাথে ওসবের কোন সম্পর্কই নাই।
এরপরেই দেখতাম অপরাধীরা দিব্যি হাটছে, পুলিশের সাথে ঘুরছে। পুলিশ চেষ্টা করছে আসল কারণ খুঁজে বের করতে, কিন্তু আসল কারণটা কী তা ধরতে পারছে না। মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে চালিয়ে দিয়েছে তারা। আমি ওদের কাণ্ড-কারখানা দেখে চুপসে গেছি। এক প্রকার নিস্তার পেয়েছি বলে মনে মনে খুশি হয়েছি। আমি নিরব, নিস্তব্ধ। অপারগ আমি জানি, জানালার সামান্য ফাঁক দিয়ে তাদের অবৈধতার যতটুকুই আমি দেখেছি, জানি আমি এর আসল কারণটা! তবুও পাশ কেটে এড়িয়ে যাচ্ছি।
এটা সত্য যে এই অবৈধতার সাথে জড়িত আছি আমি। এবং এসব দেখে দেখে আমার দিব্য ধারণা তৈরি হয়েছে যে কিছুই হবে না এসব বলে কয়ে বিচার চেয়ে। কারণ আমি দেখেছি, আমার প্রতিবেশিরা ওদের কামনা বাসনার সাথে আমারই মতো কিছুটা নগ্ন হয়েছে। আমি বারান্দায়, জানালার পাশে, তারা আরো কাছে বা দূরে থেকে আমারই মতো প্রতিকারবিমূখ এক বিচারহীনতার বেড়াজালে জড়িয়ে পড়েছে। কেউ তারা আমারই মতো কথা বলে না। হয়ত কেউ নাজেহাল হতে চায় না। নগ্নতা বা অবৈধতার সব গোপনিয়তা গোপনে করে রাখে। আমারই মতো, অন্যায়গুলো হতে থাকে, আমি বা আমরা দেখি আর চুপ থাকি।
এরপরেই টনক নড়ে আমার। একদিন দেখি তারা আমার বাসার সামনে ঘুরঘুর করছে। আমার ভয়টা সত্যি হয়। আমি সেদিন বাসায় ছিলাম না। পরে জানতে পারি, তারা আমার বোনের উপর চড়াও হয়েছে। কলাপসিবল পার হয়ে তারা আমার বোনকে ধরে। নগ্ন করতে চায়। আমার বোন কুঁকড়ে তাদের লাথি দেয়, জুতা পেটা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয় তারা। এক টানে কাপড় ছিড়ে ফেলে সেখানেই ধর্ষণ করতে হামলে পড়ে তারা। প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটনাটা ঘটে। খবর পেয়ে আমি পুলিশ ডাকি। পুলিশ আসে। আমি দ্রেুত ফিরে এসে জনে জনে লোকদের ডেকে ঘটনার বিবরণ নেয়ার চেষ্টা করি। কেউ সাক্ষী দেয় না। তারাও নিশ্চুপ।
আমি বয়ষ্কমত পাশের দোকানদারকে বলি, ‘কাকু, আপনি তো এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, সব দেখেছেন। আপনি বলেন।’
‘না বাবা, আমার চোখ ঠিক নাই, দেখতে পারি না।’ লোকটি জানায় এবং দ্রুত সরে যায়।
‘তাহলে আপনি? আপনি তো বুঝতে পেরেছিলেন?’ আমি উপরের দিকে তাকিয়ে দোতলার জানালার এক বয়ষ্কা মহিলাকে বলি।
‘এমন বোধশক্তি নেই বাবা আমার।’ তিনিও উত্তর দেন এবং বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে রাখেন।
আমি আশপাশের যুবকদের কাছে জানতে চাই। তারা বলে, ‘আপনার বোনটাই নোংরা।’
আমি উত্তেজিত হয়ে তাদের মারতে যাই। কয়েকজন আমাকে আটকে ফেলে, বলে, ভাই ঠিকই তো বলেছে, আপনার বোনের চরিত্রই ভালো না। এত দেমাগ দেখাতে যায় কেন তাদের সাথে, জানে না ওরা কারা?
আমি শিহরিত হই, অবাক তাকাই, সেই সব সহ্য করা অবৈধতা আমার চারিদিকে ছড়িয়ে আমাকে আক্রমণ করছে। আমার গোপন কামনা বাসনার অবৈধতাগুলো আহাজারি করছে। কেন কেউ কথা বলছে না?
আমি চিৎকার করে উঠি, এইভাবেই কি অন্যায়গুলো মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলে দেয়! ঠিক এইভাবে সম্পৃক্ত হতে হতে আর নিশ্চুপ থেকে থেকে? মাথাটা ঝিম ঝিম করে আমার। নিজের দিকে তাকাই; আকাশের দিকে তাকাই; ঘুরতে থাকি।
আমি চিৎকার করে উঠি, এইভাবেই কি অন্যায়গুলো মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলে দেয়! ঠিক এইভাবে সম্পৃক্ত হতে হতে আর নিশ্চুপ থেকে থেকে? মাথাটা ঝিম ঝিম করে আমার। নিজের দিকে তাকাই; আকাশের দিকে তাকাই; ঘুরতে থাকি।
হঠাৎ পরিবর্তন হয় আমার ভেতর, আমি অফিসে গিয়ে ঘুষ নিতে কুণ্ঠাবোধ করি। এমনকি আমার পাশের সহকর্মি যে উপরি ইনকাম হিসেবে ঘুষ খাচ্ছে, সেটাও দেখে থাকতে পারছি না। কোনোমতে চোখ বন্ধ করে থাকতে চাই। কোনো দিকে তাকাই না। কোনো অন্যায়ের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করব না। আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই। আমার আয়না আমাকে দেখে। আমি আমার বিকৃত আমাকে দেখতে পাই। আমি কি বিকৃত হয়ে যাই নাই? সবকিছু সহ্য করে করে, সব কিছু গোপন করে করে, সবকিছু জেনে শুনে না দেখার ভান করে করে আমি কি নিজেকে সম্পৃক্ত করি নাই? অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে- সত্যি কি? আমি শিহরিত হই।
আমার উপলব্ধি হয়, এর প্রতিবাদ আমি করতে চাই। সবকিছু বলে দিতে চাই।
পরদিন সব ঘটনাগুলো বলি আমি । কিন্তু দুর্ভাগ্য, কেউ আমার কথা বিশ্বাস করে না।
আমি মাটিতে ব্যাঙের মতো বসে পড়ি। আমার চারপাশে পুলিশের দলও আমার মতো ঝিম ধরে। তারা হাসি ঠাট্টা করে। আমি সত্যটা দেখতে পাই। বলতে থাকি। হায় খোদা, কেউ তারা সত্যটা বিশ্বাস করে না। আমার কথায় তারা নগ্নতা দেখে। তারা ঘোলা দেখে। এবং তারা পরিষ্কার মনে করে যে আমি ভালো মানুষকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছি।
আমার চোখ ঘোলা হয়। ঘোলা চোখে আমি পুলিশের চোখে তাকাই, ঘোলা দেখি। চারিদিকে তাকাই, ঘোলা দেখি। যারা আমার মতো তাদের দেখেছিল ওদেরও দেখি, ওদের চোখে তাকাই, ঘোলা দেখি। সত্যিই কি আমিই ঘোলা দেখি? কিন্তু না, তারাই বরং ঘোলা দেখছে। কারণ তারা বলে, আমাকে কেউ তারা দেখে নাই, চেনে না জানে না।
আমি অবাক হই, তারা কি সবাই পূর্বের আমার মতো দৃষ্টিহীন হয়ে গেছে? কারণ, কয়েকজন পুলিশ চোখ কচলে কয়েকজনকে জিজ্ঞাস করে, জানতে চায়। তারা সবাই চোখ কচলে বলে, না, আমরা কিছু দেখি নাই।
আমার ভাবনা আছড়ে পিছড়ে মারে। আমার ভেতর কে যেন বলে, হ্যা, যাদের চোখ ঘোলা, যারা দেখতে পারে না, দৃষ্টিহীন, যাদের বোধশক্তি নেই, যারা লুকিয়ে দেখা মেরুদণ্ড বাঁকা করা সরিসৃপ, তাদের কি নগ্নতা দেখার মতো দৃষ্টি থাকতে পারে?
আমি তাকিয়ে থাকি, দেখি, আমার চারিদিকে এখন দৃষ্টিহীনেরা। তারা নিরবে আর গোপনে নগ্নতা দেখছে আর গোপন রাখছে। যেন দৃষ্টিহীনের নগ্নতা দর্শন চলছে এখন।
শাহ মাহফুজ-এর অন্যান্য গল্পঃ
৪. রক্ত হিন্দু, রক্ত মুসলমান
৩. দুই নম্বর
২.শ্বশুর আমার ভিনদেশির মতো নজর নিছে
১. বেড়ালের স্পর্শ