অসহ্য রকমের এক বিরক্তি নিয়ে বারান্দা জুড়ে হাঁটছে মুস্তফা মামুন। ইতোমধ্যে টানা পাঁচ টা সিগারেট শেষ করেছে। ছয় নম্বরটা ধরানোর জন্য জ্বালিয়েছে আগুন। এতো গুলো সিগারেট একসাথে খাওয়ার জন্যই কিনা, মাথা ধরেছে প্রচন্ড। দপদপ করছে মাথার ভেতর। স্থির হতে পারছে না সে।
মুস্তফা মামুন একজন উঠতি লেখক। এখন পর্যন্ত তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে তার। দু’টি উপন্যাস ও একটি গল্পগ্রন্থ। শেষ উপন্যাস টা বেশ পাঠক নন্দিত হয়েছে।
এখন নতুন একটা উপন্যাস লিখছে সে। লেখা প্রায় শেষ। চমৎকার এগিয়েছে গল্প। নিজেদের প্রয়োজনে গল্পের চরিত্ররা নিজেদের মতো করে কথা বলছে, সম্পর্ক তৈরি করেছে আবার সেই সম্পর্ক ভাঙছেও নিজেদের প্রয়োজনেই।
মামুনের ধারনা, এসব ক্ষেত্রে আসলে তার কিছু করার নেই। সে শুধু একটা গল্পের প্লট ঠিক করে লিখতে বসে। তারপর গল্পের চরিত্ররা চলে নিজেদের নিয়মে। নিজের ইচ্ছানুযায়ী। মামুনকে তাদের স্রষ্টা হিসেবে যতটুকু সম্মান দেওয়ার ততটুকুই দেয় তাছাড়া তারা মামুনের ইচ্ছা অনিচ্ছার ধার ধারে না।
এই যেমন, যে উপন্যাসটা এখন লিখছে মামুন। সেই উপন্যাসের শেষে নায়িকার নায়ককে খুন করার কথা কিন্তু কোন ভাবেই নায়িকাকে দিয়ে খুন করানো যাচ্ছে না। নায়ক কত শত বার যে খুন হওয়ার মতো অপরাধ করেছে তাও নায়িকা খুন করতে রাজি নয়। খুনের হুমকি দেয়, খুন করার জন্য বটিতে ধার দিয়ে রাখে কিন্তু করে না। অথচ মামুনের দরকার নায়কের মৃত্যু।
নায়ক খুন হবে হবে করেও হচ্ছে না। এদিকে গল্পের কলেবর বেড়ে যাচ্ছে। নতুন চরিত্র ঢুকে যাচ্ছে মামুনের অনিচ্ছা স্বত্তেও। নায়িকা নীলা বার বার হুমকি দিলেও খুন করছে না, নায়ক শরিফ কে। মামুন নীলাকে বোঝাতে বোঝাতে বিরক্ত হয়ে গেছে। শেষে রেগে মেগে কম্পিউটার সাট ডাউন দিয়ে বারান্দা জুড়ে হাঁটছে আর একের পর এক এক সিগারেট টানছে।
মাথায় অসহ্য রকমের বিরক্তি নিয়ে হাঁটছে সে। শারমিন জেগে থাকলে ভাল হতো। একটু চা খাওয়া যেত। শারমিন মামুনের বউ। খুব ভাল বেতনে চাকরি করে। সারাদিন অফিস করে তাই অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে পারে না। এজন্য অবশ্য তাকে দোষ দেওয়াও যায় না। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে ক্লান্ত শরীরে ঘুম চলে আসারই কথা।
হঠাৎ মামুনের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। আধখাওয়া সিগারেট টা গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে ফেলে দৌড়ে এসে বসে কম্পিউটারের সামনে। চালু করে কম্পিউটার। নতুন এক আইডিয়া এসেছে মাথায়। এইবার হয়তো নীলাকে খুন করাতে রাজি করতে পারবে সে।
‘নীলা, কি করছো?’
‘আর বইলেন না, মামুন ভাই। মন মেজাজ খুব খারাপ। রাগে হাত পা কাঁপছে। মনে হচ্ছে কাউকে খুন করে ফেলি।’
‘এতো মেজাজ খারাপ কেন? শরিফ কই?’
‘শরিফ কই আর থাকবে? বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছে মনে হয়! আজকাল তো রাতদিন এই ই করছে। এই মাঝরাতেও বিড়ি না খেলে নাকি চলে না। ……….. আর মেজাজ খারাপের নির্দিষ্ট কোন কারন নেই।’
‘কি, এখন আবার ঝগড়া করেছো?’
‘ঝগড়া করবো না কেন, বলুন? আজকে আবার চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে! মানুষ চাকরি পায় না আর সে চাকরি ছেড়ে দেয়। ওর নাকি চাকরি করতে ভাল্লাগেনা! এইটা কোন কথা, আপনি বলেন মামুন ভাই?’
‘তা তো ঠিকই। এই সময়ে চাকরি ছাড়লে চলবে কেন? আর ওকে এই চাকরিটা পাইয়ে দিতেও তো তোমাকে অনেক খাটা খাটনি করতে হয়েছে!’
‘সেটাই। মামাকে অনেক বলে কয়ে ওর জন্য চাকরির ব্যবস্থা করেছিলাম। কত স্বপ্ন ছিল, ও চাকরিতে একটু সেটেল হলেই আমি আমার চাকরি ছেড়ে দিবো। এভাবে কি সংসার হয়? সারাদিন অফিস করে বাসায় ফিরতেই ক্লান্ত লাগে। আর কিচ্ছু করতে ইচ্ছে করেনা। এদিকে আমার বয়সও বেড়ে যাচ্ছে। বাচ্চা কাচ্চাও নিতে হবে।’
‘ শরিফ চাকরিটা ছাড়লো কেন? কিছু বলেছে?’
‘সাহেবের নাকি লেখালেখি করার সখ জেগেছে! আরে লিখ বাবা তুই, তোকে তো আর কেউ ধরে রাখেনি। চাকরি বাকরি করে কি আর কেউ লিখছে না? শুধু লেখায় কি ভাত আছে এই যুগে।’
‘ওর তো লেখার হাত ভাল! তুমি……’
‘আপনি চুপ থাকুন মামুন ভাই, আপনার লাই পেয়ে পেয়েই আজ ওর এই অবস্থা! ওর লেখার হাত যে ভাল, তা কি আমি জানিনা! ওর লেখার প্রেমে পড়েই তো ওকে বিয়ে করেছিলাম। তাছাড়া ওর মতো চাল চুলোহীনকে কে বিয়ে করতে যাবে? শরিফ কে বিয়ে করতে গিয়ে কি আমার কম কষ্ট করতে হয়েছে? আমার পরিবার, আত্মীয় স্বজন সবার বিরুদ্ধে যেতে হয়েছে আমাকে। উফফ! সে সব দিনের কথা মনে হলে এখনো দম বন্ধ দম বন্ধ লাগে।’
‘শরিফ’ও তো তোমার জন্য কম কিছু করেনি। বেকার অবস্থায় পরিবারের অমতে গিয়ে বিয়ে করাও কিন্তু চাট্টিখানেক কথা নয়! একি, তুমি দীর্ঘশ্বাস ফেলছো কেন?’
‘সেই শরিফ আর এই শরিফের মধ্যে বিস্তর ফারাক, মামুন ভাই। যে মানুষটা আমাকে একটু খুশি দেখার জন্য এমন কিছু নেই যা করেনি। বাউন্ডুলে জীবন ছেড়ে সংসারী হয়েছে। সারা জীবন চাকরি বাকরি না করতে চাওয়া মানুষটা নয়টা টু পাঁচটা অফিস করেছে নিয়মিত। আড্ডাবাজ একজন মানুষ সন্ধ্যা হওয়ার আগেই বাসায় ফিরে সাহায্য করেছে রান্না বান্নায়। আর এখন শরিফ যেন কত দূরের মানুষ! আমার ভাল লাগা মন্দ লাগায় ওর কিছুই আসে যায় না! এর জন্য আপনি দায়ী। দিনের পর দিন আপনি ওকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছেন। আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন ওকে।’
‘আমি আবার কি করলাম?’
‘আপনি অস্বীকার করতে পারবেন, মামুন ভাই?
আপনি ওকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেননি? ওর মধ্যে হতাশা ঢুকিয়ে দেননি? অস্বীকার করতে পারবেন? আপনি ওকে নষ্ট হয়ে যাওয়া,পচে যাওয়া একজন ভাবতে শেখাননি? ও আরেকজনের দয়ায় চাকরি পেয়েছে বলে তাকে খুঁচিয়ে দেননি?
শুধু ওকে কেন? আমাকে দিয়ে কি আপনি শরিফের অস্তিত্বের সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় খোঁচা দেওয়াননি? আমাকে দিয়ে কি আপনি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করাননি? আমার চোখে কি আপনি ওর জন্য তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা, অবহেলার জন্ম দেননি? আপনি দিয়েছেন! আপনিই কেড়ে নিয়েছে ওকে আমার থেকে। আপনি আমাকে দিয়ে শরিফকে খুন করাতে চেয়েছেন!’
‘আমি এগুলো নিজ ইচ্ছাতে কিছুই করিনি, নীলা। গল্পের প্রয়োজনে তোমরা দূরে সরে গেছ। তোমাদের নিয়তিই এমন করে লেখা। তোমার শরিফকে খুন করতেই হবে।’
‘না, মামুন ভাই। আমরা আপনার হাতের পুতুল নই যে আমাদের নিয়ে যা খুশি তাই করবেন। আপনার ইচ্ছা কখনো পূরণ হবে না। আমি শরিফকে খুন করবো না।’
‘তুমি ওকে খুন করতে বাধ্য নীলা। তোমার কিছু করার নেই। এটাই তোমার কর্তব্য। এজন্যই তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সবাইকে ভাগ্য মানতে হয়। তোমাকেও মানতে হবে। তুমি খুন করবে শরিফকে।’
‘আপনি এতো নিষ্ঠুর কেন, মামুন ভাই? এতো ভালোবাসা দিয়ে, এতো এতো মায়া দিয়ে একটা চরিত্র আপনি তৈরি করেন, তারপর তার প্রয়োজন ফুড়িয়ে যাওয়া মাত্রই তাকে নির্দিধায় মেরে ফেলেন! কেন?’
‘প্রয়োজন শেষে সবাইকেই যেতে হয় নীলা! তুমি খেয়াল করে দেখো, সৃষ্টিকর্তা আমাদের কত মায়া, কত ভালোবাসা, কত বিবেক বুদ্ধি দিয়ে তৈরি করেন। আমাদেরকে দিয়ে কত মানুষকে ভালোবাসান! কত শত মানুষকে আমরা ভালোবাসি! তাই বলে কি আমাদের শেষ নেই। অবশ্যই আছে। আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে তা শেষ হওয়া মাত্রই আমাদের চলে যেতে হয়। মৃত্যু হয় আমাদের।’
‘ আমি আপনার মতো নই। আমি আপনার খেলার পুতুল হয়ে থাকবো না। আমি চলবো না আর আপনাত ইশারায়। শরিফকেও মুক্ত করবো আমি। আমি সব ঠিক করে দেব। আমরা সুখে থাকবো।’
‘তুমি কাকে ঠিক করবে? শরিফকে? হা হা হা! তুমি কি জানো, তুমি যাকে নিয়ে সুখে থাকার স্বপ্ন দেখছো সে এখন কোথায়?’
‘ আমি জানি, সে কোথায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। আপনি আমাকে উল্টা পাল্টা বুঝ দিতে পারবেন না মামুন ভাই। আমি বুঝে গেছি আপনাকে।’
‘আচ্ছা নীলা, তুমি কি জানো অফিস থেকে ফিরে শরিফ কী কী করে? তুমি না হয় দেরীতে ফেরো, ওতো তোমার আগেই ফেরে। বাসায় ফিরে কি করে? এই যে মাঝ রাতে তোমার পাশ থেকে উঠে যায় সিগারেট খাওয়ার নাম করে! জানো কোথায় যায়? কি করে? তুমি তো ক্লান্ত থাকো বলে ওকে সময় দাও না। ওর কামনার আগুন কোথায় গিয়ে জল হয়, তুমি জানো?’
‘ চুপ করুন আপনি! আর একটা কথাও বলবেন না। আপনি যা মুখে আসে তাই বলে যাচ্ছেন। আপনি, আপনার ইচ্ছা পূরনের জন্য এতো নীচে নেমে গেছেন, মামুন ভাই! মিথ্যা বলা শুরু করেছেন? আপনি শরিফ সম্পর্কে যা খুশি বলতে পারেন, কিন্তু এই কথা আমি কখনো বিশ্বাস করবো না। শরিফ আমাকে ভালো না বাসতে পারে কিন্তু আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারেনা সে।’
‘ আমার কথা বিশ্বাস না হলে, যাও গিয়ে দেখো, তোমার শরিফ কোথায়। খুঁজে দেখো। শোনো, তোমার ছোট বোনের ঘরটাও খুঁজে দেখো একবার, যদি সেখানে গিয়ে বসে বসে সিগারেট খেতে ইচ্ছে করে তার। হা হা হা।’
‘আপনি এতো নীচে নেমে গেছেন, মামুন ভাই? নিজের ইচ্ছে পূরণের জন্য শরিফকে দিয়ে…. ছিঃ ছিঃ… তাও আবার আমারই ছোট বোনের সাথে!
যদি সত্যিই এমন কিছু হয় তবে আমি শরিফকে খুন করবো সাথে আমিও মরবো। আর একটা কথা মনে রাখবেন মামুন ভাই, শরিফ আর আপনি আলাদা কেউ নন।’
‘কন্ট্রোল’ ‘এস’ বাটনে এক সাথে চাপ দিয়ে কম্পিউটারের টেবিল থেকে উঠে হাসিমুখে দাঁড়ালো মামুন। সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে খুব। এবার আর বিরক্তিকর তেষ্টা নয়, আত্মতৃপ্তির তেষ্টা। ফাইনালি উপন্যাসটা শেষ হতে যাচ্ছে। এখন বিভিন্ন চরিত্রের শেষ পরিনতি নিয়ে ‘পরিশিষ্ট’ লিখলেই খতম।
গতরাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে উদীয়মান লেখক মুস্তফা মামুন। আনুমানিক রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে তীব্র চিৎকার শুনতে পান পাশের বাসার শাফায়েত কবির। শাফায়েত কবির সচারাচর এতো রাতে জেগে থাকেন না। কিন্তু একটা উপন্যাস শেষ করা নিয়ে খুব বিরক্ত ছিলেন তিনি। উপন্যাসের চরিত্রগুলো তাঁর কথা শুনছে না। তারা চলছে তাদের নিজেদের মতো।
এতো রাতে চিৎকার শুনে, সকালবেলা খোঁজ নিতে এসে দেখেন, দরজার নীচ দিয়ে জমাট বাঁধা রক্তের স্রোত নেমে গেছে যেন। ঠিক তার গতরাতে শেষ করা উপন্যাসের মতো। রক্ত দেখে দেরী না করে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দিয়েছেন তিনি। লেখক মুস্তফা মামুনের সাথে খুব ভাল সখ্যতা ছিল তাঁর। তার উৎসাহেই মূলত চাকরি বাকরি বাদ দিয়ে লেখালেখি শুরু করে মামুন। মামুনের স্ত্রী শারমিন, অবশ্য এই কারনেই শাফায়েত কবিরকে পছন্দ করতেন না, এড়িয়ে চলতেন।
পুলিশ এসে মামুনের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছ। রক্তমাখা বটি পড়ে ছিল তার পাশেই। অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে শারমিনের ছোট বোনকে। আর বেড রুম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত শারমিনের লাশ।
পুলিশ শারমিনের ড্রেসিং টেবিলে, গ্লাস দিয়ে চাপা দেওয়া একটা সুইসাইড নোট পেয়েছে। শারমিন লিখেছে,
“মামুনকে আমি ভালোবেসে পরিবারের অমতেই বিয়ে করেছিলাম। আমাদের দু’জনার সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। আমরা প্রচন্ড ভালোবাসতাম একজন আরেকজনকে। আমাকে সুখি করতে মামুনও তার সর্বোচ্চ চেষ্টা টুকুই করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল আমাদের।
আমার ছোট বোন আমাদের সাথে থাকতো। মামুন ওকে দেখতো নিজের ছোট বোনের মতোই। তিনজনের সংসার চলে যাচ্ছিল হাসি আনন্দেই।
কিন্তু হঠাৎই আমাদের আনন্দের সময় পিছু হটতে শুরু করে। মামুনের সাথে পরিচয় হয় পাশে বাসার নতুন ভাড়াটিয়া শাফায়েত কবিরের। তিনি লেখালেখি করেন। লিখেনও ভাল। আমি পড়েছি দু একটা তার লেখা। কিন্তু তার স্বভাব ভাল নয়। প্রথম দিনই কেমন কেমন করে যেন তাকিয়েছিল আমার দিকে। এরপর কত শত বার যে তিনি আমার বিভিন্ন ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছেন তার হিসেব নেই।
আমাকে না পেয়ে উনি, মামুনের সাথে ঘনিষ্ঠতা করেছেন। মামুনকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করেছেন, আমার থেকে দূরে সরতে। উনি হয়তো ধারনা করেছিলেন, মামুন আমাকে ছেড়ে দিলেই আমি উনার প্রতি আকৃষ্ট হবো।
আমি জানি, আমার ছোট বোনের সাথে মামুনের সম্পর্ক তৈরিতেও শাফায়েত কবিরের প্ররোচনা আছে।
আবার তিনি আমাকে এই সম্পর্কের ব্যাপারে অনেকদিন ধরেই বলে আসছিলেন। আমি উনাকে অবজ্ঞা করলেও উনার কথা বিশ্বাস করেছিলাম। আমি জানি, উনার মতো লোকেরা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, খুব কাছের মানুষকেও বলি দিতে দুইবার ভাবে না। মামুন তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ হলেও, খুব কাছের হলেও আমাকে পেতে সে তাকে শেষ করতে চেয়েছিল। আমাকে আশ্রয়হীন করে, নিজে দিতে চেয়েছিল আশ্রয়।
আমি অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম, মামুনকে হাতে নাতে ধরতে। আমি ভেবেছিলাম, সত্যিই যদি এমন কিছু হয়, তবে কিছু বলবো না। কিছু বলবো না ছোট বোনকেও। চুপচাপ বেড়িয়ে যাব বাসা থেকে। কিন্তু আজ যখন নিজ চোখে দেখলাম এই অসভ্যতা নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। রাগে দুঃখে ক্ষোভে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি। তখন একটা জিনিসই আমার মাথায় ঘুরছিলো, খুন করতে হবে। শাফায়েত কবিরেরই একটা গল্প, ‘প্রেম মৃত্যু ও ধোঁকা’য় পড়েছিলাম, পরকিয়া প্রেমের কথা শুনতে পেয়ে বটি দিয়ে স্বামীকে জবাই করে গল্পের নায়িকা।
তবে, মামুনকে খুন করা কিংবা আমার সুইসাইড করায়, আমি শাফায়েত কবিরকে কোন দোষ দেই না। আমি বুঝে গেছি এটাই আমাদের নিয়তি। মামুনের খুন হওয়া আমার হাতেই লেখা ছিল।
তাই আমার খুন করা বা সুইসাইড করায় কেউ দায়ি নয়। আমি সজ্ঞানে নিজ ইচ্ছায় এমন করেছি।
শেষে একটা কথা বলতে চাই, সবার দিন আসে। কেউ তার নিয়তিকে খন্ডাতে পারেনা। শাফায়েত কবিরও পারবেন না। কারন মামুন আর শাফায়েত আলাদা নেউ নন।”