হিংস্র

– “আম্মু আমি খেলতে যাই?”
– “আজকে আমার শরীরটা ভাল না রে মা।আজকে খেলতে নিয়ে যেতে পারব না।বাসায় তোমার খেলনা দিয়ে খেলা কর।”
– “আমি একা যাই আম্মু প্লিজ প্লিজ?”
– “না মা।আমি ছাড়া তোমাকে একা যেতে দিব না।”
– “(প্রচন্ড রাগ করে) তুমি আমাকে কখনই একা খেলতে দিতে চাও না।আমার ফ্রেন্ডসদের মায়েরা তো কখনই তাদের সাথে বসে থাকে না।তুমি কেন থাকো?যাও আমি আর কখনও খেলতে যাব না।”
এই কথা বলে আমার আট বছর বয়সী মেয়ে নীহারিকা অভিমান করে তার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।আমি কিছুই বললাম না।কারণ ও এখনও পৃথিবীর মায়াটাই দেখেছে।হিংস্রতা দেখেনি।তাই আমি তাকে একা কোথাও যেতে দেই না।
কিছুক্ষণ পর…
– “আম্মু সরি।তুমি কষ্ট পেও না।তুমি যা বলবে আমি তাই করব।আর কখনও তোমাকে কষ্ট দিব না।”
এই কথা বলে আমার রাজকন্যা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।আমিও ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিলাম।ওর রাগটাই এমন।হঠাৎ রেগে যাবে।আবার কিছুক্ষণ পর যার উপর রাগ করেছে তার কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে সরি বলবে।
রাতে অফিস শেষ করে নীহারিকার আব্বু বাসায় ফিরল।সে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে।বেতন যা পায় আমাদের দিব্বি চলে যায়।রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নীহারিকার আব্বুকে বললাম,
– “কাল নীহারিকাকে যে স্কুলে আত্মরক্ষার কৌশল শেখায় সেখানে ভর্তি করাব।”
– “(উচ্চস্বরে হেসে) মানে কি? আমার মেয়েকে মারামারি শেখাবে?”
– “(আমি রাগ কন্ট্রোল করে) দেখো, আমার মেয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য এসব শিখবে।এখানে হাসির কি আছে?তাছাড়া ও বড় হচ্ছে।এসব শেখা,জানার তো দরকার আছে নাকি।”
– “(রাগান্বিত হয়ে) তোমার মাথায় সমস্যা আছে।আমার কলিগ,কাজিন,বন্ধু মোট কথা বাসায় কোনো পুরুষ মানুষ আসলে তুমি নীহারিকাকে তাদের কাছে যেতে দাও না।দূর থেকে কথা বলতে বল।আমার মানসম্মান কিছুই থাকে না তাদের সামনে।আমার মেয়ের বয়স এখন মাত্র আট বছর।এখন ও এসব শিখে কি করবে?তুমি যা খুশি তাই কর আমি এখানে এক টাকাও দিতে পারব না।”
– “(রাগে চিৎকার করে) তোমার কাছে আমি টাকা চাইনি।তুমি আমাকে যা হাত খরচ দিতে সেখান থেকে আমি জমিয়েছি।আর শোনো, হিংস্র পশুদের কাছে আট বছর বয়সী শিশুও তার শিকার,আঠার বছর বয়সী মেয়েও তার শিকার।আজ তুমি এসব কথা বলছ।কাল যখন তোমার মেয়েকে হিংস্র পশুরা ধরবে,তখন মেয়ের সাথে তোমার মানসম্মানও যাবে।আর একটা কথা মনে রেখো,আমি কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করে আমার মেয়েকে হারাতে চাই না।”
কথাগুলো বলে আমি নীহারিকার ঘরে চলে গেলাম।আমার কথাগুলো শুনে নীহারিকার আব্বু চুপ করে রইল।
এরপর থেকে প্রতিদিন নীহারিকাকে ওর স্কুল ছুটির দিনে কারাতে স্কুলে নিয়ে যাই।আমার মেয়েও অনেক আগ্রহ নিয়ে ক্লাস করে অনেক কিছু শিখছে।যাক, এতদিনে একটু নিশ্চিন্ত হলাম।
একদিন সকালে কলিং বেল বাজছে।আমি দরজা খুলতেই মুহূর্তের মধ্যে চমকে গেলাম।আমার সারা শরীর হিম হয়ে আসছে।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
– “কেমন আছো?ভিতরে আসতে বলবে না?”
– “(কাঁপা কাঁপা গলায়) আপনি!!! আপনি আমার বাসা চিনলেন কি করে?আর এত বছর পর হঠাৎ কেন আসলেন?”
– “(বিশ্রী হাসি দিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে দরজা আটকিয়ে) তোমার বাবার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়েছি।তোমাদের দেখতে মন চাইল তাই চলে আসলাম।”
কথাগুলো বলতে বলতে আমার কাছে এসে হাত ধরতে চাইল।আমি পেছনে সরে চিৎকার করে তাকে বেরিয়ে যেতে বলব আর তখনি কলিং বেল বেজে উঠল।আমি ভয়ে পুরো ঘেমে গিয়েছি।তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দেখি নীহারিকার আব্বু নীহারিকাকে স্কুল থেকে নিয়ে এসেছে।
– “(অবাক দৃষ্টিতে) কি গো!!! এই অসময়ে তুমি হঠাৎ নীহারিকাকে নিয়ে আসলে?”
– “(ক্লান্ত স্বরে) নীহারিকার স্কুলের ম্যাম আমাকে কল দিয়ে বলল নীহারিকার জ্বর আসছে।তাই আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি ওকে বাসায় নিয়ে আসলাম। (লোকটির দিকে তাকিয়ে) কে উনি?”
আমি কিছু বলার আগেই বদমাশটা বলল,
– “আমি তোমার শ্বশুরের ছোটবেলার বন্ধু।তোমাদের দেখতে মন চাইল তাই আমি তোমার শ্বশুরের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে চলে আসলাম।”
– “ভাল করেছেন কাকা।আমাদের বাসায় কয়েকদিন থাকবেন কিন্তু।আচ্ছা আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
এই কথা বলে নীহারিকার আব্বু আমাদের রুমে চলে গেল।আর আমি রাগে গজগজ করতে করতে নীহারিকাকে নিয়ে ওর রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিলাম।
রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর…
– “তুমি ঐ লোকটাকে আমাদের বাসায় কয়েকদিন থাকার জন্যে বললে কেন?”
– “(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে) ঐ লোকটা করে বলছ কেন?উনি তোমার বাবার বন্ধু।তোমার আত্মীয় হয়।তাছাড়া আমার শ্বশুরবাড়ির মেহমান।আমি তো আর তাকে অসম্মান করতে পারি না তাইনা।”
– “(বিরক্তির স্বরে) সবাই সম্মান পাওয়ার যোগ্য না বুঝলে।উনাকে আমার ছোটবেলা থেকেই ভাল লাগে না।এত বছর পর বুইড়া ব্যাডা নিশ্চয়ই কোনো কুমতলব নিয়ে আমাদের বাসায় আসছে।”
– “(রাগান্বিত স্বরে) তুমি মানসিক ডাক্তার দেখাও।তোমার মাথায় আর মনে সমস্যা আছে।শুধু শুধু উল্টাপাল্টা চিন্তা কর।যাও নীহারিকার কাছে ঘুমাতে যাও।ওর অনেক জ্বর।”
– “(চিৎকার করে) তুমি না বললেও আর আমার মেয়ে অসুস্থ না থাকলেও আমি ওর সাথে থাকতাম।বাসায় হায়েনা আসছে আর আমি আমার মেয়েকে একা রাখব?আমার মাথা তো খারাপ হইছে।”
– “(প্রচন্ড রেগে) তোমার মাথা আসলেই খারাপ হয়ে গেছে।পাগল হয়ে গেছ তুমি।যাও তো এখান থেকে।যত্তসব আজাইরা কথাবার্তা।”
কিছুদিন পর…
নীহারিকা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।আজ সে ঐ পিশাচের সাথে স্কুলে গেছে।আমি বারবার বোঝানোর পরও আমার মেয়ে এক প্রকার জিদ করেই তার সাথে গেল।আমাকে সাথে করে নিয়ে গেল না।ও তো কখনও আমার কথার অবাধ্য হয়নি।
দুইদিন ধরে শুধু ঐ অমানুষটার সাথেই গল্প করে।কি জাদু করেছে আমার মেয়েকে আল্লাহ-ই জানে।এদিকে আমি কিছু বোঝাতে গেলেই নীহারিকা আমার উপর রেগে যায় শুধু।
দুঃশ্চিন্তায় আমার আত্মা এখন বের হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।আল্লাহ তুমি আমার মেয়েকে দেখে রেখো।ও তো অবুঝ।এসব ভেবে কান্না করছি শুধু।
হঠাৎ নীহারিকার আব্বুর কল আসল।আমি রিসিভ করতেই চেঁচিয়ে উঠল,
– “নীহারিকা কোথায়?”
– “(আমি অবাক হয়ে) নীহারিকা কোথায় মানে?ও তো ঐ লোকটার সাথে স্কুলে গেছে।”
– “(কান্নাজড়িত স্বরে) ও স্কুলে যায়নি নীলা।ওর ক্লাসের প্রধান শিক্ষিকা আমাকে কল দিয়ে জানালো।চিন্তায় আমার মাথা কাজ করছে না।কোথায় যাবে আমার মেয়েটা?আমি নীহারিকাকে খুঁজতে গেলাম।ফোন রাখছি।”
আমি কথাগুলো শুনেই চিৎকার করে নিচে বসে পড়লাম।আমি ঠিক এই চিন্তাই করছিলাম।আল্লাহ তুমি এইটা কি করলে?না জানি কত কষ্ট দিয়ে ঐ জানোয়ারটা আমার মেয়েকে…..
না না।আমি এসব কি ভাবছি।আমার মেয়ের কিচ্ছু হবে না।ও নিজেকে সেফ করতে জানে।কিন্তু তারপরও আমার এমন লাগছে কেন?এখন আমি কি করব?কোথায় গেলে আমার মেয়েকে পাব?
এসব ভাবতে ভাবতে আমি নীহারিকার আব্বুকে কল দিচ্ছি।একটার পর একটা কল দিয়েই যাচ্ছি কল রিসিভ করছে না।আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে চিন্তায়।এক বার যদি কল রিসিভ করে বলত আমার মেয়েটা ভাল আছে তাহলে আমি চিন্তামুক্ত হতাম।
হঠাৎ নীহারিকার আব্বুর মোবাইল সুইচড অফ বলছে।হায় আল্লাহ!!! আবার তার কোনো বিপদ হল না তো?আমি কি মা,বাবাকে ব্যাপারটা জানাব?তারা তো অনেক দূরে থাকে।তাদের জানালে শুধু শুধু চিন্তা করবে।প্রেশার বেড়ে যাবে।এইদিকে দুই ঘন্টা পার হয়ে গেল কোনো খবর পাচ্ছি না।এখন কি করব আমি।
নাহ্, আর সহ্য হচ্ছে না।পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলতে হবে।
আর তখনি কলিং বেল বেজে উঠল।সাথে সাথে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল।দরজা খোলার সাহস পাচ্ছি না।মনের মধ্যে অদ্ভুত বাজে চিন্তা আর চোখের সামনে শুধু নীহারিকার….
আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে দরজা খুললাম।খুলে দেখি আমার মা মণি,তার আব্বু আর সাথে একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে আছে।
নীহারিকা আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরল।আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি আর চুমু খাচ্ছি।মনে হচ্ছে যেন আমি আবার নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছি।
– “মা!!! মা আমার তুমি কোথায় গিয়েছিলে?ঐ শয়তানটা তোমার কোনো ক্ষতি করেনি তো?তোমার ড্রেসে রক্তের দাগ কিসের?”
পুলিশ অফিসার ঘরে প্রবেশ করে,
– “আপনার মেয়ে অনেক বুদ্ধিমতী।আপনার মেয়েকে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিল।কিন্তু আপনার মেয়ে নিজেকে রক্ষা করেছে এবং আমরাও খুব সহজে অপরাধীকে ধরতে পেরেছি।নীহারিকা নিজে অপরাধীকে শাস্তি দিয়েছে।এখন সে হাসপাতালে আছে।আমি এখন আসি তাহলে।

নীহারিকা মা মণি,তুমি একদিন অনেক বড় পুলিশ অফিসার হয়ে দেশের সেবা করবে আর অপরাধীদের শাস্তি দিবে এই দোয়াই করি।কারণ আমাদের দেশে মানুষের অভাব নেই।কিন্তু ভাল মানুষের অনেক অভাব।”
– “(চোখের জল মুছতে মুছতে) আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ স্যার।আপনি একটু বসুন।আমি চা নিয়ে আসছি।”
– “(মৃদু হেসে) না ভাবি।অন্যদিন এসে খেয়ে যাব।আসি ভাবি।মা মণি,এখন থেকে আম্মু,আব্বুকে ছাড়া আর কারোর সাথে বাহিরে যাবে না কেমন।আসি ভাই।”
পুলিশ অফিসার আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
রাতে ঘুমানোর সময় –
– “সারাদিন সবকিছু কেন যেন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল।আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া যে তোমাদেরকে সহি সালামতে ফিরে পেয়েছি।”
– “(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) মানুষ এতটা নিকৃষ্ট হতে পারে আমার জানা ছিল না।তুমি যদি সেদিন আমাদের মেয়েকে স্কুলে ভর্তি না করাতে তাহলে আজ যে কি হত আমার মেয়েটার সাথে আল্লাহই জানে।আমি যখন অফিস থেকে বের হই সবার আগে ওর স্কুলে যাওয়ার সময়ে যত পার্ক,রেস্টুরেন্ট আছে সব জায়গায় খোঁজা শুরু করি।
তোমার কল যখন রিসিভ করব তখন দেখি অন্য নম্বর থেকে অনেকগুলো মিসড কল।সেখানে কল দিয়ে জানতে পারলাম আমার মেয়ে আর ঐ জানোয়ারটা থানায় আছে।ব্যস এইটুকু শুনেই সেখানে ছুটে গেলাম।আমার মোবাইলে চার্জ ছিল না আর তোমাকে যে জানাব সে সুযোগটা পাইনি। (হাই তুলে) অনেক ঘুম আসছে।নীহারিকাকে দেখে এসে শুয়ে পড়।”
আমি চুপ করে নীহারিকার আব্বুর সব কথা শুনলাম।কিন্তু আজ নীহারিকার আচরণ আমার কাছে অনেক অদ্ভুত মনে হল।ওর চোখেমুখে কোনো ভয় দেখলাম না।আমাকে জড়িয়ে ধরে কোনো কান্না করল না।সারাদিন কারোর সাথে কোনো কথা বলল না।আমার মেয়েকে আমার কাছেই আজ অচেনা মনে হয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে নীহারিকার ঘরে গিয়ে দেখি নীহারিকা বসে আছে।আমি ওর কাছে গিয়ে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি –
– “নীহারিকা।”
– “বল আম্মু।”
– “কি হয়েছে আমাকে বলবে না?”
– “(কিছুক্ষণ চুপ করে) তোমাকে সব বলব বলেই বসে আছি।তোমার মনে আছে আম্মু?কিছুদিন আগে তুমি নানুকে কল দিয়ে ঐ শয়তানটার কথা বলেছিলে নানাভাই কেন তাকে এই বাসার ঠিকানা দিল।”
– “(অবাক হয়ে) হ্যাঁ মনে আছে।কিন্তু তুমি জানলে কি করে মা?তোমার তো তখন অনেক জ্বর ছিল।”
– “(মুচকি হেসে) তখন আমি তোমার সব কথা শুনেছি।আমি তখন তোমাকে ডাকছিলাম তুমি আমার ডাক শুনতে পাওনি।তাই আমি তোমার ঘরে এসেছিলাম।তখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনেছি।তুমি যখন ছোট ছিলে, তখন ঐ কুকুরটা বাহিরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তোমার সাথে প্রায়ই খারাপ কাজ করত জোর করে।তুমি নানুকে অনেকবার বলেছিলে।কিন্তু নানু বিশ্বাস করেনি তাই নানাভাইকেও কিছু জানায়নি।সেদিনও বিশ্বাস করেনি বলে তুমি রাগ করে ফোন রেখে দিয়েছিলে।
তখন আমি আমার ঘরে এসে অনেক কান্না করেছিলাম।সেদিন ঐ বদমাশটা চলে যাবে বলেছিল।কারণ সে তোমাকে আর আমাকে ক্ষতি করার কোনো সুযোগ পাচ্ছিল না আব্বুর ছুটি ছিল বলে।
কিন্তু আমি তাকে যেতে দেইনি।দুইদিন তোমাকে দেখিয়ে ইচ্ছে করে গল্প করতাম তার সাথে।তুমি রাগ করে চলে যাওয়ার পর আবার আমার ঘরে চলে যেতাম।সে অনেক সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমি কোনো সুযোগ দেইনি।”
– “(বিস্মিত হয়ে) তারপর?”
– “(আমার কোলে মাথা রেখে) তোমার সাথে ইচ্ছে করেই খারাপ ব্যবহার করতাম যেন সে আমাকে বিশ্বাস করে।আব্বু আজ অফিসে গেল, আর আমারও সুযোগ এল।তোমার সাথে ঝগড়া করে তাকে নিয়ে বের হই।কিন্তু আমি স্কুলে না গিয়ে আমার কারাতে স্কুলের সাথে থানার কাছাকাছি যাই।
বাসা থেকে স্টিলের স্কেল সাথে করে নিয়ে যাই তাকে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার জন্য।সে এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে আমাকে করবে কি, নিজেই ভয়ে কাবু হয়ে বারবার জিজ্ঞেস করছিল এখানে কেন নিয়ে এসেছি তাকে।আমি তখনি আমার স্কুল ব্যাগ থেকে স্কেলটা বের করে তার চোখ দুটো

নষ্ট করে দিলাম।সে চিৎকার করে মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি করতে লাগল।আর আমি তখন দৌঁড়ে থানায় গিয়ে বলি সে আমাকে এখানে নিয়ে এসে রেপ করার চেষ্টা করেছে তখন আমি নিজেকে বাঁচানোর জন্য এই স্কেল দিয়ে তার চোখ দুটো নষ্ট করে ফেলি।ভাল করেছি না আম্মু তুমি বল।”
বলেই হাসতে লাগল নীহারিকা।এ যেন ওর সাধারণ হাসি না।এ যেন এক হিংস্র হাসি।আমার আট বছর বয়সী মেয়ে এরকম কাজ করতে পারে আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।
– “তাহলে সব তোমার প্ল্যান ছিল?যদি সত্যি সত্যি কোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেত, তখন কি অবস্থা হত এক বার ভেবে দেখেছ?সে বাসা থেকে চলে গেলেই তো আর কোনো ঝামেলা থাকত না।কেন এমন প্ল্যান করলে?”
– “(হাসি থামিয়ে বসে আমার হাত ধরে) আমাদের ম্যাম কি বলত জানো আম্মু?অপরাধীকে বারবার ছাড় দিলে তার অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।তাকে আজ ছেড়ে দিলে সে আবার আসত।আজ আমি,কাল অন্য কেউ তার টার্গেট থাকত।
ম্যাম আরও কি বলেছে জানো?মানুষের পাপ শুরু হয় চোখ দিয়ে।তাই আমি তার চোখ দুটো সারাজীবনের জন্য নষ্ট করে দিয়েছি।যেন জেল থেকে ছাড়া পেলেও আর কখনও কোনো খারাপ কাজ না করতে পারে।
সে বারবার বলছিল সে নির্দোষ।আমাকে কিছু করেনি সে।কিন্তু আমি জানি,আমার সাথে না করলেও আমার মায়ের সাথে করেছে।আমি আজ এত সাহস পেতাম না আম্মু যদি তুমি আমাকে কারাতে স্কুলে ভর্তি না করাতে।তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি আম্মু।আমাকে মাফ করে দিও প্লিজ।আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি আম্মু।অনেক ভালবাসি।”
কথাগুলো বলেই নীহারিকা আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না!!! এখন মনে হচ্ছে আমার সেই আগের অভিমানি,শান্তশিষ্ট,লক্ষ্মী মেয়ে নীহারিকা কাঁদছে।
আজ আমার খুশির দিন।কারণ আমার মেয়ে আমার অতীতের অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছে।হিংস্র মানুষরূপী অমানুষদের চেয়েও অধিক হিংস্র আমার মেয়ে।তবে সেটা নিজেকে,অন্যকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে।
সমাপ্ত
#হিংস্র
# আজমেরী স্বর্ণা

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত