অস্তিত্ব

নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভুলে গেছি বোধহয় ডাইনোসর বিলুপ্তির কিছু যুগ আগে।সবার লগে সবকিছুর তাল মিলাইয়া চলতে গিয়ে মাঝে মাঝে নিজের অস্তিত্ব ভুইলা যেতে শুরু করেছিলাম।
ছোটবেলায় থেকে আমার চেহারা স্বাস্থ্য মোটাগাটা থাকায় প্রচুর খাইতে চাইতাম।খাওনের প্রতি এক ধরনের মোহ কাজ করতো৷ তহন আমি দুনিয়ার অতো কিছু বুঝি না।এলাকার লোকজন দুষ্টামি কইরা ভিমরুলের বাসায় ঢিল ছুড়তে বল্লে কোন কিছু না ভেবেই সোজা ঢিল ছুইড়া দিতাম।

সেই যুগে আম্মার কাছে আমি একদিন গরুর গোশত আর পোলাও খাওনের লাইগা জিদ ধইরা ছিলাম। প্রতিউত্তরে তিনি আমারে কইয়াছিলেন “বাজান! গরুর গোশত খাইলে মানুষের শরীরের ক্যান্সারের কীট বাসা বাধে।মানুষ দুরারোগ্য ব্যধিতে ভোগে।ক্যান্সারের লাহান মরণব্যাধি এই দুনিয়ায় আর একটাও নাই।”
কিন্তু সভ্যতার পরিবর্তনের লগে দুনিয়া থাইকা অনেক কিছুই হারায়া যায় কিন্তু বয়স আমার পোলাপানদের বেলুন ফুলানোর লাহান বাড়তেই ছিল,বাড়তেই ছিল।
আমি ঐদিনের আম্মার কথাটা ঠিকই বুইঝা গেছিলাম ক্যান্সার আমার শরীরে সাধবে না, কারণ ক্যান্সারের চাইতেও কোটি গুণ বেশি ক্ষতিকারক জীবাণুবাহী ভাইরাস আমাদের সংসারে বিরাজমান লোকে যেটাকে নিম্নমধ্যবিত্ত বইলা ডাকে।

বুঝ হওনের পর থাইকা সবসময় আম্মা আমার কানে মাইকিং কইরা জানান দিতো যে “বাজান!তুমি হইতাছো আশরাফুল মাখলুকাতঃসৃষ্টির সেরা জীব।একজন চল্লিশ তলা বিল্ডিংয়ের মালিক এবং বোতাম ছাড়া শার্টখানা পইরা যে ভিক্ষা করে সেও মানুষ; উভয়েই সমান।
আমার কোন স্বাধ,আহ্লাদের বস্তু কিইনা দিতে চাইয়া ব্যর্থ হইলে আম্মারে আমার বারবার খুব করে জিগাইতে মন চাইতো মানুষ যদি সবাই সমান হইতো তাইলে আমাগো এই কষ্ট,গ্লানিবোধ, দুর্দশা,জরাজীর্ণ অবস্থা কেন!আম্মার প্রতি আমার ঐদিন থাইকাই বিশ্বাস উইঠা যায়।

একদিন স্কুল শিক্ষক আমারে মানুষের উদাহরণ দিইতা গিয়া কইয়াছিলো “যার বিবেক আছে এবং যে সবাইরে সমান ভাবে মূল্যায়ন করে সেই মানুষ।”
অথচ সেই দিন বিকেলে উনার ছেলের লগে আমি খেলতে গিয়েছিলাম জন্যি বেদম প্রহার করেছিলো আমার লগে মিশছে বইলা।

সেইদিন থাইকা আমি নিজেরে একটা খাচায় বন্দি পাখি মনে করতাম।কিংবা উড়ন্ত কোন শালিক/বক মনে করতে থাকি। যাদেরকে শিকার করে শিকারীরা প্রতিনিয়ত নিজের উদর ভারি করেছে।
মাঝে মাঝে নিজেরে একুরিয়ামের মাছের লাহান মনে হইতো।যার ভিতরে পানিতে নিজেরে খুব স্বচ্ছ মনে হয়।কিন্তু বাহিরের মানুষ গুলারে লাগে ঝাপসা।
যেখানে কোন কথা কইতে পারি নি,প্রতিবাদ করতে পারি নি।সবকিছুই চোখ বুজে সহ্য করতে হয়।

আমারে নির্বাক কইরা দিয়াছিলো তথাকথিত রয়াল পরিবার মিইলা সংগঠিত সমাজের মানুষজনের বহুরূপী ব্যবহার।সেদিন থাইকা আমি ঐ দূর আকাশে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা তারা দের ন্যায় নিশ্চুপ থাকি।আমি নিজের লগে নিজেই কথা বলে চলেছি কত বছর আগে সেটা আমার মস্তিষ্ক মনে রাখতে পারে নি ।

যেদিন থেইকা আম্মা আর স্যার আমারে মানুষের সংঙা বুঝাইয়া বাস্তবের সাথে কোন কিছু আমারে মিলায়া দেখাইয়া দিতে ব্যর্থ হইয়াছিলো।সেইদিন থাইকা আমি নিজের ভিতরে নিম্নমধ্যবিত্ত ধারণ কইরা জীবনসংগ্রামের পথে চলা শুরু করি। কারণ আমি জানি আমার পরিবার আমারে মানুষের সমতার যে সংঙা শিখাইছে সেটা মায়ের আদরের শিশুকে জোর করিয়ে দুগ্ধ পান করানোর মত।বাস্তবতা তার পুরোটাই উল্টো পিঠ।
মসজিদের হিসাব খাতায় দুই বছরের টাকা পাওনা থাকায় যেদিন থাইকা আমার আব্বারে মহল্লার লোকজন মসজিদে যাইতে নিষেধ করেছিলো।সেইদিন থাইকা আমার পুরো পৃথিবীর প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হয়। সেই অবিশ্বাসের সবটুকুই সমতার ও জনতার প্রতি।

অবিশ্বাস তৈরি হয় মায়ের প্রতি ছেলের,স্যারের প্রতি ছাত্রের, সমাজে প্রতি সাধারণ আমজনতার মানুষের।এখন আমি শুধু একটা বিষয়িনবিশ্বাস করি এবং ধারণ করি আমাকে খুব দ্রুত রয়াল সোসাইটির একজন উচ্চপর্যায়ের সদস্য হইতে হইবে।

#একছয়বাইশ

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত