সন্ধ্যার কিছু আগে, ঠিক বিকেল গড়িয়ে যাওয়ার সময়টাতে ভীষণ মন কেমন করে মল্লিকার। মনে হয় যেন এ জগতে তার কোথাও কেউ নাই! অথচ কার যেন আসার কথা ছিল। অথবা ওরই কোথাও যাবার কথা ছিল! এসব ভেবে ভেবে মল্লিকার খুব কান্না পায়। আজও পাচ্ছিল। সাঁঝের বেলায় বুঝি সবারই এমন মন খারাপ হয়! সূর্য যেমন দিনশেষে মুখ ভার করে ফিরে যায়, তেমনি মনেও কেমন জানি বেলাশেষে ব্যথা বাজে। বুকের ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কেবলই মনে হতে থাকে, বেলা তো পড়ে এলো। অথচ কিছুই করা হলো না! কত কাজ রয়ে গেল বাকি। ভেবে ভেবে নিজের জীবনটাই কেমন খাপছাড়া আর অর্থহীন মনে হতে থাকে মল্লিকার। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে, এই যে আছি, কোথায় আছি? কেন আছি? এখানেই কি থাকার কথা ছিল? নাকি মল্লিকা এমন থাকতে চেয়েছিল? জীবনটা ঠিক কী কাজে লাগল? এই যে এতদিন হয়ে গেল এ সংসারে, তাও কি সংসারটা তার নিজের হয়েছে! একটা পরিবারে জন্ম হলো। বাবা- মা, ভাই- বোনের সঙ্গে বেড়ে উঠল। তারপর একদিন আরেকটা সংসারে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, আজ থেকে এটাই তোমার বাড়ি। এটাই তোমার পরিবার। মানুষগুলোকে দেখিয়ে বলল, এরাই তোমার আপনজন। তাই কি হয়! এতো কি সহজ এক সংসার থেকে এসে আরেকটা সংসারে মিশে যাওয়া!
এই সময়টাতে বাড়ির অন্যেরা ঘুমায়। বিশেষ করে করোনার এই সময়টাতে কারোই সময়ের অভাব হয় না। ব্যবসার অবস্থা খারাপ বলে মল্লিকার স্বামী শিপলুও ঘরেই বেশি থাকে। এমনিতেও শিপলু আজকাল খুব মেজাজী হয়েছে। ওর সঙ্গে তো কথাই বলা যায় না। সব কিছুতেই মেজাজ দেখায়। খেতে বসে অভিযোগ, রান্না খারাপ হয়েছে! এটা ওটা আনতে বললে তখনও চড়া গলায় বলবে, আরে সংসারের খরচ একটু কমাও না। আয় রোজগার তো কমে গেছে। সারাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। সে সব বোঝ কিছু? থাকো তো ঘরে বইসা। দুনিয়ার খবর জানবা কেমনে?
মল্লিকা নিরুচ্চারে বলে, বুঝব না কেন? আমি কি বোধহীন? না হয় আমি বাইরে যাই কম। সেও তো তোমরাই আমাকে ধরে এনে খাঁচায় বন্দি করেছ বলে। আমারও তো স্বপ্ন ছিল একটা কিছু করব। নিজে রোজগার করব। স্বাবলম্বী হব। পরিবারের পাশে দাঁড়াব। সে সব তো তোমরাই হতে দাওনি। বলেছ, সন্তান মানুষ করতে হলে চাকরি করা যাবে না। এও বলেছ, আমার এতো অভাব নেই যে তোমাকে রোজগার করতে হবে। তাহলে আর আমার দোষ কি? মনে মনে গজগজ করে মল্লিকা। আর মুখে বলে, আমি কিছুই আনতে বলব না। যা আছে তাই রান্না করব। কিন্তু খেতে বসে মেজাজ দেখাতে পারবে না। তোমার মেয়ে আর বাবাকেও বলে দিও খেতে বসে প্যানপ্যান না করতে।
তখন শিপলু একটু নরম হয়। বলে, আমি কি তাই বললাম নাকি। যা না হলে চলবে না তা তো আনতে হবেই। শুধু বললাম, খরচটা একটু কমাও। আচ্ছা যাও কমাতে হবে না। যেমন চলছে চলুক।
মেয়েটাও হয়েছে বাবা অন্তঃপ্রাণ। সব সময় বাবার সঙ্গে ঘুরছে- ফিরছে, গল্প করছে। মায়ের কাছে পারতপক্ষে ঘেঁষে না। আর থাকার মধ্যে আছে শ্বশুর। শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর সেও যেন দিন দিন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। এ সব কিছুই সইতে হয় কেবল মল্লিকাকেই। মাঝে মাঝে ভীষণ হাঁফ ধরে যায়। ইচ্ছে করে কোথাও পালিয়ে যেতে। কিন্তু কোথায় যাবে! ভাবতেই চোখ ভিজে আসে। আকাশে চোখ রাখে মল্লিকা। আকাশে মেঘ জমেছে। ঠিক যেভাবে ওর মনেও জমেছে। সুপারি গাছগুলোর মাথার ওপর হঠাৎ করেই যেন অন্ধকার নেমে এলো। এ বছর সুপারিও ধরেছে খুব গাছে। এতো সুপারি তো আর নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা যায় না। বিক্রি করতেই হবে। আত্মীয়- স্বজনদেরও দিতে হবে কিছু। বাড়ির পেছনের তেজপাতা গাছটা পাতার ভারে ভেঙে পড়ছে যেন। তেজপাতাও বিক্রি করা দরকার। দু’ তিনটা পেঁপে গাছে পেঁপেও ধরেছে বিস্তর। সেগুলোরও ব্যবস্থা করতে হবে। উঠোনে একটা কুলগাছ ছিল। বিয়ের পর থেকেই দেখেছে মল্লিকা। মৌসুম এলে এত কুল ধরত গাছে, যে দেখত সেই অবাক হয়ে যেত। কুলের ভারে গাছের ডাল এতটাই নিচে নেমে আসত যে মল্লিকার ছয় বছরের মেয়েও কুল হাত দিয়ে ছিঁড়তে পারত। নিজেরা খাওয়ার পরও পাড়া প্রতিবেশিদের বাসায় দিয়েও শেষ করা যেত না সে কুল। এটাই যেন গাছটার অপরাধ হয়ে দাঁড়াল। মল্লিকার শ্বশুর বছর দুয়েক আগে গাছটা কেটে ফেললেন। শাশুড়ি কপাল চাপড়ে হায় হায় করে উঠলেন। বললেন, এটা তুমি কি করলে! একটা ফলবান গাছ কেটে ফেললে? শ্বশুর নির্বিকার ভঙ্গীতে বললেন, এই কুলের জন্য বাড়িতে চোর ঢুকবে। লাগবে না কুল খাওয়া। কি আর করা। তবু যা কিছু ফল পাকুড়ের গাছ আছে তা দিয়েই বেশ চলে যায় ওদের পরিবারের। বাসায় যে কাজ করে সেই চাচীর কাছে মল্লিকা শুনেছে শাাশুড়ি এগুলো বিক্রি করেই নাকি হাত খরচ চালিয়েছেন। কিপ্টে বুড়ো সারাজীবনই কিপ্টেমি করেছে। নিজের বউকেও টাকা দিয়েছে সাত বার ভেবে তিন বার গুনে। সে সব গল্প মল্লিকা শ্বাশুড়ির কাছেও শুনেছে। তা এখন এসব বিক্রি করলেও টাকা কি বুড়ো নেবে কিনা কে জানে। নিয়ে তো সেই মেয়েকেই দেবে। সারাজীবন কষ্ট করে টাকা জমিয়ে সে টাকা যদি অন্যকেই দিয়ে দিতে হয় তবে কী কাজ টাকা জমিয়ে! আচ্ছা শিপলুও কি তার বাবার মতোই হবে? বা একটু একটু করে হয়ে যাচ্ছে? সেও তো কখনও মল্লিকার কাছে জানতে চায় না তার কী লাগবে? হাত খরচও তেমন দেয় না। প্রয়োজনের সব কিছুই অবশ্য চাওয়ার আগেই চলে আসে। তবু মানুষের চাওয়া কি এটুকুই? তেল, সাবান, শাড়ি, গয়ণা? এর বাইরে কি আর কিছুই চাওয়ার নেই? মল্লিকার কি কাউকে কিছু দিতে ইচ্ছে করে না? নিজের মতো করে কেনাকাটা করতে ইচ্ছে করে না? জীবন যাপণের সব কিছুতেই তো শিপলুরই ইচ্ছেই শেষ কথা। রাতে যে শরীরে শরীর মিশে যাওয়া, সেও তো শিপলু যখন চায়, যতটুকু চায়, যেভাবে চায়- সব কিছু সেভাবেই হয়। মল্লিকার ইচ্ছা- অনিচ্ছা, চাওয়া- পাওয়া সেখানে নিতান্ত গৌণ। কত রাতে শিপলু তার নিজের হয়ে গেলে সরে গেছে। অথচ মল্লিকা অস্বস্তিতে ছটফট করেছে। শিপলুর তাতে কোনও ভ্রক্ষেপ নেই। এ তো রক্ষিতার জীবন। একেক সময় মল্লিকার ইচ্ছে করে সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে। শুধু মেয়েটার কথা ভেবে যেতে পারে না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো বৃষ্টি। বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো মল্লিকা। বৃষ্টির ছাঁট এসে মুখে লাগছে। মল্লিকা মনে মনে প্রার্থনা করে, হে প্রভু বৃষ্টি দাও! খুব বৃষ্টি হোক! সেই বৃষ্টি মুছে দিক অশ্রু, মনের যত গ্লানি।
হঠাৎই বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে কেমন যেন একটা শব্দ কানে আসে মল্লিকার। একটু খেয়াল করতে বোঝা যায় গোঙানির শব্দ। কিন্তু কে এমন গোঙাচ্ছে? কেনই বা গোঙাচ্ছে? তখনই ওর মনে পড়ে যায় শ্বশুরের কথা। শ্বশুরের ঘরের দিতে ছুটে যায় মল্লিকা। দেখতে পায় শ্বশুর নিচে ওপুর হয়ে পড়ে আছে। উঠতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারছে না। তারই মুখ থেকে গোঙানির শব্দ আসছে। কী করব আমি! কয়েক মুহূর্ত ভাবে মল্লিকা। শিপলুকে কি ডাকা উচিত? কিন্তু ঘুম থেকে ডাকলে ও তো খুব চটে যায়। কিন্তু একা কি ও তাকে তুলতে পারবে? হঠাৎই গোঙানি থেমে যায়। মল্লিকার বুকের ভেতর ধক করে ওঠে, বুড়ো মরে গেল নাকি? এখন মরে গেলেও তো আরেক জ্বালা। সারারাত মরা পাহারা দিতে হবে ওকেই। আত্মীয় স্বজনরা আসতে শুরু করবে। শুরু হতে তাদের নানা রকম গল্প, কটাক্ষ। ছেলে কাছে না থাকলে সমস্যা নেই। কিন্তু বউ একটু এদিক ওদিক গেছে তো শুরু হবে তীর্যক মন্তব্য। বউ মরে যাওয়ার পর কত কষ্টেই না ছিল লোকটা। মেয়েও দূরে থাকে। বউ কি আর ঠিক মতো দেখাশোনা করে! আহারে! শরীরে চারটা হাঁড় ছাড়া কিছু তো নেই। ঠিক মতো খেতো না নাকি! আরও কত কি!
মল্লিকা শ্বশুরকে ধরতেই সে নড়ে ওঠে। যাক তাহলে মরেনি। মরা কি এতই সহজ? সংসারের হিসেবটা তো আগে চুকাও। বাথরুম থেকে প্রস্রাবের তীব্র গন্ধ আসছে। যদিও ধরে ধরে বাথরুম পর্যন্ত যেতে পারে। তবু প্রতিদিনই কমোড পর্যন্ত যায় না। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পেচ্ছাব করে দেয়। মল্লিকার মনে হয় এটা যেন সে ইচ্ছে করেই করে। সকালে ছুটা বুয়া এসে কাপড় কেচে বাথরুম ধুয়ে পরিস্কার করে দিয়ে যায়। কিন্তু করোনার জন্য বুয়াকেও বাদ দিতে হয়েছে। সব কিছু এখন বাধ্য হয়ে মল্লিকাকেই করতে হয়। নোংরা কাপড় ধুয়ে বাথরুমও ধুয়ে দিতে হয়। তবে বাবার কাজে শিপলু খুব সাহায্য করে। প্রায়ই সে নিজে বাবার কাপড় ধুয়ে দেয়। বাথরুমও ধুয়ে দেয়। আজও দিয়েছে ছেলেই। তবু পেচ্ছাবের এতো গন্ধ কেন? ওহ এখন তবে বাথরুমেই গিয়েছিল। ফেরার সময় পড়ে গেছে। আহারে বেচারা! কত ঠাটবাট ছিল। বিয়ের পর মল্লিকাই তো দেখেছে। তার কথার বাইরে কারো যাওয়ার উপায় ছিল না। একবার ঈদের পর শিপলুর বন্ধুরা একটা গেট টুগেদারের আয়োজন করেছিল। মল্লিকা- শিপলুর তখন নতুন বিয়ে। বন্ধুরা ওদের বিশেষভাবে দাওয়াত দিয়েছিল। কিন্তু কেন জানি শ্বশুর ওদের যেতে দিলো না। দিলো না যে দিলোই না। বলল, যেতে হলে আমার লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে। এরপর কি আর যাওয়া যায়? এখন মল্লিকার আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। সময় তো ঠিকই চলে যায়। কিন্তু কথাগুলো মনে থাকে। তবে ভালো স্মৃতিও কিছু আছে। শ্বশুর সব সময় বলত, আমার বউমা খুব লক্ষীমন্ত। ও ঘরে আসার পর ঘরের সৌন্দর্য বেড়েছে। বিয়ের পর পাশে বসিয়ে খেতে বসত। মাছের মাথাটা মাঝে মাঝেই বউমার প্লেটে তুলে দিতো। শাশুড়ি আড় চোখে তাকাত। কিন্তু কিছু বলার সাহস ছিল না। আজ মানুষটাকে আর কেউ ভয় পায় না। ভাবতে ভাবতে শ্বশুরকে ধরে তুলতে চেষ্টা করে মল্লিকা। অনেকটা বাচ্চাদের মতোই বুকে আগলে ধরে তুলতে হলো। ধরতেই কেমন যেন বুকের মধ্যে নেতিয়ে পড়ল বৃদ্ধ। আহারে! এভাবে বেঁচে থাকা সত্যিই খুব কষ্ট। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে। রাগি হোক, মেজাজী হোক, মানুষ তো। বয়স্ক মানুষ। মল্লিকা এক ধরণের মায়া অনুভব করে শ্বশুরের প্রতি। অনেক কষ্টে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিতেই বুড়ো খেঁকিয়ে ওঠে, আস্তে! মনে হচ্ছে ধানের বস্তা ফেলছ! ছাইড়া দাও আমারে! আমি একাই পারমু।
ভাঙবে তবু মচকাবে না! মনে মনে বলে মল্লিকা। মুখে বলে, পারলে এতক্ষণ উঠলেন না কেন বাবা!
উঠতাম তো! তুমি আইলা ক্যান? তোমারে কি ডাকছি আমি? বলেই বালিশের নিতে হাত দিয়ে কী যেন খুঁজতে থাকে বৃদ্ধ। মল্লিকা জানতে চায়, কী খোঁজেন বাবা? আমি খুঁইজা দিমু?
না, তোমারে খুঁজতে অইব না। আলমারির চাবি। এখানেই কোথাও আছে।
ক্যান বাবা, আমি খুঁজলে কি আমি সব কিছু নিয়ে নেব? আছে তো টাকা আর মায়ের শাড়ি- গয়না। আমি কিন্তু ও সব চাই না বাবা! ওগুলো আপনি আপনার মেয়েকেই দিয়েন।
জানি! জানি! আমার আলমারির ওপর তোমাগো সবারই নজর! এইগুলা তো আমার মাইয়ারই পাওনা।
তাকেই দিন না বাবা! বিশ্বাস করেন, ও সবের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই।
তাইলে তোমার আমার ওপর এতো রাগ কিসের? তুমি যে আমারে দেখতে পারো না, আমি কি বুঝতে পারি না সেটা?
বুঝতে পারেন বাবা? তাহলে কেন এটা বুঝতে পারেন না, কেন আমার এতো রাগ হয়? আজ শুনবেন বাবা? আমার তো মনে হয় আপনাকে বলাই উচিত। কারণ না বললে আপনি আপনার ভুলগুলো না জেনেই মরে যাবেন। তাই ভুল শুধরানোর সুযোগও আর পাবেন না। অবশ্য এখনো শুধরানোর সময় পাবেন না। তবে জানা থাকুক অন্তত। তাহলে বলি শোনেন বাবা, এই যে আপনি, মা আর আপনার ছেলে মিলে আমার একটা জীবন নষ্ট করে দিলেন, এর জন্য আমি আপনাদের কোনোদিন ক্ষমা করব না।
কি, তোমার জীবন আমরা নষ্ট করছি? ক্যামনে? ছিলা তো গরীব ঘরের মেয়ে। তাও আবার মা মরা। এমন মেয়ে যে আমরা ঘরের বউ করছি এইটাই তো বেশি।
হ্যাঁ আমাকে ধন্য করে দিছেন। মা মরে যাওয়া কি দোষের? আমি কি তারে মেরে ফেলছি? আপনারা তো জানেন আমি লেখাপড়া শিখেছি। ঘরে থেকে আপনাদের সেবা করা আর রান্না করে খাওয়ানোই কি আমার এক মাত্র কাজ? এই সমাজের প্রতিও তো আমার কিছু দায়িত্ব ছিল। আমি দেশের জন্যও কিছু করতে চেয়েছিলাম। এই যে আমার বাবা এখন অবসর নিয়েছেন। আমার আরো একটা বোন আছে। একটা ভাইও আছে। তাদের প্রতিও তো আমার কিছু দায়িত্ব ছিল। নিজের মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য তো আমার কিছু করতে ইচ্ছে করে বাবা। কিন্তু আপনারা আমাকে কিছুই করতে দিলেন না বাবা। চার দেয়ালে বন্দি করে রাখলেন, বুয়া বানিয়ে। চাকরি না হোক অন্য কাজও তো করতে পারতাম আমি।
তা তুমি যাও না! চইলা যাও! তোমারে কি ধইরা রাখছি আমরা?
এখন তো এ কথা বললে চলবে না বাবা! সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। আমার এখন সরকারি চাকরি করার বয়স শেষ। হুট করে বেসরকারি চাকরিও পাওয়া যায় না। তাছাড়া খাঁচায় বন্দি পাখিরে ছাইড়া দিলেও সে উড়ে যায় না, জানেন না? কারন সে উড়তে ভুইলা যায়। আর বিশাল আকাশে উড়তে ভয়ও পায়। আমিও উড়তে ভুলে গেছি। বাইরের পথ- ঘাট সব ভুলে গেছি। এখন আমি একা চলতেও পারব না। এ সব আপনি বুঝবেন না বাবা। আমি যাই আপনাদের নাশতার আয়োজন করি। বলে শ্বশুরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে যায় মল্লিকা। মল্লিকার চোখের জল তখন গাল বেয়ে পড়ছে। মল্লিকা সে জল মোছে না! বরং মন খুলে ঝরঝর করে কাঁদে। তার সে কান্না কেউ দেখে না!