দুপুরে অফিসে বসে স্টুডেন্টদের রেজাল্ট তৈরি করছি। হঠাৎ মোবাইলে স্ত্রীর মেসেজ নোটিফিকেশন পেলাম। ল্যাপটপে কাজ করতে করতেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইনবক্সের মেসেজে চোখ বুলালাম।
স্ত্রী: (একটা ছবি পাঠিয়ে লিখেছে) ‘এটা কার ব্লাউজ?’
পরীক্ষার রেজাল্টের কাজ,তাই গভীর মনোযোগ সেদিকে। তাড়াহুড়ো করে স্ত্রী’র মেসেজটা এক পলক দেখে সাতপাঁচ না ভেবে দায়সারাভাবে লিখে দিলাম, ‘আমার না।’
মিনিট খানেকের ভেতর ফিরতি মেসেজ এল।
স্ত্রী : (রাগের ইমো দিয়ে) ‘তোমার না মানে ?তোমার হবে কেন?এই ব্লাউজ কোথা থেকে আসল বাসায়?
এইবার আকাশ থেকে পড়লাম!ব্লাউজ!!!ল্যাপটপ একপাশে রেখে খুব ভালো করে মোবাইল স্ক্রিনে ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম। কালো রঙের একটা ব্লাউজ, তার মধ্যে সাদা পলকা ডট।পাশে আরও কিছু কাপড় আয়রন করা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।মুহূর্তেই মনে পড়ল-এগুলোতো লন্ড্রি থেকে আনা কাপড়। আমরা দুজনেই চাকরিজীবী বিধায় পুরো সপ্তাহের কাপড়গুলো একসাথে লন্ড্রিতে দেয়া হয়।আসা-যাওয়ার পথে আমিই সেগুলো নিয়ে আসি।কথাটা মনে পড়তেই একটু হালকা বোধ হলো।
মেসেজ়ে লিখলাম, ‘লন্ড্রি থেকে ভুল করে দিয়ে দিয়েছে বোধহয়।অন্য কারও ব্লাউজ হবে।’
নিশ্চিন্তে আবার কাজে মনোযোগ দিতে যাব এমন সময় আবার মেসেজ:
‘এই ব্লাউজ তুমি কোথায় পেয়েছ ?আর এটা আয়রন করতে দিয়েছ কেন?’
নাও ঠেলা!আমি এটা কোথায় পাব?আর কেনোই বা অন্যের ব্লাউজ আয়রন করতে দেব? লন্ড্রি ব্যাটারাই না ভুল করে কার না কার ব্লাউজ আমাদের লন্ড্রির কাপড়ের সাথে গছিয়ে দিয়েছে!
কেয়ারলেস বেকুবের দল! যাহোক, অল্প কথায় ঝামেলা এড়ানোর জন্য সোজা লিখে দিলাম:
‘আমি জানি না।’
ভাবছিলাম ঘটনা শেষ। কিন্তু নাহ! একটু পর আবার স্ত্রী’র মেসেজ:
‘এই জেনি-টা কে?’
এবার মাথার উপর লন্ডন ব্রিজ ভেঙে পড়ল যেন!এখানে ‘জেনি’ আসল কোত্থেকে!
ব্যাপারটা পরিষ্কার হওয়ার জন্য নিজের পাঠানো মেসেজটা খেয়াল করলাম। ওহ!না! আবিষ্কার করলাম তাড়াতাড়ি টাইপ করতে গিয়ে আমি মেসেজ়ে বাংলিশে লিখেছি:
Ami Jeni na!’ (*আসলে Ami Jani Na- লিখতে চেয়েছিলাম)। Jani কীভাবে Jeni হয়ে গেল? আশ্চর্য!
আচ্ছা দাঁড়ান,এটা মোবাইল কিবোর্ডের মাতব্বর ‘অটো কারেকশন’-এর কাজ না তো?সেদিন যেমন স্টুডেন্টদেরকে মেসেজ টাইপ করলাম, ‘তোমাদের গুগল ক্লাস লিংক দিয়ে দিচ্ছি একটু পর।’ মেসেজ পাঠাতে গিয়ে দেখি মাতব্বর ‘অটো কারেকশন’ চাচা সেটা বানিয়ে দিয়েছে, ‘তোমাদের গুগল ক্লাস ‘লিঙ্গ’ (লিঙ্ক) দিয়ে দিচ্ছি একটু পর।’
কি কেলেঙ্কারি হয়ে যেত চিন্তা করেন!
যাহোক, আপাতত সেই কেলেঙ্কারির চিন্তা বাদ। ওদিকে আমার মেসেজের সাথে ‘জেনি’ ম্যাডাম পৌঁছে গেছে বাসায়। নতুন কেলেঙ্কারি এড়াতে তাড়াতাড়ি উত্তর লিখলাম,
‘এটা আমার টাইপিং মিসটেক।ভুলে ‘জেনি’ হয়ে গেছে, ‘জানি’ হবে।’
স্ত্রী’র আমার কথা বিশ্বাস হলো না।
সে লিখল, ‘বিশ্বাস হচ্ছে না।তুমি বাসায় আসো।’
মাথা খারাপ? ব্লাউজ সমস্যা সমাধান না করে আমি বাসায় যাব? এই ‘বাসায় এসো’ সেই ‘বাসায় এসো’ না-
সারাদিন মধুর অপেক্ষা শেষে একে অন্যের সাক্ষাৎ,একসাথে বসে চা-নাস্তা খাওয়া,টিভি দেখা, সারাদিনের কুশলাদি বিনিময়! উহু!
যাহোক,কোনমতে কাজ গুছিয়ে অফিস ছুটির পর বাসার দিকে ছুটলাম। বাসায় যাবার আগে সোজা গেলাম লন্ড্রিতে। লন্ড্রিওয়ালার সামনে দাঁড়িয়ে চট করে মেসেঞ্জারের ছবিটা বের করে কালো-সাদা ব্লাউজটা দেখিয়ে বললাম:
‘ভাই,এটা কি করেছেন ? সর্বনাশ করে ফেলেছেন!
লন্ড্রিওয়ালা ছবি দেখে নির্বিকারভাবে বলল :
‘কি করেছি ভাই? ব্লাউজের আয়রন তো ঠিকই আছে।কোথাও কোন দাগ, পোড়া নাই।’
অস্থিরভাবে বললাম: ‘ভাই! ব্লাউজ তো আয়রন করেননি।দাগ আসবে কোথা থেকে ?আয়রন তো করছেন আমাকে একেবারে ব্লাউজ়ের ভেতর ঢুকিয়ে! এটা কার ব্লাউজ?আমার প্যাকেটে ভরে দিয়েছেন কেন? তাড়াতাড়ি এটা কার ব্লাউজ বলেন।যার জিনিস তাকে ফেরত দেন আর আমাকে উদ্ধার করেন।’
লন্ড্রিওয়ালা বলল, ‘গত কয়েকদিনে ব্লাউজ হারাইছে এমন তো কেউ কয় নাই। এটা এই দোকানের না।আপনার ভুল হইতাছে!’
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।বলতে চাইলাম, ‘তোর দোকান আর ব্লাউজের ঘন্টা…’ তবে বিপদ যেহেতু আমার তাই তাড়াতাড়ি মেজাজ সামলে বললাম :
‘ভাই! আপনাদের না হলেও এটা ফেরত নেন। প্রয়োজনে আপনার মা, বোন,বউ কাউকে দিয়ে দেন এবং স্বীকার করেন আপনার ভুল হয়েছে। শুধু দয়া করে স্বীকার করবেন না যে এই ব্লাউজের মালিকের নাম ‘জেনি’। আমি এক্ষুনি বাসা থেকে ব্লাউজটা এনে দিচ্ছি।
লন্ড্রিওয়ালা পেছন থেকে হতবাক হয়ে বলল,
‘ভাই, কী উল্টাপাল্টা বলতেছেন।এই জেনি’টা কে?’
আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘আমি জেনি না।’
বলেই সোজা বাসার দিকে ছুটলাম। লিফট পার হয়ে বাসার দরজায় পৌঁছে গেছি। কলিংবেল টিপব।স্ত্রী দরজা খুলবে এক্ষুণি।
তারপর কি হবে আমি জেনি না,স্যরি ,সত্যিই জানি না!
ধুর! কি যা তা বলছি! … ব্লাউজ!!!