সাইকো (শেষ পর্ব)

১ম পর্বের লিংক: সাইকো (১ম পর্ব) 
২য় পর্বের লিংক: সাইকো (২য় পর্ব) 
৩য় পর্বের লিংক: সাইকো (৩য় পর্ব) 

(শেষ পর্ব)

এ গল্পের একটি পরিসমাপ্তি দরকার। হেলেন তার সব স্মৃতি হারিয়ে শুধু আলতাফের কথাটুকুই মনে রাখতে পেরেছে। এই রোগ চিকিৎসার বাইরে। তাই হেলেনকে ঘরেই বন্দী করে রাখা হয়েছে। আর আলতাফ কোন এক পাগলা গারদে জীবন যাপন করে যাচ্ছে। তাদের কি দেখা হবে কখনো? নাহ। কোন যুক্তিতেই তাদের আর দেখা হবার সুযোগ নেই। এমনই তো হয়। সত্যিকারের ভালোবাসার সাথে আমাদের কখনো দেখা হয় না। শুধু এর অপেক্ষায় দিনের পর দিন গুনে যাই আমরা।

কিন্তু এমন বিয়োগাত্নক সমাপ্তি পাঠক মেনে নেবেন কেন? তাই একটু অন্য রকম করে এর সমাপ্তি টানা যাক।

পাগলা গারদে আলতাফের মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা খুঁজে পায় নি চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষ। তাই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। আর এদিকে হেলেন একদিন তার ঘর থেকে পালিয়ে গেলো। তার বন্ধ ঘরে খাবার দেওয়ার সময় সে কায়দা করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তারপর পথে নেমে পড়ে সে। দিক বিদিক ছুটতে ছুটতে আকস্মিকভাবে দেখা হয়ে যায় আলতাফের সাথে। ব্যাপারটা যদিও খুবই আশ্চর্যজনক। কিন্তু তা-ই হলো, আলতাফের সাথেই দেখা হয়ে গেলো হেলেনের। এবার আর কোন গণ্ডগোল হলো না। দুজন দুজনকে দেখে ঠিকই চিনতে পারলো।

সেই থেকে ওরা পথেই থাকে, ছিন্নমূল মানুষ যেভাবে জীবন যাপন করে, তাদের জীবনও সেভাবেই কাটতে লাগলো। আলতাফ আদর করে হেলেনকে ভাত খাইয়ে দেয়। এই ভাতের যোগান কোথা থেকে এলো তা আমি বলতে পারবো না। পথে যারা থাকে, এমন কি সে যদি একেবারে বদ্ধ উন্মাদও হয়, তারও কোন না কোন ভাবে খাবার জুটে যায়। নইলে তারা বেঁচে থাকে কিভাবে?

হয়ত এভাবেই আলতাফ আর হেলেনেরও খাবার জুটে যায়। আর আলতাফ আদর করে হেলেনের মুখে ভাত তুলে খাইয়ে দেয়। পলিথিনের মধ্যে অল্প কিছু ভাত। সেই ভাত খেতে খেতে তারা গল্প করে। কী গল্প? যেমন ধরুন, হেলেন জানতে চাইবে, আমরা কি পাগল?

আলতাফ মাথা নেড়ে , হেসে জবাব দেবে, নাহ, আমরা কেন পাগল হতে যাবো।আমরা সুস্থ। পাগল তো ওরা।

আংগুল তুলে দেখাবে পথের মানুষগুলোকে, বলবে, দেখেছো, কিভাবে ছুটে যাচ্ছে? একদম পাগলের মত।

তারপর দুজনে মিলে হাসবে, চারপাশের মানুষের পাগলামি দেখে।

ঠিক তখনি ছিন্নমূল আরো দুজন মানুষ এসে দাঁড়াবে ওদের সামনে। এদের মধ্যে একজন নারী আরেকজন পুরুষ । নারীটি ক্ষিপ্ত হয়ে বলবে, “রঙ দেহো, পাগলের! ঐ সর এইহান থন। এইডা আমার জায়গা। রাস্তা অইসে দেইখাই মনে করছোত, এইহানে বইলেই তোগো জায়গা অইয়া যাইবো? এইডা আমার জায়গা। পুরান পাগলেই ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি! সর , সর এইহান থন!
তার সাথের পুরুষটি বলবে, পাগলীর রঙ দেহো না! কেমনে ঢঙ করে পাগলের লগে! এই তোরা দুজনেই ভাগ এইহানের থে!

আলতাফ আর হেলেন তাদের শেষ জায়গাটুকুও ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।দুজন হাত ধরা ধরি করে হাসতে হাসতে হাঁটতে থাকে সামনের দিকে। চরম অনিশ্চয়তায় ভরা বাকিটা পথ। তবুও তারা একেবারে নিশ্চিন্ত। একদম সর্বসান্ত অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী , সবচেয়ে সুখী ওরাই। এমন সুখী শুধুমাত্র পাগলেরাই হতে পারে।

সমাপ্ত

১ম পর্বের লিংক: সাইকো (১ম পর্ব) 
২য় পর্বের লিংক: সাইকো (২য় পর্ব) 
৩য় পর্বের লিংক: সাইকো (৩য় পর্ব) 

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত