নষ্ট সকাল

সে বিছানার চাদর ঠিক করছে। বাচ্চাটা এর মধ্যে বারবার বিছানায় গিয়ে উঠছে। সে একের পর এক বকাবকি করছে বাচ্চাকে। বাচ্চা ভয় পেয়ে দৌড়ে আমার কাছে চলে আসছে।

আমি আজ হতে একটু পড়াশোনা করব ভাবছিলাম। তাই পড়তে বসা।এর মধ্যে বাচ্চার উপর বার বার এই চিল্লানো কানে এসে লাগে।নিশ্চয়ই বাচ্চাটার আরো বেশি খারাপ লাগছে।
এইগুলো তাকে অনেকবার বুঝিয়েছি।
লাভ হয় নি। সে সারাদিন বাচ্চার উপর জোরে জোরে চিল্লাবে,আর বাচ্চা ভয়ে আমার কাছে চলে আসবে। কাল রাতে বাচ্চাটা মায়ের বুকেই ছিল। বুকের মধ্যে মা এমন একটা চিল্লান দিল বাচ্চা আমার কাছে চলে আসলো, রাতে আমার পাশেই ঘুমালো, আর মায়ের কাছে গেলোনা।

আজকে সকালের এই অবস্থা আর নিতে পারলাম না,আমিও একটা জোরে চিল্লান দিলাম বাচ্চার উপর। বাচ্চা আমার চিল্লান খেয়ে আমার কাছেই ধেয়ে আসলো, তার মায়ের কাছে গেলো না,সেটা তার কাছে আর নিরাপদ অবস্থান নয়।
আমিও তাকে ঠেলে দিলাম, সে অন্য রুমে গিয়ে নিশ্বব্দে কাদতে লাগলো।

এর মধ্যে তার মা আমার উপর চ্যতে উঠলো। আমি বাসায় কোনো কাজ করি না,রান্না করি না এসব বলে বললো আমার সাথে সংসার করা যাবে না,ডিভোর্স দিবে।

আমি বললাম, আমাদের কাজের মধ্যে কিছুটা ভাগ আছে। আমি বাইরে কাজ করি,তুমি ঘরে কাজ করো। আমার রান্না ভালো না,আগে রান্না করছি,তুমি খাইতে পারো নাই। আমার রান্নাটা একটা অপচয়।
যদিও সে কম খাবার অপচয় করে না,তবুও রান্নার দায়িত্ব টা যেহেতু তার উপর সেটা নিয়ে আমি কথা বলি না।

বাসায় বুয়া কাজ করছে,এমন না যে তাকে সব করতে হয়। বাড়িঘর মোছা,ঝাড়ু দেয়া,কাপড় ধোয়া, মাঝেমধ্যে তরকারি কেটে কুটে দেওয়া এসব বুয়াই করে। তার কাজ হলো আমাদের তিনজনের জন্য রান্না করা,বাচ্চাটাকে সকালে এবং দুপুরে খাওয়ানো, রাতে আমি খাওয়াই,এবং গোসল করানো।

এইটুকু কাজ করতে গিয়েই সে একবার আমার বাবাকে গালিগালাজ করছে,একবার আমার মায়ের কাপড় খুলে নিচ্ছে,একবার আমার মেয়ের হৃৎপিণ্ড ধরে টান দিচ্ছে, একবার আমার ভেতর টা আঘাতে জর্জরিত করছে।

কেন সে এই সমন্বয় টা করতে পারছে না?
তার রুটিন টা অনেকটা এরকম ঃ বারোটার দিকে ঘুম থেকে উঠা। উঠে তারা দুজনের জন্য দুইটা পরাটা বানানো, সকালের নাশতা করতে করতে দুইজনের দুপুর একটা বাজলো।
এরপর সে পড়তে বসে। তার সামনে হাইকোর্ট ডিভিশনের ভাইভা পরীক্ষা।
তিনটার দিকে সে রান্নাঘরে যায়,রান্না করতে করতে চার পাচটা,বাচ্চাকে গোসল করে খাইতে লাগে ছয়টা এবং এরপর তারা ঘুমাতে যায়।
আমি সকাল ছয়টায় বের হই বাসা থেকে।
আমার অফিসে যাইতে আসতে প্রায় সত্তর কিলোমিটার পথ বাসে যেতে হয়। আসতে আসতে বাজে রাত আটটা।
আমি আসার আগে আগে তারা ঘুম থেকে উঠে,অনেক সময় কিছু নাশতা থাকে,অনেক সময় আমি নিয়ে আসি,অনেক সময় কিছু তৈরি হয় না।
এরপর সে মুভি দেখে,ফেসবুক দেখে,বাসায় কথা বলে এবং বাচ্চাটা গায়ের সাথে লাগলেই সে চিল্লায়।
যেহেতু আমাকে ভোরে উঠতে হয়,আমরা এগারোটার দিকে খাই এবং বাচ্চাটাকে আমিই খাওয়াই। বাচ্চাটা তার হাতে খেতে চায় না কারণ একটু এদিক ওদিক হলেই সে জোরেশোরে বকা খায়।

যাইহোক, আমার কিছু পড়াশোনা দরকার। কিন্তু এই মানুষকে পড়তে গিয়ে আমার বইয়ের পড়া আর হলো না।

যাই হোক,পড়ার আর ইচ্ছা নাই।
নিচে থেকে ঘুরে আসি।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত