সোলমেট

তুষির কথা শুনে একেবারে আকাশ থেকে পড়লো মনোয়ার।
অবশ্য ওই মুহূর্তে মনোয়ারের মাথায় আকাশ থেকে পড়ার উপমাটা আসেনি। মুহূর্তটার সঙ্গে কীসের তুলনা দেওয়া যায় এটা চিন্তার করা মতো অবসরই তখন সে পায়নি। সবচেয়ে বড় কথা মনোয়ার ওই ধরনের লোকও না। মনোয়ার সোজা চিন্তার লোক, সরল পথে চলাই তার অভ্যাস। আকাশ থেকে পড়াটা এখন আর অতো বড় ঘটনাও নেই। যদিও আকাশ থেকে পড়া ক্যাফে ম্যাঙ্গোতে বসে মনোয়ারের সামনে তখন আর কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু সে নিজেকে ও তুষিকে অবাক করে দিয়ে শুধু বলে, কী বললা?
একটু চাপা স্বরে কথাটা বলে সে। বলতে গিয়ে একটু ঢোকও গেলে। কথাটা বলে মনোয়ার জুলজুল করে অসহায়ের মতো তুষির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখনও মেয়েটার মেজাজ-মর্জি সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়নি। ফলে, ক্যাফেতে বসে তুষি যদি চিৎকার দিয়ে বলে, এই বাচ্চার বাপ তুমি। কিংবা একটু স্বর চড়া করেই বলে তবে আশপাশের ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলারা এই টেবিলের দিকে তাকাবে। তখন কই যাবে মনোয়ার? কোথায় মুখ লুকাবে? যথেষ্ট ভদ্র দুই ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলাকে তখন আশপাশের লোকজনের আর ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা মনে হবে না। ২৪ বছর ধরে সাহেবদের দেশে থেকে এসে ঢাকা শহরে যদি এইভাবে তার ইজ্জত চলে যায় তবে নিজের কাছে সে মুখ দেখাবে কী করে? তারা হয়তো মুখে কিছুই বলবে না। কিন্তু মনে মনে বলবে, কোন বস্তি থেকে এসেছে এরা? আজকাল এই লোকগুলাও ক্যাফে ম্যাঙ্গোতে চিনি ছাড়া লাতে খায়!
এই উদ্বেগ থেকে মনোয়ার একটু চাপা গলায় জিজ্ঞেস করে। তুষির কথাটা সে স্পষ্ট শুনেছে। তবু তার মনে হচ্ছে তুষি যেন কথাটা বলেনি। যেন অন্য কারো মুখ থেকে বা গায়েবী কোনো উৎস থেকে কথাটা ভেসে এসেছে এটাই তার কয়েক সেকেন্ড ধরে মনে হচ্ছিল। মাথাটায় একটা গরম ভাপও সে অনুভব করছিল। তাই সে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তুষিকে আবার জিজ্ঞেস করে-
কী বললা?
তুষি মনে হয় মনোয়ারের কণ্ঠস্বরের টেনশনটা ধরতে পারলো। আশপাশে তাকিয়ে ভরা কাপের বড় লাতেতে চুমুক দিয়ে বললো, আমার পেটের বাচ্চার বাবা তুমি। তোমার বাচ্চার মা হতে যাচ্ছি আমি, মনোয়ার।
মনোয়ার একটা বিতর্ক শুরু করবে বলে ভাবলো। তার মনে হলো, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে তুষির কথা কোনো যুক্তিতেই টিকবে না। দুনিয়ার কোনো শক্তিই এটা প্রমাণ করতে পারবে না যে তুষির পেটের বাচ্চার বাবা সে। দরকার হলে সে ডিএনএ টেস্ট পর্যন্ত যাবে। মনোয়ার ভাবলো, এই বাচ্চাটা তার হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই যে নাই, এটাই সে এখন তুষিকে ধীরে ধীরে বোঝাবে। কিন্তু তুষির মুখের দিকে তাকিয়ে সে পুরো দমে গেল।
মেয়েটা সুন্দরী আছে, মনোয়ার মনে মনে ভাবলো। এদের বাড়ি কী পাবনার দিকে? যদিও মনোয়ার ভাল করে জানে তুষিদের বাড়ি ঢাকাতেই। ঢাকা মানে কেরানিগঞ্জ। কেরানিগঞ্জেই তুষির দাদার বাড়ি। নানা বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। তথ্যগতভাবে ভুল এবং সিচুয়েশন অনুযায়ী অপ্রাসঙ্গিক হলেও এটাই তার মনে হলো। কেননা তুষির মুখের আদলের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের খুব মিল। বিশেষ করে চোখ দুইটা একদম সুচিত্রা সেনের মতো। তার মনে পড়লো, প্রথম এই চোখের ছবি দেখে তুষির প্রেমে পড়েছিল মনোয়ার। প্রায় দুই বছর ধরে তুষির সঙ্গে অনলাইনে প্রেম করেছে। ফোনে কথা বলেছে। মেসেঞ্জারে চ্যাট করেছে। কিন্তু সামনাসামনি দেখে মনে হচ্ছে, দুই বছরের প্রেমেও যেন তুষিকে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি সে। তুষি যে এতটা মুডি আর রাগী সেটা যেন সে নতুন করে জানলো। অথচ অনলাইনে তো তাকে খুব জলি মনে হতো। মনে হতো কত সহজ একটা মেয়ে। একদম তার মতোই। বিশেষ করে সোলমেট কেন্দ্রিক আলোচনায় তুষির সঙ্গে নিজের গভীর মিল দেখে তার মনে হয়েছিল, সারাজীবন ধরে সে আসলে তুষির জন্যই অপেক্ষা করছিল। তুষিরও তখন একই কথা মনে হয়েছিল এবং সেটা তখন মনোয়ারকে বলেওছিল। কিন্তু আজ দ্বিতীয়বার ক্যাফেতে দেখা হওয়ার পর মনোয়ার যেন তুষির মধ্যে ডক্টর জেকিলের বদলে মিস্টার হাইডের দেখা পেয়েছে। তার মনে যে অদ্ভূত সব প্রশ্ন ঘুরছে এটা তুষি আন্দাজ করতে পারলো। তাই সে কণ্ঠস্বর অনেক নিচু করে বললো, শোনো, মনোয়ার তুমি মনে হয় সোলমেট ব্যাপারটা ধরতে পারো নাই।
তার এই নিচু স্বরে মনোয়ার স্বস্তি ও নিরাপত্তাবোধ ফিরে পেল।
আমি যেদিন থেকে তোমার প্রেমে পড়েছি সেদিন থেকে এক সেকেন্ডের জন্যও আমার মনে হয় নাই তুমি দূরে আছো। তুমি সব সময় আমার সঙ্গেই ছিলা। আমরা হাজার মাইল দূর থেকে প্রেম করেছি এটা সত্য, কিন্তু মনে হয়েছে তুমি সবসময় আমার পাশে বসে আছো। আমি তোমাকে আমার পাশে দেখতে পেতাম। দূর থেকে যখন আলিঙ্গন করেছি তখন মনে হয়েছে সত্যিই তোমাকে আলিঙ্গন করেছি। চুমো যখন খেয়েছি মনে হয়েছে রিয়েল চুমো খাচ্ছি। তুমিও তো বারবার বলতা তুমি রিয়েল ফিলিং পাচ্ছো। মিথ্যা করে বলতা কি না জানি না। কিন্তু বিলিভ মি, আমার কাছে এই দূরত্বটা কিছু ছিল না। অনলাইনে আমরা সেক্স করেছি, এটা তো সত্যি? নাকি সেটাও অস্বীকার করবা? অনলাইনে সেক্স করে যদি আমার পেটে বাচ্চা আসে সে বাচ্চার পিতৃপরিচয় তুমি মেনে নিবা না? নাকি তুমি সেইসব পুরুষের মতো যারা সেক্স করে কিন্তু দায়িত্ব নিতে বললে কেটে পড়ে?
মনোয়ার অবশ্যই সেসব পুরুষের দলে পড়তে চায় না। ফলে সে নির্বাক হয়ে থাকে। মুখে কোনো উত্তর না দিলেও মনে মনে বলে, এগুলো তো সবই সত্য। কিন্তু সত্যটা সে মন থেকে মেনে নিতে পারছে না কেন? কবি হয়তো এ কারণেই বলেছেন, সত্য যে কঠিন…। মনোয়ার চুপ থেকে তুষির কথা শুনে যায়। মনোয়ারের মাথায় ঘুরতে থাকে তার জীবনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী। তুষির সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার আগের দিন মনোয়ার লন্ডন থেকে ঢাকায় নেমেছে। আগে থেকেই ওরা হাজার বার আলোচনা করেছিল, কীভাবে ক্যাফে ম্যাঙ্গোতেই তাদের দেখা হবে। কেননা, এটা তুষির বাসা থেকে দূরে। পরিচিত লোক এখানেও থাকতে পারে। কারণ ঢাকা শহর অত্যন্ত ছোট। কিন্তু সম্ভাবনাটা একটু কমিয়ে আনলে মন্দ কী। দেখা হলেই ওরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরবে কি না এটা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তুষি বলেছে, বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় দেখা হলে জড়িয়ে ধরা ঠিক হবে না। এটা ঠিক এ ধরনের ক্যাফেতে ধানমন্ডি এলাকার প্রগতিশীল লোকেরাই কফি খায়। অন্য এলাকা থেকে যারা আসে তারাও বেশ প্রগতিশীল। তারপরও পরিচিত যদি কেউ বেঁধে যায়। তারা কিছু একটা মনে করতে পারে। তাই দেখা হলেই জড়িয়ে ধরা ঠিক হবে না। বরং মনোয়ার আর তুষি দিনতারিখ ঠিক করে একটা ফাইভস্টার হোটেলে যাবে। সেখানেই সারাদিন কাটাবে। যা হবার তা সেখানেই হবে। সোলমেট ব্যাপারটা নিয়েও তাদের দিনের পর দিন আলোচনা হয়েছে। মনোয়ার তুষিকে জিজ্ঞেস করেছে, সে যে সারাজীবন ধরে সোলমেটের জন্য অপেক্ষা করছিল সেটা তো ঠিক? এখন সোলমেটকে সে পেয়ে গেলে জীবন নিয়ে সে নতুন করে ভাববে কি না। জীবনকে নতুন করে সাজাবে কি না। তুষি বলেছে, তার বহু দিনের ইচ্ছা সোলমেটকেই বিয়ে করবে। জীবনের অনেক সময় তো গেল। আর একটা দিনও সে অসুখী অবস্থায় কাটাতে চায় না। এমন লোকের সঙ্গে বাকী জীবনটা কাটাতে চায়, যাকে মুখ ফুটেও বলতে হবে না কিছু। তুষি মনে মনে যা ভাববে মনোয়ার তা বুঝে নেবে। মনোয়ারও বলেছে, এইরকম একটা স্বর্গীয় সম্পর্কে মেতে থেকে বাকী জীবনটা সে কাটাতে চায়।
পরিকল্পনা অনুসারে মনোয়ার তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে।
কীভাবে কথাটা তুলবে এ নিয়ে এক বছর ধরে নানা চিন্তা করছিল। কিন্তু শেষে তার মনে হলো, জীবনের অনেকগুলো বছর তো নিজের ইচ্ছার বাইরেই কাটিয়েছে। প্রেম কী, তা তো জীবনে জানতেও পারেনি। তার তো মনে হয়েছে তুষিকে যেমন মইন কোনো একটা দিনের জন্য বুঝতে পারেনি তেমনিভাবে সুমাইয়াও তাকে কোনোদিন বুঝতে পারেনি। সোলমেট যখন খুঁজেই পেয়েছে তখন আর দেরি কেন? তাই সে সুমাইয়াকে পার্কে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে বলেছে কথাগুলো। বলার আগে তুষির পরামর্শ মতো পুরো বক্তব্য লিখে সেগুলো তাকে পাঠিয়েছে। কয়েকবার মকশোও করেছে। সে অনুসারে সে বলতে শুরু করলো, দেখো সুমাইয়া, আমাদের বিয়ের তো অনেক বছর হয়ে গেল। কিন্তু তুমিও জানো, আমিও জানি, বিয়ের আগে আমরা ঠিক নিজেদের চিনতাম না। পরিবারের ইচ্ছায় আমাদের বিয়ে হয়। সিলেটি কালচারে এটাই স্বাভাবিক ছিল। তুমি ছিলে সিলেটের সেরা সুন্দরী। আমি লন্ডনে থাকতাম। আমাদের বিয়ে হয়েছে পরিবারের ইচ্ছায়। সুন্দর একটা পারিবারিক জীবন আমরা কাটিয়েছি। কিন্তু যে জিনিশটা আমাদের মধ্যে হয়নি সেটা হলো আত্মার সংযোগ। বাড়ি, গাড়ি, বাচ্চা হয়েছে। ওপর থেকে দেখলে আমরা সুখী দম্পতি। আমাদের অভাব নেই। ব্যবসা ভাল চলছে। কিন্তু, আমাদের প্রেম হয়নি। উই আর নট একচুয়ালি মেড ফর ইচ আদার।
সুমাইয়া প্রথমে অবাক হয়ে মনোয়ারের দিকে তাকিয়েছিল। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে তার কথা মন দিয়ে শুনতে লাগলো।
বললো, এটাই কি সোলমেট?
সুমাইয়ার প্রতিক্রিয়ার একটু হতচকিত মনোয়ার বললো কোনটা। সুমাইয়ার মুখে সোলমেট শব্দটা শুনবে এটা তার মাথায় ছিল না। বললো, কোনটা।
সুমাইয়া বললো, মেড ফর ইচ আদার?
মনোয়ার বললো, ইয়েস অফকোর্স।
এটা একটা হেভেনলি রিলেশন। প্রত্যেক মানুষের একটা জোড়া থাকে। সারাজীবন ধরে সেই জোড়ার ছেলে বা মেয়েটিকে তারা খুঁজতে থাকে। কেউ সারাজীবনেও পায় না। কেউ বা পায়। কিন্তু যখন পায় তখন সবকিছু ছেড়ে তার কাছে ছুটে যাবার জন্য সে আকুল হয়ে যায়?
আপনি পেয়েছেন?
সেটা বলতেই তোমাকে এখানে নিয়ে এলাম। সে ঢাকায় থাকে। আমি শীঘ্রই ঢাকা যাবো। ঢাকা গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করবো। বিয়ে করে তাকে লন্ডনে নিয়ে আসতে পারি। আবার কোম্পানিগঞ্জেও যেতে পারি। তোমাকে ফরমালি জানালাম।
সুমাইয়া বললো, আচ্ছা।
মনোয়ার বললো, তোমার কি আর কিছু বলার নাই?
না।
সুমাইয়ার মনে হলো, মনোয়ার হয়তো অফিশিয়ালি বা আনঅফিশিয়ালি সেকেন্ড ম্যারেজ টাইপের কিছু একটা করতে যাচ্ছে। সেটা নিয়ে তার আপত্তি আছে। কিন্তু সে কিছুই বলতে চায় না। মনোয়ারের প্রতি একটা তীব্র খুনে রাগ সে পুষে আসছে। সুমাইয়া চায়, তার দৌড়টা দেখতে। বেশ কিছুদিন ধরে মনোয়ার নানা অভিযোগ করে। একটা খারাপ কথাও বলে। তার মনে হলো, এই রিলেটেড কিছু একটা খুঁজতেই মনোয়ার দেশে যাচ্ছে।
কথাটা মুখে না বললেও সুমাইয়ার মনে হয়, তার ব্রেস্ট যে সাইজে বেশ বড় হয়ে গেছে এ নিয়ে সে ভীষণ অসন্তুষ্ট। মনোয়ার একদিন বলছিল, এগুলো তো আর কন্ট্রোলে রাখা যায় না। তার মনে হয়েছিল, সেদিনই যদি সে মরে যেতে পারতো। মনোয়ার দেশে যাবার কথা বললে সে তার মনে হয় সে এটাই চেয়েছিল।
সুমাইয়া মনে মনে জিজ্ঞেস করে, আপনার সোলমেটের ব্রেস্ট কি পারফেক্ট সাইজে আছে? কন্ট্রোলে নিতে পারবেন?
কিন্তু ভাবলো মুখে বলে এই খোঁটাটা এখন না দিলেও চলে। বেচারার মাথায় হয়তো এখনও ওই চিন্তাটা আসেনি। মনোয়ার যে ভাল লোক, তার মন সে সরল এ বিষয়ে সুমাইয়া প্রায় নিশ্চিত। সুমাইয়ার মনে হয়, ওই মেয়ের ব্রেস্ট যদি সুমাইয়ার মতো হয় তবে মনোয়ার খুবই হতাশ হবে। ফলে, এই বিষয়ে তাকে সতর্ক করাই তার কর্তব্য। কিন্তু কথাটা সে তুলতে পারে না। মনোয়ারের পথ আটকানোর কোনো ইচ্ছা তার নেই। তার বরং মনে হয়, মনোয়ার হতাশ হয়ে দেশ থেকে ফিরে এলে সে খুশী থাকবে। নিজের ব্রেস্ট নিয়ে তার সমালোচনা সে এক সেকেন্ডের জন্যও সহ্য করতে পারেনি। ফলে, মনোয়ার দ্বিতীয় বিয়ে করলেও সে বাধা দেবে না এটাই তার মনোভাব। তাই সুমাইয়া কম কথায় আলাপটা সারার সিদ্ধান্ত নিল।
অন্যদিকে মনোয়ারের চোখ তখন ভিজে যাচ্ছিল। আরমানকে দেখে রেখো, আর বিজনেসের দিকে মন দিও। এমনও হতে পারে ছোটখাট একটা চাকরি নিয়ে আমি ঢাকায়ও থেকে যেতে পারি। কিংবা সিলেট গিয়ে কৃষিকাজও করতে পারি।
সুমাইয়া বললো, আচ্ছা।
জীবন সম্পর্কে সুমাইয়ার নিজস্ব বোঝাপড়া আছে। সেই বোঝপড়াটা বাস্তব জীবনের জটিলতার বাইরে বাইরে ঘোরে। জিজ্ঞেস করলো, টিকেট কি কাটা হয়েছে? লাগেজ গোছানো হয়নি এটা সে জানে।
বললো, লাগেজও কি গুছিয়ে দিতে হবে?
সুমাইয়ার এই প্রতিক্রিয়ায় মনোয়ার জীবনে প্রথমবারের মতো ভাবতে বসলো, সুমাইয়া কি কখনো তার সোলমেট হতে পারতো? তুষিকে সুমাইয়া সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছে। ভাল গৃহিনী, সন্তানের ভাল মা। কিন্তু মনোয়ারকে সে ঠিক বোঝে না। বোঝার কোনোা চেষ্টাই তার মধ্যে নাই। মনোয়ারের আত্মিক ও হৃদয়বৃত্তিক দিকটাকে সে কখনো গুরুত্ব দিতে চায় না। সে তার ওয়ার্ল্ড নিয়ে ব্যস্ত। মনোয়ারের পছন্দ গ্রিক ফিলোসফি। কিন্তু গ্রিক ফিলোসফি নিয়ে সুমাইয়ার কোনো চিন্তা নেই। এদিক দিয়ে তুষি একেবারেই পারফেক্ট। নিজে ইকোনোমিক্স পড়েও গ্রিক ফিলোসফি নিয়ে দারুণ জানাশোনা। তুষির কথা শুনলে বরং মনে হয় কোনো এক সময় সে হয়তো এরিস্টোটল বা সক্রেটিসের বউ ছিল। মনে মনে এরকম একটা মেয়েকেই সারাজীবন ধরে খুঁজছিল সে। সবচেয়ে বড় কথা, তুষি যখন তাকে প্রথমবার ন্যুড পাঠিয়েছিল তখনই সে দেখে নিয়েছিল তার ব্রেস্টের সাইজ। একেবারে পারফেক্ট। ঠিক ছোটও নয়, আবার বড়ও নয়। হাতের মুঠোয় এঁটে যায়। তার এও মনে হয়েছিল, এই স্তনের জন্য সে মরেও যেতে পারে।
কথামতো প্রথম দিন ক্যাফেতে তুষির সঙ্গে দেখা করার পর মনোয়ার বলেছিল, সে একেবারেই লন্ডন ছেড়ে চলে এসেছে। সেদিন তারা লাতে আর অরিজিনাল ওয়েফেল উইথ হানি নিয়েছিল। মনোয়ার বলেছিল, এটা তার লাঞ্চ। তুষি বলেছিল, লাঞ্চটা সে করতে চায় না। কারণ তার বমিবমি লাগছে। মনোয়ার ঠিক বুঝতে পারছিল না, তুষির কেন বমি বমি লাগছে। সে একবার ভাবছিল, অনলাইনে তাকে যেমন সিরিয়াস লাগে সেরকম সিরিয়াস হয়তো বাস্তবে লাগছে না। তাই হয়তো তুষি খানিকটা অস্বস্তিতে আছে। নতুন লোকের সঙ্গে প্রেম করতে গেলে অনেকের এনজাইটি হয়, সেটা থেকেও বমি বমি ভাব হতে পারে। তাকে সময় দিতে হবে। এমনিতেও তার হাতে অফুরন্ত সময়। পাউন্ডও পর্যাপ্ত নিয়ে এসেছে। সুমাইয়াকে বললে, সে আরও পাঠাবে। কিন্তু কথা সেটা নয়। কথা হলো, তুষি মেয়েটা অনেক সেক্সি। মনোয়ার ভাবে সে তো ফাইভস্টারেই উঠেছে। তুষিকে তার রুমে আজই যেতে বলবে কি না। তাকে মনোয়ারের চাই ই চাই।
মনোয়ার বললো, বুঝলা, জীবনের অর্ধেকের বেশিটাই তো কাটিয়ে দিলাম। তোমারও বলতে গেলে অর্ধেকই গেল। আত্মার চাওয়াপাওয়ার হিসাবটা এবার মিলিয়ে নিলেই হয়। আমি তো তোমাকে আগেই জানিয়েছি, তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তোমার বিষয়ে সুমাইয়াকেও সব জানিয়ে এসেছি। সো কোনো জটিলতা নেই। এখন তুমি বলো, বিয়ে করে তুমি আমার সঙ্গে লন্ডন যেতে চাও নাকি ঢাকায় থাকতে চাও নাকি কোম্পানিগঞ্জ? আমরা দুজন মিলে খামার করবো। গরু, মুরগী, হাঁস পালবো। মাছের পুকুর করবো। অর্গানিক সবজি চাষ করবো। সব দেশি হবে।
তুষি সব শোনে আর হাসে। বলে, মনোয়ার তুমি এত নাইভ। নাইভ কথাটা অবশ্য তুষির মুখে নতুন নয়। আগে থেকেই মনোয়ারকে সে নাইভ বলে। মনোয়ার যখন চ্যাটে তাকে আদর করতে থাকে তখন তুষি তার আবেগের আতিশয্যে অস্থির হয়ে যায়। বলে, তুমি এতো নাইভ।
মনোয়ার বলে, নাইভ বললা কেন?
এটা কিন্তু খারাপ না। জানো সারাজীবন তোমার মতো নাইভ একটা পুরুষের জন্যই আমার প্রতীক্ষা ছিল।
প্রথম দিন ক্যাফেতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৭ ঘণ্টা কাটানোর পর মনোয়ার যখন তুষিকে রিকশায় তুলে দেয়। রিকশাঅলা প্যাডেলে একটা চাপ দিয়ে রিকশাটাকে একটু এগিয়ে নিলে তুষি বলে, মনোয়ার, আমি প্রেগন্যান্ট।
মনোয়ার বলতে চায়, কী বললা?
কিন্তু তখনই তার মনে হয়, এই প্রশ্নের উত্তর তো তুষির পক্ষে চিৎকার করে দেওয়া সম্ভব না। তাই সে, প্রশ্নটা করে না। ভাবে কল দেবে। কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে দেখে তার আইফোন ১৩ পকেটে নেই। সে দ্রুত ক্যাফেতে গিয়ে দেখে টেবিলের ওপর আইফোনটা পড়ে আছে। ফোন নিয়ে তুষির নাম্বারে কল দিলে একবার রিং হয়েই ফোনটা বন্ধ হয়ে যায়। মনোয়ার আরেকটা কফি নেয়। বসে বসে একের পর এক কল দিতে থাকে। তার মাথায় আর কিছু ঢোকে না। হাউ কাম? তুষি প্রেগন্যান্ট? সে শুধু ভাবে এটা কীভাবে সম্ভব? তার সঙ্গে তুষির প্রেম চলছে টানা দুই বছর ধরে। অলমোস্ট ২৪ ঘণ্টা তারা পরস্পরের খবর রাখে। গোসল করতে গেলে বলে যায়। খেতে গেলে বলে যায়। তুষি তো ক্লিয়ারলি বলেও ছিল মইনের সঙ্গে তার আন্ডারস্ট্যান্ডিং নাই গত ৫ বছর ধরে। দুজন আলাদা বিছানায় ঘুমায়। কালেভদ্রেও কিছু হয় না। তার একমাত্র অবলম্বন মনোয়ার। ভার্চুয়াল সেক্স করেই তার সেক্সুয়াল নিড পূরণ হয়। তবে, কীভাবে এটা সম্ভব?
ভাঙা মন নিয়ে হোটেল রুমে ফেরে মনোয়ার। তুষিকে বিয়ে করতে এসেছে বলে কোনো আত্মীয় স্বজনের বাসায় ওঠেনি। আপন বোনের বাসা গোড়ানে। সেখানে অনায়াসে উঠতে পারতো। কিন্তু উটকো ঝামেলা আর প্রশ্নের মুখে পড়তে চায়নি।
একের পর এক কল দেয় সে তুষিকে। মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে, ভাইবারে। তুষি শেষ পর্যন্ত গভীর রাতে কলব্যাক করে।
মনোয়ার বলে, শেষে তুমি কী বললা?
তুষি বলে, শোনোনি? আমি প্রেগন্যান্ট।
হঠাৎ মনোয়ারের মাথায় আগুন ধরে যায়। তোমার কোনো আইডিয়া আছে? তুমি কী করছো? তুমি আমার সোলমেট। আমি তোমার জন্য দিনকে রাত করেছি, রাতকে দিন। সেই তুমি কীভাবে পারলা? তুষি, তুমি জানো, সমস্ত কিছু ছেড়ে আমি তোমাকে বিয়ে করতে আসছি। আর তুমি কি না। তুমি এদিকে মইনের সঙ্গে একটা হেলদি কনজুগাল লাইফ লিড করতেছো। আমাকে পথে বসিয়ে ওর বাচ্চার মা হতে যাইতেছো। একজন তোমার জন্য পাগল আর তুমি এদিকে গাভীন হয়ে বসে আছো।
মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ মনোয়ার।
তুষি কেঁদে ফেলে।
তোমার মুখ এত খারাপ। এই ভাষায় তুমি কথা বলতে পারো? তুমি কিছু জানো? এটা কার বাচ্চা তুমি জানো? শোনো মনোয়ার আমি নিজেও জানি না এটা কার বাচ্চা। তিন মাস ধরে আমি এর উত্তর খুঁজতেছি।
মনোয়ার একটু শান্ত হয়।
বলে তিনমাস আগে তুমি বান্দরবান ট্যুরে গেলা না?
সেটাও আমি ভেবেছি। ভাবি নাই মনে করো? তোমার কি মনে হয়, এটা আমি ভাবিনি? অবশ্যই ভেবেছি। কিন্তু ওই ট্যুরে আমাদের সঙ্গে কোনো ছেলে তো ছিল না। কোনোভাবেই কিছু হওয়ার উপায় নাই।
তোমার হাসব্যান্ড জানে?
না জানিয়ে তো উপায় নাই, মনোয়ার। সারাদিন বমি করছি। তেঁতুল খাচ্ছি। ডাক্তার দেখাচ্ছি। তুমি তো জানো, ওর সঙ্গে আমার রিলেশনশিপ নাই। মইন নিজেও তো জানে। কিন্তু এক বাসায় থাকি, স্বপ্নের মধ্যেও কিছু হওয়া সম্ভব। ওকে বলেছি, ওইদিন তুমি ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে কাকে দেখছিলা?
মইন চমকে যায়। বলে তুমি জানলা কেমনে?
আমি বলি, স্বপ্নে আরেকজন, আর বাস্তবে তো আমি। আমি জানবো না? তুমি আমার ঘরে কখন ঢুকছিলা? মইন ঠিকই বিশ্বাস করেছে স্বপ্নের মধ্যে ওর সঙ্গে কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু তুমি মনোয়ার বিশ্বাস করলা না।
ও কি আমার কথা জানে? আমার জন্য তুমি যে ওকে ছাড়তে যাচ্ছো এটা নিশ্চয়ই ওকে বলেছো?
আমি এখনও বলতে পারিনি, মনোয়ার। সরি টু সে।
এখন কী হবে?
শোনো কাল আবার ক্যাফে ম্যাঙ্গোতে আসো।
তুষির কথা শুনে মনোয়ার আবার আশার আলো দেখতে পায়। তার মনে হয়, কাল দেখা হলে সে উল্টো কথাটা জানতে পারবে। তুষি হাসতে হাসতে বলবে, তোমাকে কেমন ভড়কে দিলাম না। খুব ভয় পেয়েছিলা?
মনোয়ারও বলবে, তোমার তো বেবিবাম্পও দেখলাম না। তখনই আমার মনে হয়েছিল, তুমি আমাকে পরীক্ষা করার জন্য কথাগুলো বলছো। শোনো, তুষি, আমাকে পরীক্ষা করার দরকার নেই। তুমি প্রেগন্যান্ট হলেও আমি তোমাকে বিয়ে করবো। আর তুমি তো প্রেগন্যান্ট নও।
এইসব ভেবে মনোয়ারের রাতের ঘুমটাই নষ্ট হলো। সকালের দিকে একটু ঘুমিয়ে সে ক্যাফেতে গিয়ে সকালের নাস্তা সারলো। তার প্রিয় ওয়েফেল উইথ হানি। একটা বড় কফি নিয়ে বসলো। নিজের স্টাইলিশ ভাবটা আজ বেশ উপভোগ করতে শুরু করেছে মনোয়ার। তুষি এলো শাড়ি পরে। তাকে দেখে বুকটা ধক করে উঠলো। মনোয়ারের মনে হলো, আজ হোটেল রুমে যাবার প্রস্তাবটা দিয়েই দেবে।
মনোয়ারের মনে পড়ে, এই শাড়িটা পরে তার আর তুষির প্রথম দেখা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম দিন কেন পরেনি? আর মনোয়ারও এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা এত সহজে ভুলে গেল কী করে?
দুদিনই খালি হাতে দেখা করেছে মনোয়ার, কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে বললো, একটা জিনিশ তো ভুলে যাওনি নিশ্চয়ই।
তুষি বললো, কী?
তোমার জন্য দুই লাগেজ গিফট এনেছি। সব একসঙ্গে দেবো। অবশ্য সব গিফটই বিয়ের পর কাজে লাগবে। খালি হাতে একা বাড়ি থেকে বের হবে। সব কিছুই নতুন লাগবে। সব বললো, কিন্তু একটা কথা এড়িয়ে গেল ইচ্ছা করে। সেটা হলো, তার জন্য একটা আর তুষির জন্য দুইটা মোট তিনটা লাগেজ সুমাইয়া নিজে গুছিয়ে দিয়েছে।
তুষি যেন মনোয়ারে কথা শুনছেই না।
তুষির চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে মনোয়ার বললো, এত চিন্তার কী হলো?
তুষি বললো, মনোয়ার, এই বাচ্চার বাপ তুমি।
তুষির কথা শুনে মনোয়ার মিনমিন করে প্রায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে বললো, কীভাবে সেটা সম্ভব? আজ নিয়ে তোমার সঙ্গে দ্বিতীয় দিন দেখা।
আমরা ভার্চুয়াল সেক্স করেছি না?
ভার্চুয়াল সেক্সে কী বাচ্চা হয়?
তোমাকে কতবার বলেছি, আমার রিয়েল ফিলিং হয়। বলেছি না? তুমি আমার কোনো কথা কানে নাও না। আসলে তুমি আমাকে ভালোই বাসো না।
মনোয়ার গভীর চিন্তায় পড়ে যায়।
এরকম সে কোনো সায়েন্স ফিকশনেও পড়েনি, শোনেওনি কোনোদিন। কিন্তু তুষি খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে মুখ ভার করে বসে আছে। এদিকে মনোয়ারের অবস্থাও সঙ্গীন। তুষির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। খানিকটা অপরাধবোধও তাকে ঘিরে ধরতে চাইছে। প্রেমিকার গর্ভে অবৈধ সন্তান দিয়ে এখন সে দায় স্বীকার করতে চাইছে না। কেমন পুরুষ সে? ধীরে ধীরে পুরো অপরাধ বোধ থাকে ম্লান করে দিতে থাকে।
মার্চ মাসে তুমি কী করছো মনে নাই?
মেসেঞ্জারে কল দিলা যে, বাথরুমে বসে বসে। বললা, সুমাইয়া দোকানে, আরমানকে সঙ্গে নিয়ে গেছে। আমি বাসায় একা। আসো সেক্স করি। ওই দিন কী হয়েছিল, ভুলে গেছ?
মনোয়ারের মনে পড়ে দিনটার ঘটনা। ক্লাইমেক্সে উঠে তুষি ওইদিন বলছিল, ভেতরে ফেল না। প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবো।
কিন্তু মনোয়ার ওর কথা শোনেনি।
মনোয়ার বলে, তার মনে পড়েছে। কিন্তু তুমি তো পিল খেয়ে নিতে পারতা।
তুষি বলে, তুমি জানো না, পিল আমার সহ্য হয় না। বয়স হয়েছে না?
মনোয়ার ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করে তুষির পেটের বাচ্চার বাবা সে-ই। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। কারণ এরই মধ্যে মইন জেনে গেছে বাচ্চাটা তার। ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের মধ্যে কোনো একটা ঘটনার ফলে তুষির পেটে মইনের বাচ্চা এসেছে।
তোমার একটা ভুলের জন্য!
তুষি বাকীটা বলে না। বলে না যে, আমি পথে বসলাম। শুধু কটমট চোখে মনোয়ারের দিকে তাকায়।
মনোয়ার ভাবে, ওইদিন তুষির কথা সে শুনতেই পারতো। শুনলে ঘটনাটা এতদূর পর্যন্ত এগোতো না। এখন তুষিই বা কী করবে? মইন যদিও জানে না এই সন্তানের বাবা মনোয়ার, তবু তো সন্তানটা মনোয়ারেরই। মইন জানে বাচ্চাটা তার। এখন এই প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তুষিও তো পারবে না তাকে ছেড়ে মনোয়ারের সঙ্গে ঘর বাঁধতে।
অনেকক্ষণ ধরে অনেক কথার পর, মনোয়ার বলে, তোমার জন্য আনা গিফটগুলো কী করবো?
তুষি বলে, তোমার ভাগ্নে না ভাস্তের বিয়ে বলেছিলে না?
ওদের দিয়ে দাও।
কিন্তু ফ্যামিলির কেউ তো জানে না আমি ঢাকায়।
এক কাজ করো, এসএ পরিবহন দিয়ে পাঠাও।
মনোয়ার পরদিন এসএ পরিবহন দিয়ে ভাগ্নের বিয়ের গিফট হিসাবে লাগেজ দুটো পাঠিয়ে দুদিন পর লন্ডন ফিরে যায়।
সুমাইয়া তাকে দেখে মনে মনে হাসে। কিন্তু হাসিটা মুখে ফোটে না। শুধু বলে, ফিরেছেন?
মনোয়ার কিছু বলে না।
সুমাইয়া তাকে খেতে দেয়। মনোয়ার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
কয়েকদিনের জেটল্যাগে বিধ্বস্ত মনোয়ার শেষ পর্যন্ত একদিন নিজেকে সামলে নেয়। সুমাইয়া তখনও তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে না। নিজের মতো করে গল্পটা সে বানিয়ে নিয়েছে কিংবা অতো জেনে তার কাজ নাই।
মনোয়ার সুমাইয়ার মনের এই ব্যাপারটা ধরতে পারে না। তুষির চিন্তা সে আর করে না। মনে মনে অন্য একটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজে। তার মনে হয়, সুমাইয়া জানতো তার এরকম একটা দশা হবে। মনোয়ার শুধু ভাবে, সুমাইয়া কেমনে জানতো। সে নিজের সম্পর্কে যে জিনিশটা জানে না, সেটা কেমনে সুমাইয়া জানতে পারে? সুমাইয়া কি সবসময় তার মনের মধ্যে ঢুকে বসে থাকে? স কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। একা একা শুধু বলে ওঠে, সুমাইয়ার ঘটনাটা আসলে কী?

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত