২য় পর্বের লিংক: সাইকো (২য় পর্ব)
৩য় পর্বের লিংক: সাইকো (৩য় পর্ব)
শেষ পর্বের লিংক: সাইকো (শেষ পর্ব)
(১ম পর্ব)
আমার স্ত্রী মানসিকভাবে অসুস্থ। বিয়েটা অবশ্য আমি জেনে শুনেই করেছিলাম।
আমি আলতাফ, ছোটখাটো একটা চাকরি করি, কেরানির। তিনকুলে বলার মত কেউ নেই। একাই কেটে যাচ্ছিলো জীবন। মেসে থাকতাম। ঢাকায় আত্নীয় বলতে ঐ একজনই, মায়ের ফুপাতো এক ভাই অর্থাৎ আমার মামা। তো সেই মামারই তোড়জোড়ে বিয়েটা করতে হলো। কিংবা বলা যায় আমি রাজি হয়ে গেলাম।
আমার স্ত্রী, হেলেন। হেলেন অফ ট্রয় কেমন সুন্দরী তা অবশ্য আমি জানি না। তবে আমার স্ত্রী হেলেন অপরূপ সুন্দরী। আর আমার চুলে পাক ধরেছে অনেক আগেই। পেটে ভুড়ি হয়েছে, বেশ বড়ই। ওর পাশে আমাকে নিশ্চয়ই রাজা মেনিলাসের মত দেখায়। আমাদের দুজনের বয়সের পার্থক্য অন্তত ২০ বছরেরও বেশি। হেলেন আমাকে তার স্বামী হিসেবে এখনো মেনে নেয় নি। যদিও আমরা একত্রেই বসবাস করছি। কিন্ত ও আমাকে পছন্দ করে না। না করারই কথা!
হেলেনের কিছু অতীত রয়েছে। বিয়ের সময় অবশ্য এসব যথাসাধ্য গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু লোকের মুখ তো ঠেকানো যায় না। কানাঘুষো আমার কান পর্যন্ত এসেছে। একটি ছেলের সাথে হেলেনের প্রেম ছিল। একদিন ছেলেটির সাথে হেলেন ঘুরতে যায়। ঘুরতে যাবার নাম করে হেলেনকে ছেলেটি ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। হেলেন বাড়িতে ঠিকই ফিরে আসে। তারপরই ওর মাথায় গণ্ডগোল দেখা দেয়।
ঐ ছেলের ঠিকানা কিছুই হেলেনের জানা ছিল না। ওর পরিবারও ঘটনা নিয়ে জল ঘোলা করতে চায় নি। বরং এমন কিছু যেন ঘটেই নি, এমনভাবে হেলেনের বিয়ের চেষ্টা শুরু করে দেয়। বিপত্তি ঘটলো হেলেনের পাগলামো নিয়ে।তাই আমার মত এক কেরানির বউ হতে হলো ওকে।
অবশ্য হেলেন যে মানসিকভাবে অসুস্থ এটা বোঝার কায়দা নেই। খুব স্বাভাবিকভাবেই সে কথা বলবে, হাসবে, আপনার জন্য চা বানাবে, সবই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিকতা হলো, হঠাৎ করে কাউকে কিছু না বলে সে হারিয়ে যায়। আবার ফিরেও আসে।ফিরে এসে সব কিছু আমার সাথেই শেয়ার করে। সে কোথায়, কার সাথে গিয়েছিল সব তথ্যই আমার জানা। আমি তাকে কিছুই বলি না। হেলেনের চিকিৎসার ব্যয় বহন করার সামর্থ্য আমার নেই।তার চেয়ে এভাবেই যদি ও ভালো থাকে!
আমি অফিসে গেলে হেলেন একাই থাকে বাসায়। এ সময়টাতে সে ফেসবুকে, টুইটারে, ভাইবারে নানাজনের সাথে বন্ধুত্ব করে। শুধু বন্ধুত্ব না, সে প্রেমেও পড়ে যায় প্রায়। ডেটেও চলে যায় হুট করে। আমাকে সব জানিয়েই যায়। ভালো লাগলে তুমুল প্রেম করে সেই প্রেমিকের সাথে।
হ্যাঁ, আমার ঈর্ষা হয় মাঝেমাঝে। তবুও আমি ওর সুস্থতার জন্য কোন কিছুতেই বাধা দিই না। হেলেন যখন কারো প্রেমে পড়ে তীব্রভাবে প্রেমে পড়ে। ওর ভালোবাসায় কোন খাঁদ নেই, আমি তা খুব ভাল করে জানি। আমি এও চাই, ওর কোন একটা প্রেম টিকে যাক।সুখী হোক হেলেন।কিন্তু মেয়েটার কপাল এমন, ওর প্রেমিকেরা এক সময় আর আগ্রহী হয় না। প্রয়োজন শেষে ওকে একরকম ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তখন আবার ও আমার কাছে ফিরে আসে। আমার কাছেই ওর ফিরে আসতে হয়। যদিও হেলেন আমার কাছে ফিরতে চায় না।
প্রেম ভাংগার পর আমি কয়েকদিন হেলেনের দিকে তাকাতে পারি না। হেলেন তখন খুব কাঁদে। ভেতরে ভেতরে আমিও কাঁদি হয়ত। ভাবি, ওর সেই প্রথম প্রেমিক যে কিনা আসলে ধর্ষক ছিল, তার কোন স্মৃতিই হেলেনের মনে নেই। আনন্দ কিংবা বেদনার কোন স্মৃতিই নেই। নেই বলেই আজ ওর এই অসুস্থতা, এই অস্থিরতা। এই যে, আমি ওর এত কাছে, ও আমার ব্যাপারটা টের পায় না।
মাঝেমাঝে আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করি।
— দেখো, ঐ ছেলেগুলো তোমাকে মোটেও ভালোবাসে নি কখনো।
হেলেন এমন ভাবে হাসে, যেন আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা লোক।
— মোটেই না। ওরা আমাকে অবশ্যই ভালবাসত।
— ভালবাসলে তোমাকে এভাবে কষ্ট দিতো না।
হেলেনের মুখ তখন থমথমে হয়ে যায়। কী যেন একটা ভাবে। ওর বিষন্ন মুখের দিকে তাকিয়ে আমি দ্রুত তখন আমার কথা উলটে ফেলি, “না, না। কেউ না কেউ তোমাকে নিশ্চয়ই ভালবাসে।”
শিশুর মত খুশি উঠে হেলেন। বলে, অবশ্যই।
এভাবেই দিনের পর দিন আমি পার করছিলাম হেলেনের সাথে।হেলেনও একের পর এক তার ছোট ছোট ক্ষণস্থায়ী প্রেম চালিয়ে যাচ্ছিলো।যতবারই নতুন প্রেমে পড়তো, হেলেন চাইতো এটাই যেন তার শেষবার হয়। আর যেন আমার কাছে ফিরে আসতে না হয়। কিন্তু ওকে বারবার আমার কাছে ফিরে আসতে হতো।আমিও চিন্তিত হয়ে যাই মাঝেমাঝে। বর্তমানের প্রেমে কোথায় এমন কমতি, যে প্রেম টেকে না! হেলেনের দিক থেকে চেষ্টার কম নেই। আমি জানি ও কতটা সৎ।
এভাবেই হেলেন আবার প্রেমে পড়ে। এবারের প্রেমের বয়স কিভাবে যেন মাস পার হয়ে গেল। হেলেন খুব খুশি। আমার বুকের ভেতর কেমন চিনচিনে ব্যথা হয়। আমি টের পাই, হেলেন কেমন দূরে সরে যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে ও আর ফিরবে না!
হেলেন সেদিন আবদার করল, “এই, আমাকে একটা সাদা জর্জেটর শাড়ি কিনে দাও, সাহে রূপার গয়না। এই বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে ওর সাথে আমি চলে যাবো।”
–সাদা কেন? নীল পর। ভালো লাগবে।
— না। হুমায়ূন আহমেদের একটা বইএ এমন পড়েছিলাম। সাদাই লাগবে।
আমি ওর পছন্দমত সব কিনে এনেছিলাম।হেলেন অপেক্ষায় ছিল বৃষ্টির।তারপর অাজকেই হঠাৎ আকাশ কেমন মেঘ কালো হয়ে এলো। উচ্ছ্বসিত হয়ে ছেলেটাকে হেলেন ফোন করল। আমার সামনেই গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সাজলো। তারপর খুশিমনে অামার কাছ থেকে বিদায় নিলো। হঠাত বুকের ভেতর টা কেমন ধক করে উঠলো অামার। মনে হলো কী যেন একটা হারিয়ে ফেলছি।হেলেন ফিরবে না।
এখন রাত হয়ে গেছে। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই।হেলেন এখনো ফেরে নি। আমি অপেক্ষায় আছি। আমার মন বলছে ও ফিরে আসবে। বৃষ্টিতে ভিজে সাদা শাড়িতে হেলেন ফিরে আসবে। আসবে তো?
(চলবে)
২য় পর্বের লিংক: সাইকো (২য় পর্ব)
৩য় পর্বের লিংক: সাইকো (৩য় পর্ব)
শেষ পর্বের লিংক: সাইকো (শেষ পর্ব)