গলির মুখে ছেলে পুলে বুড়ো নানান মানুষের জটলা। সকাল বেলাটা যেমন ঝিমাইয়া থাকে তেমনি বিকাল হইলেই সরগরম শুরু হয়। নানান কিসিমের নানান বয়সের মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। সামনে বেশ কয়েকটা দোকান আছে। দুইটা দোকানের মধ্যে দিয়া পার হইয়া ভিতরে ঢুকলে রাস্তাটা আরো সরু হইয়া আসে। দুইপাশে সারি সারি ঘরের দরোজায় কিংবা কখনো কখনো দোকানের আশে পাশে বেশ্যা মাগীরা মুখে রং মাইখা ঢং কইরা দাড়াইয়া থাকে। স্থানীয় দোকানদার আর লোকজনের কাছে এইটা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। যারা এই রকম ভাবে দাঁড়াইয়া থাকে তাদের বেলায় এটা তাদের নিয়মিত কাজ। কেউ একজন আগাইয়া আসলেই চোখে ইশারায় বুকের কাপন দিয়া দৃষ্টি আকর্ষন শুরু করে। এরপর শুরু হয় দরদাম কষাকষি। শরীরের সাথে কাম মিশাইয়া খরিদ্দাররে খুশি করতে পারলে বিনিময়ে খরিদ্দাররা পকেট খুলতে দ্বিধা করে না। মাঝে মাঝে দালালরাও সহযোগিতা করে অবশ্য এই জন্য দুই দিক থাইকা তার কমিশন নিয়া যায়। পুরোনো খরিদ্দারের দালাল লাগে না। এরা আবার নিজের পছন্দের বেশ্যাদের কাছে যায়। বেশ্যারা চেষ্টা করে কিছু খরিদ্দার নিয়মিত ধইরা রাখতে। তাতে কিছু আয় রোজগার যেমন নিশ্চিত হইয়া থাকে ঠিক তেমনি কিছু বাড়তি পাওয়া যায়। এর জন্য অবশ্য সেই বাধা ধরা কাস্টমাররাও বাড়তি কিছু নিয়া সেই পয়সা উশুল করে।
ইদানিং সকাল থাইকা রাত অব্দি এমনকি সারারাত লোকে সরগরম থাকে। সামনে নির্বাচন। নিবার্চনের প্রার্থীরা দিন রাইত এইখানে আনাগোনা করে। যারা আগে দেহের খরিদ্দার হইয়া আসতো তারা এখন ভোটের খরিদ্দার হইয়া আসে। জীবনের গতি যাই থাকুক শরীর আর ভোট এই দুইয়ের বিনিময়ে প্রার্থীরা পকেট খুইলা খরচ করতে কৃপনতা করেনা। এখন সময়টা ভোটের তাই শরীর না দিয়াও আয় রোজগার ভালো হইতেছে, শরীরের রোজগার এখন বাড়তি পাওনা। কেউ কেউ আবার বেশ্যা পাড়ার ভিতরে নির্বাচনী ক্যাম্প বানায়া রাখছে। সামনে নির্বাচনী ঢামাঢোল বাজে, অমুক ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র, আর পিছনে শরীরের লীলা, লাল পানির খেলা চলে। তাতেও বেশ্যাদের আয় বাড়ে। বেশ্যারা খুশি অপরদিকে এলাকা জমজমাট থাকায় দোকানিরাও খুশি। এই রকম আনন্দ আর আয় সারা বছর থাকেনা। তবে নির্বাচন আগাইলেই এই বাড়তি আয়ের সুযোগ কেউ হাতছাড়া করেনা।
দেশ এখন বেশ্যাদের নিয়া ভাবতাছে। এই যেমন, তাদের পেশারে স্বীকৃতি দিয়া দিছে। তাতে তারা ভোট দিতে পারবে। তাতে তাদের কী লাভ হইবে তা তারা জানেনা। তবে ভোটের আগে কিছুটা লাভ হয় এইটুকু তারা বুঝতে পারে। মাঝে মাঝে এনজিওরা আসে। এরা কত কী বুঝায়? বেশ্যাদের স্বাস্থ্য নিয়া কথা বলে। কিভাবে এইডস থাইকা বাইচা থাকন যায়। কিভাবে শরীর ভালো রাখলে বেশি বেশি খরিদ্দার আসবে। কিভাবে কনডম ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্য ঠিক রাইখা ব্যবসা ভালো রাখার তরিকা শিখায়।
কেউ মনোযোগ দিয়া শুনে, আর কেউ কেউ মুখরা হয়, এনজিও গুলারে পছন্দ করেনা। মনে মনে গাইল পারে, তাদের কেউ কেউ মুখ ফসকায়া বইলা ফালায়, রহিমা খালা আমাগোরে বেশ্যা বানায় আর আপনেরা আমাগোরে বেশ্যা থাইকা আরো কড়কড়া বেশ্যা বানান। আপনারে আমাগোর কষ্ট দেইখা আফসুস করেন কিন্তু এইখান থিকা নিয়া যাওনের চেষ্টা করেননা। আবার কন আমরাও মানুষ। আপনেরা সাধ আহলাদ করার জন্য ট্যাকা খরচ করেন আর আমরা শরীরের সাধ আহলাদ বিক্রি কইরা জীবন বাঁচাই। আমরা আবার মানুষ হইলাম কেমনে? এই সবের কোন উত্তর মেলেনা।
পাড়ায় রহিমা খালার প্রভাব অন্যান্যদের চাইতে ঢের বেশি। জন্মগত ভাবেই সে এই পাড়ার বেশ্যা। এখন রূপ যৌবন লাটে উঠছে তাই তার কাছে এখন কেউ শরীরের উত্তাপ নিতে আসেনা। কিন্তু তাতেও তার কদর কমে নাই। রহিমার খালার আয়ত্তে পাড়ার সবচেয়ে বেশি মেয়ে আছে। তাই খরিদ্দার বুইঝা মেয়ে সাপ্লাই দিতেও তার কোনো অসুবিধা হয়না। নির্বাচনী ভোটের বাজারে রহিমা খালার আমদানি এখন তুঙ্গে। তার হাতে ম্যালা ভোট আছে। যারা আগে মেয়ে মানুষের শরীরের ঘ্রানে ছুইটা আসতো তারাই এখন ভোটের জন্য আসে। সাথে আসে কড়কড়ে গন্ধ সমেত টাকার বান্ডিল।
একসময় গরীবুল্লাহ রহিমা খালার নিয়মিত খদ্দের ছিলো। সে যখন স্কুলের ছাত্র, তখন থাইকা রহিমা খালার কাছে আসতো। রহিমা খালার তখন ত্রিশের কোটা পার হইছে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে রহিমার খালার রুপ যৌবন শেষ হইয়া গেছে। গরীবুল্লাহ এখন রহিমা খালার দেওয়া অন্য মেয়ে মানুষ নিয়া মাইতা থাকে। বয়সের ব্যপক ব্যবধানে গরীবুল্লাহ এখন তারে মাতারী কিংবা মাগী কইয়া ডাকেনা। সকলের সাথে তাল মিলাইয়া রহিমা খালা বইলাই ডাকে।
ইদানিং রহিমা খালার কাছে গরীবুল্লাহ যাতায়াত বাড়ছে। কোনো মেয়ে মানুষের জন্যে না। ভোটের জন্যে। বেশ্যা পাড়ার অন্ধকার গলিতে যেখানে মানুষের জীবন শেষ হইয়া যায় সুর্যালোক দেখার আগে সেই খানে নারী শরীরের বাকে বাকে লুকায়া থাকে গরীবুল্লাদের ইপ্সিত বিকৃত মানসিকতা প্রতিফলনের উত্তম পন্থা। যেইখানে নারীর সব কিছুই কেনা যায় কড়কড়ে টাকা নোটে। সেইখানে বাকি ছিল বুড়া আঙ্গুলের মাথাটা। সেইটাও সরকার ভোট দেওনের অধিকারের নাম কইরা গরীবুল্লার কাছে বিক্রি কইরা দিছে। এইটা কিনতেই প্রতিদিন গরীবুল্লাহ টাকা নিয়ে আসে। শরীরের ঘ্রাম আর গন্ধের দুনির্বার আকর্ষণ জলাঞ্জলি দিয়া বুড়ো আঙ্গুলের মাথাটা কেনার জন্য দিন রাত রহিমা খালার কাছে ধর্ণা দেয়। দুই হাত ভইরা কাঁচা টাকা দিয়া যায়।
ভোটের দিন যতই আগায়া আসে গরীবুল্লাহর বিনয় ততই বাড়ে। রহিমা খালার শরীরের ভালো মন্দের খোঁজ নেয়। সকালে একবার বিকালে একবার আইসা খোঁজ নিয়া যায়। ভোটের আগের দিন রাইতের বেলা রহিমা খালার পায়ে হাত দিয়া সালাম কইরা দোয়া চায় গরীবুল্লাহ। বিনয়ের সাথে উচ্চারন করে রহিমা খালা আইজ থাইকা তুমি আমার মা। তুমি চাইলেই এই কেন্দ্রে আমারে পাশ করাইয়া দিতে পারো, এইডা তোমার জন্য মামুলি ব্যপার। কথাটা শুইনা নিঃসন্তান রহিমা খালা মাথায় বজ্রাঘাতের আঘাত লাগে। মনে হয় একটা ঠাডা পইরা মাথা থাইকা পা অব্দি অবশ হয়া গেছে। তার হুঁশ বেঘোরে হারায়া যায়। গরীবুল্লাহর কানের নিচের প্রচন্ড জোরে একটা চড় কইষা দিয়া জিগায়, তুই আমার কোন সন্তান? আমার গর্ভে দিনের পর দিন যে বীর্য ঢালছস তুই কী সেইখান থেকে পয়দা?
রহিমা খালার মনের কথা কেউ শুনতে পায়না। সম্বিত ফিরা আসে খালার। শুধু এই টুকুই বলতে পারে তুমি নিশ্চয় পাশ করবা। গরীবুল্লাহ চইলা যায়। রহিমা খালা ফ্যাল ফ্যাল কইরা গন্তব্যে তাকায়া থাকে। এই প্রথম তার মনের মইধ্যে গরীবুল্লাহ জন্য ঘৃণা জন্মাইতে থাকে।