লাকু রাশমনের ফালতু গল্পের সিরিজ থেকে…
ভেলুয়া সুন্দরীর আখড়ায়- ০৬
[প্রাক-কথন: ঘটনাগুলোর কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। কিন্তু বেজায় তাদের দাপট। ধান ভানতে যেমন শিবের গীত গাওয়া এই কথাগুলোও ঠিক তেমনি। গুরুত্ব নেই কিন্তু দায় আছে। মানুষটা খেয়ে পড়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কিন্তু অদ্ভুত মাথার ব্যামোতে ধরলো। কোনো ডাক্তার কবিরাজে কাজ হয় না। ভিমরি খাওয়া রোগ। এ বড় শঙ্কার কথা। এ রোগ কী ছোঁয়াচে! কী জানি বাপু। আমাদের না হলেই বাঁচি। তাই দূরে দূরে থাকি।
তবে শোনা যায়, সে রোগের বাই চাপে শনিগ্রহের ফেরে। শনিগ্রহ থেকে সরাসরি রোগের আকর তার মস্তিকে ভর করে আর পঁই পঁই করে এমন লেখা বের হয় যে, তাকে ধোলাই না দিলে রাতের ঘুম হারাম হবার যোগাড়। তাই পাড়ার মাতব্বররা তাকে ভেলুয়া সুন্দরীর আখড়ায় ভর্তি করে দিলেন। এরপর যা কাÐ ঘটলো! চেনা পৃথিবী গেল উল্টে। ভেলুয়া সুন্দরীর নাম ছড়িয়ে গেল সবখানে, সবখানে, সবখানে…]
ফালতু গল্প- ০৬। খোলা কথা- খোলা ময়দান
কিন্তু এখনকার রাতগুলো আঁশ ছাড়ানো। ন্যাড়া আকাশের গায়ে না আছে চাঁদ, না কোনো তারার বালাই। জায়গায় জায়গায় লোমওঠা কুকুরের গায়ের মতো ফিনফিনে কিছু মেঘ ইতিউতি, চলছেও না, ভাসছেও না, থম ধরা। যেমন খোসা ছাঁড়া পাকা কলার গা ঘেঁষে ডুমো মাছিদের আড্ডা, ঠিক তেমনি তাকে ঘিরেও প্রতি রাত-দিন-সকাল জনকলরোল, শব্দ¯্রােত। সেই সূর্য-না-ওঠা আর মা-বাবার লেপ-না-জাড়ানো ঢিমে ওমে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে তার বাইরে বের হয়ে আসা, কাকপক্ষীদের জানান না দিয়ে। তারপর কিছুদূর হেঁটে শেষ পর্যন্ত একটা রিকশায় উঠে থানার সামনে নেমে পকেটে যা ছিল, ছেঁড়া নোট, খুচরা কয়েন সব জমা করে দিলেন তিনি। রিকশাওয়ালা দাঁত কেলিয়ে একখানি পাকা ভাউচারে আসমানী রঙের কালীতে ছোপানো কলমে ইনিসিয়াল সিগনেচার করার আগে বললো- বেশি লিখবো না যা ভাড়া তাই? তিনি বিস্ময়ে বললেন- আমাকে কি এনজিও’র দালালের মতো দেখতে? রিকশাওয়ালাটা আবারো হেসে নিগনেচার মেরে তার হাতে দিতেই জনৈক দারোগা, যিনি কিনা রাত এবং দিনের মধ্যবর্তী সাড়ে সাত মিনিট প্রাতুষিক ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরছিলেন, তিনি এসে তাকে সসম্মানে ফাঁড়ির মধ্যে নিয়ে বসালেন একটা চাক্কাওয়ালা গদিআটা তোয়ালে জড়ানো চেয়ারে। এসিটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে জনৈক দারোগা হাবিলদারকে জংধরা রাইফেলটা রেখে তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করতে বললেন, তিনি, ঐ আগন্তুক, ঝোলা থেকে বের করলেন একটুকরো পাউরুটি আর পিরিটন- কাশির সিরাপ। তারপর আয়েস করে বসে খানিক সিরাপ পাউরুটির ওপর ছড়িয়ে দিয়ে ওসিকে এক গøাস ঠান্ডা মাঠা আনতে বললেন। খাওয়ার পর তিনি আর্জি পেশ করলেন এই বলে যে, গোটা কয় স্বপ্নের ব্যাখ্যা চাইবার জন্য তার এই আগমন। অবশ্য তিনি ওসিকে দার্শনিক কিছু ভাবছেন না। শেষে ঝেড়ে কেশে বললেন, সবচেয়ে ভালো হয় যদি তাকে কয়েকদিন অবকাশ যাপনের জন্য লম্বা লম্বা রড আঁটা একটা নির্জন সেলের ব্যবস্থা করে দেয়া যায়।
আগন্তুকের নাম জানা যায়না। তার পেশাও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। একবার মনে হয় ভবঘুরে কিংবা পথিক, ঠিক পরের বার ঠাহর হয় লেখক। আবার মাঝে মাঝে এই দু’গোত্রের কেউ নন এরকম ধারণাও চিত্তে হানা দেয়। তবে তিনি যে একজন জাত পর্যবেক্ষক, এটা পাড়ার শিমুল গাছটাও স্বীকার করবে।
এ নিয়ে মোট তিন দিন দু’রাত ক্রমাগত রেডিওতে এফ এম ব্যান্ডে ভেসে আসা কত্থক নাচের বোলচাল শুনছিলেন তিনি। মাঝে মাঝে ধারাভাষ্যকার নিয়ে যাচ্ছিলেন দুবাইয়ের সারজা মাঠে, যেখানে চলমান ভারত ও পাকিস্থানের মল্লযুদ্ধ। ওদিকে বোমা মেরে উড়িয়ে দিল গির্জার তোরণ ক্রস চিত্রিত যিশু। মধ্যপ্রাচ্যে মধ্যযুগের মিঠে হাওয়ায় মোল্লাদের কাঁচাপাকা দাড়ি দুলছে অথচ নারীদের বোরখার ভারী নেকাব স্থির, অটল। আর দক্ষিণে, পুরোহিত মশাইগণ- মোল্লাদের পাজামার ফিতে (নাডাই) দিয়ে গৌতম বুদ্ধের মাজা বাঁধলেন কষে, তাইতে জৈন, শিখ আর সুফি ভাইয়েরা কি আর বসে বসে আঙুল চোষে- যত ছিল টিকিওয়ালা ঠাকুর পারিষদ, সক্কলের মাথায় গো-মাতার গোবরের নাড়া বেঁধে, বুক বরাবর কাবাব আর পরোটার শালপাতার দোনা দিল ঝুলিয়ে। ব্যস্, চারিদিক থেকে কেল্লাফতের মঞ্চ কাঁপানো ইংরেজি গালি আর সাদা-বাদামী শূকরদের গোঁত-গোঁতানি উঠল চরমে। মার্কিনীরা মওকা বুঝে লুট করল দালালী আর বদমায়েশি সব। তুর্কি নাচনে মাত্ করল জাতিসংঘ। ফলাফল পৃথিবী ছেড়ে ঈশ্বরের পলায়ন। উষা দিশেহারা।
সকলেই হতবাক- কি কারণ! দুধের শিশু দুধ গিলছে বোতলে নয় গামলা সুদ্ধ। সঙ্গে চিনি না থাকার গ্যাঁড়াকলে পড়ে মিছরী বাবাজী পগার পার। পুরী কিংবা কন্যাকুমারী সব জায়গায় দুধের নহর বয়ে যাচ্ছে মানে এই নয়যে, স্বর্গে সব কেরোসিনের হাওড়ে প্লাটিনামের মাছ ভাসছে। এরকম একটা ভুবনব্যাপ্ত বদখত প্রবন্ধ মাঝপথে থামিয়ে, বুদ্ধির গোড়ায় খানিকটা চাক্কি পেষা ফ্লুইড ঢেলে, আগন্তুক চোস্ত সুখে লাগালেন ম্যারাথন ঘুম।
একটা সুখস্বপ্নের মধ্যিখানে সেই রিকশাওয়ালা, যে কিনা তাকে এনে নামিয়ে দিয়ে গেছে থানার সামনে, পেপসোডেন্ট মার্কা হাসি নিয়ে একেবারে সংসদে হাজির। রিক্সামন্ত্রণালয়ের তিনি ফুলমন্ত্রী। এডিশনাল হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আবগারী মন্ত্রণালয়েরও। প্রতিদিন তিনি চার গ্যালন গ্যাজলা ওঠা যমুনীয় মেঠো মদ রিক্সায় নিয়ে হাজির হন সংসদ চত্বরে। তারপর একদম সাংহাইয়ান কায়দায় গøাসে গøাসে বিতরণ করা হয়, তার সঙ্গে ফ্রি লেমনচুষ। সবাই কণ্ঠনালী থেকে শুরু করে যোনী ধমনীর গোড়া অব্দি টইটুম্বুর গিলে বসে যান যে আর ঘূর্ণন ও গদিযুক্ত কেদারায়। মদের লোভে সংসদ কোরাম স্ফীতিতে ভোগে। দেশ শ্যালকের ভাষণের মধ্যে নির্দ্বিধায় বা’হাত গলিয়ে মহামান্য স্পিকার হাঁউমাঁউ করে জুড়ে দেন বাচালতা। সরকারি দল মারছে তালি, বিরোধীদলের ওয়াক আউট সত্তে¡ও তাদের প্রেতাত্মারা ফাইল ছুড়ছে। কে ঠেকায় কাকে। শেষে পোঁ পোঁ বাঁশি বাজাতে বাজাতে র্যামের কালো মাথারদল, কালো গগল্স পরে হাতে রাইফেলের বদলে তেল মাখা ডবল বেত নিয়ে,হাতে হাতকড়া এবং মুখে সাতকড়ার আচার গুঁজে দিয়ে, প্রহার মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত আদেশ বলে প্রত্যেক সাংসদের পাছার কাপড় তুলে চাবকাতে লাগল, যতক্ষণ না তাদের পশ্চাদেশ রক্তিমাভ হয়ে ওঠে। মাননীয় সাংসদবৃন্দের পোদাঞ্চলের সে কি স্ট্রবেরীয় রাঙা রঙ! যেন ক্যানভাসে আঁকা টিউলিপ গার্ডেন! র্যাব ফ্রাঙ্কেস্টাইনের এরকম বেধড়ক আঘাতে তৎক্ষণাৎ সাংসদগণ বিলাসবহুল শীত এবং তাপ নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালে শয্যা নিলেন, এদিকে এই ইনসিডেন্টটি ঘটার ইমিডিয়েট আগেই ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, মেথরসহ পুরো হাসপাতাল পরিবার টাইটানিকে চেপে পিকনিকে গিয়েছে নর্থ পোলে ছয় মাসের জন্য। বোঝ ঠ্যালা। শেষ পর্যন্ত ইউনানি করোনা টিকা সকল সাংসদের নিতম্বে দিয়ে তাদের ব্যথার উপশম হয়।
আগন্তুকের মনটা বিশেষ ভালো নেই। খানিক আগে তুমুল বর্ষা হয়ে গেছে। ড্রেন উপচে পথঘাট ডুবন্ত প্রায়। বর্ষার জলে ভাসছে কাঁঠালের ভুঁতি, পুঁজ মাখা ব্যান্ডেজ, গোলাপের পাপড়ি, প্লাস্টিকের নিপল, ব্যবহৃত কন্ডোমসহ সাত-সতেরো আরো অনেক কিছু। ওদিকে শহরের মেয়রের মুত্রথলিতে এতো পানি জমেছে যে, অপরারেশ করার পরে সমগ্র আপারেশন থিয়েটার কোমড় সমান মুত্র সাগর!
শহরের রাস্তা-ঘাট সব নদী সমান ঘোলা পানির নিচে খানাখন্দে দু’একটা প্যাসেঞ্জারসমেত রিক্সা উলটে আছে। শুধু স্পোক উপড়ানো চাকাগুলো উর্ধ্বমুখী হয়ে যেন আবহাওয়া দপ্তরকে নালিশ জানাচ্ছে। আজ সকালের আবহাওয়া সংবাদে সবাই জেনেছে ঝকঝকে সূর্যের হাসি ছড়াবে শহর জুড়ে। ছাতা নিয়ে বের হয়নি যে কেরানি, সে কাকভেজা হয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরছে আর দাঁত কিড়মিড় করে ভাবছে, বাড়ি গিয়ে আছাড় মেরে ওয়ালটন টিভিটা আগে ভাঙবে, তারপর অন্য কিছু। বর্ষার শেষে মেঘমল্লারও আর ভাল লাগেনা আগন্তুকের। সান্ধ্য পত্রিকার খোঁজে হাঁকডাক করতেই হকার এসে ক্রোড়পত্র সমেত “দৈনিক নুর-এ-জাহান” দিয়ে গেল। বড় বড় হেডিং এ চোখ বুলালেন আগন্তুক তিনি- মন্ত্রী বলছেন- “ দেশ উন্নয়নের বন্যায় ভাসছে”, “এ সরকারের নজিরবিহীন সাফল্য: বাম্পার নিধন”, “সরকার মদ-জুয়া সব ফ্রি করে দিয়েছে, তাই নিজস্ব বার খোলার প্রয়োজন ফুরিয়েছে”, “নারীরা ঘরে-বাইরে-ব্রহ্মান্ডে হেসে-খেলে ইয়াবা খেয়ে স্ফর্তিতে মেতে আছে- তাদের নির্যাতনের জন্য পুরুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না”, “নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসীর তওবা শপথ : আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতের মুঠোয়”, “সাংবাদিকদের অলি গলি খুঁজে খবর সংগ্রহের দিন ফুরিয়েছে, ঘরে বসেই ফেসবুকের ন্সেনসেশন নিউজ করলেই, খবরে তাই ছাপা হয়ে যাবে” ইত্যাদি সুখবরের ভিড়ে হাঁফিয়ে ওঠে চোখ। একটু বৈচিত্র খোঁজে দৃষ্টি। হঠাৎ প্রথম পাতার চতুর্থ কলামের স্পেশাল চৌকো বক্সে চোখ আটকে যায়-
“মার্কিন প্রেসিডেন্ট মুসলমান হচ্ছেন!” তাজ্জব! খবরের সত্যতা যাচাইয়েরর জন্য উইকিপিয়াতে ঢুঁ মারতে বের হয়ে এলো খবরের পিছনের খবর। প্রেসিডেন্ট সিফিলিস আক্রান্ত, দোসর রোগী ব্রিট্রিশ প্রধানমন্ত্রী, যে কিনা দীর্ঘ একই চিন্তার বিছানাতে শয়ন এবং স্পর্শদোষে রোগাক্রান্ত। সাথে আছেন বিবাহিত কুমার ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ডাক্তার বলেছেন এই রোগের থেকে পরিত্রাণ একমাত্র খৎনাকরণ। হাজাম তালেবান বলেন, ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক মুসলমানি করা হলে তার কাছে যে অস্ত্র রয়েছে তা নিরাপদ, কারণ এ সবই মেইড ইন ইউ এস এ! কিন্তু ধন্ধে পড়লেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট! এই অস্ত্র দিয়ে খৎনা করা মানে তার খতম তারাবি। ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট সাহেবকে সতর্ক করে বললেন, বেটা তালেবানদের বিশ্বাস কি? আপনাকে বাঁশ দেবার ফন্দি হতে পারে? আপনার মনে নেই স্যার, গতবারের প্রেসিডেন্ট সাদা শুকরটা সৌদি আরবে গিয়ে গোটা শিবাঙ্গটাই কর্তন করে বৌকে পর্যন্ত তালাক দিতে হলো! কারণ দÐ ছাড়া খালি ধন-সম্পত্তি নিয়ে স্ত্রীরা করবেটাই কি? স্যার আমার মনে হচ্ছে এটা ওদের সেই ভেল্কিবাজি নয় তো! আপনার এই বুড়ো বয়সে এতোটা ধকল কি সইবে? ওভাল অফিসের চোরাগুপ্তা অফিসে প্রেসিডেন্ট নড়েচড়ে বসলেন। তেল-গ্যাস-অস্ত্রের লোভে বুড়ো প্রেসিডেন্টের মগজে আলসার হবে নির্ঘাত! ওদিকে জাতিসংঘের শিখন্ডি, মানে বর্তমান প্রেসিডেন্ট, সমীহ করে গাত কচলাতে কচলাতে বললেন, স্যার দন্ড তো অনেকেরই নেই, তাদেরকে হয়তো সমাজে সবাই ব্যঙ্গ করে হিজড়া বলে, তাই বলছিলাম কি, হিজড়া হওয়া খারাপ কিছুনা। এই দেখুন না জাতি সংঘের সবাই তো হিজড়া, তাতে কাজের কি ব্যাঘাত ঘটছে। আর তাছাড়া রোগের যে দাওয়াই… এই দেখুন মি: প্রেসিডেন্ট আমি তো দিব্যি বেঁচে বর্তে আছি। সিফিলিসের চুলকানিতে মহামান্য প্রেসিডেন্টের ক্যানসার হওয়ার দশা। ফুসফুস ভর্তি করোনা ভাইরাস নিয়ে তার ত্রাহি অবস্থা। হঠাৎ তিনি সিসি ক্যামেরার স্ত্রিনের সামনে বসে আবিস্কার করলেন মার্কিন পররাস্ট্রমন্ত্রী প্রেন্টাগনে বসে মোবাইলে রগরগে মেয়েছেলের উদোম পশ্চাৎদেশ দেখাতে ব্যস্ত হয়ে আছেন। প্রেসিডেন্ট এক ধমক দিয়ে বললেন, ব্যাটা ভোগলডিন, তুই করস কি? বোমার উপর বসে তা দিলে হবে? ওগুলো ফুটায়ে বাচ্চা পয়দা করতে হবে না, হারামজাদা? প্রেসিডেন্টের উসতাড়া খেয়ে সব মন্ত্রী সকল বোমারুকে বোমার পল্টি খালি করে দিতে বললেন। জঙ্গী বিমানগুলো গোঁ গোঁ করতে করতে উড়াল দিল ইরান-ইরাক-আফগানিস্থান, উত্তর কোরিয়াসহ আরো ম্যালা দেশে, ম্যালা শহরে। যার হিসেব ওয়ালস্ট্রীট জার্নালেও নাই। মাঝে মাঝে নোম্ চমস্কি বা অরুন্ধতী রায়ের মতো কয়েকজনের লেখাপত্রে সেসব কিছু কিছু ছাপা হয়ে ধোপা বাড়ি চলে যায়। পরের সপ্তাহে প্রত্যেক মার্কিন বিরোধী দেশের মানুষের জন্য বোমা সাদৃম্য আÐা বরাদ্দ করা হল। এই দিকে মার্কিনীরা সব সমাজতান্ত্রিক মনোভাব সম্পন্ন, সবাই যেন সমান বোমা পায় সে হিসেব ্রপসিডেন্ট নিজেই করে দিলেন্ পরে যেন ঐসব নচ্ছাড় দেশগুলো আমরা কম পেলাম কেন বলে হাউ কাঁউ না করতে পারে। সেই আন্ডা খেয়ে কেউ পটল তুললো, কারো হাত পা উড়ে গেল বেলুনের মতো, যাদের হাত-পা অক্ষত থাকলো তাদের মাথাটা ফুটবলের মতো ফট্টাস করে ফেটে গেল। শকুনদের ভারি সুবিধা হলো বিনা ডিসেকশনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মাংস খাওয়া গেল। বোমার এমনি গুণ হাসপাতালগুলো সব বার-বি-কিউয়ের চুলার মতো আকাশ পানে ধোঁয়া ছড়াতে লাগলো। যেসব হায়েনা কাঁচা মাংসে অভুক্তি তারা হাসপাতালের বেডে পোড়া রুগির মাংস দিব্বি খেতে লাগলো। মানুষ হারামির মতো কোনো হায়না বলনো না, একটু সস্ বা সালাড হলে জমতো ভালো!
বোমা-আÐার অধিক ক্যালরির ঠেলায় নাজুক শিশু আর নারী মাটি চাপা পড়লো দ্রæত। বিবিসি, সিএনএন আÐার গুণকীর্তন করল। তাবৎ বিশ্ব আহা উহু বোলচালে ফেসবুক আর ইন্টাগ্রামের পাতা গরম করে তুললো। চারিদিক গরম হয়ে যাবার ফলে মৌকা বুঝে জুকারবাগ ‘কোল ওয়াটার বাকেট’ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল। ব্যস্ কেল্লাফতে! তালেবানরা সব চাওমিন খাওয়া ধরলো। মধ্যপ্রাচ্যের পেট তেল আর ভর্তি গ্যাস নিয়ে শনির দশা। এস আই পাটি তার এন্টাসিডের কার্যকারিতা এবং ক্ষমতা দুই হারালো। ইসরাইলেরা নুডুলসের প্যাচ কষতে লাগলো!
সাত দিনের মাথায় আগন্তুকের বাবা-মা একটা ইউটিউবে জুক বক্স অ্যালবাম বের করলেন মৃত এইচএমভি মানে “চোঙামুখো কুকুর” থেকে, তাদের সন্তান হারানোর বিজ্ঞাপন দিয়ে। অ্যালবামের বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে ভজন আর হামদ গেয়ে শোনালেন কবীর সুমন, লেডি গাগা এবং হিরো আলম। দেশের সেন্সর এখন ডিজিট্যাল আইনের চাকর। অনলাইনে একটা পাদ মেরেছ কি তারও সেন্সর সার্টিফিকেট লাগবে। পাদটা কেমন- গন্ধহীনের এক আর গন্ধযুক্তের আরেক সার্টিফিকেট। তো এই যখন অবস্থা, সেই এ্যালবামটার সবকিছু শেষ করে সেন্সর বোর্ডে জমা দেবার পর “জিন্দা দাফন”, “মা কেন বাবার স্ত্রী”, “সিঁথির সিঁদুর চেটে দিলো ইঁদুর”, “বাবু খাইছো” এর ভিড়ে অ্যালবাম আর রিলিজই হয় না। কারণ বোর্ডের চেয়ারম্যান যে ড. মাহফুজুর রহমান! শেষে অনেক ধরাধরি, তথ্যমন্ত্রীকে বোঝানো হল হামদ, না’ত এবং ভজন হিন্দু-মুসলমানের বিষয় নয়, আর এই ইস্যু নিয়ে বেশি ভজরভং করলে তার মন্ত্রিত্বের সতিচ্ছেদ হয়ে যাবে কারণ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাদের জ্ঞাতি’র জ্ঞাতি’র পাড়ার লোক। রিজিক থেকে ধর্মের বাতাসা উঠল বলে। খানিকটা কড়কে দিতে নরম কাটলেন তিনি। পাগলও বুঝে- ক্ষমতা, ধর্মকে কখনো গলিপথে হাঁটায়, কখনো-বা রাজপথে নিয়ে যায়, সময় সময় পকেটবন্দিও করে। অবশেষে সার্টিফিকেট পাওয়া গেল এবং দু’সপ্তাহ ধরে টপ টেন চার্টের শীর্ষে রইল অ্যালবামটি।
হঠাৎ দাদাসাহেব ফালকের প্রেতাত্মা সেদিন প্রাইভেট চ্যানেল খুলতে দেখা পেলেন টিভি স্পটের। কি আর করা, তার তো শনির দশা। তড়িঘড়ি করে টেলিফোন লাগালেন ওয়াশিংটনের দক্ষিণ এশীয় মুখপোড়া মুখপাত্রের কাছে। সেখান থেকে তাকে জানানো হলো যে সাবেক স্বদেশমন্ত্রীর শুকর উৎপাদন পার্টিতে গেছেন মি. স্পোকম্যান। ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে ক্যামেরা কাঁধে অগত্যা আগন্তুককে খুঁজতে বের হলেন দাদাসাহেব. তার সহকারি গোবিন্দকে নিয়ে, ঐ যে উনি যেকিনা হিন্দী ভাসী হয়ে হাজার কোটি রুপী নিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পাছায় আঙ্গুল ঘষচ্ছেন। ওদিকে মরহুম রাজ কাপুরের স্মরণসভায় কাপগ খুলে নাচতে লেগেছে ববি ও তার নাত জামাই! কি ঝকমারি রে বাবা- মরার এতদিন বাদেও চিতার আগুনে পুড়ল না রাজের কাপড় (বংশগত টাইটেল), তবে কিনা পুড়ে ছাই হলো বলিউড, টালিউড আর ঢালিউড নায়িকাদের জামা ও কাপড়, আর নারীরা বস্ত্রহরণ আনন্দে ধেই ধেই করে নৃত্যপাগল। পুরুষেরাই বা কম কিসে। তারা বুকের লোম চেছে, বগলে বাবড়ি নিয়ে, গুটলিতে মাসল ফুলিয়ে প্লে-বয় কায়দায় মনোরঞ্জনের নেশায় স্পার্ম বিতরণে ব্যস্ত। স্যাটেলাইট ক্লাপাস্টিকের মুখে খাসা ¯øাপাস্টিক!
ওদিকে জেলখানায় বসে গোটা অডিসি থাইফু ভাষায় অনুবাদ করে ফেললেন আগন্তুক। আর কিনা একজন জবরদস্ত কম্পোজারকে দিলেন কম্পোজ করতে, কিন্তু দিলেই কি কাজ হয় আজকাল? সে টাইপরাইটার তো থাইফু ভাষায় পিএইচডি অর্থাৎ কিনা গোবর গণেশ। বরং সে অনেক বেশি দর হায়োরোগিøফিক্স উচ্চারণে। ভাবলেন, কি করে ওসিমশাইকে বোঝানো যায়, দ্রæত তার একজন বিল গেটস অতি অত্যাবশ্যক।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য একজন কনসালটেন্ট ভাড়া করলেন চড়া দরে। তার বত্রিশ পাতা সিভি পড়ে আপাতত দন্ত বিকশিত করলেন আগন্তুক। কনসালটেন্ট মশাই ৩৪ জন পাতি গবেষক নিয়োগ করে ২৯ পাতার একটা প্রশ্নপত্র নিয়ে মাঠে নামলেন। আর শেষে ৬ মাসের কাজ ৮ মাস পর্যন্ত টেনে এনে খসড়া সমাধান দিলেন যে, পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেয়া যেতে পারে। এই গবেষণাপত্রের জন্য তিনি ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার ভাউচার জমা দিলেন। অবশেষে বিজ্ঞাপন বেরুলো দেশের সর্বাধিক বিক্রিত সংবাদপত্রের প্রথম পাতা জুড়ে।
বিজ্ঞাপন, দৈনিক ঝাপসা- “দক্ষ ঝকঝকে হ্যালোজিনযুক্ত আইনস্টাইনের মেধাসমৃদ্ধ, প্রতি মিনিটে সুপারসনিক গতিতে সহ¯্রাের্ধ্ব অক্ষর টাইপ করতে পারেন এরকম একজন কম্পিউটার কম্পোজার আবশ্যক। অবশ্যই তিনি ইংরেজি ভাষায় বার্নাডশ এবং বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমপর্যায়ভুক্ত এবং থাইফু ভাষায় ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হবেন। বেতন নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। মহিলাদের ক্ষেত্রে বুকের উচ্চাতা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচ্য হবে। যার এরকম দক্ষতা ও মানসিকতা রয়েছে এবং তিনি যদি অনূর্ধ্ব ২০ বছর বয়েসি হোন তাহলে প্রার্থীকে সকল কাগজপত্র নিয়ে অতিসত্ত¡র সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করুন। বিশেষ দ্রষ্টব্য আবেদনপত্রের সাথে সঙ্গে পৈত্রিক জমির দলিলটি সংযুক্ত করতে ভুলবেন না। মানসিকভাবে যারা হিজড়া গ্রোত্রের তাদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
সাড়ে পাঁচ দিনের মাথায় হাজার দশেক অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়ল। দেশ জুড়ে সবাই দেখা গেল আইনস্টাইন, শহীদুল্লাহ, রবীন্দ্রনাথ, বার্নাডশ’ । পাড়ার ক্লিনিকে লম্বা লাইন। নারী-পুরুষ উভয়েই যৌনাঙ্গ উচ্ছেদ করে বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত অগ্রাধিকার কোটায় নিজেকে চালান করতে উদ্ধত। সন্তানের হাতে নিহত হলেন অনেক পিতা, সহজে জমির দলিল হাতছাড়া না করার জন্য।
তিনি পড়লেন মহা ফাঁপরে। এদিকে বিপিএস (বিকল্প পাছায় ছাপ) প্রকাশনা থেকে বারবার তাগাদা আসছে। এ বছরের মধ্যে বিশ্ব বইমেলায় বইয়ের চেহারাটা একবার না দেখানো গেলে নোবেলটাই বুঝি হাতছাড়া হয়ে যায়! অনুবাদের আবার নোবেল কি মশাই? আরে খোঁজ রাখেন, বিশ্ব ঘুরছে কোনদিকে? খালি ফোঁপর দালালি। দু’কলম লিখেছি কি পাঠিয়ে দেই নোবেল কমিটিতে। আমার শালার ভাইপো নোবেল অফিসের সুপাইরের জামাই! চাট্টিখানি কথা! তারপর কমিটি সদস্যদের ঠিকানা যোগাড় করে ল্যাজে ল্যাজে ঘোরো আর মওকা বুঝে মলম ঘষো। এভাবে অ্যাডভোকেসির গুতোয় ঠিক ঠিক কেল্লাফতে!
যাহোক, এবার একজন যোগ্য কম্পোজার প্রার্থী খুঁজতে হবে। প্রথমে লটারিতে দশজন বাছাই। তারপর দু’ভাগে ভাগ। প্রথম ধাপে টিকল তারা, যাদের ট্যাঁকে টাকা আর পরেরটা হল মামা, কাকা, তাওইর দাপট। একেবারে চুঘতাই কাÐ মশাই!
অতঃপর থাইফু ভাষার অডিসি নোবেল পেল, সঙ্গে ফ্রি পুলিৎজার কম হ্যাপা গেলো না গো! এরপর সংবর্ধনার বন্যা। প্রথমে হাড়গিলে উন্নয়ন কম্যুনিটি,যারা দলীয় রাজনীতির ছোঁয়াচ মুক্ত। রঙচঙা কার্ড ছাপানো হলো, বুদ্ধিজীবী, সমাজের গণ্যমান্যের নামে সেসব বিলি বন্টন হলো। শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে তারা লেখকের শ্রাদ্ধ করে গেলেন। চটচটে চাতুর্যে ভরা বাক্যবাণে তাকে নাঙ্গা করা হলো। শেষে ফাস্ট ফুডের ভারী প্যাকেট আর পার্টিসিপেন্ট লিস্ট ভরে উঠলো অরিজিনাল ও সত্যায়িত সাক্ষরে। বাদ গেল না সাংবাদিকদের বখড়াও। কাল সব অন আর অফ লাইন কাগজে এাঁই ছাপানোর হবে রে পাগলা! নানান তেলেসমাতি। টাকা আর টাকার বাতাস। আর কি গা জ্বালানো কর্মরে বাবাহ! ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলছে কি গাল বেয়ে লালার শে^ত¯্রাব বড় জিহবাওয়ালা কুকুরের মতো দেড় হাত লম্বা। পত্রিকায় যেন পরের দিন আর আজ রাতে যেন টিভির সংকাদে খবর প্রকাশ হয় তার জন্য একে ধরো, তার সঙ্গে শোও,ওর পকেটে গুজে দাও ঝকঝকে কুমারী প্রেস রিলিজ। মুখে বোলচাল, পারফিউমের ঝাপটা। ছ্যাঁ ছ্যাঁ। এরা দেখি তানার চেয়েও অশ্লীল।
শেষে বাধ্য হয়ে হ্যাপা সামলাতে থানার সামনে লটকে দিতে হলো একখানা সাইবোর্ড- “থানা থেকে ১০০ হাত দূরে সাবধানে থাকুন আর আগন্তুকের নির্ধারিত সেলের সামনে ঝুলতে লাগলো একখানা সাইনবোর্ড- ‘Beware of the writer’…