দেশে গল্প পাঠকের অভাব নেই । কিন্তু অ-গল্পগুলো শোনার ধৈর্য কারও নেই। গল্প হলো গল্পাকারের কল্পনার ক্যানভাস। গল্পাকার কখনও অভাবী ছিলই না। থাকলে অনুক্ষণ পরিশ্রম করে তনুটাকে বিছানায় এলিয়ে দেয়া বৈ উপায় ছিল না। তার গল্প বলা বা লেখার সময় কোথায়?
যার পকেট অর্থের পরিবর্তে অভাব ভরা থাকে, ক্লাস শেষে বন্ধুদের মুখে দামি রেস্তোরাঁয় বিদেশি খাবার খেতে যাওয়ার কথা শুনে যে বলে, এমার্জেন্সি রামপুরা যেতে হবে, ভাইয়ের বাসায় দরকার আছে বা টিউশনি আছে, গল্পটা তার লেখার কথা।
সারাদিন ক্লাসের পরে ধানমন্ডিতে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নিজ বন্ধুর হাতে যাকে পার্সেল তুলে দিতে হয়, গল্পটা তার লেখার কথা।
যার হাত ধরে বিগত ৭ বছর একটা আপন শক্তি অনুভব করা যেত। জীবনে-মরণে পাশে থাকার কথা বলা হাত যখন তিনবার কবুল বলে কোন ধনাঢ্য ব্যক্তির হাত ধরে শুয়ে পড়ে বিছানায় যার প্রেয়সী, গল্পটা তার লেখার কথা।
“কেন এনেছ এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে? অনিশ্চিত আর অপরকল্পিত পৃথিবীতে। যেখানেই তোমারই নিশ্চয়তা নেই! নাকি তোমার সিমেন হওয়ায় দুনিয়ায় এনে জেনে শুনেই প্রতিশোধ নিলে?” বলতে চাওয়া ছেলে যখন বলে বাবাকে “ওষুধ কেনার টাকা লাগবে, আব্বা?”, গল্পটা তার লেখার কথা।
কিন্তু তাদের “সময় কোথায়, নষ্ট করবার”? জীবনের ছোবলের যে বিষ তার নালীতে, সে বিষের যন্ত্রণা সহ্য করে গল্প লেখার সাহস তাদের থাকে না। অথচ, লেখক তার কল্পনার তুলিতে রঙ মাখিয়ে তৈরি করে ফেলে কত গল্প। এই গল্পগুলো আর কেউ লেখে না। অ-গল্প হয়েই পড়ে থাকে।
“পৌষের শীতে টিএসসির সামনে দিয়ে হাঁটছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়েরই দু’জন ছাত্র পথশিশুদের খুশি বিতরণ করতে টিএসসির সামনে কম্বল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল । পথ-শিশুদের পরনে ২-৩টা মোটা কাপড় থাকলেও বলাবাহুল্য যে শীত নিবারণ কষ্টকরই ছিল। মুহূর্তেই কম্বলের তুলনায় ঢের মানুষের উপস্থিতি তৈরি হল। কম্বল পেতে হলে কলিঙ্গ যুদ্ধ পার করেই পেতে হবে বুঝে আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা, সবাই যুদ্ধে নেমে পড়েছিল। শুধু ব্যতিক্রম ছিল জীর্ণশীর্ণ একটা পাতলা জামা পরা ছোট্ট শিশুটা। শীতবস্ত্র বিতরণ অবলোকন করলেও সে ব্যস্ত ফুলের মালা গাঁথায়। পরেরদিন এগুলো বিক্রি করতে হবে।”